আজকের অতিথি লেখক শওকত আলী। তিনি লিখেছেন:
"এটা কি, ফয়সল?
জেনী, দেখতেই তো পারছ, আবার জনতে চাচ্ছ কেন?
তুমি এরকম কুৎসিত নোংরা একটা কুকুর ছানা নিয়ে ঘরে ঢুকেছ কেন?
রাস্তার কয়েকটা ছেলে মিলে বাচ্চাটাকে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁস
লাগিয়ে মারছিল। আমি নিয়ে এসেছি। বাচ্চাটা খুব অসুস্থ, এখন এটাকে ছেড়ে দিলে মরে যাবে। কয়েকটা দিন আমাদের এখানে থাকুক, তারপর সুস্থ হলে বাইরে ছেড়ে দিয়ে আসব।
জেনী প্রাণপন চেষ্টা করছে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে। রাগী গলায় বলল, এক্ষুণি এটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসো।
ফয়সল কোন উত্তর দেয় না। এখন ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না। জেনীও সামনে থেকে সরে আসে।
ফয়সল খেতে আসো, জেনী টেবিলে ভাত দিয়ে ফয়সলকে ডাকতে আসে।
ড্রয়িংরুমে ঢুকে জেনীর রাগ সপ্তমে চড়ে যায়। ফয়সল কুকুরের বাচ্চাটিকে সোফার উপর বসিয়ে রেখেছে।
ফয়সল জেনীর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। হাসি-হাসি ভাব করে বলে, আজকের রাতটা এটা এখানে থাকুক, কাল সকালে এটাকে বিদেয় করে দেব।
ফয়সল খেতে বসে। ভাত মাখতে মাখতে বলে, জেনী তুমি চোখ মুখ এমন শক্ত করে রেখেছ কেন? আরাম করে খাও। টেবিলে এই বাড়তি প্লেটটা কার জন্যে?
জেনী এবার হিসহিস করে বলল, ওমা, আমাদের বাড়িতে নতুন মেহমান এসেছেন। উনাকে ভাল মন্দ রান্না করে খাওয়াতে হবে না। এই প্লেটটা উনার জন্যে। তা কুকুরবাবু নিজে খেতে পারবেন তো নাকি আমি খাইয়ে দেব।
জেনী তুমি খুব সামান্য একটি ব্যাপার নিয়ে হইচই করছ। একি-একি, ভাত না খেয়ে উঠে যাচ্ছ যে বড়ো!
জেনী হাত ধুয়ে কিচেনে চলে আসে। খাবার সব উঠিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর ড্রয়িংরুমে উকি দিয়ে দেখে ফয়সল হাতে একটি রুটির টুকরো নিয়ে কুকুরের বাচ্চাটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কুকুরটি মানুষের এ ধরনের আচরণে অভ্যস্থ নয়। এই আনন্দেই সম্ভবত কিছুক্ষণ পর পর কুঁই কুঁই শব্দ করছে।
ফয়সল সিগারেট ধরাতে বারান্দায় চলে আসে। জেনী একটা চেয়ারে বসে রয়েছে। ফয়সল জেনীর গায়ে হাত রেখে মৃদু গলায় বলল, এখানে বসে রয়েছ কেন, ঘুমুতে চল।
জেনী সজোরে ফয়সলের হাত সরিয়ে দেয়। ফয়সল, তোমার ঢং দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি। নিজের বাচ্চার প্রতি তোমার এত মমতা দেখিনি, যতটা না তুমি একটা কুকুরের বাচ্চার প্রতি দেখাচ্ছ!
ফয়সল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জেনী আবার সেই অপ্রিয় প্রসঙ্গটি তুলেছে। কেন ও এমন করে ক্ষতটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে! কেন-কেন-কেন?
ফয়সল রাগ চেপে বলে, জেনী, আমি আগেও অসংখ্যবার বলার চেষ্টা করেছি, বাবুর মৃত্যুর উপর আমাদের কোন হাত ছিল না। তখন আমাদের মানে আসলে আমার করার কিছুই ছিল না।
ফয়সল-জেনীর দুই বছরের বাচ্চা তুষারের হঠাৎ করে একদিন রাতে শ্বাস কষ্ট আরম্ভ হয়। তাকে দ্রূত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বাইরে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি। ফয়সল বেরিয়ে পড়ে গাড়ীর খোঁজে। দুই ঘন্টা ধরে চেষ্টা করেও কোন গাড়ী যোগাড় করতে পারেনি। অনেকগুলি গাড়ী তার সামনে দিয়ে পানি ছিটাতে ছিটাতে চলে যাচ্ছে। ছিটানো পানিতে তার শরীর মাখামাখি। শেষ পর্যন্ত এক টেক্সিওয়ালাকে অনেক হাতে পায়ে ধরে রাজী করাতে পেরেছিল।
ফয়সল বাসায় ফিরে দেখে জেনী তুষারকে তার বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ভঙ্গিটা দেখে তার কেমন বুক ধক করে উঠেছিল। বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে দেখে গা বরফের মত ঠান্ডা।
তারপর থেকে কিভাবে যেন জেনীর মাথায় ঢুকে যায় ফয়সল যদি সময় মতো গাড়ী যোগাড় করতে পারত তাহলে তাদের বাবুটাকে বাঁচানো যেত। তুষারের মৃত্যুর জন্য সে ফয়সলকে দায়ী ভাবতে শুরু করে।
ফয়সলের চোখে সে দিনের দৃশ্যটি ভেসে উঠে। নিজ হাতে সে তুষারের কবর খুঁড়ছে। এটা নিয়ে পরে কত সমালোচনা যে হয়। এত লোক থাকতে বাবা কেন ছেলের কবর খুঁড়বে? এটা নিয়ম বর্হিভূত। হায়রে! মৃত্যুর পরও কত নিয়ম থেকে যায়।
সেদিন খুব বৃষ্টি ছিল। কবরের গর্তে পানি জমে যাচ্ছিল। ফয়সল সারা দুপুর পলিথিনে মোড়ানো তুষারের লাশ নিয়ে হাঁটু গেড়ে কবরের সামনে বসে থাকে। আহা, বাবুটার গায়ে মাটি লাগবে যে! সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত সেদিন ইচ্ছে করেই বৃষ্টি দিয়েছিলেন। বৃষ্টির পানি যাতে করে তার চোখের পানিকে ধুয়ে দিতে পারে।
ফয়সলের চাপা কষ্ট হতে থাকে। জেনী চল, ফয়সল তার একটা হাত জেনীর কাঁধে রাখে।
তুমি তোমার কুত্তা নিয়ে ঘুমুতে যাও। তোমার পাশে তার বিছানা করে দেয়া হয়েছে, জেনী রাগে কাঁপতে থাকে।
ফয়সল বুঝতে পারে না কখন সে জেনীর গালে চড় মেরে বসেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ফয়সল ড্রয়িংরুমে চলে আসে। কুকুরের ছানাটিকে তুলে নেয়। এ সম্ভবত বুঝে ফেলেছে তাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসা হবে। দুই চোখে এর কেমন এক অন্য রকম দৃষ্টি। এর কিছুই ফয়সল দেখতে পায় না কারণ তার চোখে জল!
জেনী দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। অনেক দিন আগের একটি দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ফয়সল দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তার কোলে তাদের বাবুটার, তুষারের মৃত দেহ...।"
"এটা কি, ফয়সল?
জেনী, দেখতেই তো পারছ, আবার জনতে চাচ্ছ কেন?
তুমি এরকম কুৎসিত নোংরা একটা কুকুর ছানা নিয়ে ঘরে ঢুকেছ কেন?
রাস্তার কয়েকটা ছেলে মিলে বাচ্চাটাকে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁস
লাগিয়ে মারছিল। আমি নিয়ে এসেছি। বাচ্চাটা খুব অসুস্থ, এখন এটাকে ছেড়ে দিলে মরে যাবে। কয়েকটা দিন আমাদের এখানে থাকুক, তারপর সুস্থ হলে বাইরে ছেড়ে দিয়ে আসব।
জেনী প্রাণপন চেষ্টা করছে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে। রাগী গলায় বলল, এক্ষুণি এটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসো।
ফয়সল কোন উত্তর দেয় না। এখন ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না। জেনীও সামনে থেকে সরে আসে।
ফয়সল খেতে আসো, জেনী টেবিলে ভাত দিয়ে ফয়সলকে ডাকতে আসে।
ড্রয়িংরুমে ঢুকে জেনীর রাগ সপ্তমে চড়ে যায়। ফয়সল কুকুরের বাচ্চাটিকে সোফার উপর বসিয়ে রেখেছে।
ফয়সল জেনীর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। হাসি-হাসি ভাব করে বলে, আজকের রাতটা এটা এখানে থাকুক, কাল সকালে এটাকে বিদেয় করে দেব।
ফয়সল খেতে বসে। ভাত মাখতে মাখতে বলে, জেনী তুমি চোখ মুখ এমন শক্ত করে রেখেছ কেন? আরাম করে খাও। টেবিলে এই বাড়তি প্লেটটা কার জন্যে?
জেনী এবার হিসহিস করে বলল, ওমা, আমাদের বাড়িতে নতুন মেহমান এসেছেন। উনাকে ভাল মন্দ রান্না করে খাওয়াতে হবে না। এই প্লেটটা উনার জন্যে। তা কুকুরবাবু নিজে খেতে পারবেন তো নাকি আমি খাইয়ে দেব।
জেনী তুমি খুব সামান্য একটি ব্যাপার নিয়ে হইচই করছ। একি-একি, ভাত না খেয়ে উঠে যাচ্ছ যে বড়ো!
জেনী হাত ধুয়ে কিচেনে চলে আসে। খাবার সব উঠিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর ড্রয়িংরুমে উকি দিয়ে দেখে ফয়সল হাতে একটি রুটির টুকরো নিয়ে কুকুরের বাচ্চাটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কুকুরটি মানুষের এ ধরনের আচরণে অভ্যস্থ নয়। এই আনন্দেই সম্ভবত কিছুক্ষণ পর পর কুঁই কুঁই শব্দ করছে।
ফয়সল সিগারেট ধরাতে বারান্দায় চলে আসে। জেনী একটা চেয়ারে বসে রয়েছে। ফয়সল জেনীর গায়ে হাত রেখে মৃদু গলায় বলল, এখানে বসে রয়েছ কেন, ঘুমুতে চল।
জেনী সজোরে ফয়সলের হাত সরিয়ে দেয়। ফয়সল, তোমার ঢং দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি। নিজের বাচ্চার প্রতি তোমার এত মমতা দেখিনি, যতটা না তুমি একটা কুকুরের বাচ্চার প্রতি দেখাচ্ছ!
ফয়সল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জেনী আবার সেই অপ্রিয় প্রসঙ্গটি তুলেছে। কেন ও এমন করে ক্ষতটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে! কেন-কেন-কেন?
ফয়সল রাগ চেপে বলে, জেনী, আমি আগেও অসংখ্যবার বলার চেষ্টা করেছি, বাবুর মৃত্যুর উপর আমাদের কোন হাত ছিল না। তখন আমাদের মানে আসলে আমার করার কিছুই ছিল না।
ফয়সল-জেনীর দুই বছরের বাচ্চা তুষারের হঠাৎ করে একদিন রাতে শ্বাস কষ্ট আরম্ভ হয়। তাকে দ্রূত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বাইরে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি। ফয়সল বেরিয়ে পড়ে গাড়ীর খোঁজে। দুই ঘন্টা ধরে চেষ্টা করেও কোন গাড়ী যোগাড় করতে পারেনি। অনেকগুলি গাড়ী তার সামনে দিয়ে পানি ছিটাতে ছিটাতে চলে যাচ্ছে। ছিটানো পানিতে তার শরীর মাখামাখি। শেষ পর্যন্ত এক টেক্সিওয়ালাকে অনেক হাতে পায়ে ধরে রাজী করাতে পেরেছিল।
ফয়সল বাসায় ফিরে দেখে জেনী তুষারকে তার বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ভঙ্গিটা দেখে তার কেমন বুক ধক করে উঠেছিল। বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে দেখে গা বরফের মত ঠান্ডা।
তারপর থেকে কিভাবে যেন জেনীর মাথায় ঢুকে যায় ফয়সল যদি সময় মতো গাড়ী যোগাড় করতে পারত তাহলে তাদের বাবুটাকে বাঁচানো যেত। তুষারের মৃত্যুর জন্য সে ফয়সলকে দায়ী ভাবতে শুরু করে।
ফয়সলের চোখে সে দিনের দৃশ্যটি ভেসে উঠে। নিজ হাতে সে তুষারের কবর খুঁড়ছে। এটা নিয়ে পরে কত সমালোচনা যে হয়। এত লোক থাকতে বাবা কেন ছেলের কবর খুঁড়বে? এটা নিয়ম বর্হিভূত। হায়রে! মৃত্যুর পরও কত নিয়ম থেকে যায়।
সেদিন খুব বৃষ্টি ছিল। কবরের গর্তে পানি জমে যাচ্ছিল। ফয়সল সারা দুপুর পলিথিনে মোড়ানো তুষারের লাশ নিয়ে হাঁটু গেড়ে কবরের সামনে বসে থাকে। আহা, বাবুটার গায়ে মাটি লাগবে যে! সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত সেদিন ইচ্ছে করেই বৃষ্টি দিয়েছিলেন। বৃষ্টির পানি যাতে করে তার চোখের পানিকে ধুয়ে দিতে পারে।
ফয়সলের চাপা কষ্ট হতে থাকে। জেনী চল, ফয়সল তার একটা হাত জেনীর কাঁধে রাখে।
তুমি তোমার কুত্তা নিয়ে ঘুমুতে যাও। তোমার পাশে তার বিছানা করে দেয়া হয়েছে, জেনী রাগে কাঁপতে থাকে।
ফয়সল বুঝতে পারে না কখন সে জেনীর গালে চড় মেরে বসেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ফয়সল ড্রয়িংরুমে চলে আসে। কুকুরের ছানাটিকে তুলে নেয়। এ সম্ভবত বুঝে ফেলেছে তাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসা হবে। দুই চোখে এর কেমন এক অন্য রকম দৃষ্টি। এর কিছুই ফয়সল দেখতে পায় না কারণ তার চোখে জল!
জেনী দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। অনেক দিন আগের একটি দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ফয়সল দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তার কোলে তাদের বাবুটার, তুষারের মৃত দেহ...।"
1 comment:
Superv!
Post a Comment