পুলিশের বড় কর্তারা সম্ভবত নিজেদেরকে ঈশ্বর টাইপের কিছু মনে করেন। বড় কর্তা কোন ছার, ছোট কর্তাদের দাপটের নমুনা দেখলে মনে হয় এদের উপর আকাশ ব্যতীত আর কিছু নাই। মিডিয়ায় যখন আমরা পুলিশের এমন ভাষা শুনি তখন আর এই নিয়ে মাথা ঘামাবার অবকাশ থাকে না সাধারণ মানুষদের সঙ্গে এদের আচরণ কেমন। তখন পুলিশ জনগণের বন্ধু এটা বড়ো হাস্যকর মনে হয় [১]। উন্নত দেশগুলোতে মানুষ বিপদে পড়লে প্রথমেই পুলিশের কাছে ছুটে যায়। বিচিত্র কারণে আমরা ট্রাক এবং পুলিশের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকি, বিস্তর অনৈকট্য!
পুলিশের ভাষার নমুনা:
আজ একজন ডাক্তার বলছিলেন, অমুক জায়গায় এতো জন পুলিশ এবং এতো জন মানুষ মারা গেছে। আমার বুদ্ধিশুদ্ধি উদ্বেগজনক। প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরে পুরাপুরি হাঁ! আমাদের আস্থা কোন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে- ক্রমশ আমাদের দাঁড়াবার জায়গা কমে আসছে।
মাদারীপুরে এক এসপি সাহেবকে হাইকোর্ট ডেকে নিয়ে ভৎর্সনা করেছেন। শিরোনাম পড়লে আপাতত দৃষ্টিতে সরল একটা সংবাদ। অনেক বড়ো বড়ো অন্যায় করেও আদালতের মৃদু তিরস্কার শুনে পুলিশের কর্তারা পার পেয়ে যান। গান পাউডার দিয়ে বাসে আগুন ধরিয়ে লোক মেরে ফেলা হয়। পুলিশ মহোদয় এটা গোপন করে অন্য এক খেলা খেলেছেন; তো, আদালত মৃদু তিরস্কার করে বিদায় করে দিলেন। ব্যস, মামলা ডিসমিস!
তো, এই এসপি সাহেব, সরদার তমিজ উদ্দিন, এক গৃহবধূ মিলা মল্লিকের বাপ-দাদার ভিটা বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং হত্যা করার অপচেষ্টার ন্যায় বিচার চাইতে গেলে এই এসপি সাহেব শিলা মল্লিককে উল্টো নির্যাতন করেন।
এই নিয়ে হাইকোর্টে রিট হলে আদালত এসপি সাহেবকে ১৩ জানুয়ারি হাজির হতে নির্দেশ দেন। আদালতে এসপি সাহেব হাজির হলে পুরো দিন আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখেন। আদালত এসপি সাহেবের প্রতি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন আমার মনে হয় এই পুলিশের কর্তা আজীবন না-ভুললেই মঙ্গল করবেন।
আদালত এসপি সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "সে (এসপি) এমন কিছু হয়ে যায়নি। দেশটা তার বাবার সম্পত্তিও না আর সে কোন হরিদাস পালও না। হি ইজ অনলি দ্য সার্ভেন্ট অব দ্য গভর্নমেন্ট"।
এই এসপিকেই আদালত অন্য আরেক কারণে বলেন, "ভাগ্যিস সেখানে আমি ছিলাম না, থাকলে তো তার (এসপি) ইউনিফর্ম খুলে তাকে জেলে পাঠাতাম। একজন পুলিশ কর্মকর্তা যেখানে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির ব্যাপারে এমন অবজ্ঞা করতে পারে, একজন নারী তো তার কাছে নস্যি"। কালের কন্ঠ (১৮ জানুয়ারি, ২০১১)
এই দেশের এসপি সাহেবদের মত লোকজনরা কেন যে বিস্মৃত হন তাঁরা পাবলিক সার্ভেন্ট। দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এই সত্যটা অস্বীকার করলেই তো আর সত্যটা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না!
অফ-টপিক: আমরা পাবলিক এটা আর নিজের মুখে আমরা নাই-বা বললাম, অন্যরাই বলুক।
সহায়ক সূত্র:
১. পুলিশ জনগণের বন্ধু: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_08.html
২. ভিডিও ক্লিপিংস: এটিএন বাংলা
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Thursday, January 20, 2011
আমরা পাবলিক এটা অন্যরাই বলুক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment