আজকের অতিথি লেখক, Mahadi Hasan Sumon
"(এই গল্পের সকল চরিত্র বা বিষয়বস্তু পুরোটাই কাল্পনিক। কারো নাম বা বিষয়বস্তুর সঙ্গে বা মৃত, অর্ধ-মৃত কোনো লাশের সঙ্গেও গল্পটা মিলে গেলে সেটা ফাঁকতালে এক কাকতাল মাত্র। এর জন্য কোনোক্রমেই এর রচয়িতাকে দায়ী করা চলবে না।)
হাসান সাহেবের বয়স চুয়াত্তর। চশমা পরেন, মাথার সামনের দিকে চুল কমে যাওয়ায় চকচকে টাকে তাকে বেশ বুদ্ধিজীবী-বুদ্ধিজীবী মনে হয়! যদিও তিনি নিজেকে পরজীবীই বলে মনে করেন। কারণ চুয়াত্তর বছরের এই বর্ণাঢ্য জীবনে পরের উপর ভর করে ও অনেক গ্রুপিং-লবিং করে তিনি এতোদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছেন।
আজ তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। আজকের ইন্টারভিউয়ের সঙ্গে তার বাকি জীবনের কর্মপরিকল্পনা নির্ভর করছে। হাসান সাহেব কর্মীপুরুষ। তিনি মৃত্যুর আগদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান।
ইন্টারভিউ টেবিলের ওপাশে যিনি বসে আছেন, তিনি দুই বাংলার অতি বিখ্যাত মানুষদের একজন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় রসময়গুপ্ত। এই মানুষটির সঙ্গে কথা বললে কেমন করে যেন নিস্তেজও সতেজ হয়ে উঠে। হাসান সাহেব অনেকদিন পর নিজের ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করলেন। তার টাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম তৈরী হচ্ছে।
চটি-সম্রাট ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রী রসময়গুপ্ত নিজের চেয়ারে বসে অনেক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে এই বৃদ্ধ ভদ্রলোককে দেখছিলেন। নিজের ভেতরে তিনি এক ধরনের গভীর হতাশাও বোধ করছেন। ইন্টারনেট আসার পর চটি বইয়ের কাটতি কমে গেছে। চটির সর্ববৃহৎ টার্গেট গ্রুপ কিশোর ছেলেপেলে আগে রুমালে মুখ ঢেকে তাদের আউটলেটগুলো থেকে চটি সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। এখন তারা এইসব পড়াশোনা অন লাইনেই সারছে।
বিনা পয়সায় রগরগে গল্পের সঙ্গে রঙিন ছবি, সঙ্গে ফাউ ভিডিও ক্লিপ। আলমারির মাথায়, বালিশের কাভারের ভেতর বা স্কুল ব্যাগে চটি লুকিয়ে বাবা-মায়ের হাতে ধরা খাওয়ার ভয় নেই। ফলে তার প্রিন্ট ব্যবসায় বেশ ধস নেমে এসেছে। টাকা কম দেন বলে আগের লেখকরা অনেকেই সটকে পড়েছেন।
এই অবস্থায় তিনি নতুন লেখক চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু মনে হয় বিজ্ঞাপনে কোনো কাজ হয়নি। হাজার টাকা জলে গেছে। এই 'চুয়াত্তারাবৃদ্ধ' ব্যতীত তার ডাকে আর কেউই সাড়া দেয়নি! তবে গুপ্ত সাহেব এই বৃদ্ধের ক্ষুদ্র প্রতিভাও পরিমাপ করতে চাচ্ছেন। তাছাড়া এই ভদ্রলোক সকল নিয়ম মেনেই ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হয়েছেন। এখন ইন্টারভিউ না-করাটা অভদ্রতা হয়ে যায়।
তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত কথাবার্তা হলো:
রসময়গুপ্ত: হাসান সাহেব।
হাসান সাহেব: জ্বী স্যার।
র.গু. : আগে কখনো লিখেছেন?
হা. : লিখেছি তো...২২ টা উপন্যাস, ৬ টা ভ্রমণ কাহিনি, ৪ টা গল্পগ্রন্থ...।
র.গু. : না, মানে বলছিলাম, আমরা যে ধরনের লেখা ছাপি আরকি। সে ধরনের কিছু কি লিখেছেন কি?
হা. : জ্বী স্যার। ছদ্মনামে। যৌবন জ্বালা ডট কমে আমার প্রায় ১৫ খানা গল্প আছে। এর মধ্যে 'ভাবীর কাছে দাবী' এটা বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।
র.গু. : ওখানে কি ছদ্মনামে লেখেন?
হা. : কামুক পুরুষ নিকে।
র.গু. : বাহ! ভালো নিক নিয়েছেন তো। আপনাকে বেশ গুণী লোক বলেই মনে হচ্ছে।
হা. : এছাড়া স্যার ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে বাংলা চটি (১৮+)। সেখানেও আমার দুটো গল্প আছে।
র.গু. : বাহ-বাহ, বেশ-বেশ! তা আপনি এই বয়সে এইসব লিখতে শুরু করলেন কেন। এই সব তো ছেলে-ছোকরারা লেখে?
হা. : সে চলে যাওয়ার পর থেকে লিখি। সে চলে যাওয়ার পর থেকে এগুলো লিখলে এক ধরনের মানসিক আরাম হয়।
র.গু. : সে মানে ?
হা. : সে মানে স্যার, ইয়ে মানে...।
র.গু. : আহা, লজ্জা পাচ্ছেন কেন!
হা. : ইয়ে মানে, ওই বিশেষ ক্ষমতা, হে হে হে।
হাসান সাহেবের কথা শুনে রসময় গুপ্ত বেশ আগ্রহ বোধ করলেন। এই ধরনের লোক খুব চমৎকার করে নারী শরীরের বর্ণনা দিতে পারে। মা-ছেলেকে বা বৌ-শ্বশুরের অবৈধ সম্পর্কে বেঁধে দেয় অবলীলায়। শুরুতে এই লোককে যতটা মনে হয়েছিলো এ তার চেয়েও অনেক কাজের লোক। রসময়গুপ্ত তার গলার স্বর খানিটা উঁচু করে বললেন, হাসান সাহেব, আপনার কোন একটা লেখা থেকে খানিকটা পাঠ করে শোনান তো।
হা. : গত পরশু একটা লিখেছি, সেখান থেকে পাঠ করবো স্যার?
র.গু. : করুন।
গল্পের শিরোনাম হচ্ছে, 'গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও'। হাসান সাহেব পড়তে শুরু করলেন:
‘এইচ এস সির পর অনেক দিন ওর সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি। প্রতিদিনকার মতো সেদিনও মেস থেকে বের হয়ে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম এমন সময় মুঠোফোন পকেটে সগৌরবে তাঁর অস্তিত্ব জানান দিল। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে দেখলাম, অপরিচিত একটা নাম্বার, রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটি নারী কন্ঠ চিকন গলায় বলে উঠলো, হেলু, ঝান...’
র.গু. : প্রথমেই এমন ত্যানা প্যাঁচাচ্ছ কেন? একজন আদর্শ চটি লেখকের কাজ হচ্ছে, প্রথমেই ত্যানা খুলে ফেলা, ত্যানা প্যাঁচানো নয়। বুঝেছ।
উত্তেজনায় গুপ্ত সাহেব কখন আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছেন খেয়াল করেননি। হাসান সাহেব উৎসাহিত হলেন।
হা. : অবশ্যই স্যার। আপনি স্যার আমার গুরুস্থানীয়। সেই ছোটবেলা থেকেই আপনার বই পড়ে পড়ে কত কিছু শিখেছি। কত ঘাম ঝরিয়েছি। আপনার কল্যাণে আমার হাতের কত খারাপ রেখা উঠে গেছে। আমার তালিকাতে আপনি স্যার শ্রেষ্ঠ ১০ বাঙালীর একজন। এখনো স্যার আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।
রসময়গুপ্ত অনেকসময় ধরে হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, আগে আমলা ছিলেন, তাইনা ?
হা. : জ্বী স্যার, কী আচানক কথা। আপনি বুঝলেন কেমন করে, স্যার?
র.গু. : তোমার তেল দেওয়ার নমুনা দেখে আঁচ করেছিলাম। হা ভগবান, ঢিলটা দেখি ঠিক জায়গাতেই লেগেছে!
হা. : হে হে হে, আপনি অতি বিচক্ষণ, স্যার।
গুপ্ত সাহেব এবার খানিক খুশি হয়ে বললেন, হাসান সাহেব। আপনার লেখায় শক্তি আছে। আপনি মেইনস্ট্রিমে এইসব নিয়ে লেখালেখি করুন। তাতে পাঠক বাড়বে। আমার ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পারবেন না ?
হা. : মনে হয় পারবো, স্যার। আমার এক বন্ধু আছে মেথি মিয়া নাম, একটা পত্রিকা চালায়। ওকে বলে দেখতে পারি।
র.গু. : মেথি মিয়া! আরে, ওরে তো চিনি। ও তোমার মতই আমার জটিল এক ফ্যান। ওরে আমি বইলা দিলে ও তোমার ল্যাকা ছাইপা দিব। বড়ই ভালো ছেলে, অতিশয় ভালো। তেল পেলে ও খুব খুশি হয়।
নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হওয়ায় গুপ্ত সাহেব বারবার আপনি তুমি আর কথ্য আঞ্চলিক শব্দ গুলিয়ে ফেলতে লাগলেন। আসলে বয়সের কারণেই এমনটা হচ্ছে।
হা. : জ্বী স্যার, জানি। পদক প্রাপ্তদের তেলে চুবিয়ে দিলে বেশি খুশি হয়।
র.গু. : এই তো, এটা তুমিও কম জানো না, বাওয়া। তা তোমার পদক-টদক আছে নাকি দু-একটা ?
হা. : আছে স্যার, একুশে পদক। আবেদন করতে হয় বলে মানহানি হয় এটা মনে করে অনেকে করে না, আমি আবেদন করেছিলাম...।
র.গু. : বাহ বাহ। তুমিওতো দেখি বিরাট প্রতিভাবান ছেলে। লেখ-লেখ, তা মন দিয়ে লেখ।
হা. : ঠিক মতো তেল দিতে পারলে এমন পদক টদক আরও দু একটা, হে হে...।
র.গু : হুম। ঠিকই বলেছো।
হা. : কিন্তু স্যার, একটা সমস্যা আছে।
র.গু. : কি সমস্যা ?
হা. : মেথি যে পত্রিকাটা চালায়, সেটা তো মধ্যবিত্তদের পত্রিকা। এখানে গল্প লিখলে, চ-বর্গীয় কোনো শব্দ ব্যবহার করা যায় না। তাতে কি স্যার আমি যে তৃপ্তির জন্য লিখি সেই তৃপ্তি পাবো ? চ-বর্গীয় শব্দ ছাড়া চটি, ভাবা যায়, স্যার? আপনিই বলুন!
র.গু. : কেন যাবে না। যাবে-যাবে। কৌশল আছে। কায়দা-কানুন আছে। আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব নে।
হা. : আপনার দয়ার শরীর, স্যার।
রসময়গুপ্ত অজান্তেই খানিকটা কুঁকড়ে গেলেন। এই ব্যাটা শরীরের কথা আনছে কেন? আবার গায়ে হাত-টাত দিয়ে বসবে না তো! তিনি খানিকটা সরে বসলেন।
র.গু : তুমি মেইন-স্ট্রিমে যখন লিখবে তখন নিক ব্যবহার করবে না। নিজের নামে লিখবে। বর্ণনা ঠিক থাকলে বাকিটা পাঠক কল্পনা করে নেবে। আমার দরকার পাঠকের উত্তেজনা। মধ্যবিত্তের সংখ্যা বিশাল। তোমার লেখা পড়ে জিনিস, জিনিস এতোটাই পিওর যে... মাথায় উঠে যাবে। সেটা নামনোর জন্য তখন তারা হণ্যে হয়ে পিওর জিনিস খুঁজে বেড়াবে। সেটা পাবে তোমার আর মেথির কাছে। আমার কাটতি বাড়বে। প্রয়োজনে আমি তোমাকে পে করবো।
হাসান সাহেব ঘামেভেজা মুখে একটা তেলতেলে হাসি হেসে বললেন, আপনার কাছ থেকে স্যার এখনো কত কিছু যে শেখার আছে।
রসময় গুপ্ত প্রশ্রয়ের হাসি হাসলেন। হাসান সহেব বুঝতে পারলেন, তার ইন্টারভিউ ভাল হয়েছে, বেশ ভালোই হয়েছে। আর সামনে যিনি বসে আছেন, তিনি অবশ্যই একজন বিচক্ষণ জহুরী, রত্ন চেনেন।
কৃতজ্ঞতা ও দৃঢ়চিত্ততা নিয়ে ঘরে ফিরে আসলেন তিনি। সেই রাতেই হাসান সাহেব লিখে ফেললেন, চটির মধ্যবিত্ত এডিসান। 'মাইক্রোফোনের উপর মেয়েটি'। রসময় গুপ্তের কোনো হাত বা হাসান সাহেবের তেলের কোনো ভূমিকা ছিলো কি না জানি যায়নি তবে সেই গল্পটা কোনো এক থার্টি-টু ফাস্টে মেথি মিয়ার পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিলো। এরপর মধ্যবিত্ত পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। কারণ লেখাটি তিনি স্বনামেই দিয়েছিলেন। লেখাটা পড়ে দেশের মানুষ বিচিত্র কারণে অবিরাম হায়-হায় করতে থাকে।
সে..., সে চলে যাওয়ার অনেকদিন পর হাসান সাহেব ইয়ের ভরপুর তৃপ্তি পান। গুরুর প্রতি ভক্তিতে তার চোখে পানি চলে আসে। ৭৪ বছর, বয়সটা বড়ই বেয়াড়া। এই বয়সে অন্য অনেক কিছুর মতোই কিছুতেই নিজের চোখের উপর কন্ট্রোল রাখা যায় না, মানে চোখের পানির উপর আর কী!...।"-Mahadi Hasan Sumon
"(এই গল্পের সকল চরিত্র বা বিষয়বস্তু পুরোটাই কাল্পনিক। কারো নাম বা বিষয়বস্তুর সঙ্গে বা মৃত, অর্ধ-মৃত কোনো লাশের সঙ্গেও গল্পটা মিলে গেলে সেটা ফাঁকতালে এক কাকতাল মাত্র। এর জন্য কোনোক্রমেই এর রচয়িতাকে দায়ী করা চলবে না।)
হাসান সাহেবের বয়স চুয়াত্তর। চশমা পরেন, মাথার সামনের দিকে চুল কমে যাওয়ায় চকচকে টাকে তাকে বেশ বুদ্ধিজীবী-বুদ্ধিজীবী মনে হয়! যদিও তিনি নিজেকে পরজীবীই বলে মনে করেন। কারণ চুয়াত্তর বছরের এই বর্ণাঢ্য জীবনে পরের উপর ভর করে ও অনেক গ্রুপিং-লবিং করে তিনি এতোদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছেন।
আজ তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। আজকের ইন্টারভিউয়ের সঙ্গে তার বাকি জীবনের কর্মপরিকল্পনা নির্ভর করছে। হাসান সাহেব কর্মীপুরুষ। তিনি মৃত্যুর আগদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান।
ইন্টারভিউ টেবিলের ওপাশে যিনি বসে আছেন, তিনি দুই বাংলার অতি বিখ্যাত মানুষদের একজন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় রসময়গুপ্ত। এই মানুষটির সঙ্গে কথা বললে কেমন করে যেন নিস্তেজও সতেজ হয়ে উঠে। হাসান সাহেব অনেকদিন পর নিজের ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করলেন। তার টাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম তৈরী হচ্ছে।
চটি-সম্রাট ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রী রসময়গুপ্ত নিজের চেয়ারে বসে অনেক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে এই বৃদ্ধ ভদ্রলোককে দেখছিলেন। নিজের ভেতরে তিনি এক ধরনের গভীর হতাশাও বোধ করছেন। ইন্টারনেট আসার পর চটি বইয়ের কাটতি কমে গেছে। চটির সর্ববৃহৎ টার্গেট গ্রুপ কিশোর ছেলেপেলে আগে রুমালে মুখ ঢেকে তাদের আউটলেটগুলো থেকে চটি সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। এখন তারা এইসব পড়াশোনা অন লাইনেই সারছে।
বিনা পয়সায় রগরগে গল্পের সঙ্গে রঙিন ছবি, সঙ্গে ফাউ ভিডিও ক্লিপ। আলমারির মাথায়, বালিশের কাভারের ভেতর বা স্কুল ব্যাগে চটি লুকিয়ে বাবা-মায়ের হাতে ধরা খাওয়ার ভয় নেই। ফলে তার প্রিন্ট ব্যবসায় বেশ ধস নেমে এসেছে। টাকা কম দেন বলে আগের লেখকরা অনেকেই সটকে পড়েছেন।
এই অবস্থায় তিনি নতুন লেখক চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু মনে হয় বিজ্ঞাপনে কোনো কাজ হয়নি। হাজার টাকা জলে গেছে। এই 'চুয়াত্তারাবৃদ্ধ' ব্যতীত তার ডাকে আর কেউই সাড়া দেয়নি! তবে গুপ্ত সাহেব এই বৃদ্ধের ক্ষুদ্র প্রতিভাও পরিমাপ করতে চাচ্ছেন। তাছাড়া এই ভদ্রলোক সকল নিয়ম মেনেই ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হয়েছেন। এখন ইন্টারভিউ না-করাটা অভদ্রতা হয়ে যায়।
তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত কথাবার্তা হলো:
রসময়গুপ্ত: হাসান সাহেব।
হাসান সাহেব: জ্বী স্যার।
র.গু. : আগে কখনো লিখেছেন?
হা. : লিখেছি তো...২২ টা উপন্যাস, ৬ টা ভ্রমণ কাহিনি, ৪ টা গল্পগ্রন্থ...।
র.গু. : না, মানে বলছিলাম, আমরা যে ধরনের লেখা ছাপি আরকি। সে ধরনের কিছু কি লিখেছেন কি?
হা. : জ্বী স্যার। ছদ্মনামে। যৌবন জ্বালা ডট কমে আমার প্রায় ১৫ খানা গল্প আছে। এর মধ্যে 'ভাবীর কাছে দাবী' এটা বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।
র.গু. : ওখানে কি ছদ্মনামে লেখেন?
হা. : কামুক পুরুষ নিকে।
র.গু. : বাহ! ভালো নিক নিয়েছেন তো। আপনাকে বেশ গুণী লোক বলেই মনে হচ্ছে।
হা. : এছাড়া স্যার ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে বাংলা চটি (১৮+)। সেখানেও আমার দুটো গল্প আছে।
র.গু. : বাহ-বাহ, বেশ-বেশ! তা আপনি এই বয়সে এইসব লিখতে শুরু করলেন কেন। এই সব তো ছেলে-ছোকরারা লেখে?
হা. : সে চলে যাওয়ার পর থেকে লিখি। সে চলে যাওয়ার পর থেকে এগুলো লিখলে এক ধরনের মানসিক আরাম হয়।
র.গু. : সে মানে ?
হা. : সে মানে স্যার, ইয়ে মানে...।
র.গু. : আহা, লজ্জা পাচ্ছেন কেন!
হা. : ইয়ে মানে, ওই বিশেষ ক্ষমতা, হে হে হে।
হাসান সাহেবের কথা শুনে রসময় গুপ্ত বেশ আগ্রহ বোধ করলেন। এই ধরনের লোক খুব চমৎকার করে নারী শরীরের বর্ণনা দিতে পারে। মা-ছেলেকে বা বৌ-শ্বশুরের অবৈধ সম্পর্কে বেঁধে দেয় অবলীলায়। শুরুতে এই লোককে যতটা মনে হয়েছিলো এ তার চেয়েও অনেক কাজের লোক। রসময়গুপ্ত তার গলার স্বর খানিটা উঁচু করে বললেন, হাসান সাহেব, আপনার কোন একটা লেখা থেকে খানিকটা পাঠ করে শোনান তো।
হা. : গত পরশু একটা লিখেছি, সেখান থেকে পাঠ করবো স্যার?
র.গু. : করুন।
গল্পের শিরোনাম হচ্ছে, 'গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও'। হাসান সাহেব পড়তে শুরু করলেন:
‘এইচ এস সির পর অনেক দিন ওর সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি। প্রতিদিনকার মতো সেদিনও মেস থেকে বের হয়ে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম এমন সময় মুঠোফোন পকেটে সগৌরবে তাঁর অস্তিত্ব জানান দিল। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে দেখলাম, অপরিচিত একটা নাম্বার, রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটি নারী কন্ঠ চিকন গলায় বলে উঠলো, হেলু, ঝান...’
র.গু. : প্রথমেই এমন ত্যানা প্যাঁচাচ্ছ কেন? একজন আদর্শ চটি লেখকের কাজ হচ্ছে, প্রথমেই ত্যানা খুলে ফেলা, ত্যানা প্যাঁচানো নয়। বুঝেছ।
উত্তেজনায় গুপ্ত সাহেব কখন আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছেন খেয়াল করেননি। হাসান সাহেব উৎসাহিত হলেন।
হা. : অবশ্যই স্যার। আপনি স্যার আমার গুরুস্থানীয়। সেই ছোটবেলা থেকেই আপনার বই পড়ে পড়ে কত কিছু শিখেছি। কত ঘাম ঝরিয়েছি। আপনার কল্যাণে আমার হাতের কত খারাপ রেখা উঠে গেছে। আমার তালিকাতে আপনি স্যার শ্রেষ্ঠ ১০ বাঙালীর একজন। এখনো স্যার আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।
রসময়গুপ্ত অনেকসময় ধরে হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, আগে আমলা ছিলেন, তাইনা ?
হা. : জ্বী স্যার, কী আচানক কথা। আপনি বুঝলেন কেমন করে, স্যার?
র.গু. : তোমার তেল দেওয়ার নমুনা দেখে আঁচ করেছিলাম। হা ভগবান, ঢিলটা দেখি ঠিক জায়গাতেই লেগেছে!
হা. : হে হে হে, আপনি অতি বিচক্ষণ, স্যার।
গুপ্ত সাহেব এবার খানিক খুশি হয়ে বললেন, হাসান সাহেব। আপনার লেখায় শক্তি আছে। আপনি মেইনস্ট্রিমে এইসব নিয়ে লেখালেখি করুন। তাতে পাঠক বাড়বে। আমার ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পারবেন না ?
হা. : মনে হয় পারবো, স্যার। আমার এক বন্ধু আছে মেথি মিয়া নাম, একটা পত্রিকা চালায়। ওকে বলে দেখতে পারি।
র.গু. : মেথি মিয়া! আরে, ওরে তো চিনি। ও তোমার মতই আমার জটিল এক ফ্যান। ওরে আমি বইলা দিলে ও তোমার ল্যাকা ছাইপা দিব। বড়ই ভালো ছেলে, অতিশয় ভালো। তেল পেলে ও খুব খুশি হয়।
নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হওয়ায় গুপ্ত সাহেব বারবার আপনি তুমি আর কথ্য আঞ্চলিক শব্দ গুলিয়ে ফেলতে লাগলেন। আসলে বয়সের কারণেই এমনটা হচ্ছে।
হা. : জ্বী স্যার, জানি। পদক প্রাপ্তদের তেলে চুবিয়ে দিলে বেশি খুশি হয়।
র.গু. : এই তো, এটা তুমিও কম জানো না, বাওয়া। তা তোমার পদক-টদক আছে নাকি দু-একটা ?
হা. : আছে স্যার, একুশে পদক। আবেদন করতে হয় বলে মানহানি হয় এটা মনে করে অনেকে করে না, আমি আবেদন করেছিলাম...।
র.গু. : বাহ বাহ। তুমিওতো দেখি বিরাট প্রতিভাবান ছেলে। লেখ-লেখ, তা মন দিয়ে লেখ।
হা. : ঠিক মতো তেল দিতে পারলে এমন পদক টদক আরও দু একটা, হে হে...।
র.গু : হুম। ঠিকই বলেছো।
হা. : কিন্তু স্যার, একটা সমস্যা আছে।
র.গু. : কি সমস্যা ?
হা. : মেথি যে পত্রিকাটা চালায়, সেটা তো মধ্যবিত্তদের পত্রিকা। এখানে গল্প লিখলে, চ-বর্গীয় কোনো শব্দ ব্যবহার করা যায় না। তাতে কি স্যার আমি যে তৃপ্তির জন্য লিখি সেই তৃপ্তি পাবো ? চ-বর্গীয় শব্দ ছাড়া চটি, ভাবা যায়, স্যার? আপনিই বলুন!
র.গু. : কেন যাবে না। যাবে-যাবে। কৌশল আছে। কায়দা-কানুন আছে। আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব নে।
হা. : আপনার দয়ার শরীর, স্যার।
রসময়গুপ্ত অজান্তেই খানিকটা কুঁকড়ে গেলেন। এই ব্যাটা শরীরের কথা আনছে কেন? আবার গায়ে হাত-টাত দিয়ে বসবে না তো! তিনি খানিকটা সরে বসলেন।
র.গু : তুমি মেইন-স্ট্রিমে যখন লিখবে তখন নিক ব্যবহার করবে না। নিজের নামে লিখবে। বর্ণনা ঠিক থাকলে বাকিটা পাঠক কল্পনা করে নেবে। আমার দরকার পাঠকের উত্তেজনা। মধ্যবিত্তের সংখ্যা বিশাল। তোমার লেখা পড়ে জিনিস, জিনিস এতোটাই পিওর যে... মাথায় উঠে যাবে। সেটা নামনোর জন্য তখন তারা হণ্যে হয়ে পিওর জিনিস খুঁজে বেড়াবে। সেটা পাবে তোমার আর মেথির কাছে। আমার কাটতি বাড়বে। প্রয়োজনে আমি তোমাকে পে করবো।
হাসান সাহেব ঘামেভেজা মুখে একটা তেলতেলে হাসি হেসে বললেন, আপনার কাছ থেকে স্যার এখনো কত কিছু যে শেখার আছে।
রসময় গুপ্ত প্রশ্রয়ের হাসি হাসলেন। হাসান সহেব বুঝতে পারলেন, তার ইন্টারভিউ ভাল হয়েছে, বেশ ভালোই হয়েছে। আর সামনে যিনি বসে আছেন, তিনি অবশ্যই একজন বিচক্ষণ জহুরী, রত্ন চেনেন।
কৃতজ্ঞতা ও দৃঢ়চিত্ততা নিয়ে ঘরে ফিরে আসলেন তিনি। সেই রাতেই হাসান সাহেব লিখে ফেললেন, চটির মধ্যবিত্ত এডিসান। 'মাইক্রোফোনের উপর মেয়েটি'। রসময় গুপ্তের কোনো হাত বা হাসান সাহেবের তেলের কোনো ভূমিকা ছিলো কি না জানি যায়নি তবে সেই গল্পটা কোনো এক থার্টি-টু ফাস্টে মেথি মিয়ার পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিলো। এরপর মধ্যবিত্ত পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। কারণ লেখাটি তিনি স্বনামেই দিয়েছিলেন। লেখাটা পড়ে দেশের মানুষ বিচিত্র কারণে অবিরাম হায়-হায় করতে থাকে।
সে..., সে চলে যাওয়ার অনেকদিন পর হাসান সাহেব ইয়ের ভরপুর তৃপ্তি পান। গুরুর প্রতি ভক্তিতে তার চোখে পানি চলে আসে। ৭৪ বছর, বয়সটা বড়ই বেয়াড়া। এই বয়সে অন্য অনেক কিছুর মতোই কিছুতেই নিজের চোখের উপর কন্ট্রোল রাখা যায় না, মানে চোখের পানির উপর আর কী!...।"-Mahadi Hasan Sumon
1 comment:
শুভ ভাই, মাইন্ডব্লোয়িং!!!লেখককে আমার শুভেচ্ছা দেবেন।
Post a Comment