আজকের অতিথি অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মাহবুব সুমন। তাঁর ধারাবাহিক এই লেখার মাধ্যমে উঠে এসেছে, এই গ্রহের সবই পেশা, বড়-ছোট নেই। আছে কেবল সততা-অসততা...।
"বিয়ের জন্য প্রচুর টাকার দরকার ছিলো। সেমিস্টার ব্রেকের ২ মাসে সময়ও ছিলো অফুরন্ত। ল্যান্ডলেডি এক রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিলেন যেখানে গেলে কাজ পাওয়া যাবে। দুপুরে শেফের সাথে কথা বলে সন্ধ্যায় কাজে যোগ দিলাম। কাজ বলতে সেই গতানুগতিক কাজ। 'এল রেন্চ' যাকে আমরা সংক্ষেপে রেন্চ বলতাম, সেই রেস্টুরেন্টে দু মাস কাজ করেছিলাম। ওদের স্পেশালিটি ছিলো 'স্টেক'। দু-মাসে ওদের মেন্যুতে যত রকম স্টেক ছিলো তার স্বাদ গ্রহন করবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হয়তো অতো স্টেক খাওয়াই হতো না।
দেশ থেকে ঘুরে আসবার পর এল রেন্চ এ যোগ দেবার পর হঠাৎই রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে গেলো। রেস্টুরেন্ট বিক্রি হয়ে যাবে এ রকম একটা কথা হাওয়ায় ভাসলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবে সেটা হেড শেফও জানতো না। সন্ধ্যায় কাজে গিয়ে শুনি সেটাই তাদের শেষ রাত। ওখানে কাজ করবার সময় রিচার্ড নামে এক জার্মান-অজি শেফের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। পাগলা কিসিমের সেই শেফ মধ্যবয়সে এসে নার্সিং এ পড়া শুরু করেছিলো। শেফ হবার আগে সে ছিলো একজন রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ারফোর্সের এয়ারক্রাফট মেইনট্যানেন্স ইঞ্জিনিয়ার।
পাশের রেস্টুরেন্ট 'কর্কে' লোক খুঁজছিল। কিছু দিন সেখানে কাজও করলাম। ভালো লাগছিলো না রেস্টুরেন্টের কাজ। কর্কের স্পেশালিটি ছিলো 'পিৎজা'। প্রাণ ভরে পিৎজা খাওয়া হয়েছিলো। রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন 'লুসি' নামে এক ভদ্রমহিলা। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হবার সময় মাঝে-সাজে এক মধ্যবয়সী লোককে দেখতাম চেয়ার টেবিল গুছিয়ে রাখতে, ঝাড়ু দিতে। পরে জানতে পেরেছিলাম সেই ভদ্রলোক ছিলেন লুসির ২য় স্বামী, যিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি ল্যাজেসলেটিভ এসেমব্লির একজন এমএলএ ছিলেন লেবার পার্টি থেকে।
যে দিন লুসিকে বল্লাম যে আমি কাজ করতে চাচ্ছি না, লুসি খুব অবাক হয়েছিলো। মন খারাপ করে বলেছিল, 'সবাই কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে'।
অনেক খারাপ লেগেছিলো কথাটা শুনে। কর্কে কাজ করবার সময় ন্যাথান নামে একজন শেফের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সে এক বছর পড়াশুনার গ্যাপ দিয়ে পিৎজা বানানোর কাজ করছিলো। এএনইউতে ব্যবসা প্রশাসনে পড়া তুখোড় ছাত্র ন্যাথানের এই কান্ড দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম কারণ সবাই পড়াশুনা তাড়াতাড়ি শেষ করতে মরিয়া হয়ে থাকে। শেষ যখন ন্যাথানের ই- মেইল পাই তখন সে প্রাইস ওয়াটার হাউসে কাজ করে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ায়।
দুদিনের জন্য 'লা ডলসে ভিটা' নামে একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজ করেছিলাম। ওটা ছিলো অন্য একজনের বদলি। ওদের স্পেশালিটিটা ছিল হোম মেইড 'পাস্তা'। অসাধারন পাস্তার স্বাদ মনে হয় এখনো মুখে লেগে আছে।
এই ছিলো আমার স্বল্পস্থায়ী কিচেনহ্যান্ড ক্যারিয়ার। এখন নিজের রান্নাঘরে বউয়ের কিচেন হ্যান্ড, বিনে বেতনে 'অনারারী কিচেন হ্যান্ড '।
টাকার প্রয়োজনে কাজ করেছি কিন্তু শিখেছি অনেক। দেশে শেখা মিথ্যা অহমিকা ঝেড়ে-ঝুড়ে নতুন মন মানসিকতা তৈড়ি হয়েছিলো কাজ করতে করতে। সেই রকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাতিক, সময়ানুবর্তিতা, কঠোর পরিশ্রম, হরেক রকম মানুষের সাথে মেশা ও তাদের জানা-বোঝা, কাজকে সম্মান করা, মানুষকে সম্মান করতে শেখা, ম্যানার শেখা ইত্যাদি কত যে শিখেছি যার সুফল এখন ভোগ করছি।
সারা জীবন হোস্টেলে নারী বিবর্জিত পরিবেশ বড় হওয়া আমি যখন মেয়ে ওয়েট্টেসদের সাথে মিশেছি তখন মেয়েদের নিয়ে যে অহেতুক সংকোচ ছিলো তা কখন কেটে গিয়েছিল টেরই পাইনি। ভেবেছিলাম এখানে বর্ণবাদী আচরনের শিকার হবো, এক চারমার্সে বুড়ো ইহুদি এন্ড্রুর ছাড়া কারো কাছ থেকে এরকম আচরণ লক্ষ্য করিনি। নতুন দেশে গেলে সেখানকার মানুষদের কাছ থেকে না-মিশলে অনেক কিছুই অজানা রয়ে যায় যা অনেক বাংলাদেশির মাঝিও লক্ষ্য করেছি, আমি শিখেছি অনেক কিছু এদের কাছ থেকে। অনেক অনেক কিছুই শিখেছি। অ-নে-ক কিছু...।"
"বিয়ের জন্য প্রচুর টাকার দরকার ছিলো। সেমিস্টার ব্রেকের ২ মাসে সময়ও ছিলো অফুরন্ত। ল্যান্ডলেডি এক রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিলেন যেখানে গেলে কাজ পাওয়া যাবে। দুপুরে শেফের সাথে কথা বলে সন্ধ্যায় কাজে যোগ দিলাম। কাজ বলতে সেই গতানুগতিক কাজ। 'এল রেন্চ' যাকে আমরা সংক্ষেপে রেন্চ বলতাম, সেই রেস্টুরেন্টে দু মাস কাজ করেছিলাম। ওদের স্পেশালিটি ছিলো 'স্টেক'। দু-মাসে ওদের মেন্যুতে যত রকম স্টেক ছিলো তার স্বাদ গ্রহন করবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হয়তো অতো স্টেক খাওয়াই হতো না।
দেশ থেকে ঘুরে আসবার পর এল রেন্চ এ যোগ দেবার পর হঠাৎই রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে গেলো। রেস্টুরেন্ট বিক্রি হয়ে যাবে এ রকম একটা কথা হাওয়ায় ভাসলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবে সেটা হেড শেফও জানতো না। সন্ধ্যায় কাজে গিয়ে শুনি সেটাই তাদের শেষ রাত। ওখানে কাজ করবার সময় রিচার্ড নামে এক জার্মান-অজি শেফের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। পাগলা কিসিমের সেই শেফ মধ্যবয়সে এসে নার্সিং এ পড়া শুরু করেছিলো। শেফ হবার আগে সে ছিলো একজন রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ারফোর্সের এয়ারক্রাফট মেইনট্যানেন্স ইঞ্জিনিয়ার।
পাশের রেস্টুরেন্ট 'কর্কে' লোক খুঁজছিল। কিছু দিন সেখানে কাজও করলাম। ভালো লাগছিলো না রেস্টুরেন্টের কাজ। কর্কের স্পেশালিটি ছিলো 'পিৎজা'। প্রাণ ভরে পিৎজা খাওয়া হয়েছিলো। রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন 'লুসি' নামে এক ভদ্রমহিলা। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হবার সময় মাঝে-সাজে এক মধ্যবয়সী লোককে দেখতাম চেয়ার টেবিল গুছিয়ে রাখতে, ঝাড়ু দিতে। পরে জানতে পেরেছিলাম সেই ভদ্রলোক ছিলেন লুসির ২য় স্বামী, যিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি ল্যাজেসলেটিভ এসেমব্লির একজন এমএলএ ছিলেন লেবার পার্টি থেকে।
যে দিন লুসিকে বল্লাম যে আমি কাজ করতে চাচ্ছি না, লুসি খুব অবাক হয়েছিলো। মন খারাপ করে বলেছিল, 'সবাই কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে'।
অনেক খারাপ লেগেছিলো কথাটা শুনে। কর্কে কাজ করবার সময় ন্যাথান নামে একজন শেফের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সে এক বছর পড়াশুনার গ্যাপ দিয়ে পিৎজা বানানোর কাজ করছিলো। এএনইউতে ব্যবসা প্রশাসনে পড়া তুখোড় ছাত্র ন্যাথানের এই কান্ড দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম কারণ সবাই পড়াশুনা তাড়াতাড়ি শেষ করতে মরিয়া হয়ে থাকে। শেষ যখন ন্যাথানের ই- মেইল পাই তখন সে প্রাইস ওয়াটার হাউসে কাজ করে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ায়।
দুদিনের জন্য 'লা ডলসে ভিটা' নামে একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে কাজ করেছিলাম। ওটা ছিলো অন্য একজনের বদলি। ওদের স্পেশালিটিটা ছিল হোম মেইড 'পাস্তা'। অসাধারন পাস্তার স্বাদ মনে হয় এখনো মুখে লেগে আছে।
এই ছিলো আমার স্বল্পস্থায়ী কিচেনহ্যান্ড ক্যারিয়ার। এখন নিজের রান্নাঘরে বউয়ের কিচেন হ্যান্ড, বিনে বেতনে 'অনারারী কিচেন হ্যান্ড '।
টাকার প্রয়োজনে কাজ করেছি কিন্তু শিখেছি অনেক। দেশে শেখা মিথ্যা অহমিকা ঝেড়ে-ঝুড়ে নতুন মন মানসিকতা তৈড়ি হয়েছিলো কাজ করতে করতে। সেই রকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাতিক, সময়ানুবর্তিতা, কঠোর পরিশ্রম, হরেক রকম মানুষের সাথে মেশা ও তাদের জানা-বোঝা, কাজকে সম্মান করা, মানুষকে সম্মান করতে শেখা, ম্যানার শেখা ইত্যাদি কত যে শিখেছি যার সুফল এখন ভোগ করছি।
সারা জীবন হোস্টেলে নারী বিবর্জিত পরিবেশ বড় হওয়া আমি যখন মেয়ে ওয়েট্টেসদের সাথে মিশেছি তখন মেয়েদের নিয়ে যে অহেতুক সংকোচ ছিলো তা কখন কেটে গিয়েছিল টেরই পাইনি। ভেবেছিলাম এখানে বর্ণবাদী আচরনের শিকার হবো, এক চারমার্সে বুড়ো ইহুদি এন্ড্রুর ছাড়া কারো কাছ থেকে এরকম আচরণ লক্ষ্য করিনি। নতুন দেশে গেলে সেখানকার মানুষদের কাছ থেকে না-মিশলে অনেক কিছুই অজানা রয়ে যায় যা অনেক বাংলাদেশির মাঝিও লক্ষ্য করেছি, আমি শিখেছি অনেক কিছু এদের কাছ থেকে। অনেক অনেক কিছুই শিখেছি। অ-নে-ক কিছু...।"
6 comments:
রাজাকারের লেখা আপনার সাইটে দেখব আশা করি নাই
সত্যি বলতে কী, আমিও আপনার মত সো কলড ডায়াপার-পরা মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে আশা করি না। এখানে আবারও আসার গোপন ইচ্ছা থাকলে ডায়াপার বদলে...@Anonymous
Anonymous, toi kothakar muktijodha?
Valo lagse lekha
Sumon bai. Nice job!!!
আপনাদের ভাল লাগার সবটুকু কৃতিত্ব লেখক মাহবুব সুমনের :D @Rased, Mamun
Post a Comment