মামুনকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম [১], যে ছেলেটি আমাকে চমকে দিয়েছিল। একে এক ক্রেট পানির বোতলও দেয়া হয়েছিল যেটা জিরো ক্রেডিটের [২] আওতায় পড়ে (যে টাকাটা আর ফেরত দিতে হয় না) ।
এ ঠিকই সেই পানি বিক্রি করে কিছু পুঁজিও জমিয়ে ফেলেছে এবং কিছু কিছু করে স্কুলে নিয়মিত সঞ্চয়ও করছে।
স্কুল, এক [৩] এবং স্কুল, দুই [৪], এখানকার শিক্ষার্থী প্রত্যেককে একটা করে মাটির ব্যাংক কিনে দেয়া হয়েছিল। এরা মাটির ব্যাংকে নিয়মিত পয়সা জমাচ্ছে। এদেরকে আগ্রহী করার জন্যে আমাকে খানিকটা চালবাজিও করতে হয়েছে, এদেরকে বলা হয়েছে যখন মাটির ব্যাংকগুলো ভাঙ্গা হবে তখন যার টাকা সবচেয়ে বেশী হবে তার জন্য পুরষ্কার আছে।
আমি আগেও লেখায় বলেছিলাম, আমি কেবল অক্ষর শিক্ষা দেয়ার উপরই জোর দিচ্ছি না। আমি চাচ্ছি, আমার নিজের বাচ্চারা যা যা শিখবে এরাও তাই শিখবে। আমি জটিল কথা বুঝি না, সাফ কথা, আমার নিজের বাচ্চার পড়ার-জানার সুযোগ থাকলে এদের থাকবে না কেন? এই দেশের প্রতিটি শিশুর পড়াবার দায়িত্বটা সরকারের ছিল, সরকার বেচারা পারছে না, কী আর করা!
আমি নিজে যে ভুলগুলো করেছি সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছি, সেই শিক্ষাটাই এদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। একজন মানুষের জীবনে সঞ্চয়ের যে কী প্রয়োজনীয়তা এটা আমি আমার দুঃসময়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। যে শিক্ষাটা একটা পিঁপড়ার আছে, দুঃসময়ের জন্য খাবার জমিয়ে রাখতে হয় সেই শিক্ষাটাই আমার ছিল না। আফসোস, কখনই আমার জীবনে কোন সঞ্চয় ছিল না!
তো, স্কুল তিন [৫] -এর বেলায় সমস্যাটা দেখা দিল কারণ এখানকার বেশিরভাগ ছেলেই ঘুমায় ওভারব্রীজে, মাটির ব্যাংক রাখবে কোথায়? এই সমস্যারও একটা সমাধান বের হয়। এরা এদের টিচারের কাছে টাকা জমাবে। এর জন্য প্রত্যেকের নাম লিখে একটা খাতাও বানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এদের কান্ডকারখানা দেখে দেখে আর কত হতভম্ব হব? এদের এই স্কুলটা চালু হয়েছে এক মাসও হয়নি এখনই এরা প্রায় ১৪০০ টাকার মত জমিয়ে ফেলেছে!
আজ সকাল-সকাল ফোন। মামুন নামের এই ছেলেটিকে নিয়ে 'দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন'-এ নাকি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে [৬]। ভাল, ছেলেটা জানলে খুশি হবে। প্রতিবেদনটা পড়ে একজনের নাম দেখে মেজাজ খারাপ হয়। এই মানুষটা এখানে কী করছে? মানুষটা কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার কাজ পন্ড করছে! আমার বাড়া ভাত আগেভাগেই খেয়ে ফেলছে।
আবার মানুষটা আমি কি না এটাও বুঝতে পারছি না!
পত্রিকায় লিখেছে, "...আলি মাহমুদের..."।
এই আলি মাহমুদটা কে? তবলার ঠুকঠাক থাকুক আসল কথায় আসি। এটা যে এবারই প্রথম হয়েছে এমন না, এরা ইচ্ছা করে এই কাজটা করে! ব্যাটারা এই সব ফাজলামি আর কত কাল করবে? এরা কলাম্বিয়ার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, তুরস্কের ওরহান পামুক, ফিলিস্তিনের মাহমুদ দারবিশ, ইন্দোনেশিয়ার প্রমোদিয়া অনন্ত তোয়ের লিখতে পারে; কেবল পারে না আলী মাহমেদ লিখতে! কলমের নিব ভেঙ্গে যায়!
জানি-জানি, অনেকে চোখ পাকাচ্ছেন, মিয়া, ছলিমুল্লা, কোথায় এঁরা আর কোথায় তুমি তিন টাকা দামের কলমচী, ছ্যাহ!
রসো, আগে আমার যুক্তিটা শেষ করি। অনুমান করি, যারা রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন সমস্যাটা তাদের না। এসি অফিসে যেসব পন্ডিত স্যাররা ঢাকায় বসে থাকেন, তাঁদের।
কিন্তু ভুল মনে হলে কেন মাহমেদের স্থলে এখানে আহমেদ না, কেনই বা মোহাম্মেদ না; কেনই বা এদের এটা মনে হলো মাহমুদটাই সঠিক?
কোথাও খটকা লাগলে যিনি রিপোর্টটা পাঠিয়েছেন তাকে একটা ফোন করে জেনে নিলেই হয়। পাগল, এটা করলে মান থাকে নাকি? এই চটচটে জ্ঞানের ভান্ডরা কেন যে বুঝতে চান না কোন নাম অভিধানের কোন শব্দ না যে ভুল মনে হলো আর অভিধানের পাতা চিবিয়ে খেয়ে ঠিক করে দিলুম।
এঁরা হচ্ছেন একেকটা চলমান জ্ঞানের ভান্ড, একটা ফোন করার জন্য ঘাড় কাত করলেই জ্ঞান গড়িয়ে পড়বে এই ভয়ে এতটাই কাবু যে আর ফোন করা হয়ে উঠে না।
সহায়ক লিংক:
১. মামুন: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_17.html
২. জিরো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/2fpxq9d
৩. আমাদের ইশকুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
৪. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৫. আমাদের ইশকুল, তিন: http://tinyurl.com/327aky3
৬. বাংলাদেশ প্রতিদিন: http://tinyurl.com/22w53un
No comments:
Post a Comment