এর সঙ্গে আমি যোগ করি, হত্যা করা এবং হত্যা করতে প্ররোচিত করা, হত্যাকান্ড গোপন করার চেষ্টাও হত্যাসম।
হেনাকে নিয়ে প্রথম যখন লেখা শুরু করি [১] তখন আমার তেমন ধারণা ছিল না এটার পেছনে এতো নাটের গুরুরা জড়িত! পরে দেখলাম, কেবল পুলিশ-মিডিয়াই হেনার প্রতি অন্যায়ই করেনি এর সঙ্গে মিডিয়ার কিছু লোকজনও অন্যভাবেও জড়িত [২]। আর কিছু না স্রেফ টাকা!
পুলিশের কথা বলে আর লাভ নাই...! এই দেশের পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ নেই [৩]! এরা যদি বলে এখন দিন তো দিন, এরা যদি বলে এখন রাত তাহলে রাত। কোন পুলিশের লোক আমার পাশ দিয়ে গেলে আমি ভয়ে শ্বাস চেপে রাখি! খোদা-না-খাস্তা জোরে শ্বাস ফেলে আবার কোন বিপদে পড়ি!
আজ উচ্চ আদালত অসাধারণ একটা কাজ করেছেন। হেনার হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশকেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আদালতের প্রতি আমি নতজানু হই কিন্তু...। আইনের মারপ্যাঁচ আমি ভাল বুঝি না কিন্তু অতীতে আমরা দেখেছি বড়-বড় অপরাধের কারণেও অনেককে আদালত মৃদু তিরস্কার করে ছেড়ে দিয়েছেন। গানপাউডার দিয়ে যে বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যে পুলিশ কর্মকর্তা সত্য গোপন করে মামলাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন তাকে আদালত তিরস্কার করে বিদায় দিয়েছেন।
কেন, মাননীয় আদালত, কেন? আরেকটা অন্যায় করার জন্য? আদালত, বলুন তো, এই পোড়া দেশে ক-জন পুলিশ ম্যানের ফাঁসি হয়েছে? ইয়াসমিন হত্যায় সামান্য কনস্টেবল, ব্যস! পদস্থ কর্মকর্তারা রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার আড়ালে। মানে কী তাহলে, আমাদের দেশের পুলিশরা তাহলে তেমন অন্যায় করছে না? এটা যদি সত্য হয় তাহলে আমি হেমলকের পেয়ালায় চুমুক দেব, কসম। যেমনটা এখনও রয়ে গেলেন কিছু মিডিয়ার লোকজন, যারা টাকা আগাম নিয়েছিলেন ঘটনার তথ্য অন্যখানে প্রবাহিত করে দেবেন বলে!
বেশ কিছু মিডিয়া যখন হেনার প্রতি পদে পদে অন্যায় করছে, দ্বিতীয়বার খুন করছে ঠিক তখনি হেনার বাবা ওই সব মিডিয়ার মুখে ঠাস করে চড় মারেন। আদালতে দেয়া হেনার বাবার বক্তব্য আমরা যেমনটা জানতে পারি। প্রথম আলোর উদ্বৃতি দিয়ে ডয়চে ভেলে [৫]:
"হেনার বাবা দরবেশ খাঁ ঢাকার হাইকোর্টে উপস্থিত হন বৃহস্পতিবার। দৈনিক প্রথম আলো আদালতে দেওয়া হেনার বাবার বক্তব্য প্রকাশ করেছে ঠিক এভাবে, 'আমি থানায় বলেছি আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে'। তবে পুলিশ এই ধর্ষণের বিষয়টি এজাহারে উল্লেখ করেনি। দরবেশ খাঁ লেখাপড়া জানেন না। তাঁকে এজাহার পড়ে শোনায়নি পুলিশের উপপরিদর্শক৷ তবে তিনি সেই এজাহারে টিপসই দিয়েছিলেন। এই বক্তব্য শোনার পর আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের দরবেশ খাঁ বলেন, 'মামলা দায়েরের সময় আমি ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করলেও পুলিশ তা লেখেনি'।''
আজ বিডিনিউজ [৪] জানাচ্ছে, "প্রথম ময়নাতদন্তে হেনার দেহে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন না পাওয়ার কথা বলা হলে সোমবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ নতুন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। ঢাকায় নতুন ময়নাতদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। দুই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে অমিল থাকায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে।...।"
এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িত ডাক্তারদের কেন ডাক্তারি সনদ কেড়ে নেয়া হবে না? হা ইশ্বর, আমাদের দেশে মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে একজন ডাক্তার ধর্ষিতার ধর্ষণের রিপোর্ট বদলে দেন [৬]।
বিডিনিউজ আরও জানাচ্ছে, "পুলিশ বিভাগের প্রতিও বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হেনার সুরতহাল প্রতিবেদন যিনি তৈরি করেছেন, সেই উপপরিদর্শক আসলাম এবং এজাহার নথিভুক্তকারী উপপরিদর্শক মির্জা একে আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে।"
এই পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকুরিতে থাকার কী আবশ্যকতা আছে? আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেন এদেরকে লালন করা হবে? মাননীয় আদালত, আমরা বড়ো আশা নিয়ে আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
হেনার বাবা। ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
সহায়ক সূত্র:
১. হেনা, এক: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_6336.html
২. হেনা, দুই: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_06.html
৩. পুলিশ...: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_1998.html
৪. দুই ময়নাতদন্তে অমিল, বিডিনিউজ: http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=3&id=149634&hb=1
৫. ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,14835870,00.html
৬. ডাক্তার...: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_24.html
... ... ...
যুক্তিসঙ্গত মনে হওয়ায় ধর্ষিতার নাম এবং ডাক্তারের নাম মুছে ফেলা হলো। |
যথার্থ প্রশ্ন কিন্তু আদালতের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আইনের বাইরে আদালতের যাওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং আমাদের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশদের করা। কেউ কী বিশ্বাস করবেন, ৩৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেয় এমন একটি বহুজাতিক কোম্পানিকে আদালত কঠিন একটা অপরাধের জন্য জরিমানা করেছেন মাত্র ২০০ টাকা! ব্রিটিশ আমলের ২০০ টাকা এবং ২০১১ সালের ২০০ টাকা যে এক না এটা আদালতের বোঝার কোন সুযোগ নেই কারণ আইনে তেমনটাই বলা আছে। আমাদের দূভার্গ্য, এখনও এই হাস্যকর আইনগুলো পরিবর্তনের তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিতাপের সঙ্গে বলতেই হয়, যারা আইনপ্রণেতা তাঁরা গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান!
এই যে রিপোর্টটি এটা ৬/ ৭ বছরের একটি ধর্ষিতা শিশুর। মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে ডাক্তার এই রিপোর্টটা বদলে দিয়েছিলেন। এই ডাক্তারের কেশও আইন স্পর্শ করতে পারেনি! এমন করেই এই সব ডাক্তার নামের নরপশুরা আইনের আওতার বাইরে থেকে যান। কিন্তু এইবার আদালত এদেরকে জনসমক্ষে নগ্ন করে ছেড়ে দিয়েছেন। ওখানে উপস্থিত ছিলেন হাইকার্টের এমন একজন ল-অফিসারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। পুলিশের লোক এবং চিকিৎসকরা আদালতের তোপের মুখে পড়েন। এরা কাঁপছিলেন বেত্রাহত কুকুরের মত! দেয়ার মত কোন উত্তর এদের ছিল না। কালের কন্ঠ থেকে এর খানিকটা জানা যাচ্ছে:
"শরীয়তপুরের সিভিল সার্জনের কাছে আদালত জানতে চান। জবাবে সিভির সার্জন দুটি রিপোর্টকেই সত্য বলেন। এ সময় আদালত বলেন, 'দুটি রিপোর্ট সত্য হতে পারে না। সত্য কথা বলুন। নইলে জেলে পাঠানো হবে। নাজিমউদ্দিন রোড বেশি দূরে নয়...'।"
"পুলিশের এসআই আসলামউদ্দিনকে আদালত বলেন, 'কত টাকা খেয়ে এটা করেছেন? সুরতহাল রিপোর্টে প্রেমের কাহিনী আনলেন কেন'?"
আদালত এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। আমি শ্বাস চেপে অপেক্ষায় আছি...।
4 comments:
আলি ভাই, আপনি আমাকে চিনবেন না একজনের পাঠানো মেইলে হেনাকে নিয়ে আপনার লেখার লিংক পাই। হেনাকে নিয়ে আপনার সব লেখাগুলি পড়ে শেষ করলাশ। আমি জানি আমার মত পাঠকের মন্তব্য নিয়ে আপনি মাথা ঘামান না তবুও আমি বলতে চাই আপনার কাজের কোন তুলনা হয় না।ভাল থাকেন ভাল থাকেন ভাল থাকেন
"...আমি জানি আমার মত পাঠকের মন্তব্য নিয়ে আপনি মাথা ঘামান না..."
আপনার জানায় ভুল আছে! আমি তো সেইসব লেখক না যারা বোয়াল মাছের মত মুখ হাঁ করে বলেন, 'আমি নিজের জন্য লিখি'। এইসব চালবাজদের কাছে আমার কেবল একটাই প্রশ্ন, তাহলে লেখা প্রকাশ করা কেন, বাওয়া? @সজল
আমার লেখা নামের প্রাণহীন বাড়িটা ঝলমলে হয়ে উঠে যখন কোন পাঠক এটা ছুঁয়ে দেন- শিশুর কলমুখরিত এক বাড়ী!
আমাদের বোধহয় এই দিকটাতেও নজর দেওয়া উচিত আলী মাহমেদ ভাই৷ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/37617
ধন্যবাদ, আপনার লিংক দেখলাম।
পুলিশ, ডাক্তারকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে যেটা আমি আমার লেখায়ও বলেছি:
"...এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িত ডাক্তারদের কেন ডাক্তারি সনদ কেড়ে নেয়া হবে না? হা ইশ্বর, আমাদের দেশে মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে একজন ডাক্তার ধর্ষিতার ধর্ষণের রিপোর্ট বদলে দেন [৬]।"
"...এই পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকুরিতে থাকার কী আবশ্যকতা আছে? আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেন এদেরকে লালন করা হবে? মাননীয় আদালত, আমরা বড়ো আশা নিয়ে আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছি।"
এই লেখায়র মূল উপজীব্র ছিল এটাই:
"...এর সঙ্গে আমি যোগ করি, হত্যা করা এবং হত্যা করতে প্ররোচিত করা, হত্যাকান্ড গোপন করার চেষ্টাও হত্যাসম।"
ডাক্তার এবং পুলিশকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নাই। আমি এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যে রিপোর্টটা আদালতে দেয়া হবে এর প্রেক্ষিতে আদালত এদেরকে কী শাস্তি দেন এটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
আমি এই পোস্টে আরও কিছু যোগ করছি। আবারও ধন্যবাদ আপনাকে। @Anonymous
Post a Comment