ছবি: সংগ্রহ |
আমি মোটা বুদ্ধি, মোটা চিন্তার মানুষ। অল্প কথায় বুঝি, পেটের ক্ষিধা বড়ো ক্ষিধা, এই শ্লা পেটের জন্যই আমরা কত কিছুই না করি! লাশ সামনে নিয়েও খাবার খাই!
কিন্তু যখন লাশ সামনে নিয়ে ভাতের সঙ্গে তরকারি নাই কেন? থাকলেও, তরকারিতে লবন কম কেন; এই নিয়ে হইচই করি তখন বুঝতে হবে এখানে সমস্যা কেবল পেটের ক্ষিধা না। সমস্যাটা অন্যত্র, মস্তিষ্কের নিতল অন্ধকারে লুকিয়ে আছে সেই সমস্যাটা যা থাকে কেবল অদেখা পশুর মস্তিষ্কে।
আমি অদেখা পশুকে বড়ো ভয় পাই, এড়িয়ে চলি! কারণ আমার ভেতরে লুকানো পশুটার সঙ্গে যদি এর মারামারি বেঁধে যায়, তখন এদের থামাবে কে?
শুনতে পাই, প্রথম আলো নাকি ৫৪ লক্ষ টাকা উঠিয়েছে অনুদান হিসাবে। কিন্তু তাতে কী আসে যায়! এই যে লাশের মিছিলের সঙ্গে আলোকিত (!) মানুষদের মিছিল- এতে করে কী এদের এই অতি কুৎসিত অন্যায়টা মিটে যায়! বসুন্ধরা গ্রপের কালের কন্ঠের আহমেদ সোবহান এবং সানবির, পিতা-পুত্র, খুন এবং খুনের সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত। এরা ৫৪ কোটি টাকা কোথাও দিয়ে দিলেই কী আমি এদের খুনের কথাটা বিস্মৃত হব, না আইনে এর ছাড় আছে? নাকি এরা যাকে খুন করেছে সেই মানুষটা বেঁচে উঠবেন বা ওঁর পরিবারের হাহাকার বাতাসে মিশে যাবে?
এ সত্য, প্রথম আলো খুন করেনি। কিন্তু এরা এমন একটা সময়ে কেবল যে এক অশ্লীলতা, অমানবিক, নির্দয় আচরণ করেছে এমনই না, এই আলোকিত মানুষদেরকেও(!) এদের সঙ্গে জড়াজড়ি করে রাখতে সমর্থ হয়েছে। কী বিপুল ক্ষমতা- আমি হতভম্ব, হতবাক হই!
ডিয়ার লতিফুর রহমান, আপনাকে একজন সজ্জন মানুষ হিসাবে জানি। জানি না আপনি এখনও এই পত্রিকার সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা! জড়িত থেকে থাকলে আপনি পত্রিকা বোঝেন, কান্না বোঝেন না? আপনার সন্তানের মৃত্যুতে নাহয় রুমাল চেপে কেঁদেছিলেন আর এই সমস্ত মানুষেরা হাউমাউ করে কাঁদে- তাতে চোখের জলের কী পার্থক্য হয়, কে জানে!
আপনি তো ভারী সৌভাগ্যবান, আপনার প্রিয়মানুষের শব ধরে অন্তত কাঁদতে পেরেছেন কিন্তু অসংখ্য মানুষ তাদের প্রিয়মানুষের শব ধরে কেঁদে যে বুকটা খানিক হাল্কা করবে সেই সুযোগও তো পায়নি!
আমার এই সমস্ত অনুষ্ঠান দেখা হয়ে উঠে না কিন্তু যখন সাভারের সর্বশেষ তথ্যের জন্য এ-চ্যানেল, ও-চ্যানেলে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। সম্ভবত মাছরাঙায়, তখন অনুষ্ঠানটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাহমুদুজ্জামান বাবুর গানের সঙ্গে অনেকগুলো 'নাচুনি' বেদম নাচলেন। তারপর তিশা এবং চঞ্চল আর মোশারফ দুর্দান্ত ভাঁড়ামি করছিলেন। আহ, সে এক দৃশ্য বটে! হা হা, হি হি, হো হো, কত মজা-কত আনন্দ! ক্ষণিকের জন্য ক্যামেরা জুম করল, দর্শকের সারিতে দেখলাম, ফারুকি তার 'ইস্তারি সাহেবার' প্রতিভায় বিমুগ্ধ। (আমার কেবল এই পাঁচজনের নামই মনে আছে। আমার স্মৃতিশক্তির কুখ্যাতি আছে- একজনের চেহারার সঙ্গে অন্যজনের চেহারা গুলিয়ে যায়। এদের মধ্যে কারো নাম ভুল লিখে থাকলে আগাম ক্ষমা প্রার্থনা)
আর যারা-যারা এই অনুষ্ঠানটায় গিয়েছেন তাদের একটা তালিকা পেলে বেশ হতো! তালিকাটা থাকলে ভাল হতো, কখনও যদি এই সব মানুষেরা মানবতা নিয়ে 'বক্তিমা' দেন, আগেভাগে জানা থাকলে বমি চেপে রাখার চেষ্টা করব। নইলে হড়হড় করে নিজের উপর বমি করে দিলে সে-এক বিরাট কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! লজ্জা-লজ্জা!
সবাই 'একই ঝাকের কৈ' না- অনেকেই আছেন যারা নিমন্ত্রণ পেয়েও যাননি, সেই সমস্ত মানুষের কথাও জানতে বড়ো ইচ্ছা করে। এতে ওইসব মানুষদের কী আসে যায় এটা বিষয় না, আমাদের জন্য জরুরি এটা। অন্তত আমাদের সন্তানদের তো বলতে পারব, দ্যাখ ব্যাটা, পারলে ওই মানুষটার মত হওয়ার চেষ্টা করিস।
অনেক হয়েছে, এখন থেকে আর প্রথম আলো রাখব না, পড়ব না। (তবে এর অর্থ এই না যে প্রথম আলোর অসঙ্গতি নিয়ে আর লিখবো না) আমার মত 'তেলিবেলি' একজন পাঠক না-পড়লে এদের যে কিছুই যায় আসে না সে আমি বিলক্ষণ জানি। কিন্তু এটা আমার জন্য এটা জরুরি, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হয় এমন কোনো জিনিসে আমার এলার্জি আছে।
এ সত্য, সিদ্ধান্তটার জের অনেকখানি কঠিন হয়ে পড়বে। অনেক কটা বছরের অভ্যাস। একই চেয়ারে বসে খাবার খেলে সেই চেয়ারটার প্রতি একটা অজানা টান (আসলে অভ্যস্ত হয়ে পড়া) পড়ে যায়। কিন্তু এখন এটা না-করলে আমার ওপর যে চাপ পড়ছে সে চাপ আমি নিতে পারব না। এখন থেকে প্রথম আলো বাদ দিলাম, ছাপার অক্ষরে বলি, বর্জন করলাম।
আহ, সিদ্ধান্তটা নিতে পেরে ভারমুক্ত লাগছে...।
সো, 'ব্যাড-বাই', প্রথম আলো।
No comments:
Post a Comment