আমাদের দেশে মোটা দাগে দুই ধরনের পেশা আছে, বৈধ এবং অবৈধ। দেশে আমাদের পছন্দসই পেশাগুলোর মধ্যে চুরি-ডাকাতি-ঘুষ এই সব আমাদের পছন্দের শীর্ষে থাকলেও আইনত তা অবৈধ। কসাই, রুপোপজীবিনী-বেশ্যা এদেরকে কেউ সরু চোখে দেখলেও পেশাগুলো কিন্তু বৈধ। ফলে আমাদের দেশের সরকার একজন বেশ্যা এবং অন্য যে-কোনও পেশার লোকজনকে একই অধিকার দিতে বাধ্য।
লেখক-টেখকরা নাকি আমাদেরকে আলো দেখান, আমরা আলোকিত হই। বলা হয়ে থাকে এঁরা জ্ঞানের বৃত্ত থেকে এক পা এগিয়ে থাকেন। সত্য-মিথ্যা জানি না। যাচাই করার মত বুদ্ধি, ক্ষমতা আমার নাই, থাকলে ভাল হত!
সেই আলোকিত মানুষটা যখন হাহাকার করা ভঙ্গিতে নিজেকে বিক্রি করার চেষ্টা করেন তখন বৈধ একটা পেশার বেশ্যার সঙ্গে মূলত তাঁর কোনো পার্থক্য থাকে না! একজন বেশ্যা যেমন তাঁর শরীর বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন কায়দা-কানুন করেন তেমনি অনেক লেখকের ভঙ্গিটাও দাঁড়ায় অনেকটা তেমন।
মোড়ক উম্মোচনের নামে পেটের কাছে বই ধরে যখন একজন লেখক পোজ দেন তখন সেই কুৎসিত দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। হড়হড় করে বমি করে দেয়াটা আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ চোখ খুললে, বইটা সরালেই দেখব ওই লেখকের পেটটা কাঁচের- লেখকের এক পেট আবর্জনা দৃশ্যমান হবে, এই ভয়ে!
আমাদের দেশটা বড়ো বিচিত্র। এখানে কাজ-কর্ম সব ভূতের উল্টো পা'র মত! যারা এই সমাজকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদেরকেই রাখা হয় কোনঠাসা করে। এই দেশে একজন ইমাম-ধর্মীয় শিক্ষকের পেছনে সবাই নামাজ পড়বে কিন্তু অধিকাংশ ইমামকে যে বেতন দেয়া হবে ওই বেতনে কোনো মেথরও কাজ করতে রাজি হবেন না। ওই ইমাম ভুল ফতোয়া দেবে না তো কে দেবে? আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের লোকজন কোনও ইমামের হাতে ২০০-৩০০ টাকা ধরিয়ে দিলে ইমাম সাহেবের চোখ দিয়ে দমকলের মত যে পানি বেরুবে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নাই!
এই দেশে লেখালেখি করে খুব অল্প মানুষই হাওয়া না-খেয়ে ভাত-রুটি খেতে পারেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক লেখক ব্যতীত সবাই বই ছাপান নিজের পয়সায়। এটা যে কী লজ্জার তা এই সব নির্বোধ লেখকদের কে বোঝাবে! এরমধ্যে থেকে আবার খানিকটা বইয়ের কাটতি আছে এমন অনেকের বই প্রকাশক নিজের পয়সায় প্রকাশ করেন ঠিকই কিন্তু লেখককে লেখার সম্মানী দেন না!
আহা, তবুও লেখক বেচারা লেংটি পরে উবু হয়ে বছরের-পর-বছর লিখে যান। বেচারা লেখক, তিনি যে সমাজ উদ্ধার করার ব্রত নিয়ে এসেছেন। লেখক নামের একজন স্বপ্নবাজ সবাইকে স্বপ্ন দেখিয়ে বেড়াবেন কেবল তাঁর নিজের কোনো স্বপ্ন থাকবে না, থাকতে পারে না। তাঁর ইচ্ছা করবে না চকচকে কাপড় গায়ে দিতে, ভালমন্দ খাবার খেতে। লেখক বেচারা কপকপ করে চাঁদের আলো খেয়ে চাঁদের আলোয় 'ছিনান' করে পারলে লেংটিটাও খুলে ফেলবেন।
একজন স্বপ্নবাজকে বাঁচিয়ে রাখার মত যোগ্যতা আমাদের দেশ-সমাজের এখনও হয়ে উঠেনি। দেশ বেচারা, বেচারা দেশ!
...
অন্য প্রসঙ্গ, বইমেলা [১]। বইমেলা এখন হয়ে গেছে কর্পোরেট একটা মেলা। রাজনীতির মধ্যে যেমন পলিটিক্স ঢুকে গেছে তেমনি বইমেলা আর ঠাঠারি বাজারের মধ্যে তফাতটাও কমে গেছে! বইমেলার শুরুটাই হয় বেসুরো।
আমার সাফ কথা, বইমেলা উদ্বোধন করবেন একজন লেখক, কোনও রাজনীতিবিদ না [২]। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন বইমেলা উদ্বোধন করেন এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক বলেন, তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক হিসাবে মেলা উদ্বোধন করছেন তখন মহাপরিচালক মানুষটাকে আমার বড়ো খেলো মনে হয়।
একজন হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর ছেলে-মেয়েকে হলুদ কাপড় পরিয়ে মেলায় তান্ডব নৃত্য করান তখন ওই মানুষটাকে আমার স্রেফ একজন চানাচুরওয়ালা মনে হয়। যে চানাচুরওয়ালা ক্লাউনের টুপি পরে সুর করে বলেন, লাগে চা-ন্না- চ্চু-র-র-র! জানি-জানি, অনেকে বলবেন, এটা তো হুমায়ূন আহমেদ করেন না, করেন প্রকাশক। এতে যে হুমায়ূন আহমেদের গা দোলানো সায় আছে এটার জন্য গবেষণা করার প্রয়োজন হয় না, অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার জন্যও ছুট লাগাতে হয় না।
এমনিতে অবশ্য বইমেলায় মানবস্রোত দেখে আমি চেপে রাখা শ্বাস ছেড়ে বলি, হুজুগে বাংগাল [৩]! বইমেলায় অধিকাংশ মানুষ কেন আসেন কে জানে!
বইমেলা আসলেই আমাদের প্রকাশক মহোদয়গণ মুক্তকচ্ছ হয়ে বই প্রকাশ করা শুরু করেন। ভাল! কীভাবে করেন তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ নব্য লেখক নামের দুপেয়েদের কাছ থেকে হয় গুণে গুণে পুরো টাকাই নেন। কখনও অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেন বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছ থেকে। আবার কাউকে এক-দেড়শ বই গছিয়ে দিয়ে।
বেচারা প্রকাশকদের জন্য আমার চোখে জল চলে আসে। এদের নাকি পোষায় না। না-পোষালে বইয়ের ব্যবসা কেন বাওয়া বাঁদর নাচাবার ব্যবসা করলে আটকাচ্ছে কে! বইমেলায় এই যে কোটি-কোটি টাকার বই বিক্রি হচ্ছে অল্প কিছু লেখক ব্যতীত আর কাউকে তো রয়্যালটির টাকা দিতে হচ্ছে না তাহলে এই কোটি-কোটি টাকা যাচ্ছে কোন চুলোয়, বাপু হে!
ক-দিন আগে এক পত্রিকায় বেশ কিছু প্রকাশকদের বাণী পড়ছিলাম, অনেক কায়দা-কানুন করে এরা বাণীতে বলছিলেন, মননশীন-রেঁনেসা-প্রগতিশীল-আমাদের দায়বদ্ধতা...। বাণী-টানী ছাপিয়ে আমার মাথায় যে ভাবনাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, প্রকাশক নামের এই অল্প কিছু মানুষই ঠিক করে দেবেন, কে লেখক, কে লেখক নন- দুধের দুধ পানির পানি! অথচ অধিকাংশ প্রকাশকই লেখকের পান্ডুলিপি পড়ে দেখেন কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। টাকা পেলে লেখার মান কোন বিষয় না! অধিকাংশ বই ছাপা হয় সম্পাদনা না করে।
যাই হোক, একসময় বইমেলায় যেতে না-পারলে অস্থির অস্থির লাগত, এখন এই অস্থিরতার অবসান হয়েছে। গতবছর বইমেলায় যাওয়া হয়েছিল বিশেষ একটা মানুষের কারণে, অপার সৌভাগ্য, আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান তখন মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম [৪]। এবার আর যাওয়ার কোন গোপন ইচ্ছা নাই।
ভাগ্যিস, এইবার বইমেলায় অন্যান্য বছরের মত আনিসুল হকের নির্লজ্জ বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনি, অন্তত এখন পর্যন্ত। আমার আন্তরিক সাধুবাদ আনিসুল হককে। মানুষটা এতোদিনে মানুষ হলেন।
কিন্তু আনিসুল হকের এমন বিজ্ঞাপন না-থাকলে কী হবে তার অনুসারীরা রয়ে গেছেন ঠিকই। এই সব বিজ্ঞাপন যে এই লেখক নামের দুপেয়েরাই দেন এটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয় না [৫] । হুশ-হুশ, লেখকের ওড়না গলার একই ছবিসহ আট-দশটা প্রকাশন সংস্থা একই পত্রিকায় একই দিনে বিজ্ঞাপন দেবে এটা জজ মিয়ার গল্পের মতই আষাঢ়ে! আবার এই লেখকরাই পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন, প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ...। হুমায়ূন আহমেদের একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন চলে গিয়েছিল, দ্বিতীয় মুদ্রণ নিঃশেষিত অথচ তখন পর্যন্ত ওই বই প্রকাশিতই হয়নি! সত্যিই একজন লেখক হতে অনেক মগজের অপচয় হয়!
এই সব লেখকরা কেন যে বুঝতে চান না, এ বড়ো অমর্যাদার! প্রত্যেকটা পেশায় যেমন পার্থক্য আছে তেমনি পার্থক্য আছে ভঙ্গি, উপস্থাপনায়ও। খানিকটা পার্থক্য না থাকলে ভাল দেখায় না। এ সত্য পেটের দায়ে বিশেষ পেশার কেউ নগ্ন হন রাতের আধারে কিন্তু তাই বলে ঝকঝকে দিনের আলোয় কাউকে নগ্ন দেখতে ভাল লাগে না।
*ছবি ঋণ: কালের কন্ঠ
সহায়ক সূত্র:
১. বইমেলা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_18.html
২. বইমেলা উদ্বোধন: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_30.html
৩. হুজুগে বাংগাল: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_25.html
৪. আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
৫. বইমেলায় বিজ্ঞাপন: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_07.html
লেখক-টেখকরা নাকি আমাদেরকে আলো দেখান, আমরা আলোকিত হই। বলা হয়ে থাকে এঁরা জ্ঞানের বৃত্ত থেকে এক পা এগিয়ে থাকেন। সত্য-মিথ্যা জানি না। যাচাই করার মত বুদ্ধি, ক্ষমতা আমার নাই, থাকলে ভাল হত!
সেই আলোকিত মানুষটা যখন হাহাকার করা ভঙ্গিতে নিজেকে বিক্রি করার চেষ্টা করেন তখন বৈধ একটা পেশার বেশ্যার সঙ্গে মূলত তাঁর কোনো পার্থক্য থাকে না! একজন বেশ্যা যেমন তাঁর শরীর বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন কায়দা-কানুন করেন তেমনি অনেক লেখকের ভঙ্গিটাও দাঁড়ায় অনেকটা তেমন।
মোড়ক উম্মোচনের নামে পেটের কাছে বই ধরে যখন একজন লেখক পোজ দেন তখন সেই কুৎসিত দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। হড়হড় করে বমি করে দেয়াটা আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ চোখ খুললে, বইটা সরালেই দেখব ওই লেখকের পেটটা কাঁচের- লেখকের এক পেট আবর্জনা দৃশ্যমান হবে, এই ভয়ে!
আমাদের দেশটা বড়ো বিচিত্র। এখানে কাজ-কর্ম সব ভূতের উল্টো পা'র মত! যারা এই সমাজকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদেরকেই রাখা হয় কোনঠাসা করে। এই দেশে একজন ইমাম-ধর্মীয় শিক্ষকের পেছনে সবাই নামাজ পড়বে কিন্তু অধিকাংশ ইমামকে যে বেতন দেয়া হবে ওই বেতনে কোনো মেথরও কাজ করতে রাজি হবেন না। ওই ইমাম ভুল ফতোয়া দেবে না তো কে দেবে? আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের লোকজন কোনও ইমামের হাতে ২০০-৩০০ টাকা ধরিয়ে দিলে ইমাম সাহেবের চোখ দিয়ে দমকলের মত যে পানি বেরুবে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নাই!
এই দেশে লেখালেখি করে খুব অল্প মানুষই হাওয়া না-খেয়ে ভাত-রুটি খেতে পারেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক লেখক ব্যতীত সবাই বই ছাপান নিজের পয়সায়। এটা যে কী লজ্জার তা এই সব নির্বোধ লেখকদের কে বোঝাবে! এরমধ্যে থেকে আবার খানিকটা বইয়ের কাটতি আছে এমন অনেকের বই প্রকাশক নিজের পয়সায় প্রকাশ করেন ঠিকই কিন্তু লেখককে লেখার সম্মানী দেন না!
আহা, তবুও লেখক বেচারা লেংটি পরে উবু হয়ে বছরের-পর-বছর লিখে যান। বেচারা লেখক, তিনি যে সমাজ উদ্ধার করার ব্রত নিয়ে এসেছেন। লেখক নামের একজন স্বপ্নবাজ সবাইকে স্বপ্ন দেখিয়ে বেড়াবেন কেবল তাঁর নিজের কোনো স্বপ্ন থাকবে না, থাকতে পারে না। তাঁর ইচ্ছা করবে না চকচকে কাপড় গায়ে দিতে, ভালমন্দ খাবার খেতে। লেখক বেচারা কপকপ করে চাঁদের আলো খেয়ে চাঁদের আলোয় 'ছিনান' করে পারলে লেংটিটাও খুলে ফেলবেন।
একজন স্বপ্নবাজকে বাঁচিয়ে রাখার মত যোগ্যতা আমাদের দেশ-সমাজের এখনও হয়ে উঠেনি। দেশ বেচারা, বেচারা দেশ!
...
অন্য প্রসঙ্গ, বইমেলা [১]। বইমেলা এখন হয়ে গেছে কর্পোরেট একটা মেলা। রাজনীতির মধ্যে যেমন পলিটিক্স ঢুকে গেছে তেমনি বইমেলা আর ঠাঠারি বাজারের মধ্যে তফাতটাও কমে গেছে! বইমেলার শুরুটাই হয় বেসুরো।
আমার সাফ কথা, বইমেলা উদ্বোধন করবেন একজন লেখক, কোনও রাজনীতিবিদ না [২]। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন বইমেলা উদ্বোধন করেন এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক বলেন, তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক হিসাবে মেলা উদ্বোধন করছেন তখন মহাপরিচালক মানুষটাকে আমার বড়ো খেলো মনে হয়।
একজন হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর ছেলে-মেয়েকে হলুদ কাপড় পরিয়ে মেলায় তান্ডব নৃত্য করান তখন ওই মানুষটাকে আমার স্রেফ একজন চানাচুরওয়ালা মনে হয়। যে চানাচুরওয়ালা ক্লাউনের টুপি পরে সুর করে বলেন, লাগে চা-ন্না- চ্চু-র-র-র! জানি-জানি, অনেকে বলবেন, এটা তো হুমায়ূন আহমেদ করেন না, করেন প্রকাশক। এতে যে হুমায়ূন আহমেদের গা দোলানো সায় আছে এটার জন্য গবেষণা করার প্রয়োজন হয় না, অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার জন্যও ছুট লাগাতে হয় না।
এমনিতে অবশ্য বইমেলায় মানবস্রোত দেখে আমি চেপে রাখা শ্বাস ছেড়ে বলি, হুজুগে বাংগাল [৩]! বইমেলায় অধিকাংশ মানুষ কেন আসেন কে জানে!
বইমেলা আসলেই আমাদের প্রকাশক মহোদয়গণ মুক্তকচ্ছ হয়ে বই প্রকাশ করা শুরু করেন। ভাল! কীভাবে করেন তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ নব্য লেখক নামের দুপেয়েদের কাছ থেকে হয় গুণে গুণে পুরো টাকাই নেন। কখনও অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেন বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছ থেকে। আবার কাউকে এক-দেড়শ বই গছিয়ে দিয়ে।
বেচারা প্রকাশকদের জন্য আমার চোখে জল চলে আসে। এদের নাকি পোষায় না। না-পোষালে বইয়ের ব্যবসা কেন বাওয়া বাঁদর নাচাবার ব্যবসা করলে আটকাচ্ছে কে! বইমেলায় এই যে কোটি-কোটি টাকার বই বিক্রি হচ্ছে অল্প কিছু লেখক ব্যতীত আর কাউকে তো রয়্যালটির টাকা দিতে হচ্ছে না তাহলে এই কোটি-কোটি টাকা যাচ্ছে কোন চুলোয়, বাপু হে!
ক-দিন আগে এক পত্রিকায় বেশ কিছু প্রকাশকদের বাণী পড়ছিলাম, অনেক কায়দা-কানুন করে এরা বাণীতে বলছিলেন, মননশীন-রেঁনেসা-প্রগতিশীল-আমাদের দায়বদ্ধতা...। বাণী-টানী ছাপিয়ে আমার মাথায় যে ভাবনাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, প্রকাশক নামের এই অল্প কিছু মানুষই ঠিক করে দেবেন, কে লেখক, কে লেখক নন- দুধের দুধ পানির পানি! অথচ অধিকাংশ প্রকাশকই লেখকের পান্ডুলিপি পড়ে দেখেন কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। টাকা পেলে লেখার মান কোন বিষয় না! অধিকাংশ বই ছাপা হয় সম্পাদনা না করে।
যাই হোক, একসময় বইমেলায় যেতে না-পারলে অস্থির অস্থির লাগত, এখন এই অস্থিরতার অবসান হয়েছে। গতবছর বইমেলায় যাওয়া হয়েছিল বিশেষ একটা মানুষের কারণে, অপার সৌভাগ্য, আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান তখন মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম [৪]। এবার আর যাওয়ার কোন গোপন ইচ্ছা নাই।
ভাগ্যিস, এইবার বইমেলায় অন্যান্য বছরের মত আনিসুল হকের নির্লজ্জ বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনি, অন্তত এখন পর্যন্ত। আমার আন্তরিক সাধুবাদ আনিসুল হককে। মানুষটা এতোদিনে মানুষ হলেন।
কিন্তু আনিসুল হকের এমন বিজ্ঞাপন না-থাকলে কী হবে তার অনুসারীরা রয়ে গেছেন ঠিকই। এই সব বিজ্ঞাপন যে এই লেখক নামের দুপেয়েরাই দেন এটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয় না [৫] । হুশ-হুশ, লেখকের ওড়না গলার একই ছবিসহ আট-দশটা প্রকাশন সংস্থা একই পত্রিকায় একই দিনে বিজ্ঞাপন দেবে এটা জজ মিয়ার গল্পের মতই আষাঢ়ে! আবার এই লেখকরাই পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন, প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ...। হুমায়ূন আহমেদের একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন চলে গিয়েছিল, দ্বিতীয় মুদ্রণ নিঃশেষিত অথচ তখন পর্যন্ত ওই বই প্রকাশিতই হয়নি! সত্যিই একজন লেখক হতে অনেক মগজের অপচয় হয়!
এই সব লেখকরা কেন যে বুঝতে চান না, এ বড়ো অমর্যাদার! প্রত্যেকটা পেশায় যেমন পার্থক্য আছে তেমনি পার্থক্য আছে ভঙ্গি, উপস্থাপনায়ও। খানিকটা পার্থক্য না থাকলে ভাল দেখায় না। এ সত্য পেটের দায়ে বিশেষ পেশার কেউ নগ্ন হন রাতের আধারে কিন্তু তাই বলে ঝকঝকে দিনের আলোয় কাউকে নগ্ন দেখতে ভাল লাগে না।
*ছবি ঋণ: কালের কন্ঠ
সহায়ক সূত্র:
১. বইমেলা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_18.html
২. বইমেলা উদ্বোধন: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_30.html
৩. হুজুগে বাংগাল: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_25.html
৪. আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
৫. বইমেলায় বিজ্ঞাপন: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_07.html
8 comments:
সব কিছু যাবে নষ্টদের অধিকারে এটা একটু বদলিয়ে সব কিছু যাবে বেশ্যাদের অধিকারে
anonymus@ আপনি বেশ্যাকে নষ্ট-এর প্রতিশব্দ বানাতে চাইছেন.....খুবই গতানুগতিক আর পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা। বেশ্যাবৃত্তি একটা বৈধ পেশা। সবচে বড় কথা এই পেশায় দুর্নীতি নেই,লোক ঠকানোর রেত্তয়াজ নেই।
"...সব কিছু যাবে বেশ্যাদের অধিকারে...।"
আপনি সম্ভবত আমার লেখার মূল সুরটা ধরতে পারেননি! অধিকারের দিক দিয়ে একজন বৈধ পতিতা এবং একজন লেখকের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল ভঙ্গি, উপস্থাপনায়। বেশ্যার ভঙ্গি লেখকের মধ্যে চলে এলে সমস্যা নেই তবে দেখতে ভাল দেখায় না!
যেটা আমি লেখার শেষে বলেছি:
"বিশেষ পেশার কেউ নগ্ন হন রাতের আধারে কিন্তু ঝকঝকে দিনের আলোয় কাউকে নগ্ন দেখতে ভাল লাগে না।" @Anonymous
সহমত :) @Omio Ujjal
Probably a dumb question. But I don't get what is problem of advertising. Since no advertisement says that the publishers gave that advertisement, we can think the writers themselves posted them. If so, why a writer cannot post an ad about his books? You also display your books on your page and that's why I read excerpts from them from this blog. Hope you explain (or please ignore - don't point to why I am Anonymous or start bulshitting).
কোনও লেখক তার বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজে দিতে পারবেন না এমন নিষেধ কোন দেশের আইনে আছে বলে আমি জানি না। কিন্তু...। একটা কিন্তু রয়ে যায়।
লেখক তার বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেই দেবেন এটা বড়ো অমর্যাদার।
ওয়েল, এইবার আসি আমার সাইটে আমার বইয়ের প্রদর্শন। এটা চমৎকার একটা কাজ এমনটা বলা চলে না তবে এই প্রশ্নের খানিকটা উত্তর লুকিয়ে আছে আপনার প্রশ্নে "...on your page...। কই, আপনি তো এটা বলেননি আমাদের...।
সবিনয়ে বলি, এটা কোন পত্রিকা না, আমার নিজস্ব সাইট, ওয়েবলগ- এখানে আম আমার বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলোকে জড়ো করার চেষ্টা করি ।
ওখানে বইগুলোর সঙ্গে এটাও কিন্তু লেখা ছিল, "অন্যদের চোখে এরা কালো, লিকলিকে কিন্তু আমার চোখে এরা সন্তানসম...। এই যে আমার ওয়েবলগ এটা কিন্তু আমার বাড়িসম। এখন কারও বাড়িতে কেন তার সন্তানের ছবি লাগানো আছে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা একজন পিতার জন্য কঠিন। :) @Anonymous
Thanks for your answer. Can we see this from another point of view? Say, I have some favorite writers and want to know what new books they have. These ads give me this information, no matter who paid for them. A good writer cannot become a heinous person only because he advertises his books.
"বিশেষ পেশার কেউ নগ্ন হন রাতের আধারে কিন্তু ঝকঝকে দিনের আলোয় কাউকে নগ্ন দেখতে ভাল লাগে না।"
এই এক কথায় অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন।
Post a Comment