Search

Sunday, May 22, 2011

কদমবুসি করার জন্য লিমনের এক পা-ই যথেষ্ঠ

­ফ্রিডম বইয়ের ভূমিকায় আমি লিখেছিলাম, "বীরাঙ্গনা রীনা, প্রকাশ্যে- ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার পা ধরে রাখব যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি বলবেন: এই প্রজন্মকে ক্ষমা করেছেন"।
এটা কেবল লেখার জন্য লেখা হয়নি; এটা আমার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বীরাঙ্গনা রীনার খোঁজ কেউ দিতে পারলে বইমেলায় হাজার-হাজার মানুষের সামনে সত্যি সত্যি আমি পা ধরে বসে থাকতাম। পা ছাড়তাম না, এই ভদ্রমহিলা যতক্ষণ পর্যন্ত না-বলতেন এই প্রজন্মকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এখানে আসলে বীরাঙ্গনা রীনা [১] বলে আলাদা করে কেউ ছিলেন না। সমস্ত বীরাঙ্গনাদের প্রতি আমরা যে অন্যায় করেছি এই প্রজন্মের পক্ষ থেকে কেবল আমার খানিকটা ঋণ শোধ করার চেষ্টা মাত্র।
পরবর্তীতে আমরা চেষ্টা করেছি [২] এও বা কম কী! অনেকে বলবেন এতো বছর পর এই চেষ্টা করলে লাভ কি, এর উত্তর হয় না আসলে!

কিছু কিছু মানুষের কর্মকান্ড দেখে আমি হাঁ হয়ে যাই। মনে হয়, পা ধরে সালাম করি। সত্যি সত্যি যেমনটা ইচ্ছা হয়েছিল বীরাঙ্গনা রীনার বেলায়, সাবেক প্রধান বিচারপতির বেলায়ও [৩]। আজ আবারও ইচ্ছা করছে লিমনের পা ধরে সালাম করার।
লিমন নামের এই মানুষটার ক্ষমতা দেখে আমি হতভম্ব! একজন মানুষের এই বিপুল ক্ষমতার উৎস কোথায়? লিমন নামের মানুষটাকে নিয়ে কিছু লেখাও আমি লিখেছিলাম [৪], [৫]। 

কিন্তু আমি নির্বোধ তখনও পুরোপুরি আঁচ করতে পারিনি লিমন এই মানুষটার ক্ষমতার নমুনা। কী সর্বনাশ, এক পায়ের এই মানুষটার প্রতি ১৬ কোটি মানুষের সরকার তার সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করছে! এটা ভেবে বসাটা বাতুলতা হবে না যে এই দেশের সমস্ত বন্দুক-কামান-মিসাইল তাক করে রাখা হয়েছে লিমন নামের মানুষটার প্রতি। এমন একটা মানুষের পা ধরে সালাম করার ইচ্ছাটা বিচিত্র না!
হা ঈশ্বর, লিমন নামের মানুষটার এক পায়ের স্থলে দু-পা থাকলে না-জানি কী সর্বনাশ হয়ে যেত! তখন আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র এই মানুষটাকে আটকাত কেমন করে? তখন কি আমরা অন্য দেশের সহায়তা চাইতাম? আমাদের দেশের উদ্দেশ্যে সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম নৌবহর যাত্রা শুরু করত? ১৯৭১ সালে আমেরিকার সপ্তম নৌবহর রওয়ানা হয়েছিল আমাদেরকে কাবু করতে; এবার ২০১১ সালে দশম নৌবহর রওয়ানা হতো আমাদেরকে রক্ষা করতে!

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক লিমনের বিষয় নিয়ে এমন ভঙ্গিতে ঝাপিয়ে পড়েছেন যে নমুনা দেখে মনে হচ্ছে লিমনের কারণে সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে! এখন এটা আমাদের বিশ্বাস না-করে উপায় নেই, অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ তারেক আহমেদ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা।

পত্রিকায় এসেছে [৬], সিদ্দিক সাহেব বলেছেন, "...লিমন মোরশেদ জমাদ্দার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে জড়িত। এমনকি তার বাবাও জড়িত...।...র‌্যাব মহাপরিচালক বলেছিলেন, লিমন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল না। কিন্তু প্রকাশিত সংবাদে 'শীর্ষ' শব্দটা বাদ দেয়া হয়েছে...।"
যাক, কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেবল সাপ না সাপের মাথার মনিও বেরিয়ে এসেছে। মনিটা বড়ো হলে সর্বনাশ হয়ে যেত। একদা আমাদের কাছ থেকে ব্রিটিশরা কোহিনূর লুটে নিয়ে গেল। এখন এই সাপের মনিটাও কেউ-না-কেউ লুটে নিয়ে যেত। খামাখা চোর-চোট্টা ব্রিটিশদের এই নিয়ে বিস্তর মিথ্যাচার করতে হতো [৭]। মিথ্যা বলা থেকে ব্রিটিশরা বেঁচে গেছে এই কারণে আমরা একটা ট্রফি পেতে পারি। আমাদেরকে ট্রফি না-দেয়াটা অন্যায় হবে!
কালই যদি শুনি কেবল লিমন এবং তার বাবাই না, লিমনের মা-বোন-ভাই, তার চৌদ্দপুরুষ মোরশেদ জমাদ্দার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য ছিলেন অন্তত আমি মোটেও অবাক হব না। 

ঋণ: শিশির, প্রথম আলো
এই ট্রফি পাওয়ার আনন্দে আজ আর আমরা এই ফিযুল প্রশ্ন করব না:
১. লিমন সন্ত্রাসী, এই সম্বন্ধে গোটা দেশবাসী যা জানে তা মিথ্যা, কি সত্য?
২. লিমনের বাবাকেও সন্ত্রাসী বানাবার জন্য আমাদেরকে আরেকটা ট্রফি দেয়া যায়, কি যায় না?
৩. বিচারাধীন একটা মামলা সম্বন্ধে এমন মন্তব্য কেউ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আমাদের দেশের আইনে আছে, কি নাই?
৪. র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেছিলেন, লিমন দুর্ঘটনার শিকার। এখন দেখা যাচ্ছে, এই বক্তব্য পত্রিকাওয়ালারা ফটোশপের কাজ করে বিকৃত করে ছেপেছে। তাহলে ওইসব পত্রিকার বিরদ্ধে ফটোশপের এহেন কাজ করার জন্য কোন শাস্তি কি হবে, কি হবে না?
৫. আমাদের দেশে পাটমন্ত্রী কথা বলেন যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার নিয়ে। তো, সিদ্দিক সাহেব লিমনকে নিয়ে নিয়ে কথা বলবেন, এতে অবাক হওয়ার কী আছে! 
৬. লিমনের পাশে থাকার কারণে মানবাধিকার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কোন অভিযোগ আনা হবে, কি হবে না?  

সহায়ক সূত্র:
১. বীরাঙ্গনা রীনা: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_7644.html 
২. কে চাইবে তোমাদের কাছে ক্ষমা?: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post.html
৩. প্রধান বিচারপতি: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_13.html
৪. জমিনের ঈশ্বর: http://www.ali-mahmed.com/2011/04/blog-post.html
৫. আমি আতঙ্কিত, শঙ্কিত: http://www.ali-mahmed.com/2011/05/blog-post_07.html
৬. পত্রিকার সংবাদ: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-05-21
৭. কোহিনূর: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_18.html

2 comments:

Toufiq Hassan Shawon said...

আপনার লেখার ধরণ টা বেশ পছন্দ হল! আর হেডার এর লেখাটা ও বেশ উচু দরের!

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ধন্যবাদ। @Toufiq Hassan Shawon