আজকের অতিথি লেখক ডিউক জন, তিনি লিখেছেন, বড়ো মাপের মানুষদের অন্ধকার দিক নিয়ে:
"মুহম্মদ জাফর ইকবালকে বলা হয় এদেশের সাইন্সফিকশনের পুরোধা। তাঁর প্রথম কল্পবিজ্ঞানগ্রন্থ কপোট্রনিক সুখদুঃখের পেছনের গল্পটি জাঁক করে তিনি অনেক জায়গাতেই বলেছেন। আসুন, তাঁর মুখ থেকেই শুনি।
'প্রথম গল্পটি বিচিত্রায় প্রকাশিত হবার পর কেউ কেউ এটাকে বিদেশি গল্পের অনুকরণ বলে সন্দেহ প্রকাশ করে কাগজপত্রে লেখালেখি করেছিলেন। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অল্পতেই বিচলিত হয়ে যাই। বিদেশি গল্পের অনুকরণ না করেই সায়েন্স ফিকশান লেখা সম্ভব প্রমাণ করার জন্যে আমি তখন রেগেমেগে অন্য গল্পগুলি লিখেছিলাম'।
তো, জাফর স্যার মৌলিক লেখালেখি করেন, এটা জেনে (এবং বিশ্বাস করে) যখন তাঁর একজন গুণমুগ্ধ ভক্তে পরিণত হচ্ছিলাম, তখনই ধাক্কাটা খেলাম।
খেয়াল করেছি, যারা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়েন, তারা নিয়মিত সাইফাই মুভিও দেখেন। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালিয়েন ছবির কাহিনির সঙ্গে ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম (১৯৮৮) বইয়ের প্রায় হুবহু মিলটি নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে আপনাদের! অনেকে বলবেন, অ্যাডাপ্টেশন, কিন্তু এ-ব্যাপারে খানিকটা খুঁতখুঁতি রয়েছে আমার। কারণ, ঋণ স্বীকার করার কষ্টটুকু লেখক স্বীকার করেননি কোথাও। এটা বিশ্বাস করতে বলবেন না যে, ট্রাইটনের গল্পটি স্বপ্নে প্রাপ্ত। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজে গেলে যে-কেউ নিশ্চিত হবেন, মূল কাহিনি ড্যান ও'ব্যানন এবং রোনাল্ড শাসেটের। জাফর স্যারের মত প্রযুক্তির মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, বা আইএমডিবির খবর রাখেন না, এটা তো বিশ্বাসযোগ্য নয়!
এখানেই শেষ নয়, তাঁর অবনীল (২০০৪) বইটি ভিন ডিজেল অভিনীত চলচ্চিত্র পিচ ব্ল্যাকের (২০০০) ছায়া অবলম্বনে লেখা, যেটির কাহিনিকার জিম ও কেন হুইট ভাতৃদ্বয়। কৃতজ্ঞতা স্বীকার? নৈবচ!
সেবা প্রকাশনীর বেশির ভাগ বইই বিদেশি কাহিনি অনুসরণ করে লেখা হয়, এটা ওপেন সিক্রেট। তার পরও তাদের প্রতিটি বইয়ের শুরুতেই উল্লেখ থাকে: বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে। পেপারব্যাক প্রকাশনী, তথাকথিত সুশীল সাহিত্যিকদের চোখে যারা একরকম 'অচ্ছুৎ', তারা যদি ঋণ স্বীকারের উদারতাটুকু দেখাতে পারে, জাফর স্যারের মত মানুষ কেন পারেন না? এটা করলে কি তিনি ছোট হয়ে যেতেন?
আচ্ছা, সাইন্সফিকশন বাদ দিলাম, কিশোরোপন্যাসে আসি। ম্যাটিল্ডা (১৯৯৬) আগেই দেখা ছিল, তাই আরও একবার চমকে উঠলাম নিতু আর তার বন্ধুরা (১৯৯৯) পড়ে। ছবিটি অবশ্য রোল্ড ডাহলের একই নামের উপন্যাস (১৯৮৮) থেকে তৈরি। জাফর স্যার বই, না মুভি, কোনটা ফলো করেছেন, জানা নেই, তবে এটা জানুন যে, বইটির কোত্থাও তিনি মূল লেখককে কৃতিত্ব দেয়ার আশপাশ দিয়েও যাননি। লেখক এই বইটিকে পরে নাট্যরূপ দেন, সেখানেও একই ব্যাপার। 'সাত চার দুই' নামের সেই নাটকে খোরাসানী ম্যাডাম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত নাজমা আনোয়ার। তিনিও লেখকের লুকোছাপায় বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন একটি সাক্ষাৎকারে, যা দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়।
আরও আছে। 'মেকু কাহিনী'র (২০০০) কাঠামো বেবি'জ ডে আউট (১৯৯৪) অনুসরণে তৈরি। মূল লেখক জন হিউজেস। ডেভ পেলজারের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আ চাইল্ড কলড "ইট" (১৯৯৫) অবলম্বনে লেখা আমি তপু (২০০৫)।
এই সব কারণে ইদানীং এই লেখকের বই পড়া বাদ দিয়েছি। কপোট্রনিকের নেপথ্যকাহিনি এখন জলজ্যান্ত এক প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।
জাফর স্যারের লেখার সাহিত্যমান নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তাঁর অনেক বইই চোখে জল এনে দেয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু এই ব্যাপারগুলো একজন লেখকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। বলছি না যে, অন্যের লেখা থেকে ধার করাটা দোষের কিছু, কিন্তু মূল লেখককে ক্রেডিট না দেয়াটা মহা অন্যায়, পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।
স্যার, আপনি না পত্রিকায় কলাম লিখে নীতি শেখান? আপনার নিজের 'নীতি' যে পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, টের পান না বুঝি? মূলত শিশুকিশোররাই আপনার পাঠক। আপনি যা বলেন, যা লেখেন, এই সব খুদে ভক্তরা চোখ বুজে তা অনুসরণ করে। এদের আপনি কী শেখাচ্ছেন, ভেবে দেখেছেন কি?"
"মুহম্মদ জাফর ইকবালকে বলা হয় এদেশের সাইন্সফিকশনের পুরোধা। তাঁর প্রথম কল্পবিজ্ঞানগ্রন্থ কপোট্রনিক সুখদুঃখের পেছনের গল্পটি জাঁক করে তিনি অনেক জায়গাতেই বলেছেন। আসুন, তাঁর মুখ থেকেই শুনি।
'প্রথম গল্পটি বিচিত্রায় প্রকাশিত হবার পর কেউ কেউ এটাকে বিদেশি গল্পের অনুকরণ বলে সন্দেহ প্রকাশ করে কাগজপত্রে লেখালেখি করেছিলেন। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অল্পতেই বিচলিত হয়ে যাই। বিদেশি গল্পের অনুকরণ না করেই সায়েন্স ফিকশান লেখা সম্ভব প্রমাণ করার জন্যে আমি তখন রেগেমেগে অন্য গল্পগুলি লিখেছিলাম'।
তো, জাফর স্যার মৌলিক লেখালেখি করেন, এটা জেনে (এবং বিশ্বাস করে) যখন তাঁর একজন গুণমুগ্ধ ভক্তে পরিণত হচ্ছিলাম, তখনই ধাক্কাটা খেলাম।
খেয়াল করেছি, যারা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়েন, তারা নিয়মিত সাইফাই মুভিও দেখেন। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালিয়েন ছবির কাহিনির সঙ্গে ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম (১৯৮৮) বইয়ের প্রায় হুবহু মিলটি নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে আপনাদের! অনেকে বলবেন, অ্যাডাপ্টেশন, কিন্তু এ-ব্যাপারে খানিকটা খুঁতখুঁতি রয়েছে আমার। কারণ, ঋণ স্বীকার করার কষ্টটুকু লেখক স্বীকার করেননি কোথাও। এটা বিশ্বাস করতে বলবেন না যে, ট্রাইটনের গল্পটি স্বপ্নে প্রাপ্ত। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজে গেলে যে-কেউ নিশ্চিত হবেন, মূল কাহিনি ড্যান ও'ব্যানন এবং রোনাল্ড শাসেটের। জাফর স্যারের মত প্রযুক্তির মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, বা আইএমডিবির খবর রাখেন না, এটা তো বিশ্বাসযোগ্য নয়!
এখানেই শেষ নয়, তাঁর অবনীল (২০০৪) বইটি ভিন ডিজেল অভিনীত চলচ্চিত্র পিচ ব্ল্যাকের (২০০০) ছায়া অবলম্বনে লেখা, যেটির কাহিনিকার জিম ও কেন হুইট ভাতৃদ্বয়। কৃতজ্ঞতা স্বীকার? নৈবচ!
সেবা প্রকাশনীর বেশির ভাগ বইই বিদেশি কাহিনি অনুসরণ করে লেখা হয়, এটা ওপেন সিক্রেট। তার পরও তাদের প্রতিটি বইয়ের শুরুতেই উল্লেখ থাকে: বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে। পেপারব্যাক প্রকাশনী, তথাকথিত সুশীল সাহিত্যিকদের চোখে যারা একরকম 'অচ্ছুৎ', তারা যদি ঋণ স্বীকারের উদারতাটুকু দেখাতে পারে, জাফর স্যারের মত মানুষ কেন পারেন না? এটা করলে কি তিনি ছোট হয়ে যেতেন?
আচ্ছা, সাইন্সফিকশন বাদ দিলাম, কিশোরোপন্যাসে আসি। ম্যাটিল্ডা (১৯৯৬) আগেই দেখা ছিল, তাই আরও একবার চমকে উঠলাম নিতু আর তার বন্ধুরা (১৯৯৯) পড়ে। ছবিটি অবশ্য রোল্ড ডাহলের একই নামের উপন্যাস (১৯৮৮) থেকে তৈরি। জাফর স্যার বই, না মুভি, কোনটা ফলো করেছেন, জানা নেই, তবে এটা জানুন যে, বইটির কোত্থাও তিনি মূল লেখককে কৃতিত্ব দেয়ার আশপাশ দিয়েও যাননি। লেখক এই বইটিকে পরে নাট্যরূপ দেন, সেখানেও একই ব্যাপার। 'সাত চার দুই' নামের সেই নাটকে খোরাসানী ম্যাডাম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত নাজমা আনোয়ার। তিনিও লেখকের লুকোছাপায় বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন একটি সাক্ষাৎকারে, যা দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়।
আরও আছে। 'মেকু কাহিনী'র (২০০০) কাঠামো বেবি'জ ডে আউট (১৯৯৪) অনুসরণে তৈরি। মূল লেখক জন হিউজেস। ডেভ পেলজারের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আ চাইল্ড কলড "ইট" (১৯৯৫) অবলম্বনে লেখা আমি তপু (২০০৫)।
এই সব কারণে ইদানীং এই লেখকের বই পড়া বাদ দিয়েছি। কপোট্রনিকের নেপথ্যকাহিনি এখন জলজ্যান্ত এক প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।
জাফর স্যারের লেখার সাহিত্যমান নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তাঁর অনেক বইই চোখে জল এনে দেয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু এই ব্যাপারগুলো একজন লেখকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। বলছি না যে, অন্যের লেখা থেকে ধার করাটা দোষের কিছু, কিন্তু মূল লেখককে ক্রেডিট না দেয়াটা মহা অন্যায়, পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।
স্যার, আপনি না পত্রিকায় কলাম লিখে নীতি শেখান? আপনার নিজের 'নীতি' যে পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, টের পান না বুঝি? মূলত শিশুকিশোররাই আপনার পাঠক। আপনি যা বলেন, যা লেখেন, এই সব খুদে ভক্তরা চোখ বুজে তা অনুসরণ করে। এদের আপনি কী শেখাচ্ছেন, ভেবে দেখেছেন কি?"
20 comments:
Wow!
Jafar sir-re niya mitthachar
Duke jhon akta boss public
Trash
স্যার আমার প্রিয় একজন মানুষ,লেখাটা ভাল লাগল না
ছোট কালে যখন বিদেশী মুভি ও সায়েন্স ফিক্সন গুলো পরা হত না... তখন জাফর স্যার এর বইগুলা পরে অন্ন রকম লাগত...... একজন লেখক হিসাবেও তাকে অন্ন সবার চে আলাদা করে দেখতাম...... আর বলতে গেলে আমার সায়েন্স-ফিকশন এর হাতে খড়ি হয় জাফর স্যার এর বই পরে......
কিন্তু পরে যখন বিদেশী বই আর ইংলিশ সাই-ফাই মুভি গুলো দেখা সুরু করলাম তখন আস্তে আস্তে তার বেপারে ধারনাও অন্ন রকম হতে লাগ্ল......
বিশেষ করে তার কিসোর উপন্যাস গুলো দারুন লাগতো আমার কাছে...... কিন্তু তার মদ্ধে এক্তা জিনিশ খুব খারাপ লাগতো... সেতা হচ্ছে... একটা দাড়ি-টুপি ওয়ালা হুজুর টাইপ লোককে সবসময় নেগেটিভ চরিত্রে উপস্থাপন করতেন তিনি তার উপন্যাসে...
আসলে আমরা মানুষের কতটা ই বা জানি............থাক,মাফ করে দিলাম!
"Jafar sir-re niya mitthachar"
ঠিক কোন জায়গাটায় আপনার মিথ্যাচার মনে হয়েছে এটা উল্লেখ করেননি। আমার ধারণা, উল্লেখ করার মত আপনার কাছে কোন সূত্র নাই...@Anonymous
"Trash"
ডিয়ার Anonymous, এই লেখার কোন জায়গাটা আপনার Trash মনে হয়েছে এটা উল্লেখ করেননি বিধায় আপনার এই মন্তব্য নিয়ে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নাই। বরং এমন অর্থহীন মন্তব্য Trash-এ পরিণত হয়...
"স্যার আমার প্রিয় একজন মানুষ,লেখাটা ভাল লাগল না।"
জাফর ইকবাল মানুষটা আমরাও প্রিয় কিন্তু প্রিয় মানুষের সব কিছুতে লাফাতে হবে এমনটা আমি মনে করি না। @জামি
"একটা দাড়ি-টুপি ওয়ালা হুজুর টাইপ লোককে সবসময় নেগেটিভ চরিত্রে উপস্থাপন করতেন তিনি তার উপন্যাসে"
কোন লেখায় এমনটা করেছেন আমার জানা নেই কিন্তু এই প্রবণতাটা মন্দ। কারণ অল্প কিছু মানুষের কারণে সমস্ত মানুষকে মন্দ বলার প্রবণতাকে ভাল কাজ বলা চলে না।
যেমন আমরা ফট করে বলে দেই কুমিল্লার মানুষ খারাপ, খুলনার মানুষ...হয়তো দেখা যাবে সমস্ত জীবনে ওই এলাকার একজন মানুষের সঙ্গেই কেবল দেখা হয়েছে! @Anonymous
আপনার মহানুভবতা :) @মাহমুদ হাসান
পুরো কৃতিত্ব "ডিউক জন"-এরই প্রাপ্য @Fahim
কী জানি! মাটিল্ডা, বা আ বেবিজ ডে আউট, সাইফাই মুভির পাশাপাশি মুজাই ও চলতো সমান তালে। কখনোই কোনটাকে, কোনটার ছায়া বা অপচ্ছায়া মনে হয়নি। আমি মানুষটাই বেকুব কিসিমের মনে হয়। তবে ডিউক সাহেবের পরিশ্রমের মূল্য অনেক। নিজের সাইটে লিখে "প্রচার কম হয়েছে" ভেবে মাহমেদ ভাইয়ের ওয়েবের পিছনে ও সুঁইয়ের খোঁচা। ডিউক সাহবের অরিজিনাল লেখায় যে মন্তব্য করেছিলাম, এখানেও সেটাই প্রযোজ্য। মাহমেদ ভাইয়ের ওয়েব পাতাটা আর নাহয় ভারি নাই করলাম! তবে ডিউক সাহেবের কাছে এখনো সেম প্রশ্ন "ভাই মনে এত অশান্তি নিয়ে রাতে ক্যামনে ঘুমান?"
"নিজের সাইটে লিখে "প্রচার কম হয়েছে" ভেবে মাহমেদ ভাইয়ের..."
খুবই ভুল :( ! আমি নিজেই লেখাটা অনুমতি নিয়ে এখানে দিয়েছি... @Shameem
আমিও মোঃ জাফর ইকবাল এর একজন ভক্ত। কিন্তু আমি সহমত প্রকাশ করছি। আমি নিজেও বেশ কিছুদিন আগে এটা উপলদ্ধি করেছি বিভিন্ন বিদেশী মুভি দেখে। ছোটবেলায় সেইরকম ছিনেমা দেখা হত না, তাই জাফর ইকবাল এর বইগুলি অসাধারণ লাগত। আমারও একই প্রশ্ন কেন বড়মানুষগুলো আসলে এতো ছোট হয়??
সত্যিই তাই! কী হত এই সব লেখার ঋণ স্বীকার করলে? জাফর ইকবালের মত মানুষ কেন এ পথ বেছে নিলেন!
এঁরাই যদি এই সব করেন তাহলে আমরা কার কাছ থেকে শিখব- আফসোস, আমাদের দেশে শেখাবার লোকজনের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। @tahmina
ডিউক জনের লেখাটা পড়ি সম্ভবত গেল বছর। ডিউক জনের ব্যক্তিগত ব্লগে এই বিষয়ে একটা লেখা দিয়েছিলেন তিনি, সেখানেও বিস্তর মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য হাজির হয়েছিলো জাফর ইকবালের ভক্তকূলের পক্ষ থেকে। ধন্যবাদ আলী মাহমেদ স্যার, লেখাটা এখানে শেয়ার করার জন্য।
জাফর ইকবালের ভক্ত-মান-পীঠ রক্ষাকূলের লোকজন পুরো লেখা সম্ভবত হজম করার মতো এনার্জি রাখতে পারেন নি, তাই তাদের প্রিয় স্যারের বিপরীতে যাওয়া মাত্র এক কথায় রায় দিয়ে দিয়েছেন এখানে আর ডিউক জনের আগের ব্লগটির লেখাতে- লেখাটা ভালো লাগে নি, এগুলো কেন লিখেছেন- ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে মুশকিল কি- এইসব ভক্তকূলের এমন হা রে রে রে করে তেড়ে আসার কোন প্রয়োজন ছিলো না, যদি জাফর ইকবাল সাহেব বহুআগেই উত্থাপিত হয়ে আসতে থাকা এসব সমালোচনা পষ্টা পষ্টি কোন প্রতিবাদ বা প্রতিউত্তর সমালোচনা কিঙবা অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে করতেন। জাফর ইকবাল এর আগেও ভোরের কাগজে ও প্রবাসে একটি দৈনিকে নিয়মিত লিখতেন যখন, সেই নব্বই এর দশকে, তখন এ ব্যাপারে লিখেছেন। শিল্প সাহিত্যের বলয়ে বিভাজন রেখা টেনে এক লেখক সাধারনত অন্য লেখকের সমালোচনা করে থাকবেন, এক রাজনীতিবিদ অপর রাজনীতিবিদের সমালোচনা করে থাকবেন, একজন খেলোয়ার অপর খেলোয়ারের সমালোচনা করে থাকবেন এভাবেই চলে আসছে সংস্কৃতি। জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে এই পোস্টে যে ধরনের অভিযোগ টানা হয়েছে তা কিন্তু তার সঙ্গী লেখক সেই তার প্রথম বিচিত্রায় ছাপানো লেখা থেকে। কপোট্রনিক ভালোবাসা বা এই জাতীয় কোন এক লেখার সূত্র ধরে তার লেখক জীবনের প্রথম সমালোচনাকারীটি বিচিত্রায় জাফর ইকবালের লেখা ছাপা হওয়ার পরের সপ্তাহে বাজারের ফর্দের সমান একটা কলাম লিখে জানিয়ে দেয়- জাফর ইকবাল নকল লেখক। তিনি কোন এক লেখা থেকে টুকলিফাইং করে বিচিত্রায় তার নাম উঠিয়েছেন।
এখানে উল্লেখ্য- সেই লেখার প্রতিবাদে জাফর ইকবাল কোন লেখা দেন নি। তিনি নিজের কলামেই বলেছেন, তিনি তার প্রতিবাদ হিসেবে আরো গোটা কয়েক গল্প লিখে পাঠিয়ে দেন। জাফর ইকবালের কাছে যদি তৎক্ষনাত এই গল্প লিখে নিজেকের শুদ্ধ-নির্দোষ প্রমাণ করা ছাড়া দ্বিতীয় ভিন্ন কোন পন্থা থাকতো তবে তিনি সে পথ অবশ্যই অবলম্বন করতেন। কিন্তু তা না করে তিনি আরো কয়েকটা গল্প লিখেছেন। খেয়ালী লোক হিসেবে তার এই প্রতিবাদের ধরনটা একটু অদ্ভুত হলেও তিনি প্রথম নন, এ ধরনের কাজ এর আগেও অনেকে করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে এর পরেও যতবার অভিযোগ এসেছে- তিনি কোনবারই স্পষ্ট করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন নি কারো কাছে। এমন কি অভিযোগগুলো যখন তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকেও সরাসরি এসেছে। তিনি কি বিব্রত ছিলেন, না প্রবল অপমানবোধে তাড়িত হয়ে তাদের জবাব দেন নি?
তার ছাত্র-ছাত্রী এবং ভক্তকূল দ্বিতীয়টি প্রচারে অতিমাত্রায় ব্রতী, তখন এবং এখন। একজন লোক যিনি এত চমৎকার কলাম লেখতে পারেন পত্রিকায়, যিনি চমৎকার কথা বলতে পারেন, আমাদের রাজনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে কলাম লিখতে পারেন তিনি কেন এই কাজ করতে যাবেন? সহজ কথায় বলতে গেলে, যার মৌলিক লেখার ক্ষমতা আছে, তিনি কেন নকল করতে যাবেন?
++++++++++++++++++
একবারে মন্তব্যটা দেওয়া যাচ্ছে না- নিচে দিচ্ছি।
একজন লেখক যখন কোন গল্প লেখেন তখন তিনি তার আশপাশ পরিবেশ-প্রতিবেশ-লোকজন বেষ্টিত অঞ্চল থেকে যে সকল উপাদান খুঁজে পান তার সবগুলোর সন্নিবেশ ঘটান তার লেখায়। এমন অনেক উপাদান তার কাছে গল্প বা কলাম কিংবা যে কোন প্রকার সর্ন্দভ-প্রবন্ধ লেখার সময় সামনে চলে আসে, যা নিয়ে লেখক ভাবিত হয়ে পড়েন এগুলোকে ব্যবহার না করা হলে পরবর্তী সময়ে এগুলো হারিয়ে যেতে পারে ভেবে। তাই যথেচ্ছ এইসব তথ্য তার গল্পে ব্যবহারের কারনে হয়তো বাহুল্য-অতিশয়ান-তারল্যের দোষে দুষ্ট হয়ে উঠে তার লেখা, লেখক নিজের অবচেতনেই অতিরিক্ত অমনোযোগীতায় দূষন ঘটান তার লেখায়। এর বিপ্রতীপে গেলেও ঠিক একই ভাবে বলা যায়, কোন লেখক যদি তার লেখার উপকরনে আশপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকে যথেষ্ট উপাদানের সহায়তা না পান তখন তিনি নির্ভর করেন দ্বিতীয় কোন মাধ্যমের, এবং পুরোপুরিভাবে নিজের অবচেতনে।
এমন অনেক লেখকের উদাহরণ আমি দেখাতে পারবো, যাদের বিরুদ্ধে এই ‘লেখা ধার’ করার অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে- যারা এই কাজটি করে থাকে নিজের অনিচ্ছায়। আর কোন এক লেখা সাথের কোন এক ছবির কিছু অংশ মিলে গেলে আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি তার সাথে মিল খুঁজে বের করার জন্য। খুঁজলে হাজার অমিলও পাওয়া যাবে।
ডিউক জন, আপনি আরেকটু কষ্ট স্বীকার করুন না! কোথার সাথে কোথায় মিল পেয়েছেন এটার সাথে আরো নির্দিষ্ট ভাবে কোন অংশ, কোন টার্ন, কোন বাঁকটার সাথে কোনটার মিল পেয়েছেন তা লিখুন বিস্তারিত। প্রতিবাদকারীদের মিছিল তখন হালকা হবে কিছুটা, আর আপনার বক্তব্যও জোরদার হবে।
এইটার সাথে ঐটার মিল পাইছি- ব্যাটা ভন্ড!! আপনার শখ থাকলে, আপনে খুঁইজা নেন- উপরে বলা আছে কোথায় খুঁজতে হবে এগুলো আপনার লেখার লিংক দিয়ে বাহবা কুড়ানো ব্যক্তিরা বলে আপনারই প্রকরান্তে সম্মানহানি করছে। সময় নিয়ে লিখে ফেলুন- সবাইকে জানান। জানুক সবাই।
@আলী মাহমেদ, স্যার- আপনার ব্লগটা এবার দেখতে একটু পরিচ্ছন্ন লাগছে। আগে বাম পাশের সাইডবারটা একটু হিজিবিজি লাগতো।
ধন্যবাদ আপনার সুদীর্ঘ মন্তব্যের জন্য।
ব্লগটা দেখতে আপনার কাছে ভাল লাগছে জেনে আমারও ভাল লাগছে :D @Anonymous
Post a Comment