জানি না কেন আজ সকাল থেকেই মনটা ভারী বিষণ্ণ! অথচ আকাশটা আজ মেঘলা না, ঝকঝকে, গাঢ় নীল। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত! তবুও এই অস্থিরতার উৎস কি জানা নেই।
আমার এই আমিকে আমি বড়ো ভয় পাই। চোখ বন্ধ করে বলা যায়, আমার ভেতরের ঈর্ষায় কাতর পশুটা তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে। একে পরাস্ত করা চাট্টিখানি কথা না। প্রতিবার যে একে কাবু করা যাবে না এটাও আমি বিলক্ষণ জানি। অথচ আমার সমস্ত জীবনের চমৎকার সময় কাটাচ্ছি এখন। বছরের-পর বছর ধরে আমার লালন করা ছোট-ছোট স্বপ্নগুলো তরতর করে বেড়ে উঠছে, অজস্র অদেখা স্বপ্নের বীজ উঁকিঝুকি মারছে। তাহলে?
আমার পাগলা টাইপের এক বন্ধু আছে। একে ফোন করে বলি, তোর ব্ল্যাক স্ট্যালিয়ন নিয়ে আয়। একজন কাউবয়ের যেমন ব্ল্যাক স্ট্যালিয়নের পিঠে বসে থাকাই সুখ তেমনি এর মটর সাইকেলে! আমি নিশ্চিত, এ কোন ফেরারি গাড়ির সঙ্গেও এর মটর সাইকেল অদল-বদল করবে না। এমনিতে এখন যেটায় দাবড়ে বেড়ায় এটার দামও ছোটখাটো একটা গাড়ির দামের সমান। এটায় চেপে ঢাকা-সিলেট যাওয়াটা এর কাছে ছেলেখেলা। আমাকে বান্দরবান নিয়ে যাওয়ার জন্য ঝুলাঝুলি করছে। স্রেফ পাগলামি!
এমনিতে এ কখনও জানতে চায় না কোথায় যাব। কেবল রওয়ানা হওয়ার আগে জিগেস করবে, কোথায় যাবি? আজও জানতে চায়, কোথায় যাবি?
আমি উদাস হয়ে বলি, জানি না।
এ এক লহমায় বুঝে যায় ঝামেলা আছে। হাইওয়েতে এ কখনও ১০০ কিলোমিটারের নীচে চালাতে পারে না। এই দেশে মটর সাইকেল এই গতিতে চালানো অপরাধ। কারণ আমাদের দেশে হাইওয়ের পাশেই হাট-বাজার-বাড়ি-ঘর সমস্ত কিছু। কখন বাচ্চা-কাচ্চা-গরু-ছাগল নিমিষেই রাস্তায় চলে আসবে এটা আগাম বলা মুশকিল। সচরাচর গতি ১০০ ছাড়ালে আমি বকা দেই। ডিজিটাল স্পীডমিটারে গতি আজ দেখছি এ ১১০ ছাড়িয়েছে। আমি চুপ করে বসে থাকি। মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে ফেলি- বিরক্ত লাগছে। হেলমেটের কারণে তীব্র আকাশটা আমি দেখতে পাচ্ছি না। তাছাড়া কেবল মাথা বাঁচিয়ে কী হবে, দূর-দূর!
আমি স্থির চোখে আকাশ দেখি। থ্রি পয়েন্ট টু মেগাপিক্সেল সেলফোন লেন্সের একে ধারণ করার ক্ষমতা কোথায়! আমি নিশ্চিত, আমি না, আকাশটাই আজ পাগল হয়ে গেছে। কী চোখ ধাঁধানো- স্বর্গের আকাশ কী এরচেয়েও চমৎকার!
বড়ো বড়ো কবি-সাহিত্যিক জ্যোৎস্না রাতে মরতে চান। কবি-সাহিত্যিকরা দলে দলে মরুক জ্যোৎস্না রাতে, আমার কী! আমার মত সাধারণ মানুষের জ্যোৎস্নায় ডুবে মরার শখ নাই। আমি মরতে চাই এমন অপার্থিব আকাশটাকে তাড়া করতে করতে।
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Sunday, September 26, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment