Search

Wednesday, June 29, 2011

উঠে আসে অন্ধকার, অন্ধকার থেকে...।

স্কেচ: আলী মাহমেদ
­আমি পূর্বে লিখেছিলাম, এ বড়ো বিচিত্র দেশ, ততোধিক বিচিত্র এ দেশের মানুষ! এরশাদ নামের শাসককবি কেবল কবিতা লিখেই ক্ষান্ত দেননি, এইবার তিন তিনটে আসন থেকে নির্বাচন করে তিনটাতেই বিজয়ী হয়েছেন, তাও একটা ঢাকা থেকে (ঢাকার ভোটারদের সালাম)। ঢাকার মানুষগুলো আবার নিজেদেরকে 'একটু বেশি শিক্ষিত' বলে দাবী করে থাকেন কি না! এই দেশ গণতন্ত্রের জন্য আদর্শই বটে।

'সব হয়েছে নষ্ট, বেড়েছে কেবল কষ্ট'! বাকী ছিল সাহিত্য এটাও গেছে নষ্টদের অধিকারে। সাহিত্যক্ষেত্রের এই নষ্টের হোতা আমাদের এরশাদ সাহেব।এরশাদের কবিতা-প্রসব তখন দেশ-বিদেশ কাঁপিয়ে দিচ্ছে- তার এই প্রসব বেদনার জন্য সমবেদনা। দেশের অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা তখন নিয়ম করে তাঁর কবিতা ছাপায়। বিচিত্রার তখন আর কোন কাজ ছিল না মনে হয়- শাহাদাত চৌধুরী বসে বসে কাগজ ছিঁড়তেন (কাগজ ছেঁড়ার বদঅভ্যাস  বা মুদ্রাদোষ তাঁর ছিল) আর এরশাদের কবিতা ছাপাতেন।
কবি এরশাদের এই কাজে দাদাদের ভূমিকা অতুলনীয়। দাদারা হয়তো ভুলে গেছেন কিন্তু আমরা ভুলিনি। ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় হিন্দুদের উপর যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়েছিল এর পেছনে এরশাদ সাহেবের স্নেহের হাত ছিল। আহমদ ছফার মুখ থেকে আমরা শুনি:

"...পশ্চিম-বাংলার লেখক-সাহিত্যিকেরা সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে এরশাদকে দাঙ্গাবিরোধী একজন মহামানব হিসাবে ভারতবর্ষের জনসমক্ষে পরিচিত করেছিলেন। এখানে কি ভারতীয় দূতাবাস ছিল না? তাঁরা কি জানতেন না কারা এই দাঙ্গাটি ঘটিয়েছে?
তারপরও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শিবনারায়ন রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আবুল বাশার, মুস্তফা সিরাজ, প্রতিভা বসু এরশাদের ভূমিকার তারিফ করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিলেন কেমন করে?..."। (আনুপূর্বিক তসলিমা এবং অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়, আহমদ ছফা)

আহা, দাদারা কেন এরশাদের গুণগান করবেন না! এরশাদ সাহেব এশীয় কবিতা উৎসবের নামে দাদাদেরকে বিমানের প্রথম শ্রেণীর আসনে ঢাকা নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের ঠাই হয়েছিল রাষ্ট্রীয় অতিথিভবনে (আহা, বেচারা এরশাদকে এই খরচ যোগাতে পৈত্রিক তালুক বিক্রি করতে হয়েছিল, বেচারা!)। শিবনারায়ন রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কে আসেননি? দাদারা এরশাদের আবর্জনাগুলোর বিস্তর প্রশংসা করেছিলেন। এরপর আর কথা চলে না- দাদাদের হাতে কপকপ করে আমাদের এহেন সাহিত্য না-গিলে উপায়ই বা কী!
কিন্তু আমি এখানে শব্দের অপচয় করতে চাই না বলে মহাকবির কবিতার দু-লাইনেই কাজ সারি:
"অনেক আক্ষেপ করে তুমি লিখেছো
তুমি কি পার না আমাকে নিয়ে লিখতে?
 
(হো মো এরশাদের স্বহস্তে [!] লিখিত {তাঁর দাবীমতে})

কে বলেছিলেন এ কথাটা, 'ধর্মবক্তাদের যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না'। এর সঙ্গে মিল রেখে বলা চলে, সাহিত্যিকদেরও যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না, তিনি শাসক হলে। তার লেখায় পত্রপত্রিকা ছেয়ে গেলে আটকাচ্ছে কে!
তো, আমাদের দাদারা যখন এরশাদ সাহেবের সরবরাহকৃত বাচ্চাদের গু মুছে ফেলে দেয়ার জিনিসগুলো নিজেদের ধুতির সঙ্গে কষে আটকে রাখছেন তখন আমাদের দেশেরই কিছু কবি শাসকের চোখে চোখ রেখে বলছেন, 'রাজা তুই ল্যাংটা'! 

"সব শালা কবি হবে; পিপড়ে গোঁ ধরেছে, উড়বেই;
বন থেকে দাঁতাল শুয়োর রাজাসনে বসবেই;"
(মোহাম্মদ রফিক/ খোলা কবিতা)
"গুলিবিদ্ধ শহর করছে অশ্রুপাত অবিরত,
কেননা মিলন নেই। দিন দুপুরেই নরকের
শিকারী কুকুর তার বুকে বসিয়েছে দাঁত...।"
(শামসুর রাহমান/ মিলনের মুখ)
"তোমাকে চায় না এই মানচিত্র, জাতীয় পতাকা
তুমি চলে যাও, দেশ ছেড়ে চলে যাও।"
(মহাদেব সাহা/ বাংলাদেশ চায় না তোমাকে)
"আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,"
(রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ/ বাতাসে লাশের গন্ধ)
"তোর হাতে রক্ত, পায়ে কুষ্ট, কন্ঠে নালী ঘা-
আল্লার দোহাই লাগে, তুই নেমে যা, নেমে যা।"
(নির্মলেন্দু গুণ/ দূর হ দুঃশাসন)

3 comments:

Omio Ujjal said...

দারুন লিখেছেন আলী ভাই।

Omio Ujjal said...

এই দাঁতাল শুয়োরটা এখনো এই দেশে দাপটের সাথে টিকে আছে। এদেশের রাজনীতিতে সে এখনো একটা ফ্যাক্টর । আমাদের অসৎ নেতারা একদিন তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে উস্কে দিয়েছিল এদেশের ছাত্রদের। প্রান দিয়েছিল নূর হোসেন, বসুনিয়া,মিলনরা। আজ সেই নেতারা্‌ই তার সাথে সন্ধি করে। দাঁত কেলিয়ে, পাশে বসিয়ে সভা করে।ক্ষমতার ভাগ নিয়ে দর কষাকষি করে। কি অশ্লীল এই ভোটের রাজনীতি। খালেদা -হাসিনা কে বলি প্রকৃতির বিচার বড় কঠিন। আপনারা একদিন এই সত্যটা বুঝবেন নিশ্চয়ই। নূর হোসেনদের আত্মা প্রতিদিন আপনাদের অভিশাপ দেয়।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

এই মানুষটা ঝুলিতে অনেক অলঙ্কার! একজন শিশুকে ফাঁসি দেয়ার নজির এই দেশে কেন বিদেশে বিরল কিন্তু এই মানুষটার সে কৃতিত্বও আছে! @Omio Ujjal