বৈদেশ পর্ব: ববস' নামের একটা ধারাবাহিক লেখা লিখেছিলাম [১]। বৈদেশ পর্ব: তোরোতে লিখেছিলাম: "...আমার জন্য অপেক্ষায় আছে বুড়া বাড়িটা। যার বয়স একশ ছুঁইছুঁই! অতি দ্রুত এর কাছে আমাকে ফিরতে হবে। বুড়া আমার অপেক্ষায় আছে। সবাই আমাকে ফেলে দিলেও এ আমাকে ফেলে দেবে না..."।
এই বুড়া বাড়িটা নামের অভিশপ্ত বাড়িটা আটকে ফেলেছে আমাকে। সবারই যেখানে আছে একটা করে ক্যারিয়ার সেখানে আমার হাতে টিফিন-ক্যারিয়ার। তো, এই বুড়ার নালায়েক সন্তান তিন দিনের মাথায় ঠিক ঠিক বুড়ার কাছে ফিরে এসেছিল। পরিশিষ্ট কবেই লেখা হয়ে গেছে, গল্প শেষ। এরপর বলার আর বাকী থাকে কী!
কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, এই লেখায় অতি প্রয়োজনীয় একটা বিষয় বাদ পড়েছে, অন্তত আমার কাছে! এমন জরুরি বিষয় কেমন করে ভুলে গেলাম এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নাই কারণ হামেশাই দেখি ফাঁকা মস্তিষ্ক আমার সঙ্গে এই খেলাটা খেলে বড়ো আনন্দিত হয়!
লেখাটায় যেটা বাদ পড়েছে তা হচ্ছে চশমা বিষয়ক ভয়াবহ সমস্যা। চশমার বিষয়টা খানিকটা খোলাসা করি। আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন থেকেই আমার চোখ অসম্ভব খারাপ- মাইনাস এইট পয়েন্ট ফাইভ! আমার ভাষায় যেটা বলি, চশমা ছাড়া আমি প্রায় অন্ধ! কালে কালে বরং আমার চোখ আগের চেয়ে ভাল হয়েছে।
তো, প্রাইমারিতেই পড়ার সময় আমি ব্ল্যাকবোর্ডে টিচারদের লেখা প্রায় কিছুই দেখতাম না। এই নিয়ে বড়ো যন্ত্রণা হতো যখন টিচার বললেন, ব্ল্যাকবোর্ডে যা লিখেছি তা খাতায় লেখো। তখন আমার মেজাজ খারাপ হতো, আরে, কী মুশকিল, ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার প্রয়োজন কি, মুখে বললে কি হয়?
আমার বাবা কেমন কেমন করে যেন টের পেয়ে গেলেন আমার চোখ খারাপ। চোখের ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার আঁতকে উঠে বললেন, 'আপনার ছেলের তো চোখ ভীষণ খারাপ, ভীষণ...। আর শোনেন, আপনার ছেলেকে চোখ খারাপ কোন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবেন না'।
তখন বিয়ে-টিয়ে নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না, ছিল না চোখ খারাপ নিয়েও, মাথাব্যথার কারণ ছিল অন্য। যখন আমাকে চশমা ধরিয়ে দেয়া হলো তখন আমার ইচ্ছা করছিল মট করে এটাকে দু-টুকরা করে ফেলি। এ্যাহ, চশমা ধরিয়ে দিলেই হলো, আরে, সেই সময়টায় এই বয়সের ক-জন চোখে চশমা দেয়? অন্তত আমি তো কাউকে পাইনি। কী লজ্জা-কী লজ্জা! 'চারচোইক্খা' বলে যে ছেলেপেলেরা খেপায় এটা তো আর বাবার গায়ে লাগে না! বাবাটা যে একটা কী, অমানুষ-অমানুষ!
এদিকে বাবার কঠিন নির্দেশনা, চশমা চোখে দিয়েই স্কুলে যেতে হবে। বাবাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করতাম, ভয়ও [২] কিন্তু তাঁর এই আচরণের কারণে তখন তাঁকে রাক্ষস-রাক্ষস মনে হতো। যে মা, বাবার সমস্ত কঠিন আচরণ থেকে আমাকে রক্ষা করতেন তাঁকেও দেখলাম নির্দয় আচরণ করতে। তিনি এই বিষয়ে টুঁ-শব্দও করলেন না।
তখন আমার ব্রেন এখনকার চেয়ে ভাল ছিল, অন্তত ছিল বলেই ধারণা করি- প্রয়োজনের সময় যথেষ্ঠ সহায়তা করত। এখন ব্রেনহীন আমি সলাজে বলি, তখন খানিকটা ব্রেন ছিল বলেই মনে হয়। কালে কালে জিনিসটা নাই হয়ে গেছে, আফসোস!
যাই হোক, আমি একটা বুদ্ধি বের করলাম। স্কুলে যাওয়ার পূর্বে চশমা চোখে দিয়ে বের হই, কয়েক কদম গিয়েই চশমা পকেটে পুরে ফেলি। এই নিয়ম আমি হাইস্কুলেও চালু রাখলাম। এমনিতেও নিয়মিত স্কুলে যেতে আমার ভাল লাগত না। তারচেয়ে আমার জন্য অনেক আনন্দের ছিল গোয়াল ঘরে বসে গল্পের বই পড়তে [৩]। তখনকার ভাষায় 'আউট-বই'!
যাই হোক, এই গেল আমি এবং আমার চশমা। জার্মানি যাওয়ার পূর্বে ক-দিন ধরেই তীব্র মাথাব্যথায় ভুগছিলাম। সমস্যাটা কোথায় এটা আঁচ করতে পেরে চোখের ডাক্তারের কাছে গেলাম। যা অনুমান করেছিলাম, তাই। সমস্যাটা চশমার। কী সর্বনাশ! পূর্বে কাছে এবং দূরের কাজ একটা চশমা দিয়েই চলত এখন কাছের এবং দূরের জন্য আলাদা-আলাদা চশমা নিতে হবে। কাছের মাইনাস ফাইভ, দূরেরটা মাইনাস সেভেন। বড়ই যন্ত্রণা!
চশমার দোকানদার কাছেরটা চট করে দিয়ে দিল কিন্তু কি যেন একটা ভজকট হলো দূরেরটা দিতে পারছিল না। এদিকে আমার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যেদিন আমি আখাউড়া ছাড়ব সেদিন সকালে দূরের চশমাটা দেয়ার কথা। দোকানে যাওয়ার পর যখন এই ব্যাটা বলল, 'আসে নাই, আপনের চশমা কাইল ছাড়া পারুম না', তখন আমি মনে মনে ভাবছিলাম গদাম করে ঘুষিটা কোথায় মারা যায়? বিকশিত দাঁতে মারলে কেমন হয় বা নাকটা সমান করে দিলে? ব্যাটা বলে কি, আমার ট্রেন আজ এগারোটায় আর এ কিনা কাল দেবে চশমা!
কিছুই করার নেই, পড়ার জন্য যে কাছের চশমাটা এটাকেই সম্বল করেই রওয়ানা দিলাম। ক্ষীণ আশা, হয়তো ঢাকায় কোনো একটা উপায় করা যাবে। কিন্তু সময়ে কুলালো না। অধিকাংশ সময় নষ্ট হলো এমিরাটসের কারণে। দুবাই এয়ারপোর্টে আট ঘন্টা থাকতে হবে বিধায় হোটেল কূপন এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। অবশ্য এই হোটেল কূপন এদের অসভ্যতার কারণে আমার কোনো কাজেই লাগেনি। দুবাই এয়ারপোর্টে আমার রাতটা কেটেছিল ঘুমহীন!
চুতিয়া শব্দটা এখন আর ব্যবহার করি না নইলে বলতাম এমিরাটসের এটা চুতিয়াগিরি। কারণ দুবাই ইমিগ্রেশন কোনো কারণ ব্যতীত হোটেলে যাওয়ার অনুমতি না দেয়ায়, এমিরাটসের ওখানকার ডেস্কে জানানোর পরও এরা ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এই চশমা আমাকে বড়ো ভুগিয়েছে, পদে পদে। যখন দাউদ ভাই [৪, ৫] আমাকে বলছেন, 'ওই যে দেখছ, মানুষটাকে দেখছ...'। দেখো দিকি কান্ড, বেশ দূরে দাঁড়ানো জিনিসটা মানুষ না উট এটা আমি বলি কেমন করে! মুখে বলি, 'অ, আচ্ছা, হ্যা-হ্যা'।
আমি কথা ঘুরাই, 'আচ্ছা, দাউদ ভাই, যে কবিতা লেখার কারণে আপনাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া দিয়েছিল ওই কবিতাটা এখন পাওয়া যাবে কোথায়'?
দাউদ ভাই এর হদিশ দিতে পারেন না। আমি খানিকটা অবাক হই। জানতে চাই, 'আপনার কবিতাটার নাম যেন কি ছিল'?
এই বুড়া বাড়িটা নামের অভিশপ্ত বাড়িটা আটকে ফেলেছে আমাকে। সবারই যেখানে আছে একটা করে ক্যারিয়ার সেখানে আমার হাতে টিফিন-ক্যারিয়ার। তো, এই বুড়ার নালায়েক সন্তান তিন দিনের মাথায় ঠিক ঠিক বুড়ার কাছে ফিরে এসেছিল। পরিশিষ্ট কবেই লেখা হয়ে গেছে, গল্প শেষ। এরপর বলার আর বাকী থাকে কী!
কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, এই লেখায় অতি প্রয়োজনীয় একটা বিষয় বাদ পড়েছে, অন্তত আমার কাছে! এমন জরুরি বিষয় কেমন করে ভুলে গেলাম এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নাই কারণ হামেশাই দেখি ফাঁকা মস্তিষ্ক আমার সঙ্গে এই খেলাটা খেলে বড়ো আনন্দিত হয়!
লেখাটায় যেটা বাদ পড়েছে তা হচ্ছে চশমা বিষয়ক ভয়াবহ সমস্যা। চশমার বিষয়টা খানিকটা খোলাসা করি। আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন থেকেই আমার চোখ অসম্ভব খারাপ- মাইনাস এইট পয়েন্ট ফাইভ! আমার ভাষায় যেটা বলি, চশমা ছাড়া আমি প্রায় অন্ধ! কালে কালে বরং আমার চোখ আগের চেয়ে ভাল হয়েছে।
তো, প্রাইমারিতেই পড়ার সময় আমি ব্ল্যাকবোর্ডে টিচারদের লেখা প্রায় কিছুই দেখতাম না। এই নিয়ে বড়ো যন্ত্রণা হতো যখন টিচার বললেন, ব্ল্যাকবোর্ডে যা লিখেছি তা খাতায় লেখো। তখন আমার মেজাজ খারাপ হতো, আরে, কী মুশকিল, ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার প্রয়োজন কি, মুখে বললে কি হয়?
আমার বাবা কেমন কেমন করে যেন টের পেয়ে গেলেন আমার চোখ খারাপ। চোখের ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার আঁতকে উঠে বললেন, 'আপনার ছেলের তো চোখ ভীষণ খারাপ, ভীষণ...। আর শোনেন, আপনার ছেলেকে চোখ খারাপ কোন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবেন না'।
তখন বিয়ে-টিয়ে নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না, ছিল না চোখ খারাপ নিয়েও, মাথাব্যথার কারণ ছিল অন্য। যখন আমাকে চশমা ধরিয়ে দেয়া হলো তখন আমার ইচ্ছা করছিল মট করে এটাকে দু-টুকরা করে ফেলি। এ্যাহ, চশমা ধরিয়ে দিলেই হলো, আরে, সেই সময়টায় এই বয়সের ক-জন চোখে চশমা দেয়? অন্তত আমি তো কাউকে পাইনি। কী লজ্জা-কী লজ্জা! 'চারচোইক্খা' বলে যে ছেলেপেলেরা খেপায় এটা তো আর বাবার গায়ে লাগে না! বাবাটা যে একটা কী, অমানুষ-অমানুষ!
এদিকে বাবার কঠিন নির্দেশনা, চশমা চোখে দিয়েই স্কুলে যেতে হবে। বাবাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করতাম, ভয়ও [২] কিন্তু তাঁর এই আচরণের কারণে তখন তাঁকে রাক্ষস-রাক্ষস মনে হতো। যে মা, বাবার সমস্ত কঠিন আচরণ থেকে আমাকে রক্ষা করতেন তাঁকেও দেখলাম নির্দয় আচরণ করতে। তিনি এই বিষয়ে টুঁ-শব্দও করলেন না।
তখন আমার ব্রেন এখনকার চেয়ে ভাল ছিল, অন্তত ছিল বলেই ধারণা করি- প্রয়োজনের সময় যথেষ্ঠ সহায়তা করত। এখন ব্রেনহীন আমি সলাজে বলি, তখন খানিকটা ব্রেন ছিল বলেই মনে হয়। কালে কালে জিনিসটা নাই হয়ে গেছে, আফসোস!
যাই হোক, আমি একটা বুদ্ধি বের করলাম। স্কুলে যাওয়ার পূর্বে চশমা চোখে দিয়ে বের হই, কয়েক কদম গিয়েই চশমা পকেটে পুরে ফেলি। এই নিয়ম আমি হাইস্কুলেও চালু রাখলাম। এমনিতেও নিয়মিত স্কুলে যেতে আমার ভাল লাগত না। তারচেয়ে আমার জন্য অনেক আনন্দের ছিল গোয়াল ঘরে বসে গল্পের বই পড়তে [৩]। তখনকার ভাষায় 'আউট-বই'!
যাই হোক, এই গেল আমি এবং আমার চশমা। জার্মানি যাওয়ার পূর্বে ক-দিন ধরেই তীব্র মাথাব্যথায় ভুগছিলাম। সমস্যাটা কোথায় এটা আঁচ করতে পেরে চোখের ডাক্তারের কাছে গেলাম। যা অনুমান করেছিলাম, তাই। সমস্যাটা চশমার। কী সর্বনাশ! পূর্বে কাছে এবং দূরের কাজ একটা চশমা দিয়েই চলত এখন কাছের এবং দূরের জন্য আলাদা-আলাদা চশমা নিতে হবে। কাছের মাইনাস ফাইভ, দূরেরটা মাইনাস সেভেন। বড়ই যন্ত্রণা!
চশমার দোকানদার কাছেরটা চট করে দিয়ে দিল কিন্তু কি যেন একটা ভজকট হলো দূরেরটা দিতে পারছিল না। এদিকে আমার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যেদিন আমি আখাউড়া ছাড়ব সেদিন সকালে দূরের চশমাটা দেয়ার কথা। দোকানে যাওয়ার পর যখন এই ব্যাটা বলল, 'আসে নাই, আপনের চশমা কাইল ছাড়া পারুম না', তখন আমি মনে মনে ভাবছিলাম গদাম করে ঘুষিটা কোথায় মারা যায়? বিকশিত দাঁতে মারলে কেমন হয় বা নাকটা সমান করে দিলে? ব্যাটা বলে কি, আমার ট্রেন আজ এগারোটায় আর এ কিনা কাল দেবে চশমা!
কিছুই করার নেই, পড়ার জন্য যে কাছের চশমাটা এটাকেই সম্বল করেই রওয়ানা দিলাম। ক্ষীণ আশা, হয়তো ঢাকায় কোনো একটা উপায় করা যাবে। কিন্তু সময়ে কুলালো না। অধিকাংশ সময় নষ্ট হলো এমিরাটসের কারণে। দুবাই এয়ারপোর্টে আট ঘন্টা থাকতে হবে বিধায় হোটেল কূপন এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। অবশ্য এই হোটেল কূপন এদের অসভ্যতার কারণে আমার কোনো কাজেই লাগেনি। দুবাই এয়ারপোর্টে আমার রাতটা কেটেছিল ঘুমহীন!
চুতিয়া শব্দটা এখন আর ব্যবহার করি না নইলে বলতাম এমিরাটসের এটা চুতিয়াগিরি। কারণ দুবাই ইমিগ্রেশন কোনো কারণ ব্যতীত হোটেলে যাওয়ার অনুমতি না দেয়ায়, এমিরাটসের ওখানকার ডেস্কে জানানোর পরও এরা ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দেশে ফিরে এমিরাটসকে এই হেনেস্তার বিস্তারিত লেখার পর, Customer Affairs থেকে Marsha Rozario নামের একজন আমাকে মেইল করে জানিয়েছে, "...I am happy to learn that you were provided with hotel accommodation within the terminal..." এই নির্বোধের উত্তর দেখে আমার হাসি চাপা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। আমি লিখলাম কি আর এ আমাকে উত্তর দিল কী!
মুকিত বিল্লাহ |
পূর্বের এক লেখায় মুকিত বিল্লাহ নামের মানুষটার কথা বলেছিলাম, ইউরোপিয়ান কমিশনে কাজ করেন। আমি যাব ডুজলডর্ফ আর তিনি ফ্রান্কফুট।
তাঁরও একই গতি, তাঁকেও এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে দেয়া হয়নি। আমার অবশ্য খানিকটা শান্তি-শান্তি লেগেছিল, যাক, আমার চেহারার মধ্যে হয়তো ড্রাগ ডিলারের ছাপ আছে বলে কেবল আমাকেই আটকায়নি, মুকিত বিল্লাহকেও আটকিয়েছে।
মুকিত বিল্লাহ নামের মানুষটার কারণে দুবাই এয়ারপের্টের অসহ্য সময়টা পার হয়েছিল কিন্তু এই মানুষটার যে সহায়তার কথা আমি ভুলব না সেটাই উল্লেখ করা হয়নি! আমার চোখের চশমাটা কাছের, দূরের যা দেখি সব অস্পষ্ট-তমোময়। সবচেয়ে কষ্টকর মনে হতো, ডিসপ্লেতে যখন ফ্লাইট শিডিউল দেখতে হতো, তখন।
কপাল! আমার ফ্লাইটে যেন কী একটা ঝামেলা হলো। সব গেট একের পর এক ওপেন হচ্ছে, আমারটা বাদ দিয়ে। আমি খানিক পর পর বলি, 'মুকিত, দেখেন তো ফ্লাইটের কি অবস্থা'? মুকিত দেখে জানান। একটু পর আমি আবারও বলি, মুকিত, দেখেন তো...। তাঁর ফ্লাইট আবার অন্যটা। কখনও তিনি রগড় করতে ছাড়েন না, 'আপনার ফ্লাইট তো যাবে না'।
আমি চেপে রাখা ভয় প্রকাশ করি না, সর্বনাশ, এই কুখ্যাত এয়ারপোর্টে কি আমি আটকা পড়ব, যেখানে সহায়তা করার জন্য কেউ নেই। আমার মনে পড়ে 'টার্মিনাল' মুভির কথা। এমন কি এখানে এয়ারলাইন্সের লোকজনরাও বিচিত্র কারণে অসহযোগিতা করছে। অথচ জার্মানিতে এই এয়ারলাইন্সের লোকজনকেই আমি দেখেছি সহৃদয় আচরণ করতে!
আমার কেবল মনে পড়ছিল মাহাবুব আহমাদ নামের করপোরেট ভুবনের মানুষটার কথা, যিনি অফিসের কাজে হামেশা পায়ে চাকা লাগিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান। দুবাই হয়ে যাচ্ছি শুনে তিনি বলেছিলেন, 'দুবাই এয়ারপোর্ট কুখ্যাত, গেলে বুঝবা'।
দুবাই ছেড়ে যাওয়ার পর হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। একবার ডুজলডর্ফ পৌঁছে গেলে আর চিন্তার কিছু নেই কারণ এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কপালের ফের, ডুজলডর্ফ এয়ারপোর্টে লাগেজ নিয়ে আরেক সমস্যা। লাগেজ খুঁজে পাচ্ছি না, ভুল বেল্টে লাগেজ চলে গেছে! এয়ারপোর্টের লোকজনকে জানাবার পর এরা আমাকে আশ্বস্ত করল, চিন্তার কিছু নেই, ব্যবস্থা হবে। আমাকে অপেক্ষা করতে বলে চার-পাঁচজন বিভিন্ন দিকে গিয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করল। অল্পক্ষণেই আমাকে জানানো হলো, 'তোমার সমস্যার সমাধান হয়েছে। তুমি ওই ডিসপ্লেবোর্ডে...'। আমি মনখারাপ করা শ্বাস ফেললাম, আবারও ডিসপ্লে বোর্ড, আবারও আমার চশমা! হায়, এখন তো আর মুকিত বিল্লাহ নেই।
এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আর সমস্যা হয়নি। যে সহৃদয় মানুষরা আমাকে নিতে এসেছিলেন আমি এঁদের পিছু পিছু- এঁরা ডানে গেলে আমি ডানে, বাঁয়ে গেলে বাঁয়ে...।
দাউদ ভাইয়ের সঙ্গে |
আমি কথা ঘুরাই, 'আচ্ছা, দাউদ ভাই, যে কবিতা লেখার কারণে আপনাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া দিয়েছিল ওই কবিতাটা এখন পাওয়া যাবে কোথায়'?
দাউদ ভাই এর হদিশ দিতে পারেন না। আমি খানিকটা অবাক হই। জানতে চাই, 'আপনার কবিতাটার নাম যেন কি ছিল'?
দাউদ ভাই বলেন, 'কবিতাটার নাম হচ্ছে, কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়। অনেক বড়ো কবিতা। লিখেছিলাম রাত জেগে'।
আমি বিড়বিড় করি, কালো সূর্যের, কালো জ্যোৎস্নার...।
আমি বিড়বিড় করি, কালো সূর্যের, কালো জ্যোৎস্নার...।
সহায়ক লিংক:
২. দুম করে মরে যাওয়া...: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_21.html
৩. অপকিচ্ছা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_02.html
৪. দাউদ হায়দার, ১: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_21.html
৫. দাউদ হায়দার, ২: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_7633.html
৪. দাউদ হায়দার, ১: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_21.html
৫. দাউদ হায়দার, ২: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_7633.html
No comments:
Post a Comment