ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
তিনি [১] যেমনটা বলেছিলেন হও, আর হয়ে গেল! তেমনি বিরোধীদল বলল, হরতালের নামে কারাগার হও- ব্যস, হয়ে গেল!
তখন কারও জীবনের দাম যাই থাকুক, এ দিন কারও জীবন রক্ষার দায়িত্ব ঈশ্বর ব্যতীত আর কারও না।
কী এক কারণে যেন এদিন ঈশ্বরের ভারী ঘুম পায়!
এদিন বড়ো মজা, অনেক চাকুরিজীবীকে অফিস করতে হয় না। এদের অহরহ প্রার্থনা থাকে, কেন যে সারাটা বছর হরতাল থাকে না? কেবল মাস শেষে গিয়ে বেতনটা উঠিয়ে আনা। এ সত্য, ঘরমুখো মানুষ হরতালে আর কিছু না হোক জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেই যাচ্ছে। জনশক্তি বড় শক্তি! কালে কালে আমরা চীনকে ছাড়াব, ইনশাল্লাহ।
এদিন ইচ্ছা করলেই গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। আমাদের অনেকের বাড়ীর চুলায় বেড়াল ঘুমায় তাতে কী, এদিন আমাদের পায়ের শব্দে রাজপথ থরথর কাঁপে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি ভেঙ্গে ফেলা যায়, ইচ্ছা করলেই পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। আগুনের লেলিহান শিখায় আমাদের রক্তের কথা মনে পড়ে যায়। চড়চড় শব্দ করে যখন মানুষের চামড়া পুড়তে থাকে, তখন শরীরে ঝনঝন করে একটা ভাললাগা ছড়িয়ে পড়ে! মানুষের চামড়া পোড়ার গন্ধে আমাদের এখন আর গা গুলায় না! কিন্তু...
ঈশ্বর শ্বাস বন্ধ করে রাখেন!
এদিন ইচ্ছা করলেই বাবার বয়সী একজন অফিসযাত্রীর গায়ের কাপড় এক এক করে খুলে উলঙ্গ করে ফেলা যায় [২]। এক সময় তিনি অবিকল ভিক্ষুকের গলায় ভারী কাতর হয়ে হাহাকার করে বলবেন, আমাকে কেউ আল্লারওয়াস্তে একটা কাপড় দেন। আমরা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখি- আহা, তার সন্তানকেও যদি এনে এ তামাশাটা দেখাতে পারতাম! ইশ, চোখভরে এ দৃশ্য দেখার আনন্দ অন্যত্র কোথায়। অথচ...
ঈশ্বর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন!
হরতাল নামের গা ঘিনঘিনে জন্তুটা জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য দানবের। যে আমাদের এক ফোঁটা রক্ত দেখলে গা গুলাতো আজ সেই রক্তের স্রোত মাড়িয়ে নির্বিকারচিত্তে আমরা হেঁটে যাই। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের গরম গরম রক্তের স্রোতের উপরে হাঁটাটা খুব জরুরি! এদিকে গোটা দেশব্যাপী লক্ষ-লক্ষ বাচ্চাদের পরীক্ষা যে গোল্লায় গেল তাতে কী আসে যায়। গণতন্ত্র কী চাট্টিখানি কথা...।
ঈশ্বর গালে হাত দিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যান!
হরতাল নামের এ দানবটা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে, আমাদের দেশের সেরা সন্তানেরা তাদের মস্তিষ্ক পেছনে জমা রেখে আকাশপানে তাকিয়ে থাকেন।
আর লেখক কী চমৎকার করেই না লেখেন, আমরা হরতালের দিনে গাড়িতে আগুন সহ্য করে গেছি কিন্তু হরতালের আগের দিন গাড়িতে আগুন কেন? আহা, এই লেখক মহাশয় এ রকম লিখবেন না বুঝি! তার যে বাংলা একাডেমি পদকটার বড্ডো প্রয়োজন।
ঈশ্বর থুথু ফেলেন!
হরতালে একটা লাশ আমাদের বড়ো প্রয়োজন। যে হরতালে অন্তত একটা লাশ পড়বে না ওই হরতাল সম্বন্ধে মিডিয়া বলবে বা লেখা হবে, ঢিলেঢালা হরতাল।
একটা লাশ পেলে নেতাদের আনন্দ-আমোদের শেষ নাই। ঝড়ের গতিতে ছুটে যাবেন লাশের পরিবারের বাসায়, কোন একজনকে ধরে কান্না কান্না ভাব করবেন, মিডিয়া ফটাফট ছবি তুলবে।
ঈশ্বর হাঁই তোলেন।
হরতাল-অবরোধে, আমাদের ক্ষতির একশোটা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়টা মামলা হয়েছে? তবুও এ দেশে আইন করে হরতাল বন্ধ করা হবে না কারণ এ যে গণতন্ত্র হত্যার দুঃস্বপ্ন। রে পাপিষ্ট, কে সেই গণতন্ত্রের হত্যাকারী? আরে...
দেখো দিকি কান্ড, ঈশ্বর দেখি তীব্র আগ্রহ নিয়ে সেই হত্যাকারীর অপেক্ষায় থাকেন!
*হরতাল কেমন করে দানবের জন্ম দেয় তার একটা নমুনা:
ছবিসূত্র: প্রথম আলো, ৩০ এপ্রিল ২০১২ |
সহায়ক সূত্র:
১. তিনি: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_18.html
২. গণতন্ত্রের শেকল...: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_22.html
6 comments:
হরতাল দানবের জন্ম দেয় এমন *ালের তথ্য কই পেলেন?
পরিস্থিতির বিপর্যয় ডেকে এনে দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
অসাধারণ লাগলো। ধন্যবাদ সময় নিয়ে টিউন করার জন্য।
"...*ালের তথ্য..."
অপনার খুরাঘাত অন্যত্র কোথাও করলে ভাল হত! যাই হোক, অতিথি বলে কথা। আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটা মূল পোস্টের শেষে জুড়ে দিচ্ছি। আশা করছি আপনার প্রশ্নের উত্তরটা পেয়ে যাবেন @Anonymous
সহমত @Banglanews
আপনাকেও ধন্যবাদ :)@রাহি
nice............
Post a Comment