Search

Thursday, March 3, 2011

প্রফেসর ইউনূস, আপনার জন্য দুঃখ বোধ করি

ইউনূস সাহেবের আজ ঘোর বিপদ। মানুষটার কর্মকান্ড নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি আছে। আজ তিনি যে ফল ভোগ করছেন এর জন্য তিনি নিজেই দায়ী! লাগিয়েছেন বিষবৃক্ষ এতে তো আর 'আমরূদ' ফল ধরবে না! কিন্তু আজ আমি ইউনূস সাহেবের পাশে দাঁড়াব।
তাঁর নোবেল পাওয়া নিয়ে একশটা কথা বলা যায় কিন্তু আজ আমি সেই পথ মাড়াব না। গোটা দেশ যখন তাঁর ওই অর্জনে 'শত-উল্লাস' করছিল তখন সেই উল্লাস আমাকে তেমন আলোড়িত করেনি কারণ আমার মনে হয়েছিল তীব্র আলোর ছটার পেছনের কান্নাটা কেউ দেখতে চাইছেন না! সেটা সম্ভবত ২০০৬ সালের কথা যখন ইউনূস সাহেবকে নিয়ে লিখি [১]

তাঁর কর্মকান্ড নিয়ে তাঁকে বড়ো মাপের মানুষ বলার উৎসাহ আমি পাই না। তাঁর প্রতিষ্ঠান গ্রামীন ব্যাংক বছরের-পর-বছর ধরে এক পয়সা ট্যাক্স দেয়নি [২], আগামীতে যেন ট্যাক্স দিতে না-হয় এই নিয়ে ঘটা করে সরকারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, ছি! তিনি নোবেল লরিয়েট হলেই সমালোচনার উপরে [৩] এটা আর যে কেউ মেনে বসে থাকুক আমি মানি না। কিন্তু...।
তাঁর প্রতি এখন যেটা করা হচ্ছে সেটা অন্যায়। এই মানুষটিকে অমর্যাদার সঙ্গে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, তিনি গুন্ডা-পান্ডা না, তাঁর প্রতি এই নিষ্ঠুরতার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন ফট করে এটা বলে বসেন, "ড. ইউনূস...দরিদ্র বিমোচনের নামে ঋণ দিয়ে গরিব মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া হচ্ছে"...। (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রথম আলো, ৬ ডিসেম্বর, ২০১০)। 
প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানার আগ্রহ রক্তচোষা কী কেবল ইউনূস, সরকার না? গ্রামীন ব্যাংকে কী সরকারের মালিকানা নাই? ইউনূস যে অপরাধে অপরাধী সেই একই অপরাধে কি সরকারও অপরাধী না?

যাই হোক, আজকে আমার আলোচনার বিষয় এই সব না। ইউনূস সাহেবকে নিয়ে এখন অন্য সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীন ব্যাংক থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে। এই নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, আইন-গাইন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, হবে। ইউনূস সাহেব আজ রিট করেছেন কিন্তু এই আইনের কচকচানিতে আমি যাব না।
যেটা মাথায় রাখা হয়নি, ইউনূস সাহেব কেবল একজন ব্যক্তি ইউনূসই না, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি মহীরুহ! গ্রামীন ব্যাংক নামের এই প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকা! প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন কোটি মানুষ! এমন কোন আচরণ করা যাবে না যাতে শেয়ার বাজারের মত ঠুনকো অবস্থা সৃষ্টি হয়। 

অবশ্য এটা সত্য ইউনূস সাহেবকে যদি একজন বিশাল মাপের মানুষ ধরা হয় তাহলে তাঁর কাজগুলোও সেইরকম হওয়া উচিত ছিল, আমরা তেমনটাই আশা করি। তিনি কেন এখনও গ্রামীন ব্যাংকের বুকে উঠে বসে আছেন, কেন তিনি এই ব্যাংকের এম.ডির পদ আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছেন! অথচ তিনি বিনা বেতনে উপদেষ্টা হিসাবে সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারতেন।

বিব্রত বোধ করছি তবুও সবিনয়ে বলি, আমার মত সামান্য একজন মানুষের যে বোধটা কাজ করে সেটা কেন তাঁর মধ্যে কাজ করছে না? ব্লগ নিয়ে আবারও ববস-এর আয়োজন শুরু হচ্ছে। আমি জনে জনে বিশেষ করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে আগ বাড়িয়ে বলে রাখছি আমার ওয়েব-সাইট যেন কেউ এবছরের জন্য ওখানে সাবমিট না করে, করলেও এটা যেন কাউন্ট করা না হয়। ডয়চে ভেলের সঙ্গেও আমি সেটাই বলেছি [৫]। এর পেছনে আমার সহজ যুক্তি আছে, এটাই হওয়া সমীচীন। নতুনদের সুযোগ করে নিজে পিছিয়ে আসা। অন্যরা আসুক, নতুনরা আসুক; আমি এদের জন্য সানন্দে অপেক্ষায়।

অবশ্য আমার কঠিন শত্রু রা অবজ্ঞার হাসি হেসে বলবেন, 'কী মিয়া, ডরাইছ'? তাদের চোখে চোখ রেখে বলি, 'হ, ডরাইছি, খুশি? এইবার যান, আমি লেখাটা শেষ করি'।
আমি তিলতিল করে স্কুলগুলো গড়ে তুলেছি। এর পেছনে আছে আমার মেধা, অবিরাম বেয়ে পড়া ঘাম- এরা আমার স্বপ্ন, আমার সন্তানের মত কিন্তু এর একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে এখান থেকে আমি সরে আসব [৬]। এটা অন্য কেউ এগিয়ে নেবে। যে আমার চেয়ে চমৎকার করে গুছিয়ে কাজ করবে। আমি সেই মানুষটির জন্যও অপেক্ষা করব।

*আজ দেখছি অর্থমন্ত্রী বলছেন, 'আর কোন উপায় ছিল না'। আর কোন উপায় ছিল না এট অন্তত আমি বিশ্বাস করি না! কোন-না কোন, একটা সম্মানজনক উপায় নিশ্চয়ই বের করা যেত। ইউনূস সাহেব যদু-মদু একজন মানুষ না। যে কোন প্রকারেই হোক এই দেশের জন্য তিনি বয়ে নিয়ে এসেছিলেন বিরল এক সম্মান। তাঁর এই অসম্মানজনক বিদায় প্রাপ্য ছিল না। সরকারের ভাবনা গ্রহন করলেও এটা বলতেই হয়, সরকার যেখানে বছরের-পর-বছর ধরে (সময়টা সম্ভবত প্রায় এক যুগ!) ইউনূস সাহেবের থাকাটা মেনে নিতে পেরেছেন সেখানে আর কয়েকটা মাস অপেক্ষা করলেও আকাশ ভেঙ্গে পড়ত বলে আমি মনে করি না। হিস্ট্রি রিপিট- আজ যে কু-উদাহরণ সৃষ্টি করা হলো তার ফল ভোগ করার জন্যও আপনারা অপেক্ষায় থাকুন...।     
 
সহায়ক লিংক:
১. লাইফ-এচিভমেন্ট-সেক্রিফাইস: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_3333.html
২. আবদার: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_12.html
৩. ইউনূসনামা: http://www.ali-mahmed.com/2010/12/blog-post_26.html
৪. সরকার...: http://www.ali-mahmed.com/2010/12/blog-post_31.html
৫. ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,14878280,00.html
৬. স্কুল...: http://tinyurl.com/39egrtn 

1 comment:

points of authority said...

ঘটনা সত্য কিন্তু সাক্ষী দুর্বল