সামাজিক ব্যবসার আড়ালে 'শক্তি' দই এসেছে, 'ভেওলিয়া' পানি এসেছে, 'এডিডাস' জুতা আসছে, আগামীতে 'জ্যাকসনিয়া' বাতাস আসবে। আশা করছি, এই সামাজিক জুতা না খেয়ে পায়ে দিলে ক্ষুধা কম লাগবে।
হরলিকস বেচারারা এখন নামকরা স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ধরে এনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ঘটা করে বলাচ্ছে, প্রকারান্তরে কেমন করে হরলিকস গেলাতে হবে। হরলিকস খেলে পাঁচ ফুটের বঙ্গালের আট ফুট 'টলার' সন্তান হবে কেমন করে! বেচারা হরলিকস, এরা সম্ভবত ইউনূস সাহেবের খোঁজ পায়নি! করপোরেট বন্দুক রাখতে ইউনূস সাহেবের প্রশস্ত কাঁধ আছে কোন দিনের জন্যে!
কালে কালে এই সব কোম্পানির জন্য মামা আবদার করবেন [২], তখন আমরা তাঁর ভাগিনারা সেই আবদার রক্ষা না করে উপায় কী!
ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
তিনি আমাদের গ্রামের বাচ্চাদের শক্তি দধি খাইয়ে খাইয়ে দেশময় পুষ্টির মহোদধি বানিয়ে দেন। হাভাতে বাচ্চাদের কেমন তন্দুরস্ত-নীরোগ করে দিচ্ছেন তার নমুনা আমরা দেখতে পাই এই ছবিতে।
সুলতান সাহেব এদের হৃষ্টপুষ্ট দেখার স্বপ্ন দেখতেন আর আমাদের ইউনূস সাহেব বাস্তবে তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন!
মিডিয়া ইউনূস সাহেবের মুখ থেকে কি শোনাচ্ছে তা আমরা একটু শুনি:
"...দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামর্থ্যের কথা ভেবে প্রতিটি ৬০ গ্রাম ওজনের কাপের দাম রাখা হয়েছে সাত টাকা...।" (প্রথম আলো, ২৭ নভেম্বর, ২০১০)
আরেক প্রিন্ট মিডিয়া যা বলছে:
"একটি শক্তি দইয়ের দাম ছয় টাকা...।" (কালের কন্ঠ, ৩১ অক্টোবর, ২০১০)
এ পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে ইউনূস সাহেব বলছেন, "...তিনি এখন এককাপ দই বিক্রি করেন ছয় টাকায়। প্রতি কাপে এক টাকা ত্রিশ পয়সা কমিশন পান...।"
একালের মহা সুদখোর ইউনূস সাহেবের সুদের হার যেমন আজও আমার বোধগম্য হয়নি তেমনি তাঁর কথাও! তিনি বলছেন, এককাপ দই বিক্রি হয় ছয় টাকায়। কমিশন এক টাকা ত্রিশ পয়সা। মানে কী! কাপের দাম কি চার টাকা সত্তর পয়সা?
শুনতে তো ভালই লাগে। যাক, দুই চুমুক দইয়ের দাম তাহলে ছয় টাকা। অবশ্য এই কুতর্কে আমি যাব না ছয় টাকা এই দই খাওয়ালে শিশুরা এই ছবির মত হৃষ্টপুষ্ট হবে, কি হবে না! কারণ ইউনুস সাহেব বলেই দিচ্ছেন, "...সপ্তাহে দুই কাপ খাওয়ালেই তার পুষ্টির চাহিদা মিটে যাবে...।"
অবশ্যই মিটে যাবে। অবশ্য এটা এই দেশের পুষ্টিবিদরা ভাল বলতে পারবেন, এই দই সপ্তাহে দুবার খেলেই পুষ্টির 'পু' কোথায় থাকবে আর 'ষ্টি' কোথায় থাকবে। এই বিষয়ে আমার কোন মতামত দেয়াটা সমীচীন হবে না।
কিন্তু আমাদের মিডিয়ার এই বোধ, দায়িত্ব, এই ইচ্ছাটাই নাই, ইউনূস সাহেব নামের মানুষটার সব কথাই আকাশলোকের বাণী না যে কথায় কথায় কেবল অদৃশ্য ল্যাজ নাড়াতে হবে।
এক চুমুক যেখানে দইয়ের কাপ বিক্রি হয় দশ টাকায় সেখানে মিডিয়ার পক্ষে ছয় টাকা-সাত টাকা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলার অর্থ কী!
সব বাদ দিলেও এদের দইয়ের কাপের গায়েই লেখা আছে আট টাকা! যেখানে এরা নিজেরাই লিখে রেখেছে আট টাকা সেখানে ছয় টাকা-সাত টাকা বলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার অর্থ কী!
নাকি আকাশলোকের বাসিন্দা মুখ হাঁ করলে 'হর্স মাউথ' মনে না-হয়ে বেদবাক্য মনে হয়? তাই বুঝি, না? আ-হা, রতনে যে রতন চেনে...।
*আমাদের ইউনূস সাহেব চড়া সুদে নিম্নবিত্ত মহিলাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন এটা আর যেই বিশ্বাস করুক আমি করতাম না। এই বিশ্বাসটা দৃঢ় হয়েছিল ন্যানো ক্রেডিট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে [৮]। ন্যানো ক্রেডিট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, জিরো ইন্টারেস্টেই এরা টাকা শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান সেখানেচড়া সুদ দিয়ে? এই সুদ দিয়ে ঈশ্বর ব্যবসা করলেও সম্ভবত মুখ থুবড়ে পড়তেন!
সুফিয়া খাতুন নামের যে মহিলাকে দিয়ে ইউনূস সাহেবের জোবরা গ্রাম থেকে জোব্বা গায়ে দিয়ে যাত্রা শুরু সেই ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। তাঁর সন্তান বলেন, "..."গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘরের পাশের দোতলা পাকা দালান দেখিয়ে দিয়ে ছবি তোলায়। ...চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছিলো। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে আম্মাকে অন্যজনের কাছ থেকে আবার ঋণ নিতে হয়েছিলো।" (bdnews24.com)
**ইউনূস সাহেব দরিদ্র হটাবার নাম করে কেমন করে টাকা-পয়সা নয়-ছয় করেছেন তার খানিকটা নমুনা পাওয়া যাবে এখানে, দরিদ্রদের ইউনূসফাঁদ: http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=143014&hb=top
সহায়ক লিংক:
১. ওই আসে মহাপুরুষ: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_04.html
২. মামা বাড়ির আবদার: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_12.html
৩. bdnews24.com: http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?id=143190&cid=2
1 comment:
আপানার তথ্যবহুল পোস্টটার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বিডিনিউজ
Post a Comment