Search

Tuesday, November 20, 2012

১৯৭১ সালে খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়াকে নিয়ে একটা বিভ্রান্তি প্রায়শ দেখা যায় সেটা হচ্ছে, ১৯৭১ সালে তিনি নাকি স্বইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
এই বিভ্রান্তির উৎস কী কে জানে! কেউ জেনেশুনে এমন বিভ্রান্তি ছড়াবেন এটা অন্তত আমি বিশ্বাস করি না কারণ এতে তো সত্যটা বদলে যায় না। আর কী লাভ! কার লাভ?

খালেদা জিয়াকে অপছন্দ করার মত বিষয়ের অভাব তো নাই। জামাত কানেকশন এই একটা কারণই কী যথেষ্ঠ হতে পারে না!
তাছাড়া দায়িত্বশীল, একজন বয়স্ক মহিলার জন্মদিন নিয়ে নাটকের-পর-নাটক করা হয়, ৬৬ পাউন্ড কেক কাটাকাটি করার মত খুকিসুলভ 'বাচপানা' [১]। এই সব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে কিন্তু ১৯৭১ সালে তিনি স্বইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন এটা মিথ্যাচার। তিনি এখানে-সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পাক-আর্মি তাঁকে হণ্যে হয়ে খুঁজে গ্রেফতার করেছিল এটাই সত্য।

আর তাঁর প্রগলভতার কথা এখানে আনি না কারণ দুই নেত্রীই এই ক্ষেত্রে একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যেতে মুখিয়ে থাকেন। যাদের জন্য আমরা একজন অন্যজনের মুন্ডুপাত করি, ঝাপিয়ে পড়ি কীবোর্ড-চাপাতি নিয়ে, তাঁদের কেবল এই একটা আচরণেই আমরা বোকার মত বলে উঠব, কী সর্বনাশ, কার জন্য আমরা লড়াই করছি!
যে প্রশ্নটা ওই পোস্টে করা হয়েছিল [২] সেই প্রশ্নটাই আবারও করি, সংসদে যে বিএনপি যাচ্ছে না এঁরা কী বেতন-ভাতা-সুবিধাগুলো নিচ্ছেন না? এবং আওয়ামীলীগ যখন বিরোধিদলে ছিলেন তখন তাঁরাও কী বেতন-ভাতা-সুবিধা নেননি?

যাই হোক, ১৯৭১ সালে খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে ফিরে যাই। এটা ছাপা হয়েছিল দৈনিক বাংলা, ২রা জানুয়ারী, ১৯৭২ সালে:
"বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়ক মেজর (বর্তমানে কর্ণেল) জিয়া যখন হানাদার পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদেরকে নাজেহাল করে তুলছিলেন তখন তাঁর প্রতি আক্রোশ মেটাবার ঘৃণ্য পন্থা হিসাবে খান সেনারা নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁর আত্মীয়-স্বজন পরিবার পরিজনের ওপর।
তাদের এই প্রতিহিংসার লালসা থেকে রেহাই পাননি কর্ণেল জিয়ার ভায়রা শিল্পোন্নয়ন সংস্থার সিনিয়র কো-অর্ডিনেশন অফিসার জনাব মোজাম্মেল হক।

চট্টগ্রাম শহর শত্রু  কবলিত হ্বার পর বেগম খালেদা জিয়া যখন বোরখার আবরণে আত্মগোপন করে চট্টগ্রাম থেকে স্টিমারে পালিয়ে নারায়নগঞ্জ এসে পৌঁছেন তখন জনাব মোজাম্মেল হকই তাঁকে নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকা নিয়ে আসেন। সেদিন ছিল ১৬ই মে। ঢাকা শহরে ছিল কারফিউ। নারায়নগঞ্জে সন্ধ্যা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তিনি তাঁর গাড়ীতে রেডক্রস ছাপ এঁকে ছুটে গিয়েছিলেন নারায়নগঞ্জ টার্মিনালে।

বেগম জিয়াকে নিয়ে আসার দিন দশেক পর ২৬শে মে শিল্পোন্নয়ন সংস্থায় হক নাম সম্বলিত যত অফিসার আছে সবাইকে ডেকে পাক সেনারা কর্ণেল জিয়ার সঙ্গে কারোর কোন আত্মীয়তা আছে কিনা জানতে চায়। জনাব মোজাম্মেল হক বুঝতে পারলেন বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তিনি সেখানে কর্ণেল জিয়ার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা গোপন করে অসুস্থতার অজুহাতে বাসায় ফিরে আসেন এবং অবিলম্বে বেগম জিয়াকে তাঁর বাসা থেকে সরাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন।

কিন্তু উপযুক্ত কোন স্থান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ২৮শে মে তিনি তাঁকে ধানমন্ডিতে তাঁর এক মামার বাসায় কয়েকদিনের জন্য রেখে আসেন এবং সেখান থেকে ৩রা জুন তাঁকে আবার জিওলজিক্যাল সার্ভের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জনাব মুজিবুর রহমানের বাসা এবং এরও কদিন পরে জিওলজিক্যাল সার্ভের ডেপুটি ডিরেক্টর জনাব এস কে আবদুল্লার বাসায় স্থানান্তরিত করা হয়।

এরই মধ্যে ১৩ই জুন তারিখে পাক বাহিনীর লোকেরা এসে হানা দেয় জনাব মোজাম্মেল হকের বাড়ীতে। জনৈক কর্ণেল খান এই হানাদার দলের নেতৃত্ব করছিল। কর্ণেল খান বেগম জিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং জানায় যে, এই বাড়ীতে তারা বেগম জিয়াকে দেখেছে। জনাব হকের কাছ থেকে কোন সদুত্তর না পেয়ে তাঁর দশ বছরের ছেলে ডনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডন কর্নেল খানকে পরিষ্কারভাবে জানায় যে, গত তিন বছরে সে তার খালাকে দেখেনি।
সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলে খান সেনারা তাঁর বাড়ী তল্লাশী করে। কিন্তু বেগম জিয়াকে সেখানে না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে ফিরে যায়। যাবার আগে জানিয়ে যায়, সত্য কথা না বললে আপনাকে ক্যান্টনমেন্টে নেয়া হবে।
এরপরই জনাব হক বুঝতে পারেন সর্বক্ষণ তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে। যেখানে যান সেখানেই তাঁর পেছনে লেগে থাকে ফেউ। এই অবস্থায় তিনি মায়ের অসুখের নাম করে ছুটি নেন অফিস থেকে এবং সপরিবারে ঢাকা ছেড়ে যাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন।

...উল্লেখযোগ্য যে এই দিনই জনাব এস কে আবদুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বেগম জিয়া  ও জনাব আবদুল্লাকে এবং একই সাথে জনাব মুজিবর রহমানকেও পাক-বাহিনী গ্রেফতার করে। এবং ৫ই জুলাই তারিখে জনাব মোজাম্মেল হক অফিসে কাজে যোগ দিলে সেই অফিস থেকেই ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান। ...।"
(ভাষারীতি অবিকল রাখা হয়েছে)। সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড। পৃষ্ঠা নং: (৪৭৬-৭৮)

*এই তথ্য বিএনপির আমলে বিকৃত করা হয়েছে এটা ভাবার অবকাশ নাই কারণ আমি যেখান থেকে উদ্বৃতি দিলাম এটা ছাপা হয়েছিল জুন, ১৯৮৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায়।
পুরনো যারা আমার 'কলম সহযোদ্ধা' আছেন তাঁরা জানেন। নতুনদেরকে বলি, তখন তো মুক্তিযুদ্ধের দলিল-পত্র সহজলভ্য ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখালেখি করাটা ছিল প্রায় দুঃসাধ্য। অবিকৃত কপিটা আমার কাছে রয়ে গেছে কারণ তখন মূল কপি থেকে প্রায় ১৫ হাজার পৃষ্টা ফটোকপি করে রেখে দিয়েছিলাম। আমি ওই কপিটা পেয়েছিলাম খুব বাজে অবস্থায়। বিবর্ণ, পাতা আলাদা-আলাদা, কিছু পাতা মিসিং। তারপরও তখনকার সময়ে যেটুকু পেয়েছিলাম সে এক সোনালি ভাল লাগা, অযাচিত পাওয়া! মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত অনেক লেখার [৩] সূতিকাগার এই খনি।
হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় প্রথম খন্ড নভেম্বর ১৯৮২ সাল থেকে ছাপা শুরু হয় এবং পঞ্চদশ খন্ড ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে ছাপা হয়। ষোড়শ খন্ড নির্ঘন্ট।

আপাতত আমার স্ক্যানার নাই বিধায় সেল ফোনের ক্যামেরাই ভরসা। এলাহি ভরসা...।
অষ্টম খন্ড, পৃ: ৪৭৬-৪৭৭
প্রথম খন্ডের প্রকাশকাল
১৫শ খন্ডের প্রকাশকাল

সহায়ক সূত্র:
১. এমন দেশটি...: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_6509.html
২. মজারু...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_09.html 

৩. মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত লেখালেখি...: http://tinyurl.com/37wksnh

13 comments:

Shahadat Udraji said...

সত্য প্রকাশে কারোই সঙ্কোচ থাকা উচিত নয়।
দুই দলই এখনো সভ্য হতে পারে নাই।

Unknown said...

ভালো লিখেছেন। এটা নিয়ে আমারো ভ্রান্তি ছিলো।
ধন্যবাদ ভাইয়া।

Unknown said...

shared in FB!

Zaved said...

nice post ......

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

সহমত @Shahadat Udraji


শুকরিয়া :) @Shameem AMannan

Anonymous said...

পিয়াল ভাইএর লেখা পড়ে জেনেছি খালেদা জিয়া 71 এ ফাকিস্তান সেনার কাছে সেরেন্ডার করেছিলেন। পিয়াল ভাই মুক্তিযুদ্ধের চলন্ত বিশ্বকোস উনার লেখাটাই ঠিক বলে আমিার মনে হয়।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আপনার মনে করায় আমার কী আসে যায! আপনার পিয়াল ভাইয়ের বিশ্বকোষ মাথায় নিয়ে আপনি হাঁটাহাটিঁ করেন না, আপনাকে কে মানা করছে! আপনার মত নব্য মুক্তিযোদ্ধারা আমার লেখা না-পড়লেই বরং আমি বেঁচে যাই। @Anonymous

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আপনাকেও ধন্যবাদ @ ডাঃ নিয়াজ মাওলা
ধন্যবাদ @ Zaved

Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আমি দুঃখিত। আপনার মন্তব্যটা শিষ্টাচার বহির্ভূত- অহেতুক অন্যকে আহত করা। তাই মুছে ফেলতে বাধ্য হলাম। :(

Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

কেন আরেকজনের নামে বারবার নোংরা মন্তব্য করছেন!...!

Anonymous said...

আপনি আমার কমেন্ট যত বার ডিলিট করবেন কিন্তু লাভ হইব না।এইটা আপনার অধিকার আবার আমি আমার মত জানামু এইটাও আমার অধিকার। এই চটি পিয়াল নামের আবালটা এ বালের মুক্তিযেদ্ধর গবেষক। এই শালা কাদের কাছ থিক্যা পয়সা খায় শুনবেন?আপনে বললে আমি আপনারে মেইলে জানাইতে পারি। আপনের টাস্কি লাইগা যাইব