আমি কোথাও লিখেছিলাম: "আমাদের বিভাজন শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। মানুষ না পশু? মানুষ হলে, ছেলে না মেয়ে? জাতপাত কি- হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান? সর্বশেষে বিএনপি-আওয়ামীলীগ-জামাত-জাতীয়পার্টি...? দলটা অতি জরুরি! এই দেশে বসবাস করার জন্য
কোন-না-কোন-একটা দলের সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকাটা অতীব জরুরি। এর কোন বিকল্প নাই! যে দলবাজি করে না সে এই দেশে বসবাসের উপযুক্ত না। এই দেশে দলছুট মানুষের কথা কল্পনাও করা যায় না। সে বড়ো অভাগা- তারচেয়ে অভাগা আর কেউ নাই"।
হায় দলবাজী [২]! এই দেশে শিক্ষকদেরও দল আছে [৩]। লাল দল- নীল দল- কালো দল, পীত দল [৪]। শ্লা, এই দেশে দল নাই কার?
আমি অপেক্ষায় আছি যেদিন মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডায় এই নিয়মটা কঠিনরূপে চালু হবে সেদিনের জন্যে। এই কাতারে অমুক দলের লোকজন থাকবেন, পেছনের কাতারে অন্য দলের লোকজনেরা। এর নমুনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে: "আমরা পানি থেকে জল আলাদা করার যন্ত্রপাতি আমদানি করব আর মসজিতে জুতাজুতি করব। অতঃপর জুতাজুতি করার যন্ত্রপাতিকে পাদুকা বলা হবে নাকি জুতা, এ নিয়ে আরেক দফা Beating one another with..."। [১]
পত্রিকায় এসেছে কুষ্টিয়ার এসপি প্রায় দুই মাস তাঁর কর্মস্থলে ছিলেন না। কারণ হিসাবে যেটা জানা যাচ্ছে, ১২ মে ২০১১, কুষ্টিয়ায় একটি রাস্তায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনেরা অস্ত্র নিয়ে অস্ত্রবাজির খেলা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই আনন্দ এসপি সাহেবকে স্পর্শ করেনি! তিনি চাচ্ছিলেন এদেরকে গ্রেফতার করতে।
কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের লাল চোখের কারণে এসপি সাহেব এদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেননি। মনের কষ্ট চেপে রাখতে না-পেরে এসপি সাহেব ছুটি নিয়ে ঢাকা চলে যান। অবশেষে নতুন এসপি এখানে পাঠানো হলে তিনি কুষ্টিয়া থেকে বিদায় নেন।
অনেকে বলবেন, এতো লাগলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন? এত্তো সোজা! একজন চৌকশ মানুষ তিলতিল করে এসপি হয়ে চট করে চাকরি ছেড়ে দেবেন! তা, এরপর কী করবেন? এটা সিনেমা না যে কোন একটা অড-জব করে তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন।
সিনেমায় আমরা অহরহ দেখি, বড়ো কোন কর্মকর্তা রিকশা চালাচ্ছেন।
বিচারপতি আবু নাঈমের মত ক-জন পদত্যাগ করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দেশের ২০তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে তাঁর জুনিয়র বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে নিয়োগ দেয়ার পরদিনই আবু নাঈম পদত্যাগ করেন।
এটা যে কী অসামান্য একটা ঘটনা এর পুরোটা উপলব্ধি আমরা কখনই করতে চাইব না। জুনিয়রকে সিনিয়রের মাথার উপর বনবন করে ছড়ি ঘোরাবার সুযোগ করে দেয়ায় ভেঙ্গে পড়ে চেইন অভ কমান্ড।
নীরিজা গুতরু। ছবি সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে |
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে নীরিজা যখন গুজরাটের পোরবান্দারের পুলিশ প্রধান হয়ে আসেন তখন পুরো এলাকা শাসন করত ১০ মাফিয়া পরিবার। তিনি যোগদান করেই শহরের শীর্ষ ২৫ সন্ত্রাসীকে দাওয়াত দেন।ওই সন্ত্রাসীরা আনন্দে আটখানা। তাদের ধারণা ছিল চমৎকার একটা চা-চক্র হবে এবং নতুন পুলিশপ্রধানের সঙ্গে টাকা লেনদেনের একটা রফাও হবে।
একে একে সবাই এসে জড়ো হলেন। তারপর? এদের সবাইকে এমন বেধড়ক পেটানো হলো এরা শ্বাস ফেলারও সুযোগ পেল না। এরপর এরা একে একে এমন সব গোপন তথ্য দেয়া শুরু করল যার অধিকাংশ পুলিশের রেকর্ডেও ছিল না।
ছাড়া পাওয়ার পর এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করল কিন্তু কোন ফল বয়ে আনতে পারল না। 'বনধ' ডেকেও লাভ হলো না।
এবার নীরিজা গুতরু তাঁর সমস্ত লোকজন নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন। শীর্ষ ১০ সন্ত্রাসীকে এবার পেটালেন তাদের নিজস্ব এলাকায়। যেসব এলাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে এরা বছরের-পর-বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ত্রাসের জন্ম দিয়েছিলেন।
অসংখ্য উদাহরণের একটা। সন্ত্রাসী রাজশ্রী এবং দেবশ্রী 'হপ্তা' চাঁদা নেয়ার নাম করে জোরপূর্বক দোকান থেকে যখন কাপড় নিয়ে যাচ্ছিল। তখন এদেরকে ওখানেই ধরা হলো। পিছমোড়া করে বেঁধে প্রকাশ্যে রাজপথেই পেটাতে পেটাতে পুরো বাজার ঘোরানো হলো।
সন্ত্রাসীদের নিয়ে ক্রমশ সাধারণ লোকজনের ভয় কাটতে থাকল। এরপর কোন সন্ত্রাসী হুমকি দিলে বা চাঁদা চাইলে সাধারণ মানুষ হেসে উড়িয়ে দিত।
একে একে ছয় হাজার অভিযোগ দায়ের হলো। অচিরেই নীরিজা গুতরু গুজরাটকে অপরাধমুক্ত করে ফেললেন।
নীরিজা গুতরু যে অসাধ্য সাধন করেছিলেন এর পেছনে সবটুকু কৃতিত্ব তাঁর ছিল না। ছিল তৎকালীন গুজরাটের বিজেপি সরকারেরও। বিজেপি সরকার নীরিজাকে কাজ করার জন্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল বলেই তিনি তাঁর অসাধারণ কাজটা করতে পেরেছিলেন।
সহায়ক সূত্র:
১. জুতাজুতি: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_04.html
২. দলবাজী: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_19.html
৩. দেশের চেয়ে বড়ো দল: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_09.html
৪. হরেক রকম জামা: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_09.html
8 comments:
Onek Valo laglo
"নীরিজা গুতরু যে অসাধ্য সাধন করেছিলেন এর পেছনে সবটুকু কৃতিত্ব তাঁর ছিল না। ছিল তৎকালীন গুজরাটের বিজেপি সরকারেও। বিজেপি সরকার নীরিজাকে কাজ করার জন্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল বলেই তিনি তাঁর অসাধারণ কাজটা করতে পেরেছিলেন।" বাংলাদেশের পুলিশ কিন্তু যোগ্যতার বিচারে খুব একটা পিছিয়ে নেই৷ সরকার এমন সহায়তা দিলে নীরিজা বাংলাদেশেও মিলবে৷ কিন্তু সমস্যটা ওখানেই৷ সরকার চায় না, তাই হয় না...
:)@Ratul
একমত @Anonymous
Sorry for posting off-topic. Just curious, did anyone you know tried the online bookstores? Any suggestion which one is the best in terms of service and security? It looks like boi-mela has lost some control to hackers. You'll see that if you click on any book to see its description. Your help will be highly appreciated; you know who needs to buy books online. Again sorry for posting it here.
দুঃখিত, আমার জানা নেই! @Anonymous
বই-মেলাকেই বেস্ট জানতাম...
Thanks, that helps :)
Post a Comment