Search

Monday, January 10, 2011

দাদারা দাদা, আমরা হাঁদা

আজ একজন আহমদ ছফার [১] তীব্র অভাব অনুভব করছি। এই সব মানুষরা কেন যে দুম করে মরে যান! এ্যাহ, মরে গিয়ে যেন আমাদের মাথা কিনে নেন! আমাদের দেশের বুদ্ধির ঢেঁকিরা যখন দাদাদের লেখা নিয়ে নিজেদের হাতের তালু ঘষে ঘষে নিজেদের হাতের রেখা মিটিয়ে ফেলছিলেন তখন ছফা গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দাদাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন। 
অন্যদের কথা জানি না কিন্তু এতে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নাই এই মানুষটা পা টেনে টনে তাঁর ভারী শরীরটা নিয়ে ঠিক ঠিক ভারতীয় দূতাবাসের সামনে হাজির হয়ে যেতেন। হাতে দাহ্য পদার্থের টিন, ঠোঁটে চিরাচরিত সিগারেট। না-না, তিনি কাপুরুষ না যে দাহ্য পদার্থ দূতাবাসে ছুঁড়ে মারতেন; স্থির চোখে তাকিয়ে সময় বেঁধে দিতেন, হয় দাবী মেনে নাও নইলে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেব। আমি জানি ছফার চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা এদের কারও থাকতে পারে না। মানুষটা হা হা করে হাসতে হাসতে নিজের গায়ে আগুনটা ধরিয়েই দিতেন।
আফসোস, ছফাপুরান [২] লিখতে লিখতে ছফারা মরে যান আর এই দেশে থেকে যায় অসংখ্য নপুংশক।

হিউম্যান রাইটস জানাচ্ছে, "এক দশকে বিএসএফ ৯০০ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে এবং এই কারণে এদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি"।
আমার ধারণা এই সংখ্যাটা আরও বেশি কারণ এই অভাগা দেশের প্রতিটি আদম সন্তানের খোঁজ রাখার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রযন্ত্রের কোথায়? বিএসএফ আমাদের শিশুদের ধরে নিয়ে যায়; রাষ্ট্র দূরের কথা মিডিয়ায়ও এই আপডেট আমরা জানতে পারি না [৩]!
ছবি ঋণ: শুভ্রদ্বীপ পাল, আনন্দবাজার পত্রিকা
(কৃতজ্ঞতা: Diganta Sarkar)
সম্প্রতি বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে ফেলানী নামের এক কিশোরীকে। মিডিয়া জানাচ্ছে দীর্ঘ সময় কাটাতারে এই অভাগা মানুষটার লাশ ঝুলছিল। দীর্ঘ সময়, কতটা সময়? আশ্চর্য, এই প্রযুক্তির যুগে কেউ একজন এর ছবি তুলে রাখতে পারল না? (যাক, একটা ছবি পাওয়া গেছে। তাও দাদাদেরই কল্যাণে।)

আমরা কেবল জানতে পারছি বিএসএফ নামের খুনিদের খুনগুলোর কথা, এরা কয়টা খুন করল কিন্তু এদের নির্যাতনের সমস্ত তথ্য কি আমাদের কাছে আছে? আমি যে স্কুলগুলো চালাই এর একটা হচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। আসা-যাওয়ার পথে কৃষক-আম জনতার সঙ্গে কথা হয়। এদের মুখে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদেরকে নির্যাতন করার যে রোমহর্ষক বর্ণনা শুনি তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, গা কাঁপে। বুট জুতা পরে কয়েকজন মিলে নিরীহ কৃষকের উপর দাঁড়িয়ে হাড় ভেঙ্গে ফেলা হয়, রগ কেটে পানিতে ফেলে দেয়া এদের কাছে তো ডালভাত!

ফেলানী হত্যার মাত্র দুই দিন পরই এরা হত্যা করেছে আরও দুই বাংলাদেশিকে! এই সব নিরন্ন মানুষদের সংখ্যায় কি আসে যায়। এরা তো আর কেউই ভিআইপি না। ভিআইপি কোন ছার, ভিআইপিদের ছেলেপুলে ভারত যাবেন বলে ইউএনও উপজেলার সমস্ত কাজকাম ফেলে ফ্যা ফ্যা করে স্টেশনে চক্কর লাগান। ভিআইপিদের ছেলেপুলেদেরকে উস্তম-পুস্তম হয়ে স্যালুট ঠুকতে ঠুকতে সীমান্তে দিয়ে আসেন, ওখানে আবার কোলে করে দাদারা নিয়ে যান। এরা খুশি, দাদারাও খুশি।
অনেকে অখুশি হয়ে এই প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন, সীমান্ত টপকালে গুলি তো হবেই। তাই বুঝি, দাদারা তো দেখি বড়ো নীতিবান! আচ্ছা, আমাদের দেশে ফেনসিডিল দিয়ে যে দাদারা বন্যা বইয়ে দেন, কেবল বাংলাদেশে পাঠাবার জন্য সীমান্তে অসংখ্য ফেনসিডিলের কারখানা খুলে বসেন; দাদারা যে তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ গুড়ো দুধ, জিরা আমাদের এখানে পাঠিয়ে দেন তখন বুঝি নীতিতে বাঁধে না? দাদাদের ফেনসিডিল খেয়ে আমাদের যুবকদের ঝিমায়।

আচ্ছা, আমাদের দেশের চাকা যারা ঘোরান বনবন করে এরা কি জানেন কত হাজার কোটি টাকা কেবল ফেনসিডিল বিক্রি করে দাদারা হাতিয়ে নিচ্ছেন? আমি নিশ্চিত, জানেন না! ফেনসিডিলের মূল উপাদান কোডিন। দাদাদের বানানো ফেনসিডিলের নামে যে বোতল আমাদের দেশে হাজার টাকায়ও বিক্রি হয় সেই বোতল বানাতে আমাদের দেশের অষুধ কোম্পানিগুলো খরচ পড়বে স্রেফ ত্রিশ টাকা। শুনতে ভাল লাগবে না কিন্তু আমার পরামর্শ, দেশেই ফেনসিডিল বানাবার অনুমতি দেয়া হোক। দাদাদের থলথলে চর্বি আর বাড়াতে না-চাইলে এর কোন বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না।
এই প্রসঙ্গ থাকুক, সত্যিই কি বিএসএফ এই অবস্থায় গুলি চালাতে পারে? বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান গতকাল বিবিসিকে বলেছেন, "বিএসএফ মাঠপর্যায়ের নিয়মনীতি (গ্রাউন্ড রুল) বারবার ভঙ্গ করছে। গ্রাউন্ড রুলে এ জাতীয় অনুপ্রবেশের ঘটনায় কোনো অবস্থায় গুলি ছোড়া যাবে না..."।

পত্রিকায় দেখছি, ফেলানীর এই খবরটার, কফিনের ছবিটার পাশেই ছাপা হয়েছে, "আইপিএলে সাকিবের দাম ৩ কোটি"।
এই দিন আমি বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি আলোচনা তুঙ্গে, তিন কোটি...সাকিব ইত্যাদি। কোথাকার কোন ফালানীকে কে মেরে ফেলল এই নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কোথায় আমাদের! আর কীই-বা দায় পড়েছে সাকিবের। দাদাদের এই অন্যায়ের প্রতিবাদে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে দাদাদের গালে কষে থাপ্পড় মারার মত জোর কোথায় সাকিবের।

আর আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী লেখক মহোদয়গণ? চুতিয়া শব্দটায় অনেকের আপত্তি থাকার কারণে আমি এই শব্দটা বলা থেকে বিরত থাকছি, এমনকি চুতিয়াকে কুতিয়াও বলব না। লালনের কথা ধার করে বলি, 'আট কুঠুরি নয় দরোজা...'।
এরা যে কলমের সাহায্যে নিজেদের বিশেষ একটা কুঠুরি বন্ধ করতে ব্যতিব্যস্ত এটা জনে জনে বলার প্রয়োজন কি আমার! বিশেষ কুঠুরি-কলম-বেদনা সবই এদের, আমার কী!

*আনন্দবাজার পত্রিকা: http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=archive%2F1110108%2F8uttar2.htm

সহায়ক সূত্র:
১. ছফা: http://tinyurl.com/4w8ggos
২. ছফাপুরান: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_15.html 
৩. ধরে নিয়ে গেছে শিশুদের: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post.html  

4 comments:

Anonymous said...

Lal salam apnake

Loginbd said...

Apnar vabna gulo khubi joralo....

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

:) @Loginbd

Anonymous said...

ইদানিং মনে হচ্ছে আমরা যেন আর মানুষ নেই.............
তার চেয়ে অনেক নিচু জাতের কিছু একটা
ইচ্ছা করে স্নাইপার নিয়ে সীমান্তে যেতে.........
একটা একটা করে বিএসএফকে পাখির মত গুলি করব...........