...প্রথম বন্দীকে ওঠনো হলো গিলোটিনে।
ঘ্যাচ!
প্রথমবারের মতো নেমে এলো ভারি ধারালো ফলাটা। দর্শকরা গুণলো ‘এক!’
(এরপর) দর্শকরা গুণলো ‘দুই!’
ঘ্যাচ! ঘ্যাচ! ঘ্যাচ!
‘তিন...চার...পাঁচ’ বিরামহীনভাবে দর্শকরা গুণছে। নিমিষেই প্রথম গাড়ি শূণ্য হয়ে গেল। দ্বিতীয় গাড়ি থেকেও বন্দীদের নামানো শুরু হলো। অল্পক্ষণেই শূণ্য হয়ে গেল সেটাও। এবার পালা তৃতীয় গাড়ির বন্দীদের। সেই মেয়েটা আর কারটন পরস্পরের হাত ধরে আছে।
মেয়েটা বলছে, ‘আমার মোটেও ভয় করছে না । তোমার হাত ধরে আছি তো।’
কারটন বলল,‘তোমার পালা আসবে যখন, আমার দিকে তাকাবে। আমার কথা ভাববে, অন্য কিছু ভাববে না। কিভাবে কী হয়ে যাবে টেরই পাবে না।’
‘ওরা কী খুব তাড়াতাড়ি করবে?’
‘হুঁ।’
অবশেষে মেয়েটার কাঁধ একটা হাত স্পর্শ করল।
জিজ্ঞেস করলো মেয়েটা, ‘সময় হয়েছে?’
‘হুঁ।’
কারটনকে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়াল সে। জনতার দিকে তাকিয়ে হাসল, নির্ভীক, পৃথিবীকে তাচ্ছিল্যের হাসি। তারপর গিলোটিনের দিকে এগোল।
‘ঘ্যাচ’।
জনতা গুণল : ‘বাইশ!’
আকাশের দিকে তাকাল কারটন। কী ঝকঝকে! আকাশে হালকা মেঘ। উড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। বিড়বিড় করছে কারটন,
এই ভালো, সারাজীবন যা করেছি তার চেয়ে অনেক অনেক ভালো একটা কাজ করলাম।
একটা হাত স্পর্শ করলো ওর কাঁধ।
ধীর পায়ে এগিয়ে চলল কারটন। আকাশের দিকে দৃষ্টি। এখনও। গিলোটিনের বেদীতে উঠল। আড় কাঠে গলা রেখে হাঁটু মুড়ে বসল। অনেক মানুষের গুঞ্জন ভেসে এলো ওর কানে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, শেষবারের মতো পৃথিবীর, মানুষের মুখ। গুঞ্জনের আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে... সুতীব্র এক আঘাত। সব আলো মুছে গেল কারটনের চোখ থেকে।
জনতা গুণল: ‘তেইশ!’
(আ টেল অভ টু সিটিজ, চার্লস ডিকেন্স)
*অনুবাদটা কে করেছিলেন এখন আর মনে নাই পুরনো ডায়েরীতে টুকে রেখেছিলাম। কিন্তু সব গুলিয়ে যায় যখন কারটনের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি। আজ কোথাও পড়ছিলাম পৃথিবী থেকে ক্রমশ মৃত্যুদন্ড উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশেও একদিন মৃত্যুদন্ড থাকবে না। যে প্রাণ মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না সেই প্রাণ নষ্ট করার অধিকার তার নাই...।
2 comments:
একটু কষ্ট করে যদি অনুবাদকের নাম সহ বলতেন
তাহলে উপকৃত হতাম।
নিশ্চিত নই, সম্ভবত নিয়াজ মোরশেদ @sairas
Post a Comment