Search

Thursday, February 24, 2011

তথ্য, এটা পাওয়া আমার অধিকার

মাহমুদুর রহমান মানুষটাকে পছন্দ করি এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না। বা তাঁকে পছন্দ করার মত কোন বিষয় দাগ কেটে আছে এটাও বলা চলে না! কী কী যেন ঝামেলা আছে এই মানুষটার মধ্যে। যেভাবে গোপন মিটিং-ফিটিং করেছিলেন [০]এই ভঙ্গির সঙ্গে তুলনা চলে কেবল একজন অপরাধীর। তদুপরি এই মানুষটার পাশে আমি দাঁড়াব। আমি ভলতেয়ারের বিখ্যাত কথাটা বিস্মৃত হতে চাই না, "আমি তোমার সঙ্গে একমত না কিন্তু তোমার মত প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়ব"।
সর্বোচ্চ আদালত তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করছেন এটা একজন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে। এ অন্যায়েরই শামিল!

এমনিতে একটা বিষয়ে এই মানুষটার প্রতি আমার অন্য রকম ভাল লাগা আছে। তাঁকে রাজাকার বলায় তিনি একটা মামলা করেছিলেন যেটা প্রকারান্তরে তা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষেই গিয়েছিল [১]। কারণ জামাত জোটের সঙ্গে তাঁর দল বনবন করে যখন ক্ষমতার ছড়ি ঘোরাচ্ছিল তখন তাঁকে রাজাকার বলায় তিনি মামলা করেছিলেন এবং ওই মামলায় সিপিডি-র মঞ্জুর এলাহী গংদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারী হয়েছিল। এই মামলায় যেটা প্রমাণিত হয়েছিল, প্রমাণ ব্যতীত কাউকে রাজাকার বললে এই নিয়ে মামলা করা যায় এবং এটা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রকারান্তরে যেটা বলা চলে রাজাকার শব্দটা একটা গালি। রাজাকারদের সঙ্গে উঠবস থাকলেও, যেটা শুনলে মাহমুদুর রহমানের মত লোকজনরা ক্ষেপে যান!

গত বছরের ২১ এপ্রিল 'চেম্বার মানেই সরকারের পক্ষে ষ্টে' শিরোনামে আমার দেশ প্রত্রিকায় এক প্রতিবেদনের কারণে মাহমুদুর রহমানকে আদালত অবমাননার দায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ছয় মাসের কারাদন্ড দেন এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও এক মাসের জেল।
আদালতের বিবেচনার উপর আমার আস্থা রেখেই বলি, তাঁকে নিশ্চয়ই যথাযথ আইনের আওতায় এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু...। আমার এটাও মনে হয় আদালত অবমাননা একটা প্রতীকী বিষয় এর জন্য ছয় মাসের জেল দেয়ার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। এটা ছয় দিন হলে আকাশ এক হাত নীচে নেমে আসত বলে আশংকা করি না। অতীতে এমন উদাহরণ আমাদের দেশে আছে বলে আমার জানা নাই। অন্তত শিল্প-সাহিত্য জগতের লোকজনকে চোর-চোট্টার কাতারে নামিয়ে আনা হয়নি। মতিউর রহমান গংরাও ক্ষমা প্রার্থনা করে পার পেয়ে গেছেন। এটা সত্য, মাহমুদুর রহমান ওপথ মাড়াননি।

কিন্তু এই কাতারে হুমায়ূন আহমেদও আছেন- তিনি ক্ষমা চাইতে রাজী হননি [২]। ওই লেখাটায় আমি লিখেছিলাম:
"তাঁর ‘দরজার এপাশে’ উপন্যাসে একটা সংলাপ ছিল এমন, ‘…আগে জাজ সাহেবরা টাকা খেতেন না। এখন খায়। অনেক জাজ দেখেছি কাতলা মাছের মত হা করে থাকে’। ব্যস, তুমুল প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এ নিয়ে ক’জন বিচারপতি হুমায়ূন আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন হাইকোর্টে। ৪৮ জন বিচারপতি একাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন এই লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।"
হুমায়ূন আহমেদকে বলা হয়েছিল ক্ষমা চাইলে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু তিনি অনড়, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর মতে, তিনি কোন অন্যায় করেননি।"
শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ ক্ষমা চাননি

যাই হোক, এটা বিজ্ঞ আদালতের বিষয়, তাঁরা মাহমুদুর রহমানের বিষয়টাকে যথাযথ মনে করেছেন এটা নিয়ে আর কথা বাড়াই না। কেবল অল্প কথায় বলি, বিচারপতি ঈশ্বর না, ঈশ্বরও সমালোচিত হন। একজন বিচারপতি যখন ট্রাফিক কনস্টেবলকে প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরান [৪] তখন কী আমরা বলব না, এ তো লেজার গান দিয়ে পাখি শিকার!
যেহেতু আপিল বিভাগ এই রায় দিয়েছেন এখানে খানিকটা জটিলতা থেকেই যায়। মাহমুদুর রহমান এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাননি। আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মাহমুদুর রহমানকে কেন এই শাস্তি দেয়া হলো তার কারণ জানানো হবে। মাহমুদুর রহমানের জেল খাটার ছয় মাস পূর্ণ হবার পরও এই কারণ জানা যায়নি [৩]। এখনও মূল রায়ের কপিই পাওয়া যায়নি! এটা না-থাকলে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কারও রিভিউ করার সুযোগ থাকছে না! তাঁকে যে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এটা নিয়েও আমি বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আমাদের দেশের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশদের করা।

আমি অন্য এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, একটি বহুজাতিক কোম্পানি যারা কঠিন একটা অপরাধ করার পরও আদালত তাদেরকে ২০০ টাকা জরিমানা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে ২০০ টাকা মানে বিপুল টাকা কিন্তু তুলনায় এখনকার সময়ে তা স্রেফ হাতের ময়লা। বছরে ৩৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে যখন ২০০ টাকা জরিমানা করা হয় তা বড়ো হাস্যকর ঠেকে!
তাই আমার জানার খুব আগ্রহ মাহমুদুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানাটা ঠিক কোন আইনের আওতায় করা হয়েছে? এই তথ্য পাওয়া আমার অধিকার অথচ এটা আমি জানতে পারছি না! মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনাকে কদমবুসির ইচ্ছাটা [৫] এখনও বহাল আছে কিন্তু বিষাদের সঙ্গে এও বলি, আমি তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালত আমাদের শেষ ভরসাস্থল তাই এই অন্যায় আপনি করতে পারেন না। তাহলে আর পায়ের নীচে মাটি থাকে না। এমনিতেই এই দেশে দাঁড়াবার জায়গার বড়ো অভাব!

সহায়ক লিংক:
০. মিটিং, সমকাল: http://tinyurl.com/4lr6fya
১. রাজাকার...: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_6914.html
২. হুমায়ূন আহমেদ: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_03.html 
৩. বিডিনিউজ: http://dhakanews24.com/?p=3699 
৪. ট্রাফিক কনস্টেবল...: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_31.html 
৫. কদমবুসি: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_13.html      

3 comments:

Shaqlain Shayon said...

আমার মনে হয় শেষ পর্‍্যন্ত কদমবুসি করার ইচ্ছাটা আপনাকে ত্যাগ করতে হবে। শফিক রেহমানে এই লেখাটা দেখতে পারেন একটু। শুধু ক্রিকেট নিয়ে অংশটুকুতে আমার আপত্তি আছে।

Shaqlain Shayon said...

আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত কদমবুসি করার ইচ্ছাটা আপনাকে ত্যাগ করতে হবে। শফিক রেহমানের এই লেখাটা একটু দেখতে পারেন। ক্রিকেট নিয়ে অংশটুকুতে আমার যদিও আপত্তি আছে।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

তাই তো দেখছি :( @Shaqlain Shayon