আ
জ
কে
র
অ
তি
থি
লেখক, নিশম সরকার। লিখেছেন সীসা নিয়ে:
জ
কে
র
অ
তি
থি
লেখক, নিশম সরকার। লিখেছেন সীসা নিয়ে:
"একটা পুরানো গল্প দিয়ে শুরু করি! আমি তখন ক্লাসে ফোরে পড়ি। আম্মু নিয়মিত স্কুল থেকে আনা নেয়া করেন।
তো, আমার স্কুলের উল্টা দিকে, রাস্তার ওই পাড়ে তখন নতুন একটা ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে, নাম 'মাইলস'। সে সময় টিভিতে নতুন একটা এড দেয়া শুরু করলো, 'শার্ক এনার্জি ড্রিক'। আমার তো এড দেখে মাথা নষ্ট অবস্থা! বাংলাদেশে এর আগে এনার্জী ড্রিংক বলে কোনো পানীয় ছিলো না, তাই আম্মুরও কোনো আইডিয়া ছিল না এ সম্পর্কে।
আমি একদিন ছুটির পর কান্নাকাটির চুড়ান্তে উপনিত হলাম এই দাবীতে যে, আজকে আমাকে শার্ক খাওয়াতে হবে, হবেই-ই! স্নেহময়ী মা আমাকে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে মাইলসে ঢুকলেন। তখন শার্কের দাম ছিলো খুব সম্ভবত ৩৫টাকা, দোকানদার ৪০টাকা রেখেছিলেন। আমি হাতে নিয়েই আর দেরী করলাম না, বোতলের মুখ খুলে মুখে দেব কিন্তু তখন বিচ্ছিরি গন্ধে নাক মুখ কুঁচকে বমি এলো! এমন বাজে, ওষুধের মতো গন্ধ আগে কখনো খাইনি! জিনিসটা আর মুখে নিলাম না, মুখ লাগিয়ে ফেরত দিয়ে দিলাম। দোকানদার লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জানালেন যে, তিনি টাকা ফেরত দেবেন না। আম্মু কিছু না বলে আমাকে নিয়ে বের হয়ে এলেন।
আমি বের হয়ে বললাম, 'আম্মু, পার্ক খাবো (ওইটাও তখন বিটিভিতে নতুন এড দেয়)'। আম্মু কোনো উত্তর না দিয়ে, আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে একটা চড় মারলেন! ওইদিন আমার শার্ক, পার্ক কিছুই খাওয়া হয়নি!
গল্পটা শেষ! ইদানিং এরকম আরেকটা ব্যাপারে আম্মুর কাছে আমার বায়না ধরা উচিত ছিল কিন্তু আমি খুবি চিন্তিত ব্যাপারটা নিয়ে। আমি মোটামুটি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি, একটা বস্তুর এতো দ্রুত পসার দেখে! জিনিসটা আমাদের সবার খুব বেশী পরিচিত নয়, আর তা হলো, সীসা বা আধুনিক ফ্লেভার্ড হুক্কা। আমি অবাক হয়ে যাই, মাত্র বছর দেড়, দুই-এর মধ্যেই কিভাবে ক্লাস এইট-নাইন পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের হাতে এই জিনিসটা এসে গেল!
গ্রাম অঞ্চলে হুক্কা খুব বেশী যে জনপ্রিয়, তাও কিন্তু না! আগে জমিদার গোছের কিছু লোক ভাব দেখানোর জন্য গরর-গরর শব্দ করে দামী হুক্কা খেতেন। আর কোনো দরিদ্রের 'খোয়াইশ' জাগলে নারিকেলের খোসা দিয়ে বানিয়ে নিতেন হুক্কা। গ্রাম অঞ্চলে যে জিনিস আজ বিলুপ্ত, শহরাঞ্চলে আজ তাই জনপ্রিয়!
কোনো একটা চালাকির মাধ্যমে এই কথা ছড়িয়ে গেছে যে, হুক্কা/ সীসা সিগারেটের তুলনায় কম বিষাক্ত, মতান্তরে বিষাক্ত নয়। আর বিশ্বব্রহ্মান্ডের এই অন্যতম ডাহা মিথ্যা কথাতেই হোক অথবা বন্ধুদের সামনে বুক উঁচু করে বলার জন্যই হোক, দ্রুত হারে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে জিনিসটির কদর বেড়ে চলেছে। বর্তমানে একদম হাতের কাছেই বিড়ি-সিগারেটের মতোই পাওয়া যাচ্ছে। জিনিসটাতে একটা রাজকীয় ভাব বজায় রাখার নাম করে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে অনায়াসে বিক্রি হচ্ছে!
আমার সবচেয়ে কষ্টটা এই জায়গায় যে, যেসব ছেলে-মেয়ে কোনোদিন সিগারেট পর্যন্ত স্পর্শ পর্যন্ত করেনি, আজ তারা বাবার পকেট কিভাবে খালি করে ধোঁয়া দিয়ে পেট ভরছে এটা দেখে! জীবনে একটা টাকা ঘুষ খাননি, এরকম এক পরিচিত খালু। তিনি একজন প্রাক্তন সচীব। তিনি চাইলে আজ তার কোটি কোটি টাকা থাকতো, কিন্তু সততা তাঁর কাছে জীবনের চেয়েও দামী। জীবনে কোনোদিন সকাল বেলা তাজা মাছ কিনেন নি তিনি, বিকেলের পর মলিন হয়ে যাওয়া মাছ কম দামে কিনে আনতেন। এমন একজন সচীব! আজ তাঁর ছোটো ছেলে, যে কিনা আজানের আগে দৌড় দিয়ে ইফতারী ফেলে নামাযে চলে যেত, সেও এই সীসায় আসক্ত!
এ কষ্ট কই রাখি?
আমার আরেকটা ভয়, অস্বাভাবিক হারে মেয়েরাও সীসায় আসক্ত হচ্ছে! চেনা বেশ কিছু বান্ধবী সীসা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করে যেনও এটা কোনও হোটেল থেকে বিরিয়ানি খাওয়ার মতই কোনো একটা ব্যাপার!
এবার একটু দেখা যাক, সীসায় আসলেই কোনো বিপদ আছে কিনা? মাঝে মাঝে কাউকে বিশ্বাস করতে নেই, নিজেকেও না! তাই, এই তথ্য খুঁজে বেড়াবার চেষ্টা:
১) এই সীসার ৪টা অংশ। বেজ, পাইপ, বওল আর মাউথপিস। বওলটাকে এলুমিনিয়ামের কভার দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় আর সেই ফয়েলের মাঝে উত্তপ্ত কয়লা রাখা হয়। যা কিনা ভেতরের টোব্যাকো (তামাক) পোড়াতে সাহায্য করে। সবাই জানেন যে, কয়লা পুড়ে কার্বন-মনো-অক্সাইড হয়, যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের চরম ক্ষতি করে। মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
২) এই ধোঁয়া, বেজ এ রাখা সুগন্ধী (যেমন: স্ট্রবেরী, নারিকেল, চকলেট, গোলাপ) পানির ভেতর হয়ে আসে এবং তা মাউথপিসের সাহায্যে সোজা পাকস্থলিতে পৌঁছে।
৩) রয়টার্সের নাম তো সবাই শুনেছেন? রয়টার্সের এক সংবাদ অনুযায়ী একটা পুর্ণ সেশনের সীসা গ্রহন এক প্যাকেট সিগারেট সেবনের মতোই মারাত্মক।
৪) সিগারেট এদিক থেকে একটু ভালো। সিগারেটে যেখানে ১-৩% নিকোটিন থাকে, সেখানে সীসাতে ব্যবহৃত তামাকে থাকে ২-৪% নিকোটিন।
(সুত্র: ড. কেনেথ, আমেরিকা একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স এর প্রেসিডেন্ট)
৫) ইয়েমেনের একটি প্রসিদ্ধ হাসপাতালের কার্ডিয়াক স্পেশালিস্ট ড. আহমেদ আল-মোতাররেব বলেন, 'একবার পুর্ণ ভাবে সীসা গ্রহন করা ৬০টি সিগারেট গ্রহন করার সমান'।
(সুত্রঃ Journal of Periodontology, Nov. 2005)
৬) কিছু অর্ধ শিক্ষিত মানুষ যুক্তি দেখায়, 'এটা তো পানির মুধ্যে দিয়ে আসে। সব কিছু তো শোধন হয়ে যায়'। এটা একেবারেই ভুল তথ্য!
৭) সুগন্ধী, ঠান্ডা ধোঁয়ার কারণে এদের প্রবল বিশ্বাস যে এটি ক্ষতিকর নয়, এগুলোই সীসার প্রতি মোহের একমাত্র কারণ।
(সুত্র: ড. আল খামেরী, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।)
আমার আর কিচ্ছু বলার নেই। যাদের কথা বললাম, এদের কথায় যদি সীসাখোরা কান না দেয়, আমার মতো চশমাপরা, হাবাগোবা ছেলের কথায় কান দিয়ে তারা কেন তাদের জীবনের ক্ষতি করবে! ক্ষতিই তো, আমার কথা মানলে তো সীসা বারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে! তখন, এই যে দল বেঁধে আড্ডা মারা আর সীসা খেয়ে আলাদা ভাব আসার মুড আসবে কোথা থেকে?
এখন এদের দরকার একটা গাইডেন্স, ঠিক ক্লাস থ্রীতে থাকতে যেমন ছিলেন আমার মা। যিনি কিনা প্রচন্ড স্নেহময়ী কিন্তু দরকারের সময় বজ্রকঠোর। তাদেরও এখন একটা উপযুক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন যেটা কিনা আমার আম্মু সময়ে নিয়েছিলেন! আমি খুবি শংকিত, নতুন জেনারেশন নিয়ে কেনও যে জাফর ইকবাল স্যার, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এতো আশাবাদী! এঁদেরকে কি জবাব দেব আমরা? স্যার, আমরা সীসা খাই? সিগারেট খাই? ইভ-টিজিং করি? পারলে আপনারা দেশ বানিয়ে নেন, আমাদের দিয়ে আশা করে লাভ নাই! এই কথা বলব...?
সহায়ক সুত্রঃ
১. http://www.yobserver.com/sports-health-and-lifestyle/10011652.html
২. http://www.mophp-ye.org/english/health_centers.html
৩. http://www.yobserver.com/culture-and-society/printer-1008829.html
৪. http://be-healthy.blogspot.com/2007/03/effects-of-smoking-shisha.html
12 comments:
Shisa neye janbar jonno thanks
মিডল ইস্ট হালাগো বিশেষ কইরা সৌদিগো কিছু জিনিষ আমরা আমদানী করছি। লম্বা পানজাবী,মাথায় গোল চাক্কা,উটের পেশাব,শিশা,,,,সৌদি হালারা বালিশে হেলান দিয়া হুক্কা টানে এইডার নামও দিছে শিশা। বাংগালিরা যেইডা দেহে শিক্খা ফেলে। হালাগো উটের পেশাব খাইতে যেমন রুচিতে বাধে না তেমনি সৌদি শেখ গো পেশাব শিশা খাইতেও
notun janlam .... dhonnobad.
জানলাম।ধন্যবাদ।
এর পুরোটা কৃতিত্ব এই পোস্টের লেখক নিশম সরকারের @Sabbir
:) @Anonymous
ধন্যবাদ পাওনা এই লেখার লেখক নিশমের @your doctor
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ @মুরাদ
আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার রিকোয়েস্ট, আপনারা অএক লিখবেন এটা নিয়ে। হাতে গোনা শ খানেক শয়তান পোলাপান কখনোই এতোগুলা কলম যোদ্ধার সামনে দাড়াতে পারবেনা। দোয়া করবেন :)
এই তথ্য গুলা ওইকিপিডিয়ার বাংলা বিভাগে পাঠানো দরকার। অত্যন্ত দরকারী এবং প্রয়োজনীয় পোস্ট।
আগে শুনতাম গাজা খেয়ে রাজা হয় এখন সীসা খেয়েও রাজা হইতে চায় যুগের পুলাপাইন।
একমত @নিশম
সহমত @আজগর
Post a Comment