সৌদি আরবে আট বাংলাদেশির শিরোচ্ছেদে এই দেশের প্রচুর লোকজনকে নগ্ন উল্লাস করতে দেখা গেছে। সৌদি আরব বলে কথা- ওখান থেকে যে উট আসে সেই উটের পেশাব খাওয়ার লোকজনেরও লাইন পড়ে যায়। পত্রিকা আবার এটা ঘটা করে ছাপায়!
অবশ্য এ দেশের অধিকাংশ মানুষই শোকে-কষ্টে-বেদনায় তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছেন। বেদনায় নীল হয়েছেন।
ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
আবার কিছু মানুষের বিচিত্র কিছু কর্মকান্ডও দেখা গেছে! সৈয়দ আবুল মকসুদের নরমূত্র [১] লেখাটি পড়ে বৈচিত্রপূর্ণ মনে হয়েছিল! সৈয়দ আবুল মকসুদের অন্য একটা লেখার সঙ্গে আমি একমত না-হলেও ওই লেখাপ্রসঙ্গে হাইকোর্ট তাঁর প্রতি যে অন্যায় করেছিলেন তার জন্য ওই সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র ধিক্কার [২]!
কিন্তু বেদনার সঙ্গে বলি, এখানে এই অবস্থায় মানুষটাকে আমার স্রেফ একটা ভাঁড় মনে হচ্ছে! কী হাস্যকর! আচ্ছা, আমাদের এই দেশের বুদ্ধিজীবীরা এমন কেন! কারও গ্রে-মেটার ইয়েলো মেটারের সঙ্গে জড়িয়ে যায় আবার কেউ গ্রে-মেটারের উপর বসে থাকেন!
যাই হোক, মনে হচ্ছে এটা স্রেফ একটা ফটোসেশন! কিন্তু তিনি এই পোজ দিয়েছেন কার জন্য, আমাদের জন্য? সৌদি দূতাবাসের সামনে ইংরাজি-আরবিতে এই বক্তব্যটা লিখে প্রতিবাদ জানালে হয়তো একটা-কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতো।
সবচেয়ে দৃষ্টিকটু যেটা, নিজের গলায় ঝোলানো এবং পেছনের সমস্ত ফেস্টুনগুলোয় নিজের নাম লিখে রেখেছেন। কেন? তাঁর মনে কী এই ভয় কাজ করছিল তাঁর সাদাচুলের সঙ্গে ম্যাচ করে পরা কাপড় দেখে বিভ্রান্ত হয়ে এই দেশের 'বঙ্গাল' তাঁকে চিনতে পারবে না?
সবচেয়ে দৃষ্টিকটু যেটা, নিজের গলায় ঝোলানো এবং পেছনের সমস্ত ফেস্টুনগুলোয় নিজের নাম লিখে রেখেছেন। কেন? তাঁর মনে কী এই ভয় কাজ করছিল তাঁর সাদাচুলের সঙ্গে ম্যাচ করে পরা কাপড় দেখে বিভ্রান্ত হয়ে এই দেশের 'বঙ্গাল' তাঁকে চিনতে পারবে না?
বা, তাঁর মনে কী এই ভয় কাজ করছিল যে লোকজনেরা তাঁকে ভ্রমে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো কংকাল মনে করবে? নাম লিখে জাস্ট জানান দেয়া আমি লাশ না সৈয়দ ভংশের লোক, 'আমি বাঁইচা আছি, মরি নাই'!
যাই হোক, মৃত্যুদন্ড নিয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, যদ্দিন মানুষ মৃতদেহে প্রাণসঞ্চার করতে না-পারবে তদ্দিন কোনও মানুষের প্রাণ হরণ করার অধিকার কারও থাকতে পারে না, রাষ্ট্রেরও।
একটা মানুষের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর দেখা গেল ওই মানুষটার প্রতি ভুল-অন্যায় করা হয়েছিল তাহলে সেই মানুষটার প্রতি ওই অন্যায়ের সংশোধন করার উপায় কী?
অজস্র উদাহরণ থেকে কেবল একটার কথাই বলি, তাহলে কর্নেল তাহের আজ বেঁচে থাকতেন [৩]।
ষ্ট্যানলি টুকি উইলিয়ামস নামের মানুষটাকে মেরে ফেলা হয় [৪]। তাঁকে বিচারক বলেছিলেন: খুনের অভিযোগ স্বীকার করলে তার মৃত্যুদন্ডাদেশ বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এই মানুষটার দৃপ্ত উত্তর ছিল, "Why should I apologize for a crime that I haven't committed". তাঁর মৃত্যুর পর প্রমাণিত হয়েছিল যে অন্যায়ের কারণে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল সেই অন্যায় তিনি করেননি! এখন কে ফিরিয়ে দেবে কর্ণেল তাহেরকে বা ষ্ট্যানলি টুকিকে।
তাছাড়া একজনকে মেরে ফেলাটাই কি চরম শাস্তি! এক লেখায় লিখেছিলাম:
"মৃত্যুর পর তো সবাই আনন্দ-বেদনার ঊর্ধ্বে। হেনরী শ্যারিয়ারের ‘প্যাপিলন’-এর প্যাপীকে ‘আইলস ডু স্যালুট’-এর নির্জন সেলে যে রকম আটকে রাখা হয়েছিল- ওরকম অন্ধকূপে চরম অপরাধীদের আজীবন আটকে রাখা উচিত। মাঝে-মধ্যে এদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফলাও করে জানানো যেতে পারে। প্যাপীলনের মতো এদেরও সময় থেমে যাবে, মনে হবে এ কষ্ট পৃথিবীর কষ্ট না।"
আমি প্যাপিলন মুভিটার সেই দৃশ্যটা আমৃত্যু ভুলব না। মানুষটা মুক্তি পাওয়ার পর কয়েক কদম হেঁটে দাঁড়িয়ে পড়ে, আটকে যায় কারণ এই কয়েক কদমই ছিল তার ভুবন।
সৌদি আরব কোরানের ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টার আলোচনায় যেতে আগ্রহ বোধ করছে না। এ সত্য যে কোরানে আছে:
"হে বিশ্বাসীগন! নরহত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (বদলা)-র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী...।" -২ সুরা বাকারাঃ ১৭৮-১৭৯"...পরিজনবর্গকে রক্তপণ দেয়া বিধেয়...।"-৪ সুরা নিসাঃ ৯২-৯৩"...কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি প্রতিশোধ গ্রহনের অধিকার দিয়েছি কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে।...-১৭ সুরা বনি-ইসরাইলঃ ৩৩
তা সৌদি আরবের মত ইসলামের ধারক-বাহক দেশগুলো ধর্ম নিয়ে বড়ো অস্থির কিন্তু এদের শাসনতন্ত্রের মূল স্তম্ভই ধর্মীয় অনাচার। ইসলাম ধর্ম রাজতন্ত্র পছন্দ করে না- উটচালকও যদি যোগ্য হন তিনি দেশ শাসন করবেন। কিন্তু এমন উটেরও অধম নির্বোধ মানুষও [৫] যদি রাজার ছেলে বা নাতি-পুতিও হয় সেই বাদশাহ হবে।
কিছু বিষয় জানার বড়ো আগ্রহ, এই সৌদি প্রিন্স সাহেব এখন কোথায়? এই রাজার কুমারকে কি সৌদি আরবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? আমার সুতীব্র এও জানার ইচ্ছা, এখন পর্যন্ত ক-জন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিককে সৌদি আরব ফাঁসি দিয়েছে? নাকি ওদের জন্য অন্য আইন?
আরেকটা বিষয় আমার মাথায় ঘুরপাক খায়, প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করার বিষয়টার মরতবা কী! সৌদি আরবের লোকজনরা কী এতোটাই অবোধ যে এরা জানে না একটা মানুষকে মেরে ফেলা বলতে আসলেই কী বোঝায়? এটা জানাতে-শেখাতেই কী উম্মুক্ত স্থানে শিরোচ্ছেদ করা হয়! দলে-দলে লোকজনেরা পেস্তা-বাদাম চিবুতে-চিবুতে রঙ্গ দেখতে যায়! তাহলে আমি সবার মত প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করার এই কর্মকান্ডকে দোষের মনে করি না। আহা, বেচারারা যে অবোধ!
কিন্তু, একটা কিন্তু আছে। কেবল আমি যেটা চাইব, সৌদি লোকজনেরা-বাদশা-প্রিন্সরা তাদের অন্তরঙ্গ সময়; ওহো, বেচারা শিশুরা তো বুঝবে না অন্তরঙ্গ সময় জিনিসটা কি! তাহলে এদের খানিকটা খোলাশা করে বলি, বাপু, তোমরা তোমাদের দেশের সমস্ত 'সন্তান উৎপাদন কারখানা' উম্মুক্ত করে দাও, হে। প্রকাশ্যে স্টেডিয়ামের মত স্থানে যখন তোমাদের ওইসব কারখানা চালু থাকবে তখন তোমাদের অবোধ লোকজনেরা দলে-দলে ওখানে তশরীফ আনবে। কথা দিচ্ছি, যেদিন বাদশার পালা আসবে পেস্তাবাদাম না-হোক অন্তত চিনেবাদাম বিনেপয়সায় আমরা জাহাজ ভরে পাঠাব।
তবে খানিকটা মন খারাপ এই কারণে মহামান্য বাদশার এই সুযোগ আসবে কি না এই নিয়ে! যিনি প্লেন থেকে স্বর্ণের সিঁড়ি বেয়ে একা নামতে পারেন না, তিনি...।
সহায়ক সূত্র:
১. সৈয়দ আবুল মকসুদ, নরমূত্র: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_09.html
২. সৈয়দ আবুল মকসুদ, আদালত: http://www.ali-mahmed.com/2011/03/blog-post_05.html
৩. কর্নেল তাহের...: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_8805.html
৪. মৃত্যুদন্ড...: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_07.html
৫. উটেরও অধম: http://www.ali-mahmed.com/2011/10/blog-post.html
3 comments:
এক সৌদি কে ফর্ম ফিলাপের লিগা ফোনে জিগাইছে, সেক্স? মেল অর ফিমেল?
সৌদি: বোথ
প্রশ্ন: হাউ ডেয়ার?
সৌদি: নো নো, ডিয়ার ইটস টু ফাস্ট, সামটাইমস ক্যামেল।
আমাদের দেশে ফাসী দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় তাহলে সউদিদের দোষ কোথায়?
মকসুদ মিয়া দেখি আরেক চিজ। জেবতিকের এফবি থিক্যা এই মাল উদ্ধার হইল
http://www.bd-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Internet&pub_no=542&cat_id=2&menu_id=30&news_type_id=1&index=0&archiev=yes&arch_date=29-10-2011
Post a Comment