বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাইটে লেখা আছে:
দৈনিক জনকন্ঠ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুলকে নিয়ে জানা যাচ্ছে:
banglanews24.com লিখছে: [৩]
(তিনি স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না, ছিলেন ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার)
দৈনিক ইত্তেফাক লিখছে: [৪]
প্রথম আলো 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বিগ্রেডভিত্তিক ইতিহাস' থেকে ধার করে লিখেছে:
"... রুহুল আমিন নিয়োগ পান ‘পলাশের’ ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে। ৯ই ডিসেম্বর কোন বাধা ছাড়াই তারা হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করেন। পরদিন ১০ই ডিসেম্বর ভোর ৪টায় তারা মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল ৭টায় কোন বাধা ছাড়াই তারা মংলায় পৌছান। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মংলাতেই অবস্থান নেয় এবং পানভেল, পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হওয়া আরম্ভ করে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। এমন সময় তাদের অনেক উপরে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা-পলাশ থেকে বিমানের উপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। ...
...পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। শেষ মুহুর্তে রুহুল আমিন নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোনক্রমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্যক্রমে পাড়ে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করে। পরে তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি? "[১]
দৈনিক জনকন্ঠ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুলকে নিয়ে জানা যাচ্ছে:
"...১০ ডিসেম্বর বেলা ১২টার সময় অন্য তিনটি গানবোটসমেত খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছা মাত্র শুরু হয় শত্রুপক্ষের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ। অন্যদিকে পাক বোমারু বিমান আঘাত হানে। কিন্তু এই বীর সেনানী আত্মরক্ষার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। সম্মুখযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে শাহাদাতবরণ করেন। দেশের মাটি ও মানুষের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করে যান।..." [২]
বেশ! কিন্তু এখানে আমরা এটা আর বুঝতে পারি না যে বিমান আসলে কাদের ছিল?
banglanews24.com লিখছে: [৩]
"... পরবর্তীতে বিএনএস পদ্মা নৌ জাহাজে স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এই জাহাজে দায়িত্বকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর বিমান হামলায় মারাত্বক আহত হয়ে শাহাদাৎ বরণ করেন...।"
দৈনিক ইত্তেফাক লিখছে: [৪]
"...১০ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর বিমান হামলায় যুদ্ধ জাহাজে তিনি গুরুতর আহত হন।..."।
প্রথম আলো 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বিগ্রেডভিত্তিক ইতিহাস' থেকে ধার করে লিখেছে:
"...আকাশের অনেক উঁচুতে চারটি বোমারু বিমান উড়ছিল। হয়তো হানাদার বাহিনীর বিমান এখনই বোমা বর্ষণ করবে। পদ্মা এবং পলাশ থেকে নাবিকেরা বিমানগুলো লক্ষ্য করে গুলি চালাবার জন্য অধিনায়ক লে. কমান্ডার চৌধুরীর অনুমতি চাইলেন। অধিনায়কের সম্মতি পাওয়া গেল না। ...তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন এবং বাম হাত দিয়ে সাঁতার কেটে কোনোমতে চলে আসেন নদীর পূর্ব পাড়ে। শত্রুর ভয়ে এলাকাটি আগেই জনমানবশূন্য হয়ে যায়। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রুহুল আমিনকে সাহায্য করার জন্য কাউকে পাওয়া গেল না।
...নোট: পরে জানা যায়, ভারতীয় বিমান থেকে ভুলবশত আক্রমণ চালানো হয়, যাতে পদ্মা ও পলাশ ধ্বংস হয়।"
(এই নোটের উৎস কি এটা অবশ্য জানা যায়নি! 'পরে জানা যায়', এর মানে কী! পরে কখন জানা যায়, কোথায় জানা যায়, ডিয়ার প্রথম আলো? আমরা যারা সাধারণ পাঠক আমাদের তো এই বিষয়ে একটা ধোঁয়াশা কাজ করে!) [৫]
প্রিন্ট মিডিয়ার মত এমন অনেক মিডিয়ার কল্যাণে আমরা জেনেছি বিমানগুলো পাকিস্তানি সেনাদের ছিল। যার সত্যতার পেছনে তথ্য আমরা দেখতে পাই না! রুহুল আমিনের মৃত্যুর সময় রাজাকার কর্তৃক নির্যাতন এ নিয়ে বিস্তর সংশয় থেকে যায়। এখন আমরা দেখি ওই সময় এই বিমানগুলো আসলেই কার ছিল? জেনারেল জেকবের লেখা 'সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা' বইয়ের অনুবাদ:
"...পরিষ্কার হলুদ রং থাকা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত আমাদের এয়ারফোর্স সেগুলোকে চিহ্নিত করতে পারেনি। ফলে ন্যাটো (NATO) -এর পরিভাষা অনুযায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ গুলিবর্ষণ (Friendly fire) -এর পরিণতিতে জাহাজগুলো (পদ্মা-পলাশ) ডুবে যায়।"
তাছাড়া ওই সময় (১০ ডিসেম্বর) পাকিস্তানিদের বিমান বহরের কী অবস্থা ছিল? বোমাবর্ষন করতে হলে ফাইটার বিমানগুলোর হাজার-হাজার মাইল দূর থেকে কেবল উড়ে আসলেই হয় না তার রসদ, ফুয়েলের প্রয়োজন হয়। এই দেশে তাদের বিমানগুলো উড্ডয়ন উপযোগী ছিল কি না?
পাকিস্তানের অতি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ সিদ্দিক সালিকের (ইনি ইয়াহিয়ার তথ্যসচিব ছিলেন) 'উইটনেস টু সারান্ডার' থেকে আমরা জানতে পারি:
এটা সত্য বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের অসম সাহসিকতা, তাঁর আত্মত্যাগে কোন খাদ ছিল না কিন্তু এখানে আমাদের মত সাধারণ পাঠক প্রকৃত ঘটনা কী এটা নিয়ে বিভ্রান্তির বেড়াজালে কেবল ঘুরপাক খাবেন। কেন? সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে সমস্যা কোথায়? কেন আমরা সাদাকে কালো জানব?
আমাদের বড়ো গর্বের জায়গাটা, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে কেন ফিকশন মেশাব? কেন একজন মুক্তিযোদ্ধার অবদানের কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা দিয়ে গাল ফুলিয়ে ফেলব? একজন মুক্তিযোদ্ধা, অপারেশন জ্যাকপটের নায়ক, ফজলুল হক ভূঁইয়া স্বল্প শিক্ষিত হলে সমস্যা কোথায়? এতে করে কী তাঁর সীমাহীন বীরত্ব খাটো হয়ে যায়? কেন তাঁকে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে দেখাতে হবে? [৬]
এক উপন্যাসিকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা উপন্যাস পড়েছিলাম। পড়ে হাসব, না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কী রগরগে আরোপিত সংলাপ! সালদানদী নামের একটা জায়গা নিয়ে এই উপন্যাসের পটভূমি গড়ে উঠেছে। কৃষকের ছোট-ছোট বাচ্চা তাদের বাবাকে বলছে,
"বাজান, বাজার থিক্যা আসার সময় ইন্দুর মারার বিষ নিয়া আইসো। পাকিস্তানি আইলে বিষ খামু, কিন্তুক ইজ্জত দিমু না"।
এই লেখক কোথাও সালদানদীর তুমুল যুদ্ধের কথা পড়েছিলেন এরপরই এর সাবানের ফেনা ভর্তি মাথায় আসে এটা নিয়ে একটা রগরগে উপন্যাস ফেঁদে বসার। অথচ সালদানদী কত বীর অবহেলায় এই ভুবন থেকে বিদায় নিয়েছেন। আস্ত একটা বই লেখার জন্য সালদানদীর কেবল একজন দুলা মিয়াই যথেষ্ঠ। যার নাড়িভূঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল। সবাই পিছ-পা হলেন কিন্তু তারপরও তিনি গামছা দিয়ে বেঁধে গুলির-পর-গুলি চালিয়ে গেছেন... [৭]
আসলে আমরা ছোট-ছোট মানুষ, বড়ো বড়ো মানুষদেরকে এমন করেই নিজেদের পর্যায়ে টেনে নামাবার চেষ্টা করি যার আদৌ কোন প্রয়োজন নেই। আলাদা রং চড়বার প্রয়োজন হয় দুর্বলদের, এঁরা এর উর্ধ্বে। তবুও আমরা এই সব করি, কেন করি? এতে সম্ভবত পৈশাচিক আনন্দ বোধ করি।
* এই লেখার জন্য সূত্র, প্রচুর ভাবনা, বই-পত্রের সহায়তা দিয়েছেন যে মানুষটি, তাঁর অনীহার কারণে এখানে নাম দিতে পারছি না-বলে গভীর বেদনা বোধ করছি। মানুষটার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এটা বলা ব্যতীত আর কিছুই বলার নেই আমার...।
**বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের লোকজনেরা কেমন আছেন এই নিয়ে জানাচ্ছেন রাসেল পারভেজ (http://www.facebook.com/rasel.pervez):
"...বাংলাদেশ সরকার বীরশ্রেষ্ঠ ভাতা দিয়েছে রুহুল আমিনের পরিবারকে কিন্তু তাদের উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ করে দেয়নি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষিত থাকলেও রুহুল আমিনের ৩ কন্যা এবং একমাত্র পূত্র সে সুযোগ পেয়েছেন এমনটা বলা যাবে না। তবে তারা বেঁচে আছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় যেখানে রুহুল আমিন জন্মেছিলেন। তার বাবা যখন ডুবন্ত জাহাজ থেকে আহত সাঁতরে উঠেছিলেন তীরে এরপর থেকে তাঁর সন্তান আর নদীতে নামেনি। তিনি এখন বৈরী বাংলাদেশে জোগালী শ্রমিক। সংসার টানছেন ভ্যান চালিয়ে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই স্বাধীনতার সুফল পেয়েছে, আমরা তো স্বাধীন হয়ে ভালো আছি।"
সহায়ক সূত্র:
১. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়: http://www.molwa.gov.bd/index.php?option=com_content&task=view&id=409
২. জনকন্ঠ: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2009-12-10&ni=2446
৩. banglanews24.com: http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=c414a81a76886b53ba8397999ef8d01f&nttl=157258
৪. দৈনিক ইত্তেফাক: http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMTJfMTBfMTJfMV8xMl8xXzI2MDQ=
৫. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=2&date=2011-03-21
৬. হলুদ সাংবাদিকতা: http://www.ali-mahmed.com/2011/03/blog-post_26.html
৭. দুলা মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_08.html
11 comments:
ভাইয়া, এই আলু-কালুরা আরো কত কি যে নতুন করে লিখবে।
অঃটঃ-
''এন্টিকে রঙের প্রলেপ চড়াবার মত বোকামি আর নাই''
''এন্টিক'' শব্দটা কেন জানি আমার কাছে ভাল লাগছে না। কারন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমার কাছে কখনই ''এন্টিক'' হবে না।
সিদ্দিক সালিকের বইয়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বর সকাল দশটার পর পাকিস্তানের কোন বিমান বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অভিযান চালায়নি৷ সেসময় পাকিস্তানিরা মনের সুখে বিমান হামলা থেকে বিরত ছিল, এমন নয়৷ ভারতীয় বিমান বাহিনী উপুর্যপরি হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের সবগুলো রানওয়ে ধ্বংস করেছিল৷ তাই পাকিস্তানি বিমানগুলো আর উড়তে পারেনি৷
সুতরাং ১০ ডিসেম্বর রুহুল আমিনদের যুদ্ধজাহাজে পাকিস্তানিদের বিমান হামলার কোন সুযোগ নেই৷ আর জেকবের বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় বিমানের সেই হামলায় জাহাজ দুটো ধ্বংস হলেও কোন ক্রু বা সেনা মারা যায়নি৷ এখানেই প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে রুহুল আমিন কিভাবে মারা গিয়েছিলেন?
এখানে আমার মনগড়া একটা ব্যাখ্যা আছে৷ সম্ভবত, জেকব দায় এড়াতে তাঁর বইতে রুহুলের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করেননি৷
Clear kore lekhen
Lot of information, thanks.
জানি না এন্টিক শব্দটা আপনি কোন অর্থে গ্রহন করছেন। এন্টিক কিন্তু ফেলে দেয়ার জিনিস না, বুকে তুলে রাখার ধন। কেবল এন্টিকই পারে মিথ্যার পিঠে কষে চাবুক লাগাতে- সাদার সাদা, কালোর কালো। এটা সত্য এন্টিকের মূল্য সবার কাছে সমান না।
তবে আপনার আবেগের দিকটা জেনে ভাল লাগল :)@সায়ন
"সম্ভবত, জেকব দায় এড়াতে তাঁর বইতে রুহুলের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করেননি৷"
সহমত।
জেকবের লেখায় আমি নিজেও অনেকখানি বিভ্রান্ত হয়েছি, ছত্রে ছত্রে সবই বলেছেন কেবল বলেননি, রুহুল আমিনের মৃত্যু নিয়ে। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না, কেন?
বড়ো মাপের মানুষরা কেন এমনটা করেন ভেবে অবাক হই! সত্য এড়িয়ে যাওয়া, গোপন করাও অপরাধ...@Anonymous
ঠিক কোথায় আপনার কাছে অস্বচ্ছ মনে হচ্ছে এটা বললে ব্যাখ্যা দিতে সুবিধে হতো। তা না-করে ফট করে লিখে দিলেন, "Clear kore lekhen"।
খুব একটা ক্লিয়ার করে লিখতে আগ্রহ বোধ করছি না কারণ এরপরই আপনি বায়না ধরবেন, লেখাটা পড়ে দেয়ার জন্য। বাহে, অন্যের লেখা হলেও তা নিজেকেই পড়তে হয়...@Anonymous
:) @Sajid
Thumbs up!!!!
আপনে বলতাছেন সবাই ভূল আপনে ঠিক?
কুতর্ক না-করে আমি যে তথ্য-উপাত্তগুলো দিয়েছি সেখানে কোনো অসঙ্গতি থাকলে ভুল ধরিয়ে দিন। ভুল ধরিয়ে দিলে অনেকে রাগ করেন কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ থাকব। @Anonymous
Post a Comment