দাবা নাকি বুদ্ধিমানদের খেলা। তবে এও প্রমাণ হয় না, যারা খেলেন তারা সবাই বুদ্ধিমান। এটা সবার জানা, খেলাটা দুই জনে খেলা হয়, ঘর থাকে ৬৪টা। খেলায় রাজা-মন্ত্রী, হাতি-ঘোড়া, পাইক-পেয়াদা সবই থাকে।
কিন্তু এখন দাবা নামের যে খেলাটার কথা বলছি এখানেও সবই আছে কেবল ৬৪টা ঘরের সংখ্যাটা একটু বেশিই। আনুমানিক ১৬ কোটি! এখানে কেবল ঘরের তারতম্য হবে, এই যা! সাদা পক্ষ, নীল পক্ষ এই দুই দলই খেলবে- এরা কখনও এদিক কখনও ওদিক, এইই পার্থক্য। অন্যরা কেবল দর্শক।
যে খেলাটা শুরু হয়েছিল খেলাটা ছিল খানিকটা অসম। দু-পাশে দু-পক্ষ, সাদা, নীল। সাদা প্রথম থেকেই মন্ত্রী ছাড়া খেলছে। দাবাড়ুরা জানেন মন্ত্রী ছাড়া খেলাটা কত কঠিন, খেলায় হার প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু দাবায় শেষ কথা বলতে কোন কথা নাই। ভুল চাল দিলেই কখন দান উল্টে যাবে এটা আগাম বলা মুশকিল।
যেহেতু খেলাটা শুরু করেছিলেন সাদা পক্ষ মন্ত্রী ব্যতীত, তাই প্রতিপক্ষের জন্য একটা ফাঁদ পাতার বড়ো প্রয়োজন ছিল। একটা বাড়ি সেই সুযোগ এনে দেয়। আইনের মারপ্যাঁচ আদালতের ঝুল-বারান্দায় ঝুলতে থাকুক। আর মাত্র কয়েক দিন, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত আপিলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করলে ইস্রাফিল তাঁর শিঙ্গা খোঁজা শুরু করতেন বলে মনে হয় না।
কিন্তু প্রতিপক্ষ নীল পক্ষকে ফাঁদে পা দিতে হবে যে! তো, এখুনিই উচ্ছেদ অভিযান শুরু। আর্মি নামের সৈন্যদের এগিয়ে দেয়া হলো। দাবার নিয়ম হচ্ছে সৈন্যরা কেবল অন্ধের মত এগুতেই জানে, কেবল প্রতিপক্ষকে শুইয়ে ফেলতে হলে এরা খানিকটা ভঙ্গি বদল করে।
খালেদা জিয়াকে আমরা মিডিয়ায় দেখলাম, বিস্তর কান্নাকাটি করতে। বলেছেনও, "...আমি অপমানিত, লাঞ্ছিত, লজ্জিত বোধ করছি..."। এটা আগেই বুঝলেই ভাল ছিল। ভাল কথা, সব বাদ দিলেও একজন সিভিলিয়ান হয়ে ক্যান্টনমেন্টে এতো নিয়ম-কানুন মেনে তিনি থাকতেন কেমন করে?
একজন সিভিলিয়ান সূক্ষ বোধ নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে থাকতে পারেন এটা অন্তত আমি মনে করি না। আমার মত সাধারণ মানুষ ক্যান্টনমেন্টের বাইরের রাস্তা দিয়েও যেতে আগ্রহী না। যেদিন [১] আমাকে উম্মুক্ত রাস্তায় চলাচলে বাঁধা দেয়া হয়েছিল সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই রাস্তা আর মাড়াব না। এই প্রতিজ্ঞা এখনও মেনে চলি।
আমি আগের একটা লেখায় লিখেছিলাম [২], ঔচিত্য বোধ প্রবল হলে ওই বাড়িটা অনেক আগেই থুথু ফেলে চলে আসা উচিৎ ছিল।
জনতা এতো খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে না। খালেদা জিয়ার অভিব্যক্তি দেখে, সাদা পক্ষ খালেদা জিয়ার সপক্ষে অধিকাংশ জনতা এক নিমিষেই চলে এলো। দাবার এই চালে প্রতিপক্ষ সরকার নামের নীল পক্ষকে শুইয়ে ফেলা যেত, রাজা চেক।
কিন্তু খেলাটা যে দাবা, চালটা নির্ভর করে যে খেলছে তার উপর। উল্টাপাল্টা চাল দিলে যা হয়, হরতালের নামে ঈদের ঠিক আগে দেশটাকে বানিয়ে ফেলা হলো এই গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার, যেখানে ১৬ কোটি মানুষ কয়েদী। কোণঠাসা সরকার নামের নীল পক্ষ আবারও সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এলো।
দাবা বুদ্ধির খেলা। কঠিন প্রতিপক্ষ হলে খেলাটা চলতে থাকে, কতটা সময় কে বলতে পারে...।
সহায়ক লিংক:
১. ব্লাডি সিভিলিয়ান...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
২. বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_24.html
4 comments:
টিভি চ্যানেল গুলি দিনব্যপী এই অশ্লীল দাবা খেলাটি সম্প্রচার করেছে। দাবার গুটি গুলো কিভাবে মার খায় স্টেশন টার্মিনালে তাও দেখিয়েছে ধারাবর্ণনা দিয়ে। বড় নির্মম ছিল এই দাবা খেলা।
-একজন দাবার গুটি
বস্, খালেদা ম্যাডাম তো আর ব্লাডি সিভিলিয়ান না ;)। ব্লাডি সিভিলিয়ান কি জিনিস সেইটা উনারা বুঝলে তো হইতই।
বরং উনাদের কাছে আর্মি হইলো ব্লাডি আর্মি। আর্মি যেমন যখন তখন আপনার-আমার চলাচলকে আটকায়ে দেয়, ম্যাডামের গাড়ি যাওয়ার সময় তেমনি আবার আর্মির ব্যাটাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায় :(
হ্যাঁ, আমরা দাবার গুটি @Omio Ujjal
ক্ষমতায় থাকলে ব্লাডি আর্মি...@muquit
Post a Comment