Search

Friday, August 5, 2011

জিরো!

ছোট বেলা থেকেই মানুষের স্বপ্ন থাকে বড় কিছু হওয়ার। আমার তেমন কোন স্বপ্ন ছিল না। কেন ছিল না এই নিয়ে এখন আর কারও সঙ্গে কস্তাকস্তি করতে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না! যোগ্যতা বা ক্যালিবার যে নামই বলা হউক না কেন ওই জিনিসটা আমার কস্মিনকালেও ছিল না, এখনও নাই।
সবারই যখন আছে কোন-না-কোন একটা  ক্যারিয়ার- আফসোস, আমার হাতে কেবল টিফিন-ক্যারিয়ার! কী আর করা- বড়ই আফসোস, উপর থেকেই রিজেক্ট মাল এসেছে! তাই বলে তো নিজেকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করানো চলে না...। 
যাই হোক, তখন এক কানে গোঁজা থাকত তিন টাকা দামের কলম আর অন্য কানে দু’টাকা দামের কাঠ পেন্সিল। সবাই বলত, এই ভঙ্গিটা আমি নাকি কাঠমিস্ত্রির কাছ থেকে নকল করেছি। অনেকেই কঠিন সাক্ষিও দিয়েছেন, কাঠমিস্ত্রিদের নাকি এই-ই ভঙ্গি। কুতর্ক করা দূরের কথা আমি তেমন গা করতাম না, যাক তবুও তো নকলের নামে একটা কিছু শিখলাম! হোক না কাঠমিস্ত্রির কাছ থেকে, কী আসে যায়!

ওসময় কিছু দুর্ধর্ষ কবিতা, মতান্তরে ছড়া (আমার জোর দাবীমতে) লিখেছিলাম:
‘আমি এক কিম্ভূতকিমাকার  বুড়া কবিভূত-
পাশের বাড়ীর মেয়েটির সঙ্গে খেলি কুতকুত!’
আরও যেন কি কি সব লিখেছিলাম, আজ আর মনে নাই। তবে যে কবিতায় কবি সাহেব পাশের বাড়ির মেয়ের সঙ্গে কুতকুত খেলে, ভূত হলেও যার বুদ্ধিশুদ্ধির উপর কারও আস্থা থাকার কথা না। তেমনি তাকে নিয়ে কবিতা-ছড়ায় অন্যদেেও আগ্রহ থাকার কথা না। তো, একজনকে দিয়েছিলাম পড়ার জন্য, তিনি দু-চার লাইন পড়েই খুব যত্ন করে ওই কাগজটা দিয়ে পাখির বিষ্ঠা পরিষ্কার করলেন, একটা টুঁ-শব্দও করলেন না। এই অপমান! এই তচ্ছিল্য! কী কষ্ট-কী কষ্ট, জীবন নষ্ট!
এরপর লেখকদের অনুকরণ করার চেষ্টা শুরু করলাম। এই যেমন আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা, কপকপ করে জ্যোৎস্না খাওয়ার চেষ্টা করা,
আচ্ছা করে গায়ে সরষে তেলের মতো জ্যোৎস্না মাখা, নাংগা-পাংগা হয়ে বৃষ্টিতে  'ছিনান' করা। এইসব করে-করে নিশাচর ড্রাকুলা হিসাবে ভালই নাম করলাম। যথারীতি ফলও হাতে-হাতে পেলাম, নিউমোনিয়া বাঁধিয়ে লম্বা হয়ে প্রায় ছ’ফুট হয়ে গেলাম। অবশেষে...ক্রমশ..., শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলাম জিরো!

তো, একবার সাগর তীরে বসে আছি। সূর্য বাবাজি তখন বলছেন, 'বাই-বাই, আবার যেন দেখা পাই'। আমি স্বস্তির শ্বাস ফেললাম, যাক, একজন অন্তত হক কথা, জ্ঞানের কথা বলল! ওহো, টসটসে পেয়ারার মত কচকচে জ্ঞান! কারণ সূর্য বাবাজি পরের দিন দেখা দেবেন ঠিকই কিন্তু আমি যে পরের দিন দেখা দেব, এমন কথা তো আর কেউ
আমায় দেয়নি।
সূর্য বাবাজিকে বললাম: একটু দাঁড়ান, আপনার একটা ফটো 'খিচাই'।
সূর্য বাবাজি অশুদ্ধ-অপ্রচলিত শব্দ 'খিচাই' শব্দটা বুঝবেন কিনা এই নিয়ে খানিকটা ধন্ধে ছিলাম। ওয়াল্লা, সূর্য বাবাজি ঠিকই পোজ দিলেন! অপরূপ সব আলো মেলে দিলেন!
কিন্তু আমাকে কান থেকে কাঠ পেন্সিল নামাতে দেখে সম্ভবত খানিকটা আহত হলেন। তিনি সম্ভবত ভেবেছিলেন কামানসম ক্যানন, নাইকন, অলম্পাস ক্যামেরা দিয়ে ফটো খিঁচানো হবে; এখন দেখছেন ২ টাকা দামের কাঠপেন্সিল! বেচারা সূর্য, এখন আর তার কী করার আছে? বড়ো মাপের জিনিস, কথা দিয়ে ফেলেছেন যখন, তখন তো আর কথা ফিরিয়ে নিতে পারেন না।

এরিমধ্যে বাঁধল বিপত্তি। সে এক ঘোর বিপত্তি! এক মহতরমা এসে সূর্য আড়াল করে বেঞ্চিতে বসে পড়লেন। হায়, কোথায় সূর্য কোথায় কী! আমি কখন যে মহতরমার ছবি আঁকা শুরু করেছি তা বলতে পারব না। সামনে আঁকার সুযোগ ছিল না তাতে কী! কিন্তু ছবিটা শেষ করতে পারিনি। ঘোর কেটে গেল।
 
মহতরমাকে আমার সামনে আবিষ্কার করলাম। দু’হাত কোমরে, মুখ গনগনে। কী সর্বনাশ! এতদিন শুনে এসেছি সুর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশী, এখন দেখছি বালির চেয়েও মহতরমার উত্তাপ বেশী! কী উত্তাপ, এই উত্তাপে সাধুরা ভস্ম হন, আমি কোন ছার!

মহতরমা বরফ হিম গলায় বললেন, 'হেই য়্যু, হাউ ডেয়ার য়্যু, উইদআউট মাই পারমিশনে তুমি আমার ছবি আঁকলে কেন? হোয়াই'?
আমি চিঁ-চিঁ করে বললাম, 'আ-আ, আপনার ছবি না তো, আ-আম, আমি তো সূর্যের ছবি আঁকছি'।
মহতরমা হাতে কিল মেরে: 'য়্যু মাস্ট বি কিডিং, এই, এইটা তাহলে সূর্যের ছবি, সূর্য মেয়ে মানুষ হলো কবে থেকে! টেল মি, টেল মি নাউ?'
আমি একটু সাহস করে বললাম: 'ভাল করে দেখুন, কই এখানে আপনার চেহারা আছে'?
মহতরমা রাগে পা ঠুকে, সজোরে বুক ঠুকে (এই জুলুমটা না-করলেও পারতেন) বললেন, 'কিন্তু এই, এই যে আমার ফিগারটা তো এখানে আছে'!
আমি ভাল করে দেখে ঢোক গিললাম, মাশাল্লা, ইয়ে বটে একখান! এমন একটা ফিগার...রাম-রাম! আই বেট, ইশ্বর সম্ভবত ওই সময় ভেকেশনে ছিলেন আর ঈশ্বরের মনটাও  সম্ভবত ছিল উৎফুল্ল এবং তাঁর হাতে ছিল অঢেল সময়! এটা তারই ফল...।

পরবর্তী অংশটুকু বাজারে দাঁড়িয়ে জনে-জনে বলার মতো না। সো, দ্য এন্ড!

2 comments:

মুরাদুল ইসলাম said...

হা হা!মজা লাগল পড়ে।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ধন্যবাদ। :)

ভাল কথা, "একটি পুরোপুরি আইনি ব্লগঃ দুনিয়ার বিচিত্র আইন সমুহ..." নামে আপনার একটা পোস্ট আছে।
আমার সাইটে অতিথিদের কলাম নামে একটা কলাম চালু করেছিলাম। অনেক দিন হলো, আপনার এই লেখাটা আপনারই নামে অতিথিদের কলামে ছাপাতে চেয়ে আপনার অনুমতির জন্য আপনাকে মেইল করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোন উত্তর পাইনি। অপেক্ষায় আছি...@মুরাদুল ইসলাম