এই ছবিটা নিয়ে বিশদ আলোচনায় যাই না। পত্রিকার কল্যাণে সবাই জানেন চ্যাংদোলা করে মৃত পশু ফেলে দেয়ার ভঙ্গিতে ৬০ বছরের যে মানুষটাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তিনি এই গ্রহের কুৎসিত একটা কাজ করেছেন। জজ নামের ইশ্বরের সঙ্গে নাকি ফাজলামো করেছেন [১]। ঈশ্বর বলে কথা [২]!
সবাই ক্ষেপেছেন তিন পুলিশের উপর। পুলিশের পোশাকের নাট-বল্টু আমি চিনি না তবুও অনুমান করি এরা কনস্টেবল পদমর্যাদার হবেন। বাংলাদেশের পুলিশ তাও আবার কনস্টেবল, এদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করার মত দুরাশা আমার নাই! কনস্টেবল কনস্টেবলের কাজ করেছেন। পুলিশ সুপার পুলিশ সুপারসুলভ বক্তব্য দিয়েছেন; কোথাও কোনও নতুনত্ব নাই। আমার বক্তব্য অন্যখানে।
যখন আদালতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এই বয়স্ক মানুষটাকে হাতকড়া লাগানো হচ্ছিল তখন আদালতে জজ সাহেব উপস্থিত ছিলেন, উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞ আইনজীবী মহোদয়গণ। এঁরা আইনের একেকটা স্তম্ভ- এঁরা আমাদের মত দু-চার পাতা পড়ে ওখানে যাননি; ওখানে যেতে বিস্তর পাতা ঠোঁটস্থ-কন্ঠস্থ-উদরস্থ করতে হয়েছে। আইনের প্রতিভূ এঁদের কাছে এই বিষয়টার মধ্যে কোন ধরনের অমানবিকতা ধরা না-পড়লে ঘটা করে এর ফটো উঠাবারই বা কী প্রয়োজন? এই নিয়ে আমাদের অস্থির হওয়ারও কোন কারণ দেখি না।
'খোদা-না-খাস্তা' জজ সাহেবদের অপমান করার পর পরই কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে তাকেও হাতকড়া লাগিয়ে দু-চার বছরের জন্য জেলে আটকে রাখা হবে কি না এই নিয়ে চিন্তায় আছি। 'কবরজেলখানা' নামে নতুন একটা কারাগার চালু করা যেতে পারে কিন্তু ওই বেয়াদব মুর্দার সঙ্গে পুলিশরা কী কবরজেলে ঢুকতে রাজি হবেন কি না এই নিয়ে আবারও চিন্তায় পড়ে গেলাম। এঁদের লালন করার জন্য ট্যাক্সপেয়ী আমরা নির্বোধ জনগণের গাঁট থেকে বিস্তর ট্যাক্সের টাকা বেরিয়ে গেলেও লাভের লাভ যা হবে এই সব নিয়ে চিন্তা করে করে আমরা খানিকটা চিন্তাশীল হলেও হয়ে যেতে পারি।
শাহআলম সাহেব বছরের পর বছর ধরে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাতে দেখাতে ক্লান্ত হয়ে (মতান্তরে বুড়ো আঙ্গুল ক্ষয় হয়ে যাওয়ায়) অবশেষে কাল সকাল-সকাল টাট্টিখানা, হালের বাথরুমে হঠাৎ করে বোধোদয় হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না-জানানো কাজটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আইনের কাছে সমর্পণ না-করে ছাড়াছাড়ি নাই। কিন্তু গাটা যে আবার ম্যাজম্যাজ করছে বড়ো। গাট্টগোট্টা একজন মানুষ হুট করে অসুস্থ হতে পারবেন না এটা কেমনতরো কথা! নিজে নিজেই শরীর খারাপ হবে- স্কুলপড়ুয়া বাচ্চা তো আর না যে বগলে পেয়াজ রেখে জ্বর উঠাবার জন্য কস্তাকস্তি করতে হবে। অতএব এটা নিয়ে হইচই করার কিছু নাই। অসুস্থ হওয়ার পর মানুষের মনও বিচিত্র কারণে নাকি তরল থাকে। তার উপর কথিত আছে, অনেকের নাকি কঠিন কঠিন আইডিয়া প্রসবের জায়গা হচ্ছে বাথরুম-ওয়শরুম!
শাহআলম সাহেব আইনকে তার কেশ স্পর্শ করার জন্য তার স্বল্প কেশযুক্ত মাথার কেশ এগিয়ে দিতে হাসপাতালের টাট্টিখানা থেকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যদি আদালতে হাজির হন তাহলে সমস্যা কোথায়?
ভাল কথা, মেডিনোভা না কার যেন রোগি আনানেওয়া করার জন্য হেলিকপ্টার নাকি সেসনা ছিল? ইউনাইটেড হাসপাতালের হেলিকপ্টার নাই? থাকলে ওই হেলিকপ্টারে করে আদালতের ছাদে বা মাঠে নামলে খানিকটা সুবিধা হতো না, নাকি? অসুস্থ একটা মানুষ! শাহআলম বেচারার হার্টের ব্যামো; বেচারা যানজটে আটকা পড়ে কী কষ্টই না করেছেন! ফট করে হার্টটা ফুটে গেলে এর দায় কে নিত? আর সেই শব্দে দু-চারজন পথচারী হুমড়ি খেয়ে পড়ে হাত-পা ভাঙ্গলে ওরাই আবার রাস্তার দোষ দেখিয়ে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে একটা টর্ট আইনের আওতায় মামলা ঠুকে দিলে এরই বা দায় কে নিত...।
সহায়ক লিংক:
১. পত্রিকার খবর: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=24&date=2011-03-21
২. বিচার...: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_31.html
No comments:
Post a Comment