Search

Friday, June 22, 2012

পাঠকের কাঠগড়ায়

­হাসান সোহেল আমার একটা পোস্টে [১] কঠিন এক মন্তব্য করেছেন। তাঁর মন্তব্য এখানে তুলে দিচ্ছি:
"মাহমেদ ভাই, কেন ম্যানিপুলেশন করেন? মিনার মাহমুদ মারা যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে লেখা আপনার পোস্টটা ডিলিট করে ফেলেছেন। মারা গেলে কি তার সব কর্ম মাফ হয়ে যায়? লেখাচুরি হালাল হয়ে যায়? মিনার মাহমুদের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে আপনার লেখাটা থাকলে কি ক্ষতি হতো খুব?

এই পোস্টের শিরোনামে আলাউদ্দিন আল আজাদকে জ্ঞানপাপী বললেন। নিজে খবর নিয়ে দেখেছেন কি- আপনার এই পোস্ট দেয়ার ৩ বছর আগে ২০০৭ সালের বইমেলায় গতিধারা প্রকাশনী থেকে তার লেখা ‘প্যাপিরাস মতিউর’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি পড়ে দেখেন, জানবেন উনি কী করেছেন না করেননি। আচ্ছা, আলাউদ্দিন আল আজাদ তো মারা গেছেন, এই পোস্ট মুছে ফেলবেন?
একটা কথা বলি - লেখকের ক্ষমতা খুব ধারালো। সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকার সুত্র ধরে অনেক কঠিন কথা বলা যায়, একে ওকে জ্ঞানপাপী বলা যায়। কিন্তু, লেখক হিসাবে নিজে একটু খোঁজ নিয়ে লিখলে, নিজের জ্ঞানের পরিধিও বাড়ে। আর লেখা/কমেন্ট মোছার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। সম্পুরক লেখা আসতে পারে। মোছাটা অন্যায়। পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা "।

মন্তব্যের উত্তরে মন্তব্য লিখলেই হয়, পোস্টের বালাই কেন? স্বল্প পরিসরে সেই পথ মাড়াবার চেষ্টা করলাম না।
যাই হোক, হাসান সোহেল লিখেছেন: "...মাহমেদ ভাই, কেন ম্যানিপুলেশন করেন"? 
আহ, আপনার বক্তব্য, ম্যানিপুলেশন! আমি লেখায় হয়তো ভুলভাল করি। কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে সলাজে স্বীকার যাই, এতে আমরা কোনো লাজ নাই। কিন্তু জেনেশুনে...?

তিনি লিখেছেন: "মিনার মাহমুদ মারা যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে লেখা আপনার পোস্টটা ডিলিট করে ফেলেছেন। মারা গেলে কি তার সব কর্ম মাফ হয়ে যায়? লেখাচুরি হালাল হয়ে যায়? মিনার মাহমুদের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে আপনার লেখাটা থাকলে কি ক্ষতি হতো খুব"? 
এ সত্য, মিনার মাহমুদকে নিয়ে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলাম যেটা পরে ডিলিট করে ফেলেছিলাম। আত্মহত্যা করার পরে মিনার মাহমুদকে নিয়ে অন্য একটা পোস্টও দিয়েছিলাম। যেখানে আমি লিখেছিলাম [২]:
"...মিনার মাহমুদ, আপনাকে নিয়ে কঠিন এক লেখা লিখেছিলাম আমি। এই নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ নাই- আপনার পাওনা ছিল সেটা। কিন্তু আজ ওই লেখার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ওই লেখা চলে যাক ভাগাড়ে। কিন্তু এই বিশ্বাস থেকেও টলাতে পারবে না কেউ আমায়। সবাই মিনার মাহমুদ হতে পারে না- আপনি একজন 'স্বপ্নবাজ'! স্বপ্ন দেখে সবাই কিন্তু স্বপ্ন দেখাতে পারেন কেউ কেউ। আপনি সেই অল্প মানুষদের মধ্যে একজন।
মিনার মাহমুদের মত মানুষদের ধারণ করার ক্ষমতা এই অভাগা দেশের নাই। এই দেশের এখন স্বপ্নবাজ মানুষের প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন তেলবাজ মানুষের। সেইসব তেলতেলে মানুষদের ঝোলায় সব থাকবে মায় বাংলা একাডেমির পুরস্কারও...!"

তো, মিনার মাহমুদকে নিয়ে পূর্বে যে লেখাটা লিখেছিলাম সেটা কেন মুছে ফেললাম? কখনও আমার কোনো পোস্ট মুছে ফেলেছি এমনটা মনে পড়ে না। এমন কি খুবই স্পর্শকাতর একটা পোস্ট যেটা নিয়ে আমি অসম্ভব ঝামেলা-হুমকির মধ্যে পড়েছিলাম সেটা এখনও দাঁড়ি-কমাসহ দিনের আলোতেই আছে, মুছিনি। তাহলে মিনার মাহমুদকে নিয়ে লেখাটা কেনো মুছে ফেললাম?

মিনার মাহমুদ যেদিন আত্মহত্যা করেন সেদিন আমি জানতাম না। আমার সাইটে কিছু নাট-বল্টু লাগানো আছে যার কল্যাণে সাইট সম্বন্ধে কিছু বিষয় জানা সম্ভব হয়। হঠাৎ দেখি আমার সাইটে প্রচুর ট্রাফিক বেড়ে গেছে। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম লোকজন গুগলে মিনার মাহমুদ সার্চ দিয়ে আমার সাইটে চলে আসছে। কেন আসছে, তখনও বিষয়টা আমার বোধগম্য হচ্ছিল না।
পরদিন আমার এক সুহৃদ হাহাকার করে জানালেন, মিনার মাহমুদ তো আত্মহত্যা করেছেন। আমার বুকে একটা ধাক্কার মত লাগল- খুব কাছ থেকে ছুঁরি খাওয়ার মত। এই মানুষটা কেন এমনটা করলেন? কেন-কেন-কেন?

তখন যে লেখাটা লিখেছিলাম:
"...মিনার মাহমুদ, লাশকাটা ঘরে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়াটা, কাজটা কী ঠিক হলো? এটা তো কোনো কাজের কাজ হলো না! ওই মানুষটা আপনার কানে কানে কি বলে গেল? ...আরো এক বিপন্ন বিস্ময় রক্তের ভিতরে খেলা করে..."? ব্যস, আপনি বিশ্বাস করে বসলেন? ধুর বোকা!
আচ্ছা, বিপন্ন বিস্ময় কি কেবল আপনাদের রক্তের ভেতরেই খেলা করে? আহা, আমাদের করে না বুঝি? আমারো যে চলন্ত ট্রেন, ছাদে ঝোলানো পাখা বড়ো টানে! অদেখা ঘুমে যে চোখ জড়িয়ে আসে, ইচ্ছা করে না বুঝি লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ি? কে বলল আপনাকে, ইচ্ছা করে তো, কী করা- কপালের ফের! কেন করে, আমি জানি না!"
আমি একজন দুর্বল মানুষ! নইলে কি আর মিনার মাহমুদের জায়গায় নিজেকে দেখতে পাই! কেনো দেখতে পাই? আমি কি জানি, ছাই! এটা লিখে বোঝাবার ক্ষমতা কই আমার? 

আপনার  যে প্রশ্ন: "...আচ্ছা, আলাউদ্দিন আল আজাদ তো মারা গেছেন, এই পোস্ট মুছে ফেলবেন..."?
বিষাদের সঙ্গে বলি, না। আমি তো বুকে হাত দিয়ে এ প্রতিজ্ঞা করিনি যে কেবল জীবিত মানুষদের নিয়েই লিখব। মৃত কাউকে নিয়ে লিখব না!
মৃত্যু এসে গা ছুঁয়ে বলে,এই পাগল তোকে ছুঁয়ে দিলাম। মৃত্যু নামের রাস্কেলটাকে কে এড়াতে পেরেছে? কিন্তু সব মৃত্যুই কি্ একই রকম? কেউ যুদ্ধে মারা যায়, কেউ বিছানায়- সুস্পষ্ট পার্থক্য ভঙ্গিতে। মিনার মাহমুদের মৃত্যুটা আমি মেনে নিতে পারিনি? আজও! এই মৃত্যুটা আমার অদেখা ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। আমাকে অনেকখানি এলোমেলো করে দিয়ে গেছে।
তাছাড়া আরেকটা কারণও আছে। মিনার মাহমুদ আত্মহত্যা করার পরপরই লোকজনেরা মিনার মাহমুদ লিখে গুগলে সার্চ দিচ্ছিল তখন বিচিত্র কোনো এক কারণে আমার লেখাটাই প্রথমে চলে আসছিল। অজানা কারণে আমি কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমি আমার মস্তিষ্ক না, হৃদয়ের কথা শুনেছিলাম- লেখাটা মুছে ফেলেছিলাম। এটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে অন্যায়। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ বলেই অন্যায় করতেই পারি, কি বলেন! তবে এও বলি, কিছু-কিছু অন্যায়ে বড়ো সুখ!

আপনি আরও লিখেছেন:
"...এই পোস্টের শিরোনামে আলাউদ্দিন আল আজাদকে জ্ঞানপাপী বললেন। নিজে খবর নিয়ে দেখেছেন কি- আপনার এই পোস্ট দেয়ার ৩ বছর আগে ২০০৭ সালের বইমেলায় গতিধারা প্রকাশনী থেকে তার লেখা ‘প্যাপিরাস মতিউর’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি পড়ে দেখেন, জানবেন উনি কী করেছেন না করেননি..."।
আলাউদ্দিন আল আজাদকে নিয়ে আমি যে পোস্টটা দিয়েছিলাম ওখানে লেখা আছে:
"...৩৪ বছর ধরে তো কেউ ইতিহাস লিখল না। সেই ইতিহাসের কথা তো আমাকেই লিখতে হলো। ...এমনকি আমার নিজের পরিবারেও লিখবার মতো যোগ্য লোক ছিলেন। আমার দু-বোনজামাই আলাউদ্দিন আল আজাদ ও মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামানের মতো লোক ছিল। তারাও তো লিখতে পারতেন। কেউ তো লিখল না"।
এটা কার কথা? এ তো আমার কথা না। এটা বলেছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী, মিলি রহমান। এই কথার সঙ্গে মিশে ছিল তাঁর কান্না, তাঁর হাহাকার। একজন বীরশ্রেষ্ঠর স্ত্রী যখন বলেন:
"অশ্রুসজল হয়ে উঠেন তিনি। ...বলেন, বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, ছয়টা হরমোন ইনজেকশন নিতে হয়েছে আমাকে শুধু মোটা হবার জন্য। যাতে আমাকে বয়সী দেখায়। ভারিক্কি দেখায়। বয়স বাড়ানোর জন্য আমার মতো মানুষকে বাধ্য হতে হয়েছে এই ইনজেকশন নিতে। তাহলে বোঝেন অন্য মেয়েদের, নারীদের অবস্থা..."। 

অন্যদের কথা জানি না কিন্তু এই সব পড়ে আমার মাথায় সব জট পাকিয়ে যায়। আর আপনি যেটা বললেন:
"...নিজে খবর নিয়ে দেখেছেন কি- আপনার এই পোস্ট দেয়ার ৩ বছর আগে ২০০৭ সালের বইমেলায় গতিধারা প্রকাশনী থেকে তার লেখা ‘প্যাপিরাস মতিউর’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি পড়ে দেখেন, জানবেন ..."।
সলাজে বলি, না, ২০০৭ প্যাপিরাস মতিউর পড়ার সুযোগ আমার হয়নি। আপনি পারলে ওখান থেকে কাজের তথ্য আমাদের জন্য তুলে দিন না, তাহলে আমরাও জানলাম। আরেকটা কথা, আপনি বলছেন ২০০৭ সালের কথা আর আমি যেখান থেকে তথ্যগুলো নিয়েছিলাম, সাপ্তাহিক ২০০০। ওখানে মিলি রহমানের এই বক্তব্য কিন্তু ১৮ মার্চ ২০০৫ সালে ছাপা হয়েছিল। আপনার দেয়া সূত্রের ২ বছর পূর্বে। তাহলে আমি অপরাধটা কোথায় করলাম? 

আপনার ক্ষোভ:
"...একে ওকে জ্ঞানপাপী বলা যায়। কিন্তু, লেখক হিসাবে নিজে একটু খোঁজ নিয়ে লিখলে, নিজের জ্ঞানের পরিধিও বাড়ে..."। 
এর উত্তরে আমার বলার কিছু নাই কারণ বললে সেটা হবে মর্মান্তিক বেয়াকুফি...!

 সহায়ক পোস্ট:
১. জ্ঞানপাপী: আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং...: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_17.html
২. মিনার মাহমুদ এটা আপনি কি করলেন: http://www.ali-mahmed.com/2012/03/blog-post_30.html

2 comments:

Anonymous said...

হুমায়ুন আহমেদের বিরুদ্ধে অনেক লেখা লিখছেন এখন ওনর মারা যাওয়ার পর কি ওই লেখাগুলো মুছে ফেলবেন?

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

লে বাবা, আমি কোথায় এই প্রতিজ্ঞা করেছি যাদের যাদের নিয়ে লিখেছি তাঁরা মারা যাওয়ার পর তাঁদের নিয়ে সমস্ত লেখা মুছে ফেলব!

মিনার মাহমুদের বিষয়টা আমি ব্যাখ্যা করেছি। আমি নিশ্চিত, আপনি পড়ার তকলিফ করেননি। আপনি এই আশায় বসে আছেন বুঝি আপনার পড়াটা আমি পড়ে দেব?

আপনার কি ধারণা, আপনি মারা গেলে আপনার এই মন্তব্যটাও মুছে ফেলার জন্য আমি ক্লেশ স্বীকার করব! @Anonymous