কয়েদী নামের একটা বই আছে আমার। গোটা বইটাই হরতাল নিয়ে। ওই বইয়ের একটা চরিত্র, একজন লেখক। সলাজে বলি, ওই লেখকের নাম আমি জানি না। নামের বদলে তিনি পরিচিত হয়েছেন এভাবে, 'তিনি একজন লেখক'...।
ওই লেখক একটা সমস্যায় পড়েন, ভয়াবহ সমস্যা। একজন লেখকের জন্যে এরচেয়ে গুরুতর সমস্যা আর হতে পারে না! লেখকের লেখা আটকে গেছে- তিনি লিখতে পারছেন না। কেন? কয়েদীতে [১] লেখা আছে এমন:
"লেখক একমনে লিখে যাচ্ছেন।
অবরোধের কারণে অখন্ড অবসর এ বিরল সৌভাগ্য এনে দিয়েছে। সময়ের অভাবে লেখালেখি হয় না- এইবার আস্ত একটা উপন্যাস নামিয়ে দেবেন বলে পণ করেছেন। লেখা এগুচ্ছিল তরতর করে কিন্তু এখন কলম চিবুচ্ছেন।
লেখা আটকে গেছে। ডান হাতে লেখকদের আঙুল নাকি ছয়টা, কলমসহ! অন্য আঙুলগুলো চিবুলে ব্যথা হয় বলে 'কলমআঙুল' চিবুচ্ছেন। যে হরতাল লেখককে অখন্ড অবসর এনে দিয়েছে সেই হরতালের জন্য বেনাপোলে চার হাজার ট্রাক আটকা পড়ে আছে, পচনশীল দ্রব্য পচে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এ নিয়ে লেখক মাথা ঘামাচ্ছেন না। এই মুহূর্তে জটিল সমস্যাটা তাকে কাবু করে ফেলেছে। আচ্ছা, ওই জায়গাটার নাম যেন কি? স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটা...এইখানেই লেগেছে গেরো। স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার একটা নাম আছে, এখন মনে করতে পারছেন না। ঝড়ের গতিতে অভিধান-শব্দকোষের পাতা উল্টাচ্ছেন। ফলাফল শূন্য। খুঁজে পাচ্ছেন না। দিন যায় লেখকের। তার দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয় বাতাস। লেখা আটকে গেছে। এখানে অন্যরকম করে লিখে দিলেই হয় কিন্তু তা তিনি করবেন না। মাথায় বিষয়টা আটকে গেছে...।"
স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার নাম যেহেতু আমার সৃষ্ট চরিত্র লেখক মহাশয় জানেন না, আমার জানারও কোন কারণ নেই। কখনও কোথাও পড়েছিলাম পরে ভুলে গেছি। হায়, আমি এবং আমার অতি দুর্বল স্মৃতিশক্তি! কিন্তু এটার খোঁজ পেলাম অনেকটা হিন্দি সিনেমার ভঙ্গিতে।
আমার হাতে চলে এসেছে এক গুপ্তধন! প্রায় একশো দশ বছর পূর্বে প্রকাশিত কোরানের বাংলা অনুবাদ। প্রথমদিকের কিছু পাতা নেই- নেই অনুবাদকের নামও। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে অনুবাদক হলেন ভাই গিরিশচন্দ্র সেন। গিরিশচন্দ্র সেন সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম কোরান বাংলায় অনুবাদ করেন। এই মানুষটি বর্তমান বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহন করেছিলেন। তিনি আরবী, ফারসী ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। কেশবচন্দ্রের পরামর্শে তিনিই প্রথম বাংলায় কোরানের অনুবাদ করেন।
এই অনুবাদে ৭ নাম্বার সুরা হচ্ছে, 'এরাফ'। এখনকার অনুবাদকেরা অবশ্য লেখেন 'আরাফ'। এরাফ-এর অর্থ এখানে করা হয়েছে, 'স্বর্গ ও নরকের মধ্যবর্ত্তী উন্নত স্থানবিশেষ'।
এটাও কাকতালীয়! এখানে কলম দিয়ে কেউ একজন দাগিয়েছিলেন। এই অনুবাদ কত মানুষের হাতবদল হয়েছে এর হদীস আমার জানা নেই- কে কি মনে করে এটায় দাগ দিয়েছিলেন তাও সঠিক বলা মুশকিল। কেবল অনুমানই করা চলে। ওই লেখকের মত কী এই মানুষটাকেও স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার নাম ধন্ধে ফেলে দিয়েছিল...।
সহায়ক সূত্র:
১. কয়েদী: http://tinyurl.com/3jw4ftf
ওই লেখক একটা সমস্যায় পড়েন, ভয়াবহ সমস্যা। একজন লেখকের জন্যে এরচেয়ে গুরুতর সমস্যা আর হতে পারে না! লেখকের লেখা আটকে গেছে- তিনি লিখতে পারছেন না। কেন? কয়েদীতে [১] লেখা আছে এমন:
"লেখক একমনে লিখে যাচ্ছেন।
অবরোধের কারণে অখন্ড অবসর এ বিরল সৌভাগ্য এনে দিয়েছে। সময়ের অভাবে লেখালেখি হয় না- এইবার আস্ত একটা উপন্যাস নামিয়ে দেবেন বলে পণ করেছেন। লেখা এগুচ্ছিল তরতর করে কিন্তু এখন কলম চিবুচ্ছেন।
লেখা আটকে গেছে। ডান হাতে লেখকদের আঙুল নাকি ছয়টা, কলমসহ! অন্য আঙুলগুলো চিবুলে ব্যথা হয় বলে 'কলমআঙুল' চিবুচ্ছেন। যে হরতাল লেখককে অখন্ড অবসর এনে দিয়েছে সেই হরতালের জন্য বেনাপোলে চার হাজার ট্রাক আটকা পড়ে আছে, পচনশীল দ্রব্য পচে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এ নিয়ে লেখক মাথা ঘামাচ্ছেন না। এই মুহূর্তে জটিল সমস্যাটা তাকে কাবু করে ফেলেছে। আচ্ছা, ওই জায়গাটার নাম যেন কি? স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটা...এইখানেই লেগেছে গেরো। স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার একটা নাম আছে, এখন মনে করতে পারছেন না। ঝড়ের গতিতে অভিধান-শব্দকোষের পাতা উল্টাচ্ছেন। ফলাফল শূন্য। খুঁজে পাচ্ছেন না। দিন যায় লেখকের। তার দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয় বাতাস। লেখা আটকে গেছে। এখানে অন্যরকম করে লিখে দিলেই হয় কিন্তু তা তিনি করবেন না। মাথায় বিষয়টা আটকে গেছে...।"
স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার নাম যেহেতু আমার সৃষ্ট চরিত্র লেখক মহাশয় জানেন না, আমার জানারও কোন কারণ নেই। কখনও কোথাও পড়েছিলাম পরে ভুলে গেছি। হায়, আমি এবং আমার অতি দুর্বল স্মৃতিশক্তি! কিন্তু এটার খোঁজ পেলাম অনেকটা হিন্দি সিনেমার ভঙ্গিতে।
আমার হাতে চলে এসেছে এক গুপ্তধন! প্রায় একশো দশ বছর পূর্বে প্রকাশিত কোরানের বাংলা অনুবাদ। প্রথমদিকের কিছু পাতা নেই- নেই অনুবাদকের নামও। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে অনুবাদক হলেন ভাই গিরিশচন্দ্র সেন। গিরিশচন্দ্র সেন সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম কোরান বাংলায় অনুবাদ করেন। এই মানুষটি বর্তমান বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহন করেছিলেন। তিনি আরবী, ফারসী ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। কেশবচন্দ্রের পরামর্শে তিনিই প্রথম বাংলায় কোরানের অনুবাদ করেন।
এই অনুবাদে ৭ নাম্বার সুরা হচ্ছে, 'এরাফ'। এখনকার অনুবাদকেরা অবশ্য লেখেন 'আরাফ'। এরাফ-এর অর্থ এখানে করা হয়েছে, 'স্বর্গ ও নরকের মধ্যবর্ত্তী উন্নত স্থানবিশেষ'।
এটাও কাকতালীয়! এখানে কলম দিয়ে কেউ একজন দাগিয়েছিলেন। এই অনুবাদ কত মানুষের হাতবদল হয়েছে এর হদীস আমার জানা নেই- কে কি মনে করে এটায় দাগ দিয়েছিলেন তাও সঠিক বলা মুশকিল। কেবল অনুমানই করা চলে। ওই লেখকের মত কী এই মানুষটাকেও স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার নাম ধন্ধে ফেলে দিয়েছিল...।
সহায়ক সূত্র:
১. কয়েদী: http://tinyurl.com/3jw4ftf
2 comments:
এন্টিক কালেকশন...
তা আর বলতে :)@সায়ন
Post a Comment