ছবি ঋণ: যুগান্তর |
মান্ধাতার আমল? আচ্ছা, মান্ধাতাটা কে আর এর আমলটা আবার কবে থেকে শুরু হলো?
খোঁজ করতে গিয়ে মজার তথ্য পাওয়া গেল। হিন্দু পুরাণ মতে, মান্ধাতা ছিলেন ভারতবর্ষের সূর্যবংশের রাজা, রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। যুবনাশ্বের বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছিল না। অনেক তপস্যার পর সাধুরা যুবনাশ্বরের স্ত্রীর জন্য বিশেষ পানি দেন, যা পান করলে বাচ্চা হবে। কিন্তু মন্ত্রপূত পানিটা ভুলে রানীর বদলে রাজা খেয়ে ফেললে রাজা নিজেই গর্ভধারণ করেন এবং তার সন্তানও হয়! কিন্তু এই শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন ব্যবস্থা ছিল না বলে দেবরাজ ইন্দ্র এর সমাধান দেন; 'ধাস্যতি মাময়'- এখান থেকেই এই শিশুর নাম, মান্ধাতার উৎপত্তি।
যাই হোক, আমি পূর্বের একটা লেখায় লিখেছিলাম, হরতাল মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নাই যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা ছবির ওই মহিলার মত খানিকটা কষ্ট করে দেখান [১]। এই বক্তব্যটা ছিল দেলোয়ার সাহেবের প্রতি।
এখন দেখছি সৈয়দ আশরাফ সাহেবের বেলায়ও এটা প্রযোজ্য। আশরাফুল ইসলাম মানুষটা ভারী সজ্জন কিন্তু আমাদের দেশে দেশের চেয়ে দল বড়ো! মিডিয়ায় আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, "...হরতাল আমাদের সংবিধানের একটা অংশ।...আইন করে হরতাল বন্ধের ইচ্ছা সরকারের নেই। শান্তিপূর্ণ হরতাল...।"
একজন দুর্বল পায়ের মানুষ যেমন ক্রাচ জিনিসটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তেমনি আমাদের রাজনীতিবিদরা হরতাল নামের ক্রাচ ব্যতীত ভাবতেই পারেন না। এমনকি আগাম ক্রাচ কিনে রাখেন কখন কাজে লাগবে বলে। তাই এঁরা আইন করে এটা বন্ধ করবেন না কারণ এঁরা জানেন অতীতে এই ক্রাচটা এঁরা অবলীলায় ব্যবহার করেছেন, ভবিষ্যতেও লাগার সমূহ সম্ভাবনা। তাই অতি প্রয়োজনীয় অস্ত্রটা, হরতাল নামের ক্রাচ হাতছাড়া করা যাবে না।
সৈয়দ আশরাফের এটা অজানা থাকার কথা না। 'শান্তিপূর্ণ হরতাল' এটা কেবল আপনাদের সু-বচন, শুনতে ভাল শোনায়। বাস্তবে কি হয় এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হতে হয় না। হরতালের নামে একটা মানুষকে খুন করে ফেললে তাকে কেউ খুনি বলবে না, একটা গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেললে, আগুন ধরিয়ে দিলে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। উল্টো পুলিশ আরও ধমকাবে, মিয়া, জানেন না হরতাল; আবার গাড়ি নিয়ে বের হইছেন।
এমন সময়ে পুলিশও অপরাধ করলে তাকেও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় না বরং 'সাবাসি' পাওয়া যায়। হরতালের পূর্বে যে ধড়পাকড় শুরু হয়, কোমরে দড়ি বেঁধে দলে দলে লোকজনকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়, এরা সবাই কি অপরাধি?
এঁদের মধ্যে থেকে নিরপরাধ কাউকে কি পাওয়া যাবে না যে নিরীহ মানুষটা মাত্র গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন, পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আহা, পুলিশের বুঝি লক্ষ্যমাত্রা নেই? দেখা গেল, প্রতি থানার ভাগে পড়েছে ৫০ জন অথচ থানার লোকজনরা ধরতে পেরেছেন মাত্র বিশ-পঁচিশ জন। ওসি সাহেবের চেয়ার থাকবে বুঝি! হয়তো এদের নিজেদের মধ্যে কথা চালাচালি হয়, বস, অবস্থা কেরোসিন। ১০টা শর্ট আছে। পারলে এদিকে চালান কইরা দিয়েন।
তো, মান্ধাতার আমল থেকে কিনা জানি না তবে হরতাল ছিল, আছে, থাকবে। নতুন মাত্র যোগ হলো, 'শান্তিপূর্ণ হরতাল'।
হরতালে যখন গুলি করা হবে তখন আমাদের বলতে হবে, ভাই, আস্তে গুলি কইরেন। বা গাড়ির কাঁচ গুড়িয়ে দেয়ার সময় আগেভাগে জানিয়ে দিতে হবে, কারণ নইলে চুলে কাঁচের গুড়ো আটকে থাকবে যে।
*জনাব আশরাফ, আপনাকে কি মনে করিয়ে দেব আপনার নেত্রী হরতাল প্রসঙ্গে কি বলেছিলেন? "I am giving announcement to shun the politics of hartal both as prime Minister and the president of Awami League in the greater interest of the country," the Prime Minister declared while exchanging views with editors of different national dailies and news agencies at her office. (The Bangladesh Observer, November 16, 1998)
ফিরোজ গাজী, কালের কন্ঠ |
হা ইশ্বর, এরা নাকি আমাদের পুলিশ বাহিনীর লোকজন!
সহায়ক লিংক:
১. হরতাল...: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_23.html