জর্জ বুশ তখন ক্ষমতায়। বিশ্ববাসী একটা সংবাদে
চমকে উঠল। বিষয় কী! বিষয় আর কিছু না, পত্রিকার শিরোনাম ছিল এমন, "জর্জ বুশ
আজকাল পত্রিকা পড়েন"।
তেমনি এই সংবাদেও আমি চমকে গেছি, আমাদের দেশের আলেম সমাজও আজকাল ব্লগ পড়েন। তাঁরা সরকারকে যে কেবল উদ্যোগ নিতেই বলেছেন এমনটাই না, নিজেরাই ব্লগারদের তালিকা করেছেন। এ যে অভূতপূর্ব! অতি আনন্দের সংবাদ। কেন, বলছি।
এখন পর্যন্ত আমি আমাদের এখানকার কোনো ইমাম সাহেবকে ব্লগ তো দূরের কথা পত্রিকাই পড়তে দেখিনি! কেবল একজনকে পেয়েছিলাম, ফারুক হোসেন তমিজি নামের এই মানুষটা কেবল পত্রিকাই পড়তেন না, নিয়মিত বিবিসি-টিবিসিও শুনতেন। কিন্তু এই সব কারণে অনেকে তাঁকে পছন্দ করতেন না। এক সময় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়।
সপ্তাহ পূর্বে একজন হুজুরের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। তাকে বললাম, আপনাদের তো পত্রিকাও পড়া দরকার। পত্রিকায় তো কত খবরই পাওয়া যায়।
তিনি মাথা দুলিয়ে বললেন, ঠিক কইছেন। পত্রিকা না-পড়লে জানুম ক্যামনে নবীজীরে ব্লগাররা খারাপ কথা কইছে।
আমি তাকে বললাম, ব্লগার কি, কারা জানেন?
তিনি বললেন, ব্লগার হইছে একটা দল। নাস্তিক দল।
আমি হতভম্ব। আমি সামলে নিয়ে তাকে তখন বললাম, আচ্ছা বোখারী শরীফ কে লেখছেন একটু বলেন তো? (সংকলন করার কথা বলিনি ইচ্ছা করেই, সংকলনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমার জান বেরিয়ে যাবে।)
তিনি বললেন, বোখারী সাব ল্যাকছেন।
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, সম্মানী মানুষকে এই ভাবে বললে তো হবে না। ওনার পুরো নাম হচ্ছে, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহঃ)।
যাক সে কথা। তিনি হাদিসগুলো বইয়ে সংকলন-লিখেছেন বলেই আপনি-আমি পড়ি। তিনি যেমন একজন লেখক তেমনি ব্লগাররাও লেখেন, তারাও লেখক। পার্থক্য হচ্ছে, তাদের লেখা কম্পিউটারে পড়া হয়। এখানে অনেকে ভাল কথাও লেখেন, মন্দও লেখেন যেমন অনেকে ভাল বই লেখেন, খারাপ বইও লেখেন। কিন্তু আপনি সবাইকে বলে দিচ্ছেন নাস্তিক, এটা কেমন বিচার হলো? এখানে কেউ হাদিস-কোরান নিয়ে লিখলেও তা কিন্তু সমস্ত বিশ্ব নিমিষেই পড়তে পারে।
মানুষটা থ, তাই নাকি!
মানুষটা এতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ব্লগার সম্বন্ধে তার ভুল ধারণা একেবারেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল!
যাই হোক, আলেম সমাজ ব্লগারদের একটা লিষ্ট সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। এ সময় 'দৈনিক আল ইহসান' পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম আরিফ, তিনি বলেন, “বাকস্বাধীনতার নামে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা. সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী নাস্তিকতারই নামান্তর। এদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ভারতের কোনো ব্লগে বাংলাদেশীরা কোনো মন্তব্য করতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের ব্লগে ভারতীয়রা মন্তব্য করতে পারেন।”
অথচ এই আমিই এখনও জানি না ভারতীয়রা মন্তব্য করতে পারেন, কি পারেন না! তার মানে ব্লগ-ব্লগিং বিষয়ে সম্যক ধারণা আছে আলেমদের। ভালই হলো, ব্লগিং করার সহীহ তরিকাও এই ফাঁকে হুজুরদের কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে।
তবে, আলেম সমাজ, সবাই নবীজীকে মন্দ বলা হয়েছে বলে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছেন। বেশ। কিন্তু এঁরা যেমনটা বলছেন, ওয়েব-সাইটে কী কেবল নবীজীকেই নিয়ে মন্দ কথা বলা হয়েছে? তাই? অন্য ধর্মের কোনো মহাপুরুষকে নিয়ে কুৎসা রটনা, রচনা করা হয়নি? দয়া করে কোনো সার্চ ইঞ্জিনে ভিন্ন ধর্মের কোনো কন্টেন্ট সার্চ দিয়ে দেখুন। চোখের পলকে অজস্র লেখা চলে আসবে। ওগুলোর ভাষাও এমন কুৎসিত, কিন্তু আফসোস, আমি মাহমুদুর রহমানের মত ... হলে ওই সব লেখার লিংক দিতে পারতাম বা হুবহু এখানে তুলে দিতে পারতাম।
কে নাস্তিক হবেন আর কে আস্তিক, এটা নির্ণয় করার দায়িত্ব তো তাঁদের না। তাঁরা যে বলছেন, "...আপত্তিকর মন্তব্যকারী নাস্তিকতারই নামান্তর।"
বিষয়টা বুঝলাম না, তাঁরা যদি এটা বলতেন, 'আপত্তিকর মন্তব্যকারী", এরা অপরাধী; সে নাহয় ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু নাস্তিকতার সঙ্গে তুলনা কেন?
একজন নাস্তিক হলেই যে তিনি অন্য ধর্মকে খাটো করবেনই আর একজন আস্তিক হলেই করবেন না, এটা তো জোর দিয়ে বলা যায় না। আর কে আস্তিক, কে নাস্তিক এটাই বা তাঁরা বোঝেন কেমন করে! আই রিপিট, তাঁরা বলতে পারতেন বিধর্মী কাজ করছে কিন্তু নাস্তিকতার প্রসঙ্গ কেন!
আমি সুখি হতাম এটা জানতে পারলে, যে আলেম সমাজ অকারণে যেকোনো ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করার বিষয়েই আপত্তি করেছেন। এটাই ইনসাফ হতো, কেবলই নিজের ধর্ম না, অন্য ধর্মের প্রতি অন্যায় করা নিয়ে বলাটাও।
আমাদের আলেম সাহেবরা সম্ভবত ভুলে গেছেন, 'মদিনাসনদে' [১] কিন্তু অন্য ধর্মের প্রতিও সমান অধিকার দেয়ার কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে
"পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে; কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।"
তেমনি এই সংবাদেও আমি চমকে গেছি, আমাদের দেশের আলেম সমাজও আজকাল ব্লগ পড়েন। তাঁরা সরকারকে যে কেবল উদ্যোগ নিতেই বলেছেন এমনটাই না, নিজেরাই ব্লগারদের তালিকা করেছেন। এ যে অভূতপূর্ব! অতি আনন্দের সংবাদ। কেন, বলছি।
এখন পর্যন্ত আমি আমাদের এখানকার কোনো ইমাম সাহেবকে ব্লগ তো দূরের কথা পত্রিকাই পড়তে দেখিনি! কেবল একজনকে পেয়েছিলাম, ফারুক হোসেন তমিজি নামের এই মানুষটা কেবল পত্রিকাই পড়তেন না, নিয়মিত বিবিসি-টিবিসিও শুনতেন। কিন্তু এই সব কারণে অনেকে তাঁকে পছন্দ করতেন না। এক সময় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়।
সপ্তাহ পূর্বে একজন হুজুরের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। তাকে বললাম, আপনাদের তো পত্রিকাও পড়া দরকার। পত্রিকায় তো কত খবরই পাওয়া যায়।
তিনি মাথা দুলিয়ে বললেন, ঠিক কইছেন। পত্রিকা না-পড়লে জানুম ক্যামনে নবীজীরে ব্লগাররা খারাপ কথা কইছে।
আমি তাকে বললাম, ব্লগার কি, কারা জানেন?
তিনি বললেন, ব্লগার হইছে একটা দল। নাস্তিক দল।
আমি হতভম্ব। আমি সামলে নিয়ে তাকে তখন বললাম, আচ্ছা বোখারী শরীফ কে লেখছেন একটু বলেন তো? (সংকলন করার কথা বলিনি ইচ্ছা করেই, সংকলনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমার জান বেরিয়ে যাবে।)
তিনি বললেন, বোখারী সাব ল্যাকছেন।
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, সম্মানী মানুষকে এই ভাবে বললে তো হবে না। ওনার পুরো নাম হচ্ছে, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহঃ)।
যাক সে কথা। তিনি হাদিসগুলো বইয়ে সংকলন-লিখেছেন বলেই আপনি-আমি পড়ি। তিনি যেমন একজন লেখক তেমনি ব্লগাররাও লেখেন, তারাও লেখক। পার্থক্য হচ্ছে, তাদের লেখা কম্পিউটারে পড়া হয়। এখানে অনেকে ভাল কথাও লেখেন, মন্দও লেখেন যেমন অনেকে ভাল বই লেখেন, খারাপ বইও লেখেন। কিন্তু আপনি সবাইকে বলে দিচ্ছেন নাস্তিক, এটা কেমন বিচার হলো? এখানে কেউ হাদিস-কোরান নিয়ে লিখলেও তা কিন্তু সমস্ত বিশ্ব নিমিষেই পড়তে পারে।
মানুষটা থ, তাই নাকি!
মানুষটা এতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ব্লগার সম্বন্ধে তার ভুল ধারণা একেবারেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল!
যাই হোক, আলেম সমাজ ব্লগারদের একটা লিষ্ট সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। এ সময় 'দৈনিক আল ইহসান' পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম আরিফ, তিনি বলেন, “বাকস্বাধীনতার নামে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা. সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী নাস্তিকতারই নামান্তর। এদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ভারতের কোনো ব্লগে বাংলাদেশীরা কোনো মন্তব্য করতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের ব্লগে ভারতীয়রা মন্তব্য করতে পারেন।”
অথচ এই আমিই এখনও জানি না ভারতীয়রা মন্তব্য করতে পারেন, কি পারেন না! তার মানে ব্লগ-ব্লগিং বিষয়ে সম্যক ধারণা আছে আলেমদের। ভালই হলো, ব্লগিং করার সহীহ তরিকাও এই ফাঁকে হুজুরদের কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে।
তবে, আলেম সমাজ, সবাই নবীজীকে মন্দ বলা হয়েছে বলে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছেন। বেশ। কিন্তু এঁরা যেমনটা বলছেন, ওয়েব-সাইটে কী কেবল নবীজীকেই নিয়ে মন্দ কথা বলা হয়েছে? তাই? অন্য ধর্মের কোনো মহাপুরুষকে নিয়ে কুৎসা রটনা, রচনা করা হয়নি? দয়া করে কোনো সার্চ ইঞ্জিনে ভিন্ন ধর্মের কোনো কন্টেন্ট সার্চ দিয়ে দেখুন। চোখের পলকে অজস্র লেখা চলে আসবে। ওগুলোর ভাষাও এমন কুৎসিত, কিন্তু আফসোস, আমি মাহমুদুর রহমানের মত ... হলে ওই সব লেখার লিংক দিতে পারতাম বা হুবহু এখানে তুলে দিতে পারতাম।
কে নাস্তিক হবেন আর কে আস্তিক, এটা নির্ণয় করার দায়িত্ব তো তাঁদের না। তাঁরা যে বলছেন, "...আপত্তিকর মন্তব্যকারী নাস্তিকতারই নামান্তর।"
বিষয়টা বুঝলাম না, তাঁরা যদি এটা বলতেন, 'আপত্তিকর মন্তব্যকারী", এরা অপরাধী; সে নাহয় ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু নাস্তিকতার সঙ্গে তুলনা কেন?
একজন নাস্তিক হলেই যে তিনি অন্য ধর্মকে খাটো করবেনই আর একজন আস্তিক হলেই করবেন না, এটা তো জোর দিয়ে বলা যায় না। আর কে আস্তিক, কে নাস্তিক এটাই বা তাঁরা বোঝেন কেমন করে! আই রিপিট, তাঁরা বলতে পারতেন বিধর্মী কাজ করছে কিন্তু নাস্তিকতার প্রসঙ্গ কেন!
আমি সুখি হতাম এটা জানতে পারলে, যে আলেম সমাজ অকারণে যেকোনো ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করার বিষয়েই আপত্তি করেছেন। এটাই ইনসাফ হতো, কেবলই নিজের ধর্ম না, অন্য ধর্মের প্রতি অন্যায় করা নিয়ে বলাটাও।
আমাদের আলেম সাহেবরা সম্ভবত ভুলে গেছেন, 'মদিনাসনদে' [১] কিন্তু অন্য ধর্মের প্রতিও সমান অধিকার দেয়ার কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে
"পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে; কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।"
সেখানে অন্য ধর্মের প্রতি অন্যায় হলে সেটা কী তাঁরা উদাসীন, বিস্মৃত হবেন...?!
সহায়ক সূত্র:
১. মদিনা সনদ: http://www.ali-mahmed.com/2013/03/blog-post.html
No comments:
Post a Comment