গোটা শিরোনাম দূরের কথা পারতপক্ষে হিন্দি শব্দ নিয়ে একটি শব্দও এখন আর লিখতে চাই না কারণ এখন দাদাদের উপর গোটা দেশ ক্ষেপে আছে। লেখার কারণে আমার উপর কেউ চটে গেলে তো মুশকিল। অবশ্য চটে-মটে কেউ একটা দুম করে ঘুষি বসিয়ে দেবেন এই নিয়ে আমি খুব একটা উদ্বিগ্ন না কারণ পাঠক আমার নাগাল পাবেন কোথায়? আমার নাকের বদলে পাঠক রাগে নিজেই নিজের মনিটর নিজেই গুড়িয়ে দিলে আমি বলার কে?
অবশ্য আমি নিজেও এটা মনে করি,
আমরা সলাজে স্বীকার যাই আর না যাই, আমাদের ভাষা এখন হিন্দি ভাষার কাছে কোণঠাসা হওয়ার উপক্রম। হিন্দি সিরিয়াল-মুভি-গানের কল্যাণে এই প্রজন্ম হিন্দিতে বাতচিত করতে পছন্দ করে। 'ডোরিমন' টাইপের হিন্দি কার্টুনের কল্যাণে ছোট-ছোট বাচ্চারা চমৎকার গান গায়, 'মেরা গালা-সুরেলা...ধান্যেবাদ...জয়রামকৃষ্ণা...স্লামালাইকুম'।[১]
আফসোস, দেশের অভাগা সন্তানদের 'ডোরিমন' নামের সামান্য একটা কার্টুন বাংলায় ডাবিং করার মুরোদ নাই। নাকি মুরোদ আছে টাকা নাই? শ্লা, ডাবিং করার টাকা না-থাকলে আমরা ভিক্ষা করে টাকা তুলে দেব।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ডয়চে ভেলে গ্যেটে, ধানমন্ডিতে রেডিও শ্রোতাদের জন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ওখানে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক আলোচনা। আজকাল ব্লগিংও নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে বিধায় এই আলোচনার প্যানেলে ছিলেন 'সামহোয়্যার...' থেকে আরিল-জানা, 'আমার ব্লগ' থেকে আরিফ জেবতিক, 'গ্লোবাল ভয়েসেস' থেকে রেজওয়ান, 'বিডিনিউজ টোয়েনন্টি ফোর থেকে আফসান চৌধুরী এবং দলছুট আমি। কিন্তু কোনো এক কারণে আফসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দেবারতি গুহ।
আমার ওখানে থাকার কথা না তবুও ছিলাম। বলার পর্ব থাকবে এটা আগে জানা থাকলে আমি পগারপার হতাম। লোকজনেরা কেন যে বুঝতে চান না আমি দু-কলম গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করি বলেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে চেহারায় একটা আলাদা গাম্ভীর্য রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে 'কথার খই ফোটাতে পারি না। পারি না মানে পারি না। এখন এই কারণে কি ইলেকট্রিক পোলে আমাকে ঝুলিয়ে দেয়া হবে? কেমন করে বোঝাই এ যে আমার 'কম্মো' না, আদৌ এটা আমার আরামের ভুবন না। আমার আবার আলাদা করে বলার কি থাকতে পারে! যা বলার তা তো লেখার মাধ্যমেই বলার চেষ্টা করি। তবুও ব্লগিং সংক্রান্ত বিষয় যখন, যা হোক, আবেগের জায়গা ...গেলাম নাহয়।
অনুষ্ঠান শুরুর হওয়ার পর অবাক বিস্ময়ে আমি লক্ষ করলাম মি, মোহাম্মদ জমির নামের এক ভদ্রলোক মধ্যমণি হয়ে মঞ্চ আলোকিত করছেন। ইনি তথ্য অধিদপ্তরের উঁচু পদের একজন কর্মকর্তা। এই অনুষ্ঠানে ভদ্রলোক কোত্থেকে উদয় হলেন কে জানে! কারণ মেইল চালাচালির সময় আমি যে অনুষ্ঠানের বিস্তারিত হাতে পেয়েছিলাম সেখানে এই ভদ্রলোকের উপস্থিতির উল্লেখ ছিল না।
যাই হোক, এটা ডয়চে ভেলে ভাল বলতে পারবে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় এ তো বিচিত্র কিছু না। কারো ভাল না-লাগলে সেখানে না-গেলেই হয়। আগে বিষয়টা জানতে পারলে আমার একটা গতি করতে পারতাম।
পরে ডয়চে ভেলে আমাকে জানিয়েছিল, এই মানুষটার উপস্থিতি নাকি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। উত্তরটা আমার পছন্দ হয়নি।
আমি দেবরতি গুহকে আমার বিরক্তির কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম। সত্যি-সত্যি গোটা বিষয়টা এরপর আমার কাছে অসহ্য মনে হয়েছিল...।
অবশ্য যে বিষয়ে এখানে আলোচনা হবে এখানে এই ভদ্রলোকের কি কাজ এটা আমি অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আমার মধ্যে একধরনের আড়ষ্টতা চলে এসেছে। আড়ষ্টতায় আমার আবার সব জট পাকিয়ে যায়। পারলে আমি বাতাসে মিলিয়ে যাই, তখন হাত কোথায় রাখব, কোথায়ই বা রাখব পা এই নিয়ে নিজের ভেতর এক কস্তাকস্তি চলতে থাকে। তখন জমে যাওয়া হাত-পা টেনেটুনে জায়গায় বসিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার সময় কোথায়, বাওয়া?
আমি আমার বক্তব্যে সাফ সাফ বললাম, ব্লগিং-এ আমি কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ মানি না। নিয়ন্ত্রণ করার কারো কোনো অধিকার থাকলে সে কেবল পাঠক। একজন লেখক নামের ব্লগার দাঁড়াবেন পাঠকের কাঠগড়ায়। পাঠকই ঠিক করবেন তিনি কোন লেখা পড়বেন কোনটা পড়বেন না। সুসাহিত্য-কুসাহিত্য, সুব্লগিং-কুব্লগিং। সেন্সর সাহিত্য-সেন্সর ব্লগিং বলে কিছু নাই, থাকা উচিত না।
প্রয়োজনে কারো আপত্তি থাকলে আইনের আশ্রয় নেবে, সমস্যা তো নাই। আইনের দরোজা তো সবার জন্য খোলা।
কম্যুনিটি ব্লগগুলোর পক্ষ থেকে বলা হলো, কিছু নিয়ন্ত্রণ ব্লগসাইটের হাতে থাকা আবশ্যক।
বেশ। এই নিয়ে আমার খুব একটা উচ্চবাচ্য নাই কারণ সব জায়গায় কিছু-না-কিছু নিয়ম থাকতেই পারে। যেখানকার যে নিয়ম। এখন যে অনুষ্ঠানে আমি এসেছি এখানেও তো কিছু নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে। যেমন ইচ্ছা হলেই এখানে আমি টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে চটুল গান গাইতে পারব না।
তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মি, জমির অনুষ্ঠানের মধ্যখানে তাঁর সুদীর্ঘ বক্তব্যের পূর্বে যেটা বললেন তা হচ্ছে, '...তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি ৯টা ভাষা জানেন'।
এটা শুনে আমি হাঁ। ওয়াল্লা, কী সর্বনাশ! দেখো দিকি কান্ড, আমি যে মাত্র একটা ভাষা, আমার মায়ের ভাষাই ভাল জানি না অথচ এই মানুষটা কিনা ৯টা ভাষা জানেন! আমাদের সবার সশ্রদ্ধ দৃষ্টিতে মানুষটাকে না-দেখে উপায় কী!
তিনি এও জানালেন, '...তাঁর ১৫টা বই আছে'!
আছে মানে? ১৫টা বই লিখেছেন, তিনি নিজেই। আমি আবারও আমোদিত। কারণ ১৫টা বই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা (আমি বেঁচে থাকতে থাকতে) আমার নাই। লোকজনেরা বলাবলি করে প্রকাশক আমার আর কোনো বই ছাপাবেন না বলে শহীদ মিনারে গিয়ে প্রতিজ্ঞা করে এসেছেন (!)। তাঁরা আমার বই ছাপিয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হতে চাচ্ছেন না।
মি, জমির আরও জানালেন তাঁর খনার বচনের উপর একটা বই আছে। উদাহরণও দিলেন, '...এক মন দুধে এক ফোঁটা চেনা...'। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছি। খোদা, কী দুর্ধর্ষ এই খনার বচনটা! এক মন চেনায় এক ফোঁটা দুধ পড়লে কি হবে এই নিয়ে আমি অবশ্য খানিকটা চিন্তিতও।
যাই হোক, তিনি আমার কথা ধরে বসলেন। আমার কথার প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্যে যেটা বললেন, "ব্লগস্ফিয়ারে নিয়ন্ত্রণ থাকাটা জরুরি। সম্মানী লোকের সম্মান নষ্ট করা হবে এটা নৈব নৈব চ। তাই এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকাটা জরুরি। আর লোকজন যে কোর্টে যাবে কোর্টে ফয়সালা হতে হতে তো একজন মানুষ বুড়িয়ে যায়। কোটি টাকার মামলা করলে লাখ টাকা তার কোর্ট ফি! লক্ষ-লক্ষ টাকার শ্রাদ্ধ হয় ফিযুল সময় নষ্ট হয় এই কারণে কোর্ট বাদ দিয়ে অন্য ব্যবস্থা। সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও বেসরকারীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।"
ভাল কথা, তিনি জানালেন, তিনি একজন দুঁদে আইনজীবীও।
চমকের পর চমক! অথচ আমি বছরখানেক আইনের 'কেলাশ' করে হাল ছেড়ে দিয়েছি। বেচারা আমি, বেচারা!
আমি ভয়ের শ্বাস ফেললাম, ঈশ্বর, এভাবেই শুরু হয়। এখন তিনি যে বেসরকারী নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন আপাততদৃষ্টিতে নিরীহ- নির্বীষ সাপ কিন্তু 'বেসরকারী চিনির প্রলেপে সরকারী কুইনাইন' জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই গিলে আসছি আমরা। সেই কুইনাইন গিলতে গিলতে এখন বমন উদ্রেক হয়।
অনুষ্ঠানের মাঝখান থেকে মি. জমির উঠে চলে গেলেন। আমার কাছে এটা স্রেফ একটা অমার্জিত আচরণ মনে হয়েছে। আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারী অথচ আচরণ লাটসাহেবের মত।
অনেক শ্রোতাদেরকে দেখলাম ব্লগিং-ব্লগস্ফিয়ার নিয়ে ভুল ধারণার পাশাপাশি জানার তীব্র কৌতুহলও। দুয়েকজন প্রশ্ন করার সুযোগও পেলেন কিন্তু সময়ের কারণে তাঁদের থামানো হলো। প্রশ্ন-উত্তর পর্বটা খানিক দীর্ঘ হলে অনুষ্ঠানটা আরো কাজের এবং প্রাণবন্ত হতো বলেই আমার ধারণা।
এবার অন্য প্রসঙ্গ। আমি কোথাও বলেছিলাম, ব্লগিং-গতি-তারুণ্য সমার্থক। ব্লগিং হচ্ছে, নির্মেদ-মেদহীন। ব্লগিং থাকুক সেইসব নির্মেদ যুবকদের ঝোলায় কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, এখন ব্লগিং সংক্রান্ত বিষয়ে, এই সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে সাদা গোঁফ-সাদা চুলের বুদ্ধিজীবীদের পদধূলি ক্রমশ বাড়ছে।
আহা, বর্ষায় উপায় কী? বর্ষা এলে তখন তো এঁদের পদধূলি আর পাওয়া যাবে না। এই নিয়ে আমি খানিক চিন্তিত। চিন্তিত হলে লেখক কলম কামড়াকামড়ি করেন কিন্তু ব্লগারদের জন্য কীবোর্ড কামড়ানো সুখকর না। অবশ্য বর্ষায় পদধূলির বদলে 'পদকাদা' পাওয়া যাবে এটাই যা ভরসা। তবে এই বুদ্ধিজীবীদের আধিক্য না-এমন পর্যায়ে চলে যায় অবশেষে পদধূলি-পদকাদা নেওয়ার মত লোক আর খুঁজে পাওয়া গেল না। কী সর্বনাশ, তখন উপায়!
সত্যি বলতে কি 'কাবাব মে হাড্ডি' এবং 'হাড্ডি মে কাবাব'' এটা আমি প্রায়শ গুলিয়ে ফেলি। তবুও এ লেখায় ভেবেছিলাম, একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেব এমন। আইচ্ছা, কইছেন দেখি 'কাবাব মে হাড্ডিটা' কে? পরে ভেবে দেখলাম, সবাই এই প্রশ্নের ভুলভাল উত্তর দেবেন। তাই আমি এর উত্তরটা আগেভাগেই বলে দিচ্ছি, ওরে, এই অভাগা ব্যতীত আর কে? এই সব উঁচু পদের অনুষ্ঠানে আমার মত অভাগা লোকেরাই দলছুট, কাবাব মে...।
*ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারছি: [২]
"...অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের জন্য কুইজ ছাড়াও ছিল প্যানেল আলোচনা৷ প্যানেল আলোচনার বিষয় – সামাজিক মিডিয়ার যুগে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নৈতিকতা'৷ এতে বাংলাদেশের প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমিরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন"।
মাবুদ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আমিও আছি দেখছি- দেকো দিকি কান্ড। ফুটো কলসে এ আনন্দ রাখি কোথায়!
সহায়ক সূত্র:
১. মেরা গালা সুরেলা...: http://www.esnips.com/displayimage.php?pid=33703291
২. ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন: http://www.dw.de/dw/article/0,,15761356,00.html
অবশ্য আমি নিজেও এটা মনে করি,
আমরা সলাজে স্বীকার যাই আর না যাই, আমাদের ভাষা এখন হিন্দি ভাষার কাছে কোণঠাসা হওয়ার উপক্রম। হিন্দি সিরিয়াল-মুভি-গানের কল্যাণে এই প্রজন্ম হিন্দিতে বাতচিত করতে পছন্দ করে। 'ডোরিমন' টাইপের হিন্দি কার্টুনের কল্যাণে ছোট-ছোট বাচ্চারা চমৎকার গান গায়, 'মেরা গালা-সুরেলা...ধান্যেবাদ...জয়রামকৃষ্ণা...স্লামালাইকুম'।[১]
আফসোস, দেশের অভাগা সন্তানদের 'ডোরিমন' নামের সামান্য একটা কার্টুন বাংলায় ডাবিং করার মুরোদ নাই। নাকি মুরোদ আছে টাকা নাই? শ্লা, ডাবিং করার টাকা না-থাকলে আমরা ভিক্ষা করে টাকা তুলে দেব।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ডয়চে ভেলে গ্যেটে, ধানমন্ডিতে রেডিও শ্রোতাদের জন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ওখানে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক আলোচনা। আজকাল ব্লগিংও নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে বিধায় এই আলোচনার প্যানেলে ছিলেন 'সামহোয়্যার...' থেকে আরিল-জানা, 'আমার ব্লগ' থেকে আরিফ জেবতিক, 'গ্লোবাল ভয়েসেস' থেকে রেজওয়ান, 'বিডিনিউজ টোয়েনন্টি ফোর থেকে আফসান চৌধুরী এবং দলছুট আমি। কিন্তু কোনো এক কারণে আফসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দেবারতি গুহ।
আমার ওখানে থাকার কথা না তবুও ছিলাম। বলার পর্ব থাকবে এটা আগে জানা থাকলে আমি পগারপার হতাম। লোকজনেরা কেন যে বুঝতে চান না আমি দু-কলম গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করি বলেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে চেহারায় একটা আলাদা গাম্ভীর্য রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে 'কথার খই ফোটাতে পারি না। পারি না মানে পারি না। এখন এই কারণে কি ইলেকট্রিক পোলে আমাকে ঝুলিয়ে দেয়া হবে? কেমন করে বোঝাই এ যে আমার 'কম্মো' না, আদৌ এটা আমার আরামের ভুবন না। আমার আবার আলাদা করে বলার কি থাকতে পারে! যা বলার তা তো লেখার মাধ্যমেই বলার চেষ্টা করি। তবুও ব্লগিং সংক্রান্ত বিষয় যখন, যা হোক, আবেগের জায়গা ...গেলাম নাহয়।
অনুষ্ঠান শুরুর হওয়ার পর অবাক বিস্ময়ে আমি লক্ষ করলাম মি, মোহাম্মদ জমির নামের এক ভদ্রলোক মধ্যমণি হয়ে মঞ্চ আলোকিত করছেন। ইনি তথ্য অধিদপ্তরের উঁচু পদের একজন কর্মকর্তা। এই অনুষ্ঠানে ভদ্রলোক কোত্থেকে উদয় হলেন কে জানে! কারণ মেইল চালাচালির সময় আমি যে অনুষ্ঠানের বিস্তারিত হাতে পেয়েছিলাম সেখানে এই ভদ্রলোকের উপস্থিতির উল্লেখ ছিল না।
যাই হোক, এটা ডয়চে ভেলে ভাল বলতে পারবে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় এ তো বিচিত্র কিছু না। কারো ভাল না-লাগলে সেখানে না-গেলেই হয়। আগে বিষয়টা জানতে পারলে আমার একটা গতি করতে পারতাম।
পরে ডয়চে ভেলে আমাকে জানিয়েছিল, এই মানুষটার উপস্থিতি নাকি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। উত্তরটা আমার পছন্দ হয়নি।
আমি দেবরতি গুহকে আমার বিরক্তির কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম। সত্যি-সত্যি গোটা বিষয়টা এরপর আমার কাছে অসহ্য মনে হয়েছিল...।
অবশ্য যে বিষয়ে এখানে আলোচনা হবে এখানে এই ভদ্রলোকের কি কাজ এটা আমি অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আমার মধ্যে একধরনের আড়ষ্টতা চলে এসেছে। আড়ষ্টতায় আমার আবার সব জট পাকিয়ে যায়। পারলে আমি বাতাসে মিলিয়ে যাই, তখন হাত কোথায় রাখব, কোথায়ই বা রাখব পা এই নিয়ে নিজের ভেতর এক কস্তাকস্তি চলতে থাকে। তখন জমে যাওয়া হাত-পা টেনেটুনে জায়গায় বসিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার সময় কোথায়, বাওয়া?
আমি আমার বক্তব্যে সাফ সাফ বললাম, ব্লগিং-এ আমি কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ মানি না। নিয়ন্ত্রণ করার কারো কোনো অধিকার থাকলে সে কেবল পাঠক। একজন লেখক নামের ব্লগার দাঁড়াবেন পাঠকের কাঠগড়ায়। পাঠকই ঠিক করবেন তিনি কোন লেখা পড়বেন কোনটা পড়বেন না। সুসাহিত্য-কুসাহিত্য, সুব্লগিং-কুব্লগিং। সেন্সর সাহিত্য-সেন্সর ব্লগিং বলে কিছু নাই, থাকা উচিত না।
প্রয়োজনে কারো আপত্তি থাকলে আইনের আশ্রয় নেবে, সমস্যা তো নাই। আইনের দরোজা তো সবার জন্য খোলা।
কম্যুনিটি ব্লগগুলোর পক্ষ থেকে বলা হলো, কিছু নিয়ন্ত্রণ ব্লগসাইটের হাতে থাকা আবশ্যক।
বেশ। এই নিয়ে আমার খুব একটা উচ্চবাচ্য নাই কারণ সব জায়গায় কিছু-না-কিছু নিয়ম থাকতেই পারে। যেখানকার যে নিয়ম। এখন যে অনুষ্ঠানে আমি এসেছি এখানেও তো কিছু নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে। যেমন ইচ্ছা হলেই এখানে আমি টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে চটুল গান গাইতে পারব না।
তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মি, জমির অনুষ্ঠানের মধ্যখানে তাঁর সুদীর্ঘ বক্তব্যের পূর্বে যেটা বললেন তা হচ্ছে, '...তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি ৯টা ভাষা জানেন'।
এটা শুনে আমি হাঁ। ওয়াল্লা, কী সর্বনাশ! দেখো দিকি কান্ড, আমি যে মাত্র একটা ভাষা, আমার মায়ের ভাষাই ভাল জানি না অথচ এই মানুষটা কিনা ৯টা ভাষা জানেন! আমাদের সবার সশ্রদ্ধ দৃষ্টিতে মানুষটাকে না-দেখে উপায় কী!
তিনি এও জানালেন, '...তাঁর ১৫টা বই আছে'!
আছে মানে? ১৫টা বই লিখেছেন, তিনি নিজেই। আমি আবারও আমোদিত। কারণ ১৫টা বই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা (আমি বেঁচে থাকতে থাকতে) আমার নাই। লোকজনেরা বলাবলি করে প্রকাশক আমার আর কোনো বই ছাপাবেন না বলে শহীদ মিনারে গিয়ে প্রতিজ্ঞা করে এসেছেন (!)। তাঁরা আমার বই ছাপিয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হতে চাচ্ছেন না।
মি, জমির আরও জানালেন তাঁর খনার বচনের উপর একটা বই আছে। উদাহরণও দিলেন, '...এক মন দুধে এক ফোঁটা চেনা...'। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছি। খোদা, কী দুর্ধর্ষ এই খনার বচনটা! এক মন চেনায় এক ফোঁটা দুধ পড়লে কি হবে এই নিয়ে আমি অবশ্য খানিকটা চিন্তিতও।
যাই হোক, তিনি আমার কথা ধরে বসলেন। আমার কথার প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্যে যেটা বললেন, "ব্লগস্ফিয়ারে নিয়ন্ত্রণ থাকাটা জরুরি। সম্মানী লোকের সম্মান নষ্ট করা হবে এটা নৈব নৈব চ। তাই এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকাটা জরুরি। আর লোকজন যে কোর্টে যাবে কোর্টে ফয়সালা হতে হতে তো একজন মানুষ বুড়িয়ে যায়। কোটি টাকার মামলা করলে লাখ টাকা তার কোর্ট ফি! লক্ষ-লক্ষ টাকার শ্রাদ্ধ হয় ফিযুল সময় নষ্ট হয় এই কারণে কোর্ট বাদ দিয়ে অন্য ব্যবস্থা। সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও বেসরকারীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।"
ভাল কথা, তিনি জানালেন, তিনি একজন দুঁদে আইনজীবীও।
চমকের পর চমক! অথচ আমি বছরখানেক আইনের 'কেলাশ' করে হাল ছেড়ে দিয়েছি। বেচারা আমি, বেচারা!
আমি ভয়ের শ্বাস ফেললাম, ঈশ্বর, এভাবেই শুরু হয়। এখন তিনি যে বেসরকারী নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন আপাততদৃষ্টিতে নিরীহ- নির্বীষ সাপ কিন্তু 'বেসরকারী চিনির প্রলেপে সরকারী কুইনাইন' জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই গিলে আসছি আমরা। সেই কুইনাইন গিলতে গিলতে এখন বমন উদ্রেক হয়।
অনুষ্ঠানের মাঝখান থেকে মি. জমির উঠে চলে গেলেন। আমার কাছে এটা স্রেফ একটা অমার্জিত আচরণ মনে হয়েছে। আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারী অথচ আচরণ লাটসাহেবের মত।
অনেক শ্রোতাদেরকে দেখলাম ব্লগিং-ব্লগস্ফিয়ার নিয়ে ভুল ধারণার পাশাপাশি জানার তীব্র কৌতুহলও। দুয়েকজন প্রশ্ন করার সুযোগও পেলেন কিন্তু সময়ের কারণে তাঁদের থামানো হলো। প্রশ্ন-উত্তর পর্বটা খানিক দীর্ঘ হলে অনুষ্ঠানটা আরো কাজের এবং প্রাণবন্ত হতো বলেই আমার ধারণা।
এবার অন্য প্রসঙ্গ। আমি কোথাও বলেছিলাম, ব্লগিং-গতি-তারুণ্য সমার্থক। ব্লগিং হচ্ছে, নির্মেদ-মেদহীন। ব্লগিং থাকুক সেইসব নির্মেদ যুবকদের ঝোলায় কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, এখন ব্লগিং সংক্রান্ত বিষয়ে, এই সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে সাদা গোঁফ-সাদা চুলের বুদ্ধিজীবীদের পদধূলি ক্রমশ বাড়ছে।
আহা, বর্ষায় উপায় কী? বর্ষা এলে তখন তো এঁদের পদধূলি আর পাওয়া যাবে না। এই নিয়ে আমি খানিক চিন্তিত। চিন্তিত হলে লেখক কলম কামড়াকামড়ি করেন কিন্তু ব্লগারদের জন্য কীবোর্ড কামড়ানো সুখকর না। অবশ্য বর্ষায় পদধূলির বদলে 'পদকাদা' পাওয়া যাবে এটাই যা ভরসা। তবে এই বুদ্ধিজীবীদের আধিক্য না-এমন পর্যায়ে চলে যায় অবশেষে পদধূলি-পদকাদা নেওয়ার মত লোক আর খুঁজে পাওয়া গেল না। কী সর্বনাশ, তখন উপায়!
সত্যি বলতে কি 'কাবাব মে হাড্ডি' এবং 'হাড্ডি মে কাবাব'' এটা আমি প্রায়শ গুলিয়ে ফেলি। তবুও এ লেখায় ভেবেছিলাম, একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেব এমন। আইচ্ছা, কইছেন দেখি 'কাবাব মে হাড্ডিটা' কে? পরে ভেবে দেখলাম, সবাই এই প্রশ্নের ভুলভাল উত্তর দেবেন। তাই আমি এর উত্তরটা আগেভাগেই বলে দিচ্ছি, ওরে, এই অভাগা ব্যতীত আর কে? এই সব উঁচু পদের অনুষ্ঠানে আমার মত অভাগা লোকেরাই দলছুট, কাবাব মে...।
*ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারছি: [২]
"...অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের জন্য কুইজ ছাড়াও ছিল প্যানেল আলোচনা৷ প্যানেল আলোচনার বিষয় – সামাজিক মিডিয়ার যুগে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নৈতিকতা'৷ এতে বাংলাদেশের প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমিরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন"।
মাবুদ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আমিও আছি দেখছি- দেকো দিকি কান্ড। ফুটো কলসে এ আনন্দ রাখি কোথায়!
সহায়ক সূত্র:
১. মেরা গালা সুরেলা...: http://www.esnips.com/displayimage.php?pid=33703291
২. ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন: http://www.dw.de/dw/article/0,,15761356,00.html
8 comments:
Vai, Link ta bodh hoi vul dican.
ব্লগারে এই এক সমস্যা। পোস্টে ছবি, ভিডিও ক্লিপিংস যোগ করা যায় কিন্তু অডিও করা যায় না। পোস্টে বিকল্প উপায়ে কেমন করে অডিও যোগ করতে হয় এটা আমার জানা নাই :(
আমার এখানে তো লিংকটা ঠিকঠাক মত কাজ করছে। আপনি কি দয়া করে আরেকবার চেষ্টা করে দেখবেন। @Anonymous
হিহিহি হি,আমি ভাবতেছি এত বড়্ একজন মানুষরে কাবাব বানাইতে কত চারকোল খরচ হৈল
আপনার পেজ টা facebook e share করলাম
জমির মিয়াই তাহলে সব আপনেরা ওইখানে কি ফা,,,,করতে গেসিলেন?
:D @রাহী
শুকরিয়া @Sushovan Biswas
কি করতে গিয়েছিলাম, কঠিন এক প্রশ্ন! আপনি যেমন 'অজ্ঞাতনামা মন্তব্যকারী' তেমনি আমারও 'অজ্ঞাতনামা বিশিষ্ট ব্যক্তি' হওয়ার শখ হয়েছিল যে :)@Anonymous
aponar lekha amar onek valo lage. ami opekhai thaki kobi aponar noton post pabo. valo thakben dowa kori.
আমার লেখা ভাল লাগে জেনে আমারও ভাল লাগছে। ভাল থাকুন, আপনিও...@kamrul
Post a Comment