কাদের
মোল্লাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এই গ্রহের অনেক দেশেই
এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি। ওদের একটা খুন করলেও যা, এক লাখেও তা। কিন্তু আমাদের
দেশে তো এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি না! আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড রদ করা হয়েছে
বলে তো আমরা কেউ শুনেনি!
তাই এই শাস্তি নিয়ে দেশ উত্তাল। খানিকটা ভুল বললাম। তরুণেরা উত্তাল! তাঁদের একটাই কথা, ফাঁসির দাবী। কিন্তু শীতল মস্তিষ্কে বিষয়টা নিয়ে ভাবলে বোঝা যাবে, প্রচলিত আইনে এই রায়কে এখন আর ফাঁসিতে রূপান্তর করা সম্ভব না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের আইনটিতে আপিলে শাস্তি বাড়ার সুযোগ নেই! কেবল কাদের মোল্লা আপিল করলে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের আওতায় আপিল বিভাগ সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দিতে পারেন কিন্তু এ আশাই শেষ কথা না।
কেবল তুরুপের একটাই তাস,
যে মামলায় (চতুর্থ অভিযোগ) কাদের মোল্লাকে বেকসুর খালাস করে দেয়া হয়েছে সেটা নিয়ে আপিলে যাওয়া। কিন্তু ওখানে ফাঁসীর রায় আসবেই এমনটা বলা চলে না। যদিও কেউ কেউ আমাদেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন, আশার কথা শোনাচ্ছেন। তাহলে তরুণেরা এমন উত্তাল কেন...? তরুণদের কথা আমি বারবার বলছি এই কারণে এঁরাই গোটা দাবার ছকটা উল্টে দিয়েছেন।
যেসব অন্যায়ের কারণে তার এই শাস্তি হয়েছে তা যথার্থ বলে মনে করা হচ্ছে না। যদি এমন হতো কাদের মোল্লা বেকসুর খালাস পেয়েছে তখন হতো সেটা অন্য কথা। কিন্তু কাদের মোল্লার অপরাধের ছয়টা অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অভিযোগের জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেয়া যেত কিন্তু দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি এর স্পষ্ট উত্তর কেউ দিতে পারছেন না!
এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, ৩৫৫ জন মানুষকে হত্যার সঙ্গে কাদের মোল্লা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। আমাদের প্রচলিত আইনে যেখানে একটি খুনের জন্য ফাঁসির আদেশ হয় সেখানে শত-শত খুন করেও একজন এমন ন্যূনতম শাস্তি পায় কেমন করে?
ষষ্ঠ অভিযোগে আমরা দেখতে পাই, খুনের সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলীর ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের সঙ্গেও কাদের মোল্লা জড়িত ছিল। হযরত আলীর আরেক মেয়ে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি এখনও বেঁচে আছেন এবং অকাট্য সাক্ষী দিয়েছেন। যা আদালতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিতও হয়েছে। তাহলে?
কাদের মোল্লার এই হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ২ বছরের শিশুও আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশুদের পর্যন্ত কেমন হিংস্রতার সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল তা আজও আমাদেরকে শিউরে দেয়। এরা যোদ্ধা ছিল না, ছিল সাইকোপ্যাথ [১]:
"...এক পাক আর্মি ঘুমন্ত একটি বছর দেড়েকের বাচ্চার বুকে বেয়ানেট ঢুকিয়ে দিল। তারপর বেয়নেটের আগায় ঝুলিয়ে রাখলো বাচ্চাটার কচি দেহ। সেই অবুঝ শিশুর হাড় গোড়গুলো রক্ত বেয়ে পড়ছে পাক আর্মিটির হাতে ধরা রাইফেল থেকে...।"
তো আইন, এই বিচার সাধারণ আমাদের জন্য কী বার্তা দিল? অনেকগুলো খুন করেও পার পাওয়া যায়! তাহলে গোলাম আযমকে তো আমরা ধোয়া তুলসিপাতা হিসাবে দেখব কারণ তাকে সরাসরি হত্যা-ধর্ষণের সঙ্গে হাতেনাতে হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে না কিন্তু তাই বলে কী তার উদ্যোগ-আচরণ-বক্তব্যগুলো উধাও হবে, অসত্য হয়ে যাবে [২], [৩]? আর বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই গোলাম আযমের সেই দাম্ভিক বক্তব্য, "সরকার আগে বিশেষ আদালত গঠন করুক না, তারপর দেখব, আমাকে সেখানে নেয়ার ক্ষমতা রাখে কিনা...।"[৪]...। আমাদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ সম্বন্ধে তার মনোভাব? [৫] আহা, বেকুব আর পেটে ক্ষুধা ব্যতীত কে নিজের হাতে খুন করে, বুদ্ধিমানেরা তো নিজ হাতে খুন করে না, খুন করায়। তাই বলে কী এরা আইনের আওতায় আসবে না! তাহলে তো খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত শাহআলমপুত্র সানবীরকে মাথায় তুলে রাখতে হয়।
আরেকটা বিষয় আমাকে বিস্মিত করেছে সেটা হচ্ছে, অনেকে বলছেন (এর মধ্যে অনেক নামকরা বুদ্ধিমানও আছেন), তারা অবলীলায় বলছেন, রায় আমাদের পক্ষে আসেনি। আবার কেউ বলছেন, রায় আমাদের মনের মত হয়নি। এখানে আমি খানিকটা অমত পোষণ করি। রায় পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? আদালত তো অন্ধ। সাক্ষী-প্রমাণের নামে আদালতের চোখ খুলে দেয়া হয়। আদালতকে হাতে ধরে ধরে চেনানো হয় এটা চেয়ার-টেবিল, এটা মানুষ।
যেখানে ৬টির মধ্যে পাঁচটিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মানুষটা দোষী, সেই মানুষটা কাদের মোল্লা নাকি ছলিমোল্লা সেটাও আইনের কাছে বিবেচ্য না। আইন চলে তার নিজস্ব গতিতে এখানে আবেগের স্থান কোথায়! ধরা যাক, হাজার-লাখ মানুষ বললেন, শাহবাগে (যেটা এখন প্রজন্ম চত্বর) কাদের মোল্লাকে আমাদের হাতে তুলে দিন। কিন্তু বিষাদের সঙ্গে বলতে হয়, আইনের আওতায় থেকে তো এটা সম্ভব না।
কিন্তু প্রচলিত এই আইনে তার ফাঁসি হওয়ার কথা থাকলে ফাঁসি হবে, ব্যস। রায় কারো পক্ষে গেল নাকি বিপক্ষে সেটা তো এখানে বিবেচ্য না। রায় হবে, আইন থাকবে কেবল ন্যায়ের পক্ষে। এখানে ন্যায় কোথায়? আমার সাফ কথা, এখানে ইনজাস্টিস হয়েছে- স্রেফ অন্যায়। এমন একটা কুৎসিত অন্যায় যে অন্যায় আমাদেরকে অতি কুৎসিত একটা বার্তা দিল।
অথচ এই আদালতই বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগের মধ্যে সাতটিতেই অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। রণজিৎ নাথকে নির্যাতন, সুধাংশু মোহন রায়, মাধব চন্দ্র বিশ্বাস, চিত্তরঞ্জন দাসকে হত্যা, দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণ, গুরুদাসের মেয়েকে অপহরণ। মোটামুটি এই সব অপরাধের কারণে তার ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
একটা শিশুর কাছ থেকে আমি জানতে আগ্রহী এই দুজনের মধ্যে কার অপরাধের পাল্লা ভারী?
তারপরও আমি বলব, কাদের মোল্লা নামের এই মানুষটাকে এখন আর সন্দেহভাজন নয়, অপরাধি, তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। এটাও একটা বিজয়। কিন্তু যাবজ্জীবন নিয়ে অন্য দেশে শঙ্কা না-থাকলেও আমাদের দেশে শঙ্কার শেষ নেই কারণ...। আমাদের দেশে কালে কালে দয়াবান প্রেসিডেন্ট আসেন বলেই তাহেরপুত্র বিপ্লব খুন করেও মাফ পেয়ে যায়। আমি বুকে পাথর বেঁধে এই সাইটের ব্যানারে লিখেছিলাম,
পালিয়ে
হোক বা যেকোনো ভাবে বেঁচে থাকাটাই আসল, এরপর সময়-সুযোগে বের হয়ে আসা
ডালভাত। আমাদের দেশের অতি চালু চল, কে খুন করল কে ধর্ষণ তাতে কিছু আসে যায়
না রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে গলায় ফুলের মালা পরে
খুনি-ধর্ষক হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসবে। আর যে সময়টা কারাগারে থাকবে সেই সময়টা
জামাই আদরে থাকবে। কেবল পশ্চাদদেশে ফোঁড়া হয়েছে এই অজুহাতে হাসপাতালে চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়-সেলফোন-'আন্ডাপান্ডা'
সহযোগি সহযোগে কাটিয়ে দেয়া। তাই আমরা যাবজ্জীবন বিষয়টা ঘোর সন্দেহের চোখে
দেখব এতে অবাক হওয়ার কী আছে! যাবজ্জীবন কারাদন্ডটাকে আমরা কোনো শাস্তি
হিসাবে গোণায় ধরতে পারছি না। অনুমান করি, কাদের মোল্লা 'ভি' চিহ্নটা
আগেভাগেই দেখিয়ে ফেলেছেন।
আর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নামের এই বিচারালয়কে আমাদের সরকারি দলের মন্ত্রী বাহাদুরগণ একটা খেলো জিনিস-রাজনৈতিক বিচারালয় বানাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তারা যে সফল হননি এটা বলা যাবে না। অন্তত অনেকের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়ার বিষয়ে যথেষ্ঠ সফলতা দেখিয়েছেন। বিরোধিদলের বিষয়টা আমরা বুঝি কিন্তু সরকারি দলের লোকজনের এমনটা করার কারণ ক? মন্ত্রী হলেই কী মস্তিষ্ক ফ্লাওয়ার-ভাসে জমা রাখতে হয়!
নইলে এরা দিনের-পর-দিন কেন এটা বকে গেছেন আজ রায়-কাল রায়, সাড়ে সেতেরো ডিসেম্বর রায় হবে। এটা বলার এরা কে? এরা এটা কবে বুঝবেন যে বিচার প্রক্রিয়াটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা একটা বিচারিক বিষয়। এখানে রাজনৈতিক লোকজনের নাক গলাবার কোনো অবকাশ নেই। এরা যে অপূরণীয় ক্ষতিটা করেছেন স্রেফ কফিনে পেরেক ঠোকা। আন্তর্জাতিক একটা ট্রাইবুন্যালকে রাজনৈতিক ট্রাইবুন্যালের খোলস পরাবার চেষ্টা করা- অহেতুক বিতর্কে উসকে দেয়া। এমন আচরণ কেউ করতে পারে এটা ভাবাই যায় না!
আমার
জানার ক্ষমতা খুবই সীমিত কিন্তু আমার জানার খুব আগ্রহ, নাৎসি বাহিনী কী
এখনও জার্মানিতে নিবন্ধিত দল হিসাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে বা পৃথিবী অন্য
কোনো দেশে ঘৃণিত কোনো দল? তাহলে বাংলাদেশে কেন? আমরাই কী এই গ্রহের সবচেয়ে
হৃদয়বান জাতি!
১৯১৯ সালে ব্রিটিশরা জালিয়ানওয়ালাবাগে যে খুনগুলো করেছিল ২০১৩ সালে এসেও তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে অথচ এই দেশে থেকেও ১৯৭১ সালের অন্যায়গুলো জামাত আজঅবধি স্বীকার করেনি!
আমার সাফ কথা, যে দলটি এই দেশের অস্তিত্ব মিটিয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল, এই দেশকে যারা চায়নি, এখনও স্বীকার করে নেয়নি। যাদের স্পর্ধা এমন, এই দেশে থেকে, এই দেশের খেয়েপরে, এই দেশের সেরা সন্তান নামের বয়স্ক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে লাথি মারতে পারে [৬] (আমার জানার ভুল না থাকলে, ওই বীরপুরুষকে আদৌ ধরা হয়েছে বলে তো শুনিনি) তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এই দলটি নিষিদ্ধ করা হোক, যত দ্রুত সম্ভব...।
***
(দু-দিন হলো এই লেখাটা শুরু করেছিলাম কিন্তু লিখতে পারছিলাম না। প্রায় দু-মাস ধরে একটা অক্ষরও লিখিনি। খানিক সন্দেহ হচ্ছিল, লেখালেখি কী ভুলে গেলাম। কেন? সেটার আলোচনা এখানে জরুরি না।
কিন্তু আজ দেশটিভির লাইভ অনুষ্ঠানে যখন প্রজন্ম চত্বরে (শাহবাগ) তরুণদের লাগানো আগুন দেখছিলাম তখন চোখের পানি কী বাঁধ মানে, শা...। আবারও সেই বিশ্বাস ফিরে এলো, পারলে কেবল পারবে এই তরুণেরাই, যাদের চোখভরা কেবল স্বপ্ন, অদেখা স্বপ্ন। কোথাও বলেছিলাম, 'ব্লগিং-তরুণ-গতি-স্রোত হচ্ছে সমার্থক'। দেখে ভাল লাগল, জাফর ইকবালও যেটা স্বীকার করলেন, ক্ষমাও চাইলেন।
আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, সাদাচুলের বুড়োদের দিয়ে স্বপ্নের দৌড় হয় না যাদের জটিল সব একগাদা অসুখের সঙ্গে বসবাস। এর সঙ্গে যোগ হয় সীমাহীন লোভের লকলকে জিভ!
করুণা হয় বিএনপি সমর্থক সেইসব তরুণদের। যারা দলের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। আফসোস, তারুন্যস্রোত আটকে থাকে কেমন করে!
যথারীতি মঞ্চে, এখানেও কতিপয় লোভের চকচকে মুখগুলো দেখলাম। ইশ্বর, আম-কাঠালের মাছির মত এরা এখানেও, ঠিক-ঠিক টের পেয়ে গেছে!
পানিতে ছাপাছাপি চোখে এদের দেখে কোন শ্লা...! আমি কেবল দেখছিলাম...দেখছিলাম। হতাশার কোল বেয়ে আপ্রাণ চেষ্টায় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ভাবছিলাম। সব কিছুর সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধও ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল, স্বপক্ষের-বিপক্ষের শক্তির রাজনীতির খেলায়। ঘুরেফিরে অল্প ক-জনের বীরত্ব নিয়েই আমরা কেবল দিনের-পর-দিন চর্বিতচর্বণ করে গেছি। যেন এরাই কেবল সমস্ত কৃতিত্বের অধিকারী। কী অবলীলায়ই না আমরা বিস্মৃত হই, একজন ভাগিরথীর কথা [৭], একজন মশিহুর রহমানের কথা [৮]।
আমি এই সব রাজনীতির জটিলতা বুঝি না, কেবল বুঝি, 'একজন মা-একটি বর্ণ-একটি যুদ্ধ-একটি পতাকা-একটি দেশ'।
বুকে হাত দিয়ে বলি, আমি লেখক নই তবুও এতোটা কাল ধরে রাতজাগা ভোরের সেইবসব কষ্ট, শব্দের অপচয় করেছি বলে যে আক্ষেপ ছিল আজ আর তা নাই। আমার লেখা একটি শব্দও যদি কোনো তরুণকে ভাবিয়ে থাকে সেটাই আমার হাতে আঁজলাভরা শিউলি ফুল। কতটা কাল ভোর দেখা হয় না, কতদিন শিউলি ফুল দেখি না...।
আজ আমি সেইসব তরুণদের কাছে নতজানু হয়ে বলি, এই দেশটা কারো বাপ-দাদার না, আপনাদের মত যারা দেশকে ভালোবাসবে কেবল তাদের...।)
*আরেকটা কথা, এখন, আজ (০৯.০২.২০১৩) যে বলা হচ্ছে আপিলের সুযোগ রাখা হবে এটা আগে থেকেই রাখা হলো না কেন? আমরা কী ধরেই নিয়েছিলাম, একজন বিচারকের রায়-অভিমত-দৃষ্টিভঙ্গিই কী শেষ কথা? আহা, তিনি তো ঈশ্বর না যে ভুল করতে পারেন না [৯]?
**এই আন্দোলনের নিয়ে অন্য রকম এক শঙ্কার কথা বলছেন, রাসেল পারভেজ:
"এ জমায়েত আরও বাড়বে, সে সময়ের কথা ভেবেই একটা কাঠামোতে আন্দোলনকে বেধে ফেলতে হবে। আর কাঠামোটা মূলত কয়েকটি সুস্পষ্ট ঘোষণা এবং সে ঘোষণা কিংবা দাবী আদায়ের পদ্ধতিতে স্পষ্ট অহিংসতার দাবী জানানোর ভেতরে সম্পূর্ণ হবে। মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের চেতনা ছিলো সম্পূর্ণ অহিংস, অহিংস অসহযোগের প্রস্তুতি মানসিক ভাবে বাঙালী জাতির ভেতরে আছে কিন্তু এরপরও কোনো কোনো উৎসাহী মানুষেরা এমনটা করে ফেলতে পারে।
এর কৃতিত্ব নিতে উদগ্রীব মানুষেরা মিডিয়ার সামনে কলার নাচিয়ে আমিও ব্লগার বলে আনন্দিত ও নায়ক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যতটা উৎসাহ আনন্দে জড়িয়ে পড়ছে যেকোনো ভ্রান্তি কিংবা দুর্বলতার দায় এড়াতেও তাদের সমান উৎসাহ থাকবে। এ মুহূর্তে ব্লগাররা যে সম্মান পাচ্ছে এক মুহূর্তের ভুলে সে সম্মান ধুলিস্যাত হয়ে নিতান্ত খলনায়কে পরিণত হলেও হতে পারে তাদের। সেটা বাংলাদেশের তাবত অনলাইন এক্টিভিস্টদের উপরে এসে পরবে।
বারবার প্রতিটি সমাবেশ থেকে ঘোষণা হওয়া জরুরী আমাদের সম্মিলিত দাবিগুলো, এবং একই সাথে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন আমাদের আন্দোলনের ধরণটাই স্বত:স্ফুর্ত অহিংস অবস্থান আন্দোলন। এই নৈতিক স্পিরিটের বাইরে গিয়ে যেকোনো হঠকারিতার দায়ভার এই মানুষেরা নেবে না।"
***যাক, অবশেষে আদালতের রায় দেওয়া নিয়ে মন্ত্রীরা যে অনবরত বকে যান এই কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বক্তব্য তলব করলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৫.০২.১৩)
তাই এই শাস্তি নিয়ে দেশ উত্তাল। খানিকটা ভুল বললাম। তরুণেরা উত্তাল! তাঁদের একটাই কথা, ফাঁসির দাবী। কিন্তু শীতল মস্তিষ্কে বিষয়টা নিয়ে ভাবলে বোঝা যাবে, প্রচলিত আইনে এই রায়কে এখন আর ফাঁসিতে রূপান্তর করা সম্ভব না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের আইনটিতে আপিলে শাস্তি বাড়ার সুযোগ নেই! কেবল কাদের মোল্লা আপিল করলে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের আওতায় আপিল বিভাগ সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দিতে পারেন কিন্তু এ আশাই শেষ কথা না।
কেবল তুরুপের একটাই তাস,
যে মামলায় (চতুর্থ অভিযোগ) কাদের মোল্লাকে বেকসুর খালাস করে দেয়া হয়েছে সেটা নিয়ে আপিলে যাওয়া। কিন্তু ওখানে ফাঁসীর রায় আসবেই এমনটা বলা চলে না। যদিও কেউ কেউ আমাদেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন, আশার কথা শোনাচ্ছেন। তাহলে তরুণেরা এমন উত্তাল কেন...? তরুণদের কথা আমি বারবার বলছি এই কারণে এঁরাই গোটা দাবার ছকটা উল্টে দিয়েছেন।
যেসব অন্যায়ের কারণে তার এই শাস্তি হয়েছে তা যথার্থ বলে মনে করা হচ্ছে না। যদি এমন হতো কাদের মোল্লা বেকসুর খালাস পেয়েছে তখন হতো সেটা অন্য কথা। কিন্তু কাদের মোল্লার অপরাধের ছয়টা অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অভিযোগের জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেয়া যেত কিন্তু দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি এর স্পষ্ট উত্তর কেউ দিতে পারছেন না!
এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, ৩৫৫ জন মানুষকে হত্যার সঙ্গে কাদের মোল্লা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। আমাদের প্রচলিত আইনে যেখানে একটি খুনের জন্য ফাঁসির আদেশ হয় সেখানে শত-শত খুন করেও একজন এমন ন্যূনতম শাস্তি পায় কেমন করে?
ষষ্ঠ অভিযোগে আমরা দেখতে পাই, খুনের সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলীর ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের সঙ্গেও কাদের মোল্লা জড়িত ছিল। হযরত আলীর আরেক মেয়ে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি এখনও বেঁচে আছেন এবং অকাট্য সাক্ষী দিয়েছেন। যা আদালতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিতও হয়েছে। তাহলে?
কাদের মোল্লার এই হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ২ বছরের শিশুও আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশুদের পর্যন্ত কেমন হিংস্রতার সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল তা আজও আমাদেরকে শিউরে দেয়। এরা যোদ্ধা ছিল না, ছিল সাইকোপ্যাথ [১]:
"...এক পাক আর্মি ঘুমন্ত একটি বছর দেড়েকের বাচ্চার বুকে বেয়ানেট ঢুকিয়ে দিল। তারপর বেয়নেটের আগায় ঝুলিয়ে রাখলো বাচ্চাটার কচি দেহ। সেই অবুঝ শিশুর হাড় গোড়গুলো রক্ত বেয়ে পড়ছে পাক আর্মিটির হাতে ধরা রাইফেল থেকে...।"
তো আইন, এই বিচার সাধারণ আমাদের জন্য কী বার্তা দিল? অনেকগুলো খুন করেও পার পাওয়া যায়! তাহলে গোলাম আযমকে তো আমরা ধোয়া তুলসিপাতা হিসাবে দেখব কারণ তাকে সরাসরি হত্যা-ধর্ষণের সঙ্গে হাতেনাতে হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে না কিন্তু তাই বলে কী তার উদ্যোগ-আচরণ-বক্তব্যগুলো উধাও হবে, অসত্য হয়ে যাবে [২], [৩]? আর বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই গোলাম আযমের সেই দাম্ভিক বক্তব্য, "সরকার আগে বিশেষ আদালত গঠন করুক না, তারপর দেখব, আমাকে সেখানে নেয়ার ক্ষমতা রাখে কিনা...।"[৪]...। আমাদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ সম্বন্ধে তার মনোভাব? [৫] আহা, বেকুব আর পেটে ক্ষুধা ব্যতীত কে নিজের হাতে খুন করে, বুদ্ধিমানেরা তো নিজ হাতে খুন করে না, খুন করায়। তাই বলে কী এরা আইনের আওতায় আসবে না! তাহলে তো খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত শাহআলমপুত্র সানবীরকে মাথায় তুলে রাখতে হয়।
আরেকটা বিষয় আমাকে বিস্মিত করেছে সেটা হচ্ছে, অনেকে বলছেন (এর মধ্যে অনেক নামকরা বুদ্ধিমানও আছেন), তারা অবলীলায় বলছেন, রায় আমাদের পক্ষে আসেনি। আবার কেউ বলছেন, রায় আমাদের মনের মত হয়নি। এখানে আমি খানিকটা অমত পোষণ করি। রায় পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? আদালত তো অন্ধ। সাক্ষী-প্রমাণের নামে আদালতের চোখ খুলে দেয়া হয়। আদালতকে হাতে ধরে ধরে চেনানো হয় এটা চেয়ার-টেবিল, এটা মানুষ।
যেখানে ৬টির মধ্যে পাঁচটিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মানুষটা দোষী, সেই মানুষটা কাদের মোল্লা নাকি ছলিমোল্লা সেটাও আইনের কাছে বিবেচ্য না। আইন চলে তার নিজস্ব গতিতে এখানে আবেগের স্থান কোথায়! ধরা যাক, হাজার-লাখ মানুষ বললেন, শাহবাগে (যেটা এখন প্রজন্ম চত্বর) কাদের মোল্লাকে আমাদের হাতে তুলে দিন। কিন্তু বিষাদের সঙ্গে বলতে হয়, আইনের আওতায় থেকে তো এটা সম্ভব না।
কিন্তু প্রচলিত এই আইনে তার ফাঁসি হওয়ার কথা থাকলে ফাঁসি হবে, ব্যস। রায় কারো পক্ষে গেল নাকি বিপক্ষে সেটা তো এখানে বিবেচ্য না। রায় হবে, আইন থাকবে কেবল ন্যায়ের পক্ষে। এখানে ন্যায় কোথায়? আমার সাফ কথা, এখানে ইনজাস্টিস হয়েছে- স্রেফ অন্যায়। এমন একটা কুৎসিত অন্যায় যে অন্যায় আমাদেরকে অতি কুৎসিত একটা বার্তা দিল।
অথচ এই আদালতই বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগের মধ্যে সাতটিতেই অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। রণজিৎ নাথকে নির্যাতন, সুধাংশু মোহন রায়, মাধব চন্দ্র বিশ্বাস, চিত্তরঞ্জন দাসকে হত্যা, দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণ, গুরুদাসের মেয়েকে অপহরণ। মোটামুটি এই সব অপরাধের কারণে তার ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
একটা শিশুর কাছ থেকে আমি জানতে আগ্রহী এই দুজনের মধ্যে কার অপরাধের পাল্লা ভারী?
তারপরও আমি বলব, কাদের মোল্লা নামের এই মানুষটাকে এখন আর সন্দেহভাজন নয়, অপরাধি, তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। এটাও একটা বিজয়। কিন্তু যাবজ্জীবন নিয়ে অন্য দেশে শঙ্কা না-থাকলেও আমাদের দেশে শঙ্কার শেষ নেই কারণ...। আমাদের দেশে কালে কালে দয়াবান প্রেসিডেন্ট আসেন বলেই তাহেরপুত্র বিপ্লব খুন করেও মাফ পেয়ে যায়। আমি বুকে পাথর বেঁধে এই সাইটের ব্যানারে লিখেছিলাম,
ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
আর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নামের এই বিচারালয়কে আমাদের সরকারি দলের মন্ত্রী বাহাদুরগণ একটা খেলো জিনিস-রাজনৈতিক বিচারালয় বানাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তারা যে সফল হননি এটা বলা যাবে না। অন্তত অনেকের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়ার বিষয়ে যথেষ্ঠ সফলতা দেখিয়েছেন। বিরোধিদলের বিষয়টা আমরা বুঝি কিন্তু সরকারি দলের লোকজনের এমনটা করার কারণ ক? মন্ত্রী হলেই কী মস্তিষ্ক ফ্লাওয়ার-ভাসে জমা রাখতে হয়!
নইলে এরা দিনের-পর-দিন কেন এটা বকে গেছেন আজ রায়-কাল রায়, সাড়ে সেতেরো ডিসেম্বর রায় হবে। এটা বলার এরা কে? এরা এটা কবে বুঝবেন যে বিচার প্রক্রিয়াটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা একটা বিচারিক বিষয়। এখানে রাজনৈতিক লোকজনের নাক গলাবার কোনো অবকাশ নেই। এরা যে অপূরণীয় ক্ষতিটা করেছেন স্রেফ কফিনে পেরেক ঠোকা। আন্তর্জাতিক একটা ট্রাইবুন্যালকে রাজনৈতিক ট্রাইবুন্যালের খোলস পরাবার চেষ্টা করা- অহেতুক বিতর্কে উসকে দেয়া। এমন আচরণ কেউ করতে পারে এটা ভাবাই যায় না!
ছবি ঋণ: ইটিভি |
১৯১৯ সালে ব্রিটিশরা জালিয়ানওয়ালাবাগে যে খুনগুলো করেছিল ২০১৩ সালে এসেও তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে অথচ এই দেশে থেকেও ১৯৭১ সালের অন্যায়গুলো জামাত আজঅবধি স্বীকার করেনি!
আমার সাফ কথা, যে দলটি এই দেশের অস্তিত্ব মিটিয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল, এই দেশকে যারা চায়নি, এখনও স্বীকার করে নেয়নি। যাদের স্পর্ধা এমন, এই দেশে থেকে, এই দেশের খেয়েপরে, এই দেশের সেরা সন্তান নামের বয়স্ক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে লাথি মারতে পারে [৬] (আমার জানার ভুল না থাকলে, ওই বীরপুরুষকে আদৌ ধরা হয়েছে বলে তো শুনিনি) তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এই দলটি নিষিদ্ধ করা হোক, যত দ্রুত সম্ভব...।
***
(দু-দিন হলো এই লেখাটা শুরু করেছিলাম কিন্তু লিখতে পারছিলাম না। প্রায় দু-মাস ধরে একটা অক্ষরও লিখিনি। খানিক সন্দেহ হচ্ছিল, লেখালেখি কী ভুলে গেলাম। কেন? সেটার আলোচনা এখানে জরুরি না।
কিন্তু আজ দেশটিভির লাইভ অনুষ্ঠানে যখন প্রজন্ম চত্বরে (শাহবাগ) তরুণদের লাগানো আগুন দেখছিলাম তখন চোখের পানি কী বাঁধ মানে, শা...। আবারও সেই বিশ্বাস ফিরে এলো, পারলে কেবল পারবে এই তরুণেরাই, যাদের চোখভরা কেবল স্বপ্ন, অদেখা স্বপ্ন। কোথাও বলেছিলাম, 'ব্লগিং-তরুণ-গতি-স্রোত হচ্ছে সমার্থক'। দেখে ভাল লাগল, জাফর ইকবালও যেটা স্বীকার করলেন, ক্ষমাও চাইলেন।
আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, সাদাচুলের বুড়োদের দিয়ে স্বপ্নের দৌড় হয় না যাদের জটিল সব একগাদা অসুখের সঙ্গে বসবাস। এর সঙ্গে যোগ হয় সীমাহীন লোভের লকলকে জিভ!
করুণা হয় বিএনপি সমর্থক সেইসব তরুণদের। যারা দলের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। আফসোস, তারুন্যস্রোত আটকে থাকে কেমন করে!
যথারীতি মঞ্চে, এখানেও কতিপয় লোভের চকচকে মুখগুলো দেখলাম। ইশ্বর, আম-কাঠালের মাছির মত এরা এখানেও, ঠিক-ঠিক টের পেয়ে গেছে!
পানিতে ছাপাছাপি চোখে এদের দেখে কোন শ্লা...! আমি কেবল দেখছিলাম...দেখছিলাম। হতাশার কোল বেয়ে আপ্রাণ চেষ্টায় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ভাবছিলাম। সব কিছুর সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধও ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল, স্বপক্ষের-বিপক্ষের শক্তির রাজনীতির খেলায়। ঘুরেফিরে অল্প ক-জনের বীরত্ব নিয়েই আমরা কেবল দিনের-পর-দিন চর্বিতচর্বণ করে গেছি। যেন এরাই কেবল সমস্ত কৃতিত্বের অধিকারী। কী অবলীলায়ই না আমরা বিস্মৃত হই, একজন ভাগিরথীর কথা [৭], একজন মশিহুর রহমানের কথা [৮]।
আমি এই সব রাজনীতির জটিলতা বুঝি না, কেবল বুঝি, 'একজন মা-একটি বর্ণ-একটি যুদ্ধ-একটি পতাকা-একটি দেশ'।
বুকে হাত দিয়ে বলি, আমি লেখক নই তবুও এতোটা কাল ধরে রাতজাগা ভোরের সেইবসব কষ্ট, শব্দের অপচয় করেছি বলে যে আক্ষেপ ছিল আজ আর তা নাই। আমার লেখা একটি শব্দও যদি কোনো তরুণকে ভাবিয়ে থাকে সেটাই আমার হাতে আঁজলাভরা শিউলি ফুল। কতটা কাল ভোর দেখা হয় না, কতদিন শিউলি ফুল দেখি না...।
আজ আমি সেইসব তরুণদের কাছে নতজানু হয়ে বলি, এই দেশটা কারো বাপ-দাদার না, আপনাদের মত যারা দেশকে ভালোবাসবে কেবল তাদের...।)
*আরেকটা কথা, এখন, আজ (০৯.০২.২০১৩) যে বলা হচ্ছে আপিলের সুযোগ রাখা হবে এটা আগে থেকেই রাখা হলো না কেন? আমরা কী ধরেই নিয়েছিলাম, একজন বিচারকের রায়-অভিমত-দৃষ্টিভঙ্গিই কী শেষ কথা? আহা, তিনি তো ঈশ্বর না যে ভুল করতে পারেন না [৯]?
**এই আন্দোলনের নিয়ে অন্য রকম এক শঙ্কার কথা বলছেন, রাসেল পারভেজ:
"এ জমায়েত আরও বাড়বে, সে সময়ের কথা ভেবেই একটা কাঠামোতে আন্দোলনকে বেধে ফেলতে হবে। আর কাঠামোটা মূলত কয়েকটি সুস্পষ্ট ঘোষণা এবং সে ঘোষণা কিংবা দাবী আদায়ের পদ্ধতিতে স্পষ্ট অহিংসতার দাবী জানানোর ভেতরে সম্পূর্ণ হবে। মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের চেতনা ছিলো সম্পূর্ণ অহিংস, অহিংস অসহযোগের প্রস্তুতি মানসিক ভাবে বাঙালী জাতির ভেতরে আছে কিন্তু এরপরও কোনো কোনো উৎসাহী মানুষেরা এমনটা করে ফেলতে পারে।
এর কৃতিত্ব নিতে উদগ্রীব মানুষেরা মিডিয়ার সামনে কলার নাচিয়ে আমিও ব্লগার বলে আনন্দিত ও নায়ক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যতটা উৎসাহ আনন্দে জড়িয়ে পড়ছে যেকোনো ভ্রান্তি কিংবা দুর্বলতার দায় এড়াতেও তাদের সমান উৎসাহ থাকবে। এ মুহূর্তে ব্লগাররা যে সম্মান পাচ্ছে এক মুহূর্তের ভুলে সে সম্মান ধুলিস্যাত হয়ে নিতান্ত খলনায়কে পরিণত হলেও হতে পারে তাদের। সেটা বাংলাদেশের তাবত অনলাইন এক্টিভিস্টদের উপরে এসে পরবে।
বারবার প্রতিটি সমাবেশ থেকে ঘোষণা হওয়া জরুরী আমাদের সম্মিলিত দাবিগুলো, এবং একই সাথে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন আমাদের আন্দোলনের ধরণটাই স্বত:স্ফুর্ত অহিংস অবস্থান আন্দোলন। এই নৈতিক স্পিরিটের বাইরে গিয়ে যেকোনো হঠকারিতার দায়ভার এই মানুষেরা নেবে না।"
***যাক, অবশেষে আদালতের রায় দেওয়া নিয়ে মন্ত্রীরা যে অনবরত বকে যান এই কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বক্তব্য তলব করলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৫.০২.১৩)
সহায়ক সূত্র:
১. এরা যোদ্ধা ছিল না, ছিল সাইকোপ্যাথ...: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_09.html
২. মুক্তিযুদ্ধ গোলাম আযমের চোখে: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html
৩. গোলাম আযম এবং মুক্তিযুদ্ধ: http://www.ali-mahmed.com/2007/07/blog-post_3179.html
৪. একজন গোলাম আযম, একটি পতাকা: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8265.html
৫. বীরশ্রেষ্ঠ এবং গোলাম আযম: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_28.html
৬. মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি মারা...: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_13.html
৭. একজন ভাগিরথী...: http://www.ali-mahmed.com/2012/01/blog-post_16.html
৮. মশিহুর রহমান...: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_06.html
৯. জজ সাহেব...: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_03.html
5 comments:
আপনার একটা কথা ছিল ইন্টারনেট ব্লোগিং নিয়ে যেটা এমন শক্তি যেটা দেশ কাপিয়ে দেবে এবং রাষ্ট্রিয় কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। অনেক খুজলাম কিন্তু কোথায় লেখাটা খুজে পেলাম না। আজ আপনার কাছে স্বীকার করলাম যখন এইটা পড়ি তখন অবিশ্বাসের হাসি হেসেছিলাম কিন্তু আজ চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা আপনাকে।
suyorer Baccha kader sirer moto mani lokre neye eisob lekha bondho kor. na korle khotom hobi.
ওটা একটা রেডিও সাক্ষাৎকার ছিল। কথাটা ছিল এমন:
"ব্লগিং-এর পুরো শক্তিটা আমরা আঁচ করতে পারছি না, আমি নিজেও না। কে জানে, একদা হয়তো ব্লগিং নামের এই বিপুল শক্তি বদলে দিতে পারে কোনো রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকেও, সম্ভব...।"
আপনিও ভাল থাকুন @নুহান
গোলাম আযমের পোস্টটাতেও দেখি একই মন্তব্য! লেজটা লুকিয়ে রাখতে পারলে না, না? তুমি নব্য রাজাকার কিন্তু আমি নব্য ব্লগার না। বাছা, এই সব জুজুর ভয় বাচ্চাদের দেখিও, আমাকে না। আমি লিখবই, পারলে থামাও। নাথিং গনা স্টপ মি...@Anonymous ওরফে কাপুরুষ
আপনার লেখা আমাকে ভাবায়। আপনার বিশ্লেষণ চমৎকার।
সময় পেলে ঢাকা এসে দেখে যেতে পারেন। আন্দোলন নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসে নাই। তবে পানি জোরেই গড়াচ্ছে!
(উপরের খারাপ কমেন্ট করা লোকটার জন্য বলার কিছু থাকে না।)
শুভেচ্ছা।
Post a Comment