মাঝে-মাঝে আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়, নিজের উপর। নিজের স্মরণশক্তির উপর! আমার কাছের লোকজনরা জানেন, আমি ভয়াবহ রকম দুর্বল স্মৃতিশক্তির অধিকারী। প্রায়শ আমার সন্দেহ হয়, ব্রেন নামের জিনিসটা আদৌ আমার আছে কি না!
এই যেমন এখন আমার প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন। অথচ জানা প্রচুর তথ্য এখন মনে নাই, এর কোন মানে হয়! বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত এবং ভারতেরও? জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভারত যোগ দিচ্ছে কি না? বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন ১০০ জন, ভারত থেকে কতজন যাচ্ছেন? জনসংখ্যা জানাটা জরুরি এই কারণে আঁক কষে বের করা যেত ভারত থেকে কতজন যাচ্ছেন?
ধরি, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। আবারও ধরি, ভারতের জনসংখ্যা ১১৩ কোটি। তাহলে ভারত থেকে যাচ্ছেন প্রায় ৮০০ মানুষ? এক শ্বাসে বলা চলে হাজারখানেক মানুষ।
এটাও জানার ইচ্ছা ভারতের লোকজনরা সবাই কি হাওয়াই জাহাজে করে যাচ্ছেন, নাকি পানি-জাহাজে? পানির জাহাজে গেলে সমস্যা নাই কিন্তু হাওয়াই জাহাজে করে গেলে- ওরিআল্লা, সবাই কি বসে বসেই যাচ্ছেন নাকি কিছু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে!
এটাও আমার জানার ইচ্ছা, আমাদের দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে ১০০ জন যাচ্ছেন- সব মিলিয়ে ঠিক কত টাকা লাগছে? নড়বড়ে একটা হিসাব দাঁড় করানো চলে ন্যূনতম ৬ কোটি টাকা।
(জন আইলিয়েফ মহোদয়ের মতে), বাংলাদেশের ৭৫ লাখ মানুষ [১] রাতের বেলা না-খেয়ে ঘুমাতে যায় সেই দেশের জন্য ৬ কোটি টাকা খুব একটা বড়ো অংকের টাকা এটা বলা চলে না। আচ্ছা, এঁরা রাতের বেলা খান না কেন, রঙ্গে?
তা, এই ১০০জন এরা ওখানে গিয়ে কি কি করবেন? আহা, আমি কখন বললাম, এঁরা ওখানে গিয়ে ডিগবাজি খাবেন! জানি না বলেই তো এতো জানার হ্যাপা!
ভাল কথা, বান কে মুন কি এখনও স্বপদে বহাল আছেন? কবিরাও তো যাচ্ছেন দেখি। এঁরা কি ওখানে ছড়া কেটে শোনাবেন? না-না, ছড়া না, কবিতা। কবিরা ওখানে কি বান কে মুনকে কবিতা পড়ে শোনাবেন নাকি হাওয়াই জাহাজে বসে-বসে কবিতা লিখবেন?
মাথায় কত চিন্তা ঘুরপাক খায়! কবিরা গেলে ব্লগারদের যেতে দোষ কোথায়? আচ্ছা, বান কে মুন কি ব্লগিং করতে জানেন? না-জানলে আমি চোখ বুজে আমাদের দেশ থেকে 'ফিউশন ফাইভ'কে পাঠাবার জন্য কেবল নামই প্রস্তাব করতাম না, প্রয়োজনে খুনাখুনিও করতাম। কারণ গতবার বেচারার উপর খুব অন্যায় হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগি হয়েও কারওয়ান বাজারের কারখানায় বসে তিনি অন্য একজন প্রতিযোগি, আমাকে নিয়ে দুর্ধর্ষ একটা পোস্ট প্রসব করেছিলেন, "...বাংলা ব্লগের গরিব অ্যাম্বেসেডর"।
হা ঈশ্বর, মানুষ, কী এমনও নির্বোধ হয়!
ওই পোস্টে অনেক তথ্য-উপাত্ত একাট্টা করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, আমার নির্বাচিত হওয়ার পেছনে 'র'-সিআইএ-মোসাদের হাত ছিল। ভদ্রলোক সম্ভবত বিস্মৃত হয়েছিলেন, জুরিরাই কেবল আমার সাইটটাকে নির্বাচিত করেননি, পাঠকরাও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। তবুও যেহেতু ওই পোস্টে তিনি হা বিতং করে তার মর্মবেদনা তুলে ধরেছিলেন তাই নিজেকে বড়ো অপরাধি-অপরাধি লাগে! পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার এই সুযোগ ছিল আমার। যাচ্ছলে, ফসকে গেল!
পত্র-পত্রিকায় আমাদের দেশের কবিদের উদারতার নমুনা পড়ে ভাল লাগায় মন ছেয়ে যায়। নির্মলেন্দু গুণ [১], মহাদেব সাহা, মুহাম্মদ সামাদ এই তিন কবি রাষ্ট্রের ১৩ লাখ টাকার সাশ্রয় করেছেন! আমি অনুমান করি, এই আইডিয়াটা গুণ দাদার মাথা থেকে বেরিয়েছে। কেন এমন অনুমান করলাম এটা লিখতে গেলে আরেকটা পোস্ট হয়ে যাবে। আমার বক্তব্য অন্য খানে। কবিদের কথা শুনি একটু:
"...প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে আমাদের বেছে নিয়ে এবং যাতায়াতের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ" ...দেশের জনপ্রিয় তিন কবির একজন মহাদেব সাহা এ কথা বলেন।" (কালের কন্ঠ, ১৭. ০৯.২০১০)।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের কথায়ও আমার মনটা ভরে আসে। তিনি বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু গরিব দেশের নাগরিক হিসাবে এত টাকায় সফরে যাওয়া অনৈতিক হবে..." (প্রথম আলো, ১৭.০৯.২০১০)।
কসম, এটা একটা সু-উদাহরণ এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু লেখক কবিরা যখন মন্ত্রীর ভাষায় কথা বলেন তখন মানুষটার মেরুদন্ড নিয়ে সংশয় জাগে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন কৃতজ্ঞ কেন, তাঁরা কি প্রধানমন্ত্রীর টাকায় সফর করছেন? আমাদের দেশের লোকজনরা যে কেন এটা ভুলে যান এই দেশের রাস্তা-ঘাট-কালভার্ট-ব্রীজ-অনুদানের টাকা কোনো মন্ত্রী বাহাদুরের পকেট থেকে আসে না। এটা স্রেফ এই দেশের জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা। রক্ত-ঘামের সঙ্গে মিশে থাকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকা। কৃতজ্ঞতা জানালে কেবল এই দেশের জনগণের প্রতি, আর অন্য কারও প্রতি না।
কী চমৎকার করেই না হুমায়ূন আহমেদও কৃতজ্ঞতার লালায় নিজের 'তহবন' ভিজিয়ে ফেলেন, ছবি বানাবার জন্য একদা তিনি ব্যা. হুদার কাছ থেকে সরকারী অনুদানের টাকা পেয়েছিলেন বলে। এই কৃতজ্ঞতার কথা তিনি পত্রিকায় ফলাও করে লিখেছিলেন। বেচারা পাঠক, পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট ভিজে পাঠকের দফারফা!
গুণ দাদা কেমন কৃতজ্ঞ এটাও জানার ইচ্ছা ছিল কারণ গত টার্মে শেখ হাসিনা গুণ দাদাকে সরকারী ভোজসভায় দাওয়াত দেন নাই বলে গুণ দাদা ব্যাঙের মত গাল ফুলিয়ে বিস্তর অশ্রুপাত করেছিলেন; ঘটা করে মিডিয়াকে বলেছেন। এইবার দাদার কষ্টটা অনেকখানি লাঘব হয়েছে বলে দাদার চেয়ে আমার আনন্দই বেশি হচ্ছে।
আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে এটার জন্যও অপেক্ষা করছি, আমেরিকান কবি 'করসো'-এর সঙ্গে আমাদের গুণ দাদার কি এই বার দেখা হবে? গুণ দাদা কি এইবারও অদৃশ্য লেজ নাড়াবেন [২]? করসো বাংলাদেশকে নিয়ে অতি অমানবিক কথা বলবেন, কুৎসিত ভঙ্গি করবে আর আমাদের গুণদাদা কি এবারও হ্যা হ্যা করে হাসবেন?
মস্তিষ্ক নাকি কখনও ঘুমায় না [৩]। ভুল, এই সব জ্ঞানপাপিদের মস্তিষ্ক দিব্যি ঘুমায়! মাছের পচন শুরু হয় তার মাথা থেকে এবং একটা দেশের পচন শুরু হয় যখন সেই দেশের কবি-সাহিত্যিকের নষ্ট মেরুদন্ড প্রতিস্থাপনের আবশ্যকতা দেখা দেয়, তখন থেকে।
সহায়ক লিংক:
১. জন আইলিয়েফ: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_3172.html
২. নির্মলেন্দু গুণ: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_7854.html
৩. মস্তিষ্কের ঘুম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_4207.html
*আজ (১৯.০৯.১০) আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেল। ১০০ ছাড়িয়ে গেছে, ১০৩ জন! এবং সফরসঙ্গীদের তালিকাও পাওয়া গেল:
"...নিউইয়র্ক সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ছয় সদস্য তাঁর সঙ্গে অবস্থান করবেন। তাঁরা হলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, পুত্রবধূ ক্রিস্টিন ওভারমায়ার ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন...।" (প্রথম আলো, ১৯.০৯.১০)
প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এই ৬ সদস্যের ওখানে কি কাজ তা এরাই ভাল বলতে পারবেন! এবং প্রথম আলোর মতে, সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বরা হচ্ছেন:
"...বিশেষ ব্যক্তিত্বরা হলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা ও মুহাম্মদ সামাদ, সাবেক আমলা এ জে এম আবদুল আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান, ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরাইশী, শেরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইকবাল হোসেন মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও আখতার হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহ আলম, যুবলীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. শাহজাহান মিয়া...।" (প্রথম আলো, ১৯.০৯.২০১০)
দু-চারজন ব্যতীত এঁরা বিশেষ ব্যক্তিত্ব! প্রথম আলো কোন মানুষ হলে বলতাম, হা ভগবান, এর ব্রেন ডিফেক্ট! ভাগ্যিস, প্রথম আলো কোনো মানুষ না।
এই যেমন এখন আমার প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন। অথচ জানা প্রচুর তথ্য এখন মনে নাই, এর কোন মানে হয়! বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত এবং ভারতেরও? জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভারত যোগ দিচ্ছে কি না? বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন ১০০ জন, ভারত থেকে কতজন যাচ্ছেন? জনসংখ্যা জানাটা জরুরি এই কারণে আঁক কষে বের করা যেত ভারত থেকে কতজন যাচ্ছেন?
ধরি, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। আবারও ধরি, ভারতের জনসংখ্যা ১১৩ কোটি। তাহলে ভারত থেকে যাচ্ছেন প্রায় ৮০০ মানুষ? এক শ্বাসে বলা চলে হাজারখানেক মানুষ।
এটাও জানার ইচ্ছা ভারতের লোকজনরা সবাই কি হাওয়াই জাহাজে করে যাচ্ছেন, নাকি পানি-জাহাজে? পানির জাহাজে গেলে সমস্যা নাই কিন্তু হাওয়াই জাহাজে করে গেলে- ওরিআল্লা, সবাই কি বসে বসেই যাচ্ছেন নাকি কিছু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে!
এটাও আমার জানার ইচ্ছা, আমাদের দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে ১০০ জন যাচ্ছেন- সব মিলিয়ে ঠিক কত টাকা লাগছে? নড়বড়ে একটা হিসাব দাঁড় করানো চলে ন্যূনতম ৬ কোটি টাকা।
(জন আইলিয়েফ মহোদয়ের মতে), বাংলাদেশের ৭৫ লাখ মানুষ [১] রাতের বেলা না-খেয়ে ঘুমাতে যায় সেই দেশের জন্য ৬ কোটি টাকা খুব একটা বড়ো অংকের টাকা এটা বলা চলে না। আচ্ছা, এঁরা রাতের বেলা খান না কেন, রঙ্গে?
তা, এই ১০০জন এরা ওখানে গিয়ে কি কি করবেন? আহা, আমি কখন বললাম, এঁরা ওখানে গিয়ে ডিগবাজি খাবেন! জানি না বলেই তো এতো জানার হ্যাপা!
ভাল কথা, বান কে মুন কি এখনও স্বপদে বহাল আছেন? কবিরাও তো যাচ্ছেন দেখি। এঁরা কি ওখানে ছড়া কেটে শোনাবেন? না-না, ছড়া না, কবিতা। কবিরা ওখানে কি বান কে মুনকে কবিতা পড়ে শোনাবেন নাকি হাওয়াই জাহাজে বসে-বসে কবিতা লিখবেন?
"ভুলেও হাওয়াই জাহাজের জানালায় মুখ বাড়িয়ো নাকো, মা-
পেঁজা পেঁজা মেঘে ঝাপসা হবে তোমার চোখের চশমা।"
মাথায় কত চিন্তা ঘুরপাক খায়! কবিরা গেলে ব্লগারদের যেতে দোষ কোথায়? আচ্ছা, বান কে মুন কি ব্লগিং করতে জানেন? না-জানলে আমি চোখ বুজে আমাদের দেশ থেকে 'ফিউশন ফাইভ'কে পাঠাবার জন্য কেবল নামই প্রস্তাব করতাম না, প্রয়োজনে খুনাখুনিও করতাম। কারণ গতবার বেচারার উপর খুব অন্যায় হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগি হয়েও কারওয়ান বাজারের কারখানায় বসে তিনি অন্য একজন প্রতিযোগি, আমাকে নিয়ে দুর্ধর্ষ একটা পোস্ট প্রসব করেছিলেন, "...বাংলা ব্লগের গরিব অ্যাম্বেসেডর"।
হা ঈশ্বর, মানুষ, কী এমনও নির্বোধ হয়!
ওই পোস্টে অনেক তথ্য-উপাত্ত একাট্টা করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, আমার নির্বাচিত হওয়ার পেছনে 'র'-সিআইএ-মোসাদের হাত ছিল। ভদ্রলোক সম্ভবত বিস্মৃত হয়েছিলেন, জুরিরাই কেবল আমার সাইটটাকে নির্বাচিত করেননি, পাঠকরাও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। তবুও যেহেতু ওই পোস্টে তিনি হা বিতং করে তার মর্মবেদনা তুলে ধরেছিলেন তাই নিজেকে বড়ো অপরাধি-অপরাধি লাগে! পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার এই সুযোগ ছিল আমার। যাচ্ছলে, ফসকে গেল!
পত্র-পত্রিকায় আমাদের দেশের কবিদের উদারতার নমুনা পড়ে ভাল লাগায় মন ছেয়ে যায়। নির্মলেন্দু গুণ [১], মহাদেব সাহা, মুহাম্মদ সামাদ এই তিন কবি রাষ্ট্রের ১৩ লাখ টাকার সাশ্রয় করেছেন! আমি অনুমান করি, এই আইডিয়াটা গুণ দাদার মাথা থেকে বেরিয়েছে। কেন এমন অনুমান করলাম এটা লিখতে গেলে আরেকটা পোস্ট হয়ে যাবে। আমার বক্তব্য অন্য খানে। কবিদের কথা শুনি একটু:
"...প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে আমাদের বেছে নিয়ে এবং যাতায়াতের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ" ...দেশের জনপ্রিয় তিন কবির একজন মহাদেব সাহা এ কথা বলেন।" (কালের কন্ঠ, ১৭. ০৯.২০১০)।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের কথায়ও আমার মনটা ভরে আসে। তিনি বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু গরিব দেশের নাগরিক হিসাবে এত টাকায় সফরে যাওয়া অনৈতিক হবে..." (প্রথম আলো, ১৭.০৯.২০১০)।
কসম, এটা একটা সু-উদাহরণ এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু লেখক কবিরা যখন মন্ত্রীর ভাষায় কথা বলেন তখন মানুষটার মেরুদন্ড নিয়ে সংশয় জাগে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন কৃতজ্ঞ কেন, তাঁরা কি প্রধানমন্ত্রীর টাকায় সফর করছেন? আমাদের দেশের লোকজনরা যে কেন এটা ভুলে যান এই দেশের রাস্তা-ঘাট-কালভার্ট-ব্রীজ-অনুদানের টাকা কোনো মন্ত্রী বাহাদুরের পকেট থেকে আসে না। এটা স্রেফ এই দেশের জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা। রক্ত-ঘামের সঙ্গে মিশে থাকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকা। কৃতজ্ঞতা জানালে কেবল এই দেশের জনগণের প্রতি, আর অন্য কারও প্রতি না।
কী চমৎকার করেই না হুমায়ূন আহমেদও কৃতজ্ঞতার লালায় নিজের 'তহবন' ভিজিয়ে ফেলেন, ছবি বানাবার জন্য একদা তিনি ব্যা. হুদার কাছ থেকে সরকারী অনুদানের টাকা পেয়েছিলেন বলে। এই কৃতজ্ঞতার কথা তিনি পত্রিকায় ফলাও করে লিখেছিলেন। বেচারা পাঠক, পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট ভিজে পাঠকের দফারফা!
গুণ দাদা কেমন কৃতজ্ঞ এটাও জানার ইচ্ছা ছিল কারণ গত টার্মে শেখ হাসিনা গুণ দাদাকে সরকারী ভোজসভায় দাওয়াত দেন নাই বলে গুণ দাদা ব্যাঙের মত গাল ফুলিয়ে বিস্তর অশ্রুপাত করেছিলেন; ঘটা করে মিডিয়াকে বলেছেন। এইবার দাদার কষ্টটা অনেকখানি লাঘব হয়েছে বলে দাদার চেয়ে আমার আনন্দই বেশি হচ্ছে।
আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে এটার জন্যও অপেক্ষা করছি, আমেরিকান কবি 'করসো'-এর সঙ্গে আমাদের গুণ দাদার কি এই বার দেখা হবে? গুণ দাদা কি এইবারও অদৃশ্য লেজ নাড়াবেন [২]? করসো বাংলাদেশকে নিয়ে অতি অমানবিক কথা বলবেন, কুৎসিত ভঙ্গি করবে আর আমাদের গুণদাদা কি এবারও হ্যা হ্যা করে হাসবেন?
মস্তিষ্ক নাকি কখনও ঘুমায় না [৩]। ভুল, এই সব জ্ঞানপাপিদের মস্তিষ্ক দিব্যি ঘুমায়! মাছের পচন শুরু হয় তার মাথা থেকে এবং একটা দেশের পচন শুরু হয় যখন সেই দেশের কবি-সাহিত্যিকের নষ্ট মেরুদন্ড প্রতিস্থাপনের আবশ্যকতা দেখা দেয়, তখন থেকে।
সহায়ক লিংক:
১. জন আইলিয়েফ: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_3172.html
২. নির্মলেন্দু গুণ: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_7854.html
৩. মস্তিষ্কের ঘুম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_4207.html
*আজ (১৯.০৯.১০) আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেল। ১০০ ছাড়িয়ে গেছে, ১০৩ জন! এবং সফরসঙ্গীদের তালিকাও পাওয়া গেল:
"...নিউইয়র্ক সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ছয় সদস্য তাঁর সঙ্গে অবস্থান করবেন। তাঁরা হলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, পুত্রবধূ ক্রিস্টিন ওভারমায়ার ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন...।" (প্রথম আলো, ১৯.০৯.১০)
প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এই ৬ সদস্যের ওখানে কি কাজ তা এরাই ভাল বলতে পারবেন! এবং প্রথম আলোর মতে, সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বরা হচ্ছেন:
"...বিশেষ ব্যক্তিত্বরা হলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা ও মুহাম্মদ সামাদ, সাবেক আমলা এ জে এম আবদুল আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান, ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরাইশী, শেরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইকবাল হোসেন মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও আখতার হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহ আলম, যুবলীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. শাহজাহান মিয়া...।" (প্রথম আলো, ১৯.০৯.২০১০)
দু-চারজন ব্যতীত এঁরা বিশেষ ব্যক্তিত্ব! প্রথম আলো কোন মানুষ হলে বলতাম, হা ভগবান, এর ব্রেন ডিফেক্ট! ভাগ্যিস, প্রথম আলো কোনো মানুষ না।
7 comments:
যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে, লুটে নিচ্ছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশ!
সময় ও সুযোগমতো কবিকুলের ন্যাজ ঠিকই বের হয়ে যায়
আমার বয়স বাড়ছে কিন্তু অসভ্যতার বয়স বাড়ছে না। @মুকুল
ভাল লাগে না, একদম ভাল লাগে না- কোথায় যাই, কার কাছে যাই, কোথায় গিয়ে দাঁড়াই। কী দুর্ভাগ্য- দাঁড়াবার কোন জায়গা নাই!@muquit
ইস!! আমি ও যদি সফর সঙ্গী হতে পারতাম, আমার অনেক দিনের সখ আমেরিকা যাওয়ার.
দেশ সেবক হয়ে যান।
আ মীন, পুরোদমে সরকার দলের রাজনীতি শুরু করে দেন, অন্তত সরকারের পক্ষে আছেন এমন একটা ভঙ্গি করেন যা বিশ্বাসযোগ্য হয়। @Anonymous
সিমু নাসেরের পশ্চাদদেশ চুলকানী দেখে মজাক পাইলাম, /যেমন, আজ দেখলাম ডয়েচে ভেলে ব্লগ পুরস্কার বিজয়ী আলী মাহমেদ তার এক লেখায় আমার বিরুদ্ধে একটি ক্ষুদ্র কুৎসা রচনার চেষ্টা করেছেন।/
http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29252708
Post a Comment