একসাথে আজীবন থাকতে চেয়েছিলেন। দু'জনই পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় একসাথেই চলেও এসেছিলেন। একজন চাকুরি নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, অপরজন ইংরাজি বিভাগে। তাঁরা হলেন অধ্যাপক আনোয়ার পাশা এবং অধ্যাপক রাশীদুল পাশা।
যুদ্ধের সময় রাশীদুল হাসান নিজের বাসা ছেড়ে বন্ধু আনোয়ার পাশার বাসায় চলে আসেন। দু'বন্ধু এক সাথে থাকলে বুকে আশা থাকে, সাহস থাকে।
১৪ ডিসেম্বর। সকাল সাতটায় আনোয়ার পাশার ঘুম ভেঙ্গেছে। গড়িমসি করে বিছানা ছেড়েছেন আরও পরে। তারপর দু'বন্ধু মিলে ন'টার দিকে নাস্তা করেছেন, রেডিও শুনেছেন। নটার খানিক পরে আনোয়ার পাশার স্ত্রী পেছনের বারান্দা দিয়ে দেখলেন একটি লাল গাড়ি এসে থামল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার চত্ত্বরে। কয়েকজন রাজাকার নামল।
আনোয়ার পাশা এরই মধ্যে স্ত্রীর সাথে দু'একটা খুচরো সাংসারিক আলাপ সেরেছেন। রাশীদুল হাসানের সাথে গল্পে বসার আগে হাসতে হাসতে স্ত্রীকে বললেন, 'কাসুটা উঠুক, তারপর তোমার জন্য ভাল করে বাজার-টাজার করে দেব'।
রাশীদুল হাসানের স্ত্রী তখন সংসারের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত।
কিছুক্ষণ পর দরজায় শব্দ। দরজা খুললেন আনোয়ার পাশার ছোট ভাই। তারা দরজার মুখে দাঁড়িয়ে। আনোয়ার পাশা এবং রাশীদুল হাসান তখন ড্রইংরুমে। একজন আনোয়ার পাশাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, 'আপনার নাম আনোয়ার পাশা'?
'হ্যাঁ'।
'আপনি বাইরে আসুন'।
এমন সময় তাদের চোখ পড়ল রাশীদুল হাসানের দিকে। তারা জিজ্ঞেস করল, 'আপনার নাম'?
'রাশীদুল হাসান'।
'আপনিও চলুন'।
সেই সময় রাশীদুল হাসানের স্ত্রী এসে দরজার মুখে দাঁড়ালেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি পাথর হয়ে গেলেন। আনোয়ার পাশা এবং রাশীদুল হাসান তাকিয়ে আছেন। চোখ ভেজা। ...একসময় আলবদরদের সঙ্গে পা বাড়ালেন। আনোয়ার পাশার স্ত্রী জানালা দিয়ে শুধু দেখলেন তাঁদের গায়ের চাদরে তাঁদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
(সেই শেষ যাওয়া। এই দু-জন মানুষ একসাথে আজীবন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একসাথে মৃত্যুও চেয়েছিলেন কিনা এটা কখনও জানা হবে না...।)
*১৪ ডিসেম্বর '৭১-এ আল-বদরদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্ত্রীদের সাক্ষাত্কারের ভিক্তিতে রচিত।
ঋণ: বিচিত্রা, ১৯৭৩/ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড
সহায়ক সূত্র:
১. নিধন: http://tinyurl.com/37urdrg
No comments:
Post a Comment