স্কুল, দুই-এ যখন ফুটবল দেয়া হয়েছিল [২] তখন ছাত্ররা সল্লোসে বলেছিল, মেয়েরা কিন্তু ফুটবল খেলবে না।
আমি তখন বলেছিলাম, কেন?
এদের সাফ উত্তর, ফুটবল মেয়েরা খেলে না।
কে বলেছে ফুটবল মেয়েরা খেলে না?
সবাই চুপ।
এবার আমি বললাম, মেয়েরা তোমাদের সাথে পড়তে পারবে কিন্তু ফুটবল খেলতে পারবে না এটা কেমন কথা!
কারও মুখে রা নেই। আমি বুঝতে পরছিলাম, এরা এটা মেনে নিতে চাচ্ছে না।
কখনও কখনও কঠিন আচরণ জরুরি হয়ে পড়ে। আমি কঠিন গলায় বললাম, হয় মেয়েরাও খেলবে নইলে ফুটবল খেলা বন্ধ।
পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছেলেরা মেয়েদেরকেও খেলায় নিত।
এই স্কুলে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। এখানে সুই-সুতার কাজ শেখার জন্য ফ্রেমসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে দেয়া হয়েছিল। এরা শিখতে পারলে আমার ভাবনা আছে, এরপর এদেরকে শেখার জন্য আপাতত পুরনো একটা সেলাই মেশিন কিনে দেয়া। একটা মেয়ে সেলাইয়ের কাজ করে গোটা একটা পরিবারকে কেমন করে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে এর নমুনা হচ্ছে রানি [৩]। ছোট্ট এই মেয়েটি তার গোটা পরিবারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এবারের ঈদে নাকি প্রচুর কাজও পেয়েছে!
স্কুলে যখন সুই-সুতোর কাজ শেখার জন্য জিনিসপত্রগুলো দেয়া হচ্ছিল তখন এই স্কুলের 'সফর' নামের এক ছাত্র ফট করে জিজ্ঞেস করে বসল, সেলাইয়ের কাজ আমরা ছেলেরা কি শিখতে পারব?
এখানে আমি ভুল করে ফেলি। মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে, সেলাই তো মেয়েদের কাজ।
কথাটা মাটিতে পড়তেও পারেনি, উত্তর হাজির, স্যার, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারলে আমরা ছেলেরা সেলাই শিখতে পারব না কেন?
কঠিন যুক্তি। আমি কুপোকাত!
আমি বিস্মিত দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকাই কারণ ক-দিন আগে এর হাত ভেঙ্গেছে। মাত্র প্লাস্টার করে একে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের হাবিজাবি অনেক কাজের মধ্যে এদেরকে চিকিৎসা দেয়াটাও যুক্ত।
সফর (ছবিতে যার হাতে প্লাস্টার) |
এরিমধ্যে চলে গেছে অনেক কটা দিন। আজ স্কুলে সফর মিয়ার কিছু কর্মকান্ডের নমুনা দেখলাম। এ অনায়াসে মেয়েদেরকে সেলাইয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ফাজিলের দল- এই সব পোলাপাইন সম্ভবত আমাকে গিনিপিগ পেয়েছে। আমার উপর একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে হতভম্ব করে দিচ্ছে।
সহায়ক লিংক:
১. অক্ষর শেখা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_2229.html
২. ফুটবল...: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_07.html
৩. রানি: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_25.html
5 comments:
ei school kothay vaiya?
school ta kothay vaiya
ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলায় আজমপুর নামে একটা জায়গা আছে, ওখানে। এটা আখাউড়া থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে।
অন্ধদের অনেকগুলো পরিবারকে সরকার এখানে খানিকটা করে জায়গা দিয়েছিল। এই অন্ধদের বাচ্চাদের জন্যই এই স্কুলটা।
ছবিতে আপনি দশ ফিট বাই বিশ ফিট যে টিনের ঘরটা দেখছেন এটা মসজিদও, স্কুলও। @Swakkhar Shatabda
হা হা হা। সাব্বাশ সফর! :-)
আর বইলেন না, পুলাপাইনগুলো একটার পর একটা খেলা দেখিয়েই যাচ্ছে :)। চলে আসেন একদিন... @মুকুল
Post a Comment