ফুলের সৌন্দর্য আমাকে আকর্ষণ করে না এমনটা বলছি না বা ফুলের পাপড়ি কি কচকচ করে খাওয়া যায় এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়ার গোপন কোন ইচ্ছাও আমার নাই। এরিকা পাম টাইপের গাছগুলোয় ফুল হয় না সত্য কিন্তু এগুলোরও আলাদা সৌন্দর্য আছে। চোখের আরাম! এটা খুব জরুরি একটা বিষয়! আজকাল চোখের আরাম দেয় এমন বিষয়গুলো ক্রমশ কমে আসছে।
রাস্তার পাশে ফুলের গাছ লাগানো হবে এই নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই কিন্তু আমার অবাক লাগে কেন আমরা ফলের গাছ লাগাই না! আমাদের এই প্রবণতাটা কবে থেকে কমে গেল? এই কু-তর্কে যাব না কেন বাড়িতে ধনী লোকজন ফুলের গাছের পাশাপাশি ফলের গাছ লাগান না। এটা এদের জন্য ঝুকিপূর্ণ কারণ এই সব নব্য ধনীরা কোন অবস্থাতেই স্বীকার করেন না বা কোন সূত্র ফেলে রাখেন না যাতে করে এটা স্পষ্ট হয় তিনি বা তার বাবার কৃষিকাজের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল। এটা আরেকটা ঢং হয়েছে, কারও খানিকটা পয়সা হলেই তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন তার গা থেকে মাটির গন্ধটা মুছে ফেলতে। শীতে আমি গোসল শেষে গায়ে সরষে তেল মাখি এটা বলার পর অনেককে দেখি ছোট করে তাকাতে। আবে শ্লা, আমি কি একটা শুঁয়োপোকা?
আমার বৈঠকখানায় অনেক হাবিজাবির জিনিসের সঙ্গে আস্ত একটা লাঙ্গল আছে। এটা নিয়ে অনেকের প্রশ্নের শেষ নেই, মাথাব্যথারও অন্ত নেই। অনেকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমার যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করেন! এবং এটাও আমাকে মনে করিয়ে দিতে ছাড়েন না লাঙ্গল চালাবার জন্য তেমন কোন জমি আমার নাই, তাহলে লাঙ্গল কেন, বাওয়া? এই সব নির্বোধরা কেন বুঝতে চান না, এই লাঙ্গলই সমস্ত কিছুর উৎস! আমরা এই গ্রহে নির্বাসিত হলাম যে খাবারের জন্য, যে খাবারের জন্য মা তার সন্তানকে বিক্রি করে দেয় সেই খাবারের সংস্থান হয় এই লাঙ্গল দিয়ে। এদের এটা আর বলা হয়ে উঠে না, এবার চুভাইরা ঠান্ডা মাথায় ভাবুক দিকি আমি কী লাঙ্গল ঝুলিয়ে রাখব, নাকি এদেরকে!
যাই হোক, রাস্তার পাশে প্রচুর জায়গা পড়ে থাকে নানা পদের গাছ লাগাতে দেখি কিন্তু ফলের গাছের হদিস নাই! অন্তত রাস্তার পাশে ফলের গাছ না-লাগাবার পেছনে যেসব কঠিন যুক্তি শুনি তা হচ্ছে, আরে, চোরার যন্ত্রণায় এই ফল থাকব? কী আশ্চর্য, খাক না, নিক না চোর- এই চোরদেরও তো খেতে হয়। হোক না তার খাদ্য সমস্যার সমাধান। চোর খেল নাকি কাক তাতে সমস্যা কোথায়? এর বাইরেও অনেক মানুষের পেটে এটা যাবে, লিকলিকে যেসব বাচ্চারা ক্ষুধার্ত ঘুরে বেড়ায় এরাও তো খেতে পারবে।
আফসোস, অন্তত ওই ভিক্ষুকের মত আমরা হতে পারব না। যে ভিক্ষুক কেবল ভিক্ষা করে করে রাস্তার পাশে হাজার হাজার তাল গাছ লাগিয়েছিলেন! এই মানুষটাকে আমরা মাথায় করে রাখতে পারলাম না, ক-দিন আগে মানুষটা মরেই গেলেন। আফসোস, অভাগা জাতি, এই দেশে কত তুচ্ছ মানুষকে নিয়ে হইচই হয়, পুরস্কার দিয়ে নর্তন-কুর্দন করে লোকজনের জিব বেরিয়ে যায়, সরকারি লোকজনের অন্তর্বাস খুলে খুলে পড়ে অথচ এই বুড়ার কথা মনে ছিল না!
স্টেশন চত্বরে এই দৃশ্যটা দেখে থমকে দাঁড়ালাম। কলাগাছের মত এই বাহারি গাছটার নাম আমি জানি না, এটায় অবশ্য কোন ফল ধরে না; সৌন্দর্যের জন্য লোকজন অনেক দাম দিয়ে লাগায়। কিন্তু এর ঠিক গা ঘেঁষে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে একটা পেপে গাছ। দেখো দিকি কান্ড, গাছভরা আবার পেপেও! আমার কেন যেন মনে হচ্ছে অনেক দিন এমন চমৎকার দৃশ্য দেখি না।
আমি এমন দৃশ্য দেখারও স্বপ্ন দেখি, এই দেশের রাস্তার পাশে পাশে পেপে-টেপে গাছ, বিভিন্ন ফলের গাছ দিয়ে ছেয়ে আছে। প্রত্যেকটা গাছ ফলের ভারে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। এবং এই দেশের শিশুগুলো অপুষ্টিতে ভোগা না...।
No comments:
Post a Comment