Search

Thursday, June 27, 2013

গালি এবং...!

অনেকে আমার কাছে বিভিন্ন সময়ে জানতে চেয়েছেন পরে আমি আর কম্যুনিটি ব্লগগুলোতে লিখিনি কেন? আসলে কয়েকটাই কারণ ছিল, আমি কারও নিয়ন্ত্রণে থাকতে পছন্দ করতাম না। কেউ আমার মাথার উপর বনবন করে ছড়ি চালাবে এটাও আমার পছন্দ ছিল না।
দ্বিতীয়টা দলবাজি। এই জিনিসটা আমার দু-চোখের বিষ! কেন রে বাপ, রাজনীতি করলে করো না, মানা করছে কে! কিন্ত রাজনীতি করতে গিয়ে কেবল রাজনীতিই বোঝো, মানুষ বোঝো না? কালে কালে এরা অবলীলায় বন্ধুর পিঠে ছুঁরি মারতে পারে, দলের জন্য। হাসতে হাসতে চাপাতি দিয়ে ফালা ফালা করে ফেলতে পারে!
তো, দলছুট আমার জন্য বড়ো মুশকিল হয়ে যেত...।

আরেকটা বিষয়ে অনেকের সঙ্গে আমার মতের মিল ছিল না সেটা হচ্ছে, গালি দেওয়ার অধিকার! কেউ-কেউ তো গালির অভিধানও চালু করে দিয়েছিলেন!
অনেকে কেবল যে একে অন্যকে গালি দিতেন এমনই না, বাপ-মা তুলেও অবলীলায় গালাগালি করতেন। এই বিষয়ে আমার সাফ কথা, কেউ সামনাসামনি আমার মাকে নিয়ে কুৎসিত কথা বললে সে স্রেফ খুন হয়ে যাবে। আর শক্তিতে না-কুলালে আমি নিজে খুন হয়ে যাব। যদিও আমার মা এখন আর বেঁচে নেই কিন্তু তারপরও মৃত এই মহিলার জন্য আমি হিংস্র পশুর ন্যায় লড়ব। এখানে যুক্তির আমি গুষ্টি কিলাই। জঙ্গলে চলে কেবল জঙ্গলের আইন, এখানে নাই আইন, নাই ফাইন!

আফসোস, আমি যেটা এখনও বোঝাতে পারলাম না, প্রত্যেকটা জায়গার নিজস্ব একটা ভাষা আছে। স্যুট না-খুলে যেমন বাথরুমের কাজ সারা যায় না তেমনি জন্মদিনের পোশাকেও বাইরে ঘুরে বেড়ানো চলে না।
এ গ্রহের অনেক দেশে অবশ্য দিগম্বর থাকার অধিকার নিয়েও দিব্যি বাতচিত-কর্মকান্ড চলে। সেটা তাদের অভিরুচি কিন্তু আমার যেটা মনে হয়, গায়ে সুতাটাও না-থাকলে এ গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটির সঙ্গে জরিনার আদৌ পার্থক্য কী!
বিশেষ মুহূর্তের ব্যাপারটা একপাশে সরিয়ে রাখলে, মানুষ বিশেষ বাড়তি যে অংশটা বহন করে ওটা উম্মুক্ত থাকলে এটায় কাকও ঠোকর দেবে কিনা এ নিয়ে আমার ঘোর সন্দেহ আছে!
প্রকৃতি আলো-ছায়ার কাজ রেখেছে বলেই দিন-রাতের ব্যাপারটা আছে নইলে সবই ফকফকা হতো- রহস্য বলে আর কিছুই থাকত না।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম, 'ধুম মাচাদে' গানটা গাওয়া দোষের না কিন্তু কেউ পাবলিক প্লেসে টেবিলে উঠে ধুম মাচাদে শুরু করলে তো বড়ো মুশকিল! এখন কেউ যদি মনে করেন পাবলিক প্লেসে তিনি সেটাই করবেন, যেটা নিজের বাড়িতে করেন না। সেই অসুস্থ মানুষটার জন্য করুণা করতেও আমার করুণা হয় এটা বলা ব্যতীত আর কীই-বা বলার থাকে!

এখন আবার নতুন একটা চল শুরু হয়েছে সাংসদ হলে সংসদ ভবনে গালাগালির বন্যা বইয়ে দেওয়া যাবে। তখন আবার অন্য সাংসদরা টেবিল চাপড়ে উৎসাহও দেবেন। সেটা আবার মিডিয়ায় ঘটা করে আমাদেরকে গেলানোও হবে। এখন বুঝতে পারি, কেন সংসদ ভবনের পূর্বে পবিত্র শব্দটা যুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়।

গালি মানুষ কখন দেয়? অধিকাংশেরই বেলায়, যখন রাগ হয়, চরম রাগ, তখন। এখন কথা হচ্ছে আমার কি রাগ হয় না, গালি দিতে ইচ্ছা করে না? হয়, করে তো!
আমিও গেরাম-টাওনের পোলা, সাংসদ বইলা...।

Saturday, June 22, 2013

ব্যাং-ব্যাং, বুম-ম!

আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আমার অনেকগুলো পোস্ট উধাও। ওই পোস্টগুলোর প্রায় সবগুলোই মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত। আসলে ওই সময়টায় এই বিষয়গুলোর উপরই লিখছিলাম।

এমনটা হতে পারে নির্দিষ্ট একটা টাইমলাইনটা দেখাচ্ছে না বা বাগ হতে পারে যার জন্য দায়ী ব্যাটা জুকারবার্গ। এমনটা হলে কিছু করার নাই কারণ ব্যাটা জুকার মাগনা লিখতে দিচ্ছে, একে গাল দেই কেমন করে!

কিন্তু আমি বোঝার চেষ্টা করছি, আসলে এর জন্য দায়ী কে? জুকার, না 'হুকার'?
হ্যাকারকে আমি আদর করে 'হুকার' ডাকি। তবে আমার এখনও বিশ্বাস, এটা জুকারের কান্ড!
 

আমার এক ফেসবুকবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'মিয়া, বিষয় কী'।
ও যেটা বলল, জুকারের বিবাহের পর থেকেই নাকি সমস্যার-পর-সমস্যা হচ্ছে!
রসিকতাটা আমার খু্ব পছন্দ হয়েছিল। আজকালের পোলাপানরা রসিক আছে, বড়ই রসিক! এরা সব কিছুতেই আমাদেরকে ছাড়িয়ে যায়।

এমনিতেও এই ব্যাটা জুকারকে আমার ভ্যাবলা টাইপের মনে হয়। শুনে অনেকে রে রে করে তেড়ে আসবেন। এই বিষয়ে আমার সাফ কথা, একদা এক টিকটিকি একটা ডিম পেড়েছিল। কোনো এক বিচিত্র কারণে সেই ডিম ফুটে ডায়নোসর বেরিয়েছে। সেই ডায়নোসর ক্রমশ পৃথুল হচ্ছে!

আমার বিশ্বাস, সমস্যাটা ফেসবুকেরই কারণ এদের অনেক ধরনের ঝামেলা আছে। ওদিন একজন বলছিলেন, আপনি তো দেখি সারাদিনই অনলাইনে থাকেন। শোনো কথা, আমি না-হয় কাজের কোনো লোক না কিন্তু তাই বলে অকাজের অভাব কী আমার যে, আমি সব ফেলে সারাদিন-রাত ফেসবুকে পড়ে থাকব, কোন দুঃখে!

কিন্তু...একটা কিন্তু থেকেই যায়। বাই এনি চান্স, যদি, হুকার ভাইজানদের কেরামতি হয়ে থাকে- কারণ পোস্ট 'খাওয়া-খাওয়ির' একটা খেলা শুরু হয়েছিল!
খালি মাঠে কে কোন খেলা খেলবে এটা নিয়ে আমার আগ্রহ বাড়াবাড়ি রকম কম। কেবল আমার খেলায় কেউ ল্যাং না-মারলে অন্যদের খেলা নিয়ে উৎসাহ বোধ করি না।
কেবল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে ধার করে বলি:
"...আমার খেলাটা, দোহাই
এখন থেকে আমাকেই খেলতে দিন।"
(ফড়েদের প্রতি)

তো, হুকার ভাইজান, 'খোদা-না-খাস্তা' যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে আপনার
সঙ্গে আমার একটু বাতচিত করার খায়েশ হচ্ছে। সবিনয়ে বলি, আমাকে আটকাবার চেষ্টা করে লাভ নাই, ডিয়ার হুকার ভাইজান।

ফেসবুকের সমস্ত লেখাই আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে আছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আপনি মিসাইল মেরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটটাও উড়িয়ে দিলেন। বেশ-বেশ!

কিন্তু আবার দেখুন দিকি কান্ড, ওই লেখাগুলোই মুক্তিযুদ্ধের আলাদা একটা
সাইটেও আছে। আবারও তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, ড্রোন হামলা চালিয়ে ওই সাইটও ধসিয়ে দিলেন। বাকাপ, হুকার ভাইজান, বাকাপ!

ব্যাপআপ কিন্তু রয়ে গেছে...!

তাছাড়া বুঝলেন, মুশকিল হয়ে গেল যে, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত ওই সমস্ত অধিকাংশ লেখাই যে আবার প্রিন্ট মিডিয়ায়ও আছে। এখন হুকার ভাইজান, আমার ওই বইগুলোর কী করবেন? বনফায়ার, আগুন ধরিয়ে দেবেন? তা দিলেন, ভাল-ভাল!

ভারী কুন্ঠিত হয়ে বলি, ওদিন একটা খসড়া হিসাব করে দেখলাম, এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত যে সমস্ত লেখা লিখে ফেলেছি; তা কয়েক লক্ষ শব্দ হবে।

এর মধ্যে থেকে কেবল একটি শব্দও যদি কোনো যুবকের মাথার করোটিতে গেঁথে গিয়ে থাকে, নিমিষেই আমার জায়গায় সেই যুবকটি চলে আসবে।

আর সে আমার মত ভঙ্কুর, লক্কর-ঝক্কড় হবে না, তার হাতে আমার মত মরচেধরা ভোঁতা হাস্যকর অস্ত্রও থাকবে না। তার কাছে থাকবে, ঝাঁ-চকচকে স্টেইনলেস স্টিলের তরবারি। যে তরবারি দিয়ে সে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে অন্ধকার, সমস্ত অপশক্তি।

ব্যাং-ব্যাং, বুম-ম! আমি তীব্র আগ্রহের সঙ্গে সেই মানুষটির অপেক্ষায় থাকব...।

Wednesday, June 19, 2013

ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ!

১২.০৯.১২ তারিখেও সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছিল, সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ এবং মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক, এদের দুজনকে ধরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর মেজর জিয়াকে ধরার জন্য সমুদ্রেও নাকি পাহারা বসানো হচ্ছে! তখন এটাও জানা গিয়েছিল মূল হোতা ইশরাক থাইল্যান্ডে আছে। অতি উত্তম! জেনে ভাল লাগল।
মি.-সেনর-হের ইশরাক যদি থাইল্যান্ডেই আছেন এটা যখন জানাই আছে; তাহলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না কেন! ধরা হচ্ছে না কী মনে করে? কারণ তিনিই তো সমস্ত তালার চাবি। ভাল কথা, প্রায় এই এক বছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে কটা চিঠি চালাচালি হয়েছে ইশরাককে ফিরিয়ে আনার জন্য? কিন্তু ২০১৩-এ এসে জানা যাচ্ছে, সেনর ইশরাক এখন কোথায় আছেন এটা কেউ জানে না!

৫ জুন, ২০১৩। পত্রিকার খবর,
"...সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ এবং মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হককে খুঁজে বের করতে ইন্টারপোলের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।...যদিও এ পর্যন্ত ওই দুজনের অবস্থান সম্পর্কে এখনও কিছু জানা সম্ভব হয়নি"
এখন আর 'অতি উত্তম' বলার যো নেই!

অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০১২, জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখের পত্র-পত্রিকায় ছেয়ে গিয়েছিল। কাঁপছিল পত্রিকা ছাপাবার যন্ত্র, কাঁপছিল দেশ। কী, ঘটনা কী?! সরকার উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ। কী সর্বনাশ-কী সর্বনাশ! গণতান্ত্রিক একটা সরকার উৎখাত করার অপচেষ্টা!
যেকোনো সচেতন মানুষেরই পায়ের নীচের মাটি কেঁপে উঠবে। তখন আমাদের সেনাবাহিনীও সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন: 
"...আমরা আর এ ধরনের কাজের দায়ভাগ নিতে চাই না"।
বেশ-বেশ। প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে তখন সেনাবাহিনীর প্রেসব্রিফিংও দেখেছিলাম।

পরে আরও জানা গেল, এই সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে শতশত লোকজন না, কেবল ১৪ থেকে ১৬ জন জড়িত! সেনাবাহিনীতে কর্মরত লোকজন ব্যতীত এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন মেজর জাকির (অবঃ)
ইতিপূর্বে পত্র-পত্রিকায় আমরা পড়েছিলাম, এরা দুজনই সিভিল কোর্টে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর কি এদেরকে সিভিল কোর্টে হস্তান্তর করা হয়েছিল? নাকি এদের বিচার কোর্ট-মার্শাল, সামরিক আদালতে হয়েছে? বিচারে কি পাওয়া গেল? কাকে কতটুকু শান্তি দেয়া হলো? এই সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না।

নাকি সামরিক আইনে বিচার চলছে? ইতিমধ্যে কিন্তু চলে গেছে ৫০০ দিন- ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ! বিচারে কোনো সাজা হয়েছে এমনটা তো শুনিনি! নাকি এখনও ট্রায়ালই শুরু হয়নি? প্রচলিত আইন না-হয় বাদ দিলাম তা সামরিক আইন কি বলে?
"... If the accused is in custody, then the investigation must be started within 48 hours from the time of his arrest excluding public holidays..." (Army Act, Section 74)
বা এই আইনটা:
"...A person who has been kept in such custody must be brought before the trial within 8 days (if not in active service). If, for reasonable grounds it was not possible then on the expiry of the 8th day it should be reported to superior authority. And such report should be sent on exceeds 32 days the alleged accused should be released from arrest without prejudice to re-arrest. (Army Act, Section 75)
যদি এমনটা হয়ে থাকে যে এখনও বিচারই শুরু হয়নি তাহলে এটা তো এক ভয়াবহ অন্যায়! একটা মানুষের জীবন থেকে অহেতুক হারিয়ে গেছে ৫০০ দিন, ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ। এতে কী হয়? হয়! থমকে যায় একটা জীবন, একটা পরিবার, একটা সভ্যতা...!
 
* মেজর জাকির নামের এই মানুষটাকে আটকে রাখা হয়েছিল ফাইভ হান্ড্রেড ডেইজ না, প্রায় ৭৫০ দিন। বিনা বিচারে। এখানেই শেষ না! এরপর বিচারের নামে এক প্রহসন! জেল দেওয়া হয়েছিল। দুর্ধর্ষ কয়েদি হিসাবে রাখা হয়েছিল কাশেমপুর কারাগারে। দেশের এই সেরা সন্তান নামের মেজর জাকিরের সন্তানদের কপালে জুটেছিল অপরাধীর সন্তানের তকমা! জেল থেকে বেরুবার পরও মানুষটাকে শেখ হাসিনার হায়েনারা তাড়া করেছিল, সবিরাম...।
 
লেখায় এই অংশটুকুর লেখক, Julkarnain saer
"আওয়ামী সরকারের শাসনামলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (সদর দপ্তর ডিজিএফআই) অভ্যন্তরে পরিচালিত গুম ঘরের কোড নাম ছিলো, 'আয়নাঘর'।
১৩ আগষ্ট ২০২২ নেত্র নিউজে প্রকাশিত 'আয়নাঘরের বন্দী, ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দীশালা' প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংস্থাটিতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আয়নাঘরের বন্দীদের আভ্যন্তরীনভাবে স্থানান্তর করা হয়। যার সব কিছুই বিশ্বস্ত সূত্রদের মাধ্যমে আমাদের নজরদারির মধ্যে ছিলো।
আয়নাঘর কেবল একটি বন্দীশালার কোড নাম। এছাড়াও অন্যান্য সংস্থারও নিজস্ব বন্দীশালা ছিলো, যেমন RAB এর বিশেষ একটি কেন্দ্র ছিলো TFI, এনএসআইয়ের ঢাকা শহর জুড়েই ছিলো কিছু সেইফ হাউজ। গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনপ্রয়োগের নিয়ম না-থাকা সত্বেও এনটিএমসির নিজস্ব বন্দীশালা এবং ইন্টারোগেশন সেল ছিলো।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর AIC ছিলো, যা সম্ভবত এখনো আছে। এছাড়াও আরো একটি স্থাপনা ছিলো সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেস। যেখানে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত/অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন রকমের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে আটকে রাখা হতো। এ সকল গুরুতর অভিযোগের বেশিরভাগই হতো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। 
 
এমনি একজন ভিকটিম ছিলেন বিএ ৫০৯৩ মেজর এ কে এম জাকির হোসেইন (অবঃ), যাকে 'সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন' এই অভিযোগে ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ নিজ বাসস্থান থেকে তৎকালীন মেজর মোস্তাফিজের নেতৃত্বে গুম করা হয়। ১১ দিন গুম করে নির্যাতনের পর ১০ জানুয়ারি ২০১২ কোন বিচার ছাড়াই দেশের প্রচলিত আইনের পরোয়া না-করে সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেসের একটি কক্ষে একপ্রকারের সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়।
১০ জানুয়ারি ২০১২ - ২৩ এপ্রিল ২০১৪, দুই বছরের অধিক সময় মেজর জাকিরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেসের ওই কক্ষটিতে আটক রাখা হয়। পরবর্তীতে সামরিক আদালতে তার বিচার করে ২ বছরের সিভিল জেল দিয়ে হাই সিকিউরিটি জেলে প্রেরণ করা হয়। যেখান থেকে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১৫ সালের মার্চে মুক্তি মেলে মেজর জাকিরের। 
সেনাসদরের পুরাতন অফিসার্স মেসের কক্ষে সলিটারি কনফাইনমেন্টে বন্দী থাকা অবস্থায় কক্ষের দেয়ালে লিখে মেজর জাকির তাঁর সময় পার করতেন। কিছুদিন আগে তিনি তার সেসব দেয়াল লিখনের এবং ওই সেলের ছবি (যা তাকে সিভিল জেলে পাঠানোর সময় কারো সহায়তায় তুলতে সক্ষম হন) আমাকে পাঠান। যার বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো।
মেজর জাকির (অবঃ) বর্তমান যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।"

আমাদের পোষা বেড়াল আমাদেরকেই বলে, ম্যাও!

পূর্বে একটা লেখা দিয়েছিলাম [১] আমাদের রেলওয়ের জমি অধিগ্রহন করা নিয়ে। এরা প্রয়োজনের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত জমি অধিগ্রহন করার অপচেষ্টা করছে।

গতকালই গঙ্গাসাগর বাজারে এর প্রতিবাদে এক মানববন্ধন হয়। প্রায় সবার বক্তব্য অবিকল। রেল প্রয়োজনে জমি নিক কিন্তু অহেতুক স্থাপনাগলো নষ্ট  করে না। এদের এই সব উম্মাদসুলভ আচরণের কারণে ৯০০ বছর পুরনো মন্দিরও নষ্ট হবে!
এই গঙ্গাসাগরের আজ আর সেই দবদবা নেই কিন্তু এই গঙ্গাসাগরেই ছিল ত্রিপুরা মহারাজের কাচারিঘর। ত্রিপুরা মহারাজ এখানে অবকাশ যাপনও করতেন। এখনও এই স্থাপনাগুলোর কিছু-কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে।

আজ যে আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারী, রেলওয়ের বড়-বড় লাট সাহেবরা এডিবির, ভারতের টাকার জোরে লম্বা-লম্বা বাতচিত করছেন, এই ব্যাটারা জানেও না যে রেলের জন্য এই সমস্ত জমি তাদের বাপ ত্রিপুরার মহারাজের দেয়া। পূর্বে যেটার নাম ছিল, 'আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে'।

এবং এখন যে গঙ্গাসাগরের জায়গার খু্ব প্রয়োজন হবে ভারতের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য যে কারণে এরা বিনষ্ট করছে বাজার-হাট সব। অথচ গঙ্গাসাগর স্টেশনের পাশেই বিশাল এক দিঘী, 'গঙ্গাসাগর দিঘী'! ন্যূনতম সাড়ে ছয় লক্ষ স্কোয়ার ফিটের এই দিঘী অযথাই পড়ে আছে এবং এটা সরকারী জায়গা। এরা ইচ্ছা করলে বাজারটা বিনষ্ট না-করে এই দিঘী ভরাট করেও অনেকটা জায়গার ব্যবস্থা করতে পারে।
কিন্তু এরা এটা করবে না। শ্লা, এরা জাংক ফুড খাওয়া ফার্মের মুরগির বাচ্চা, এরা কী বুঝবে ঐতিহ্য কাকে বলে!

এডিবি নামের লালমুখো বাঁদর এবং ভারতের দাদারা নিজেদের দেশের স্খাপনাগুলো বুকে আগলে রাখবে। লোকজনকে দেখিয়ে দেখিয়ে পয়সা লুটবে।
ওহে, দাদারা, তোমাদের তাজমহল গুঁড়িয়ে দাও না দেখি হে, বাপু। এটা ভেঙ্গে একটা ওভারব্রীজ বানাও দিকি, শাঁ-শাঁ করে গাড়ি যাবে যেটা দেখে প্রয়োজনে আমরা মুত্র চেপেও হলেও বলব, ওয়াও, কী সোন্দর-কী সোন্দর! আর তাজমহল নামের এই সাদা ভবনটায় আছেটা কী, বা...?

আমরা জানি, রেল বলি, আর এডিবি, ভারত সবাই ক্ষমতাসীন দলের কাঁধে বন্দুক রেখে আমাদেরকে শিকার করবে। এতে কোনো সন্দেহ নাই, আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় পোষা কর্মচারী, এরা আমাদের টাকায় কেনা অস্ত্রগুলো আমাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে। ক্ষমতাসীন দলগুলো তাদের হলুদ দাঁত বের করে যখন বিজয়ের হাসি হাসবে তখন আমরা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করব।
শেষ হাসিটা হাসব আমরাই, সবগুলো দাঁত বের করে। যার নমুনা আমরা দেখেছি, চারটা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। এ তো কেবল তবলার ঠুকঠাক, গান তো এখনও শুরু হয়নি...।
 

সহায়ক সূত্র:
১. ভাল দাম পেলে: http://tinyurl.com/ksu6jl4



*গঙ্গাসাগর, ছবি ঋণ: সাদিক মোহাম্মদ আলম  
**কালের কন্ঠ: http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1276&cat_id=1&menu_id=56&news_type_id=1&index=9#.Ub7VgthCLFw


***এরা ভেঙ্গে ফেলতে চাইছে চন্দনসার এলাকার তিন-তিনটি খাদ্য গুদাম ১০০ বছরের পুরনো ব্রিটিশ স্থাপনা। অথচ এখানে রয়েছে তিন-তিনটে লাইন! একটায় গাড়ি গেল, একটায় আসল, অন্যটায় শান্টিং করলেও এখানে তিনটে লাইনের বেশি প্রয়োজন থাকার প্রশ্নই আসে না কারণ এটা স্টেশন না যে এখানে চৌদ্দটা লাইনের প্রয়োজন হবে:

 

Monday, June 17, 2013

ভাল দাম পেলে...!

পূর্বেও লিখেছিলাম, আমি যে বাড়িটায় থাকি এটা ব্রিটিশদের করা। এই বুড়া বাড়িটার বয়স ১০০ ছুঁইছুঁই! অনেকে বলে বেড়ান, এটা ভূতের বাড়ি। বলুক, তাতে আমার কী! ভূত তার মত থাকে, আমি আমার মত থাকি, সমস্যা হয় না, চলে যায়...।

কিন্তু এটা অনেকে জানেন না যে বাড়িটা অভিশপ্ত। এ আটকে ফেলেছে আমাকে! সবার হাতে যখন একটা করে ক্যারিয়ার তখন আমার হাতে টিফিন-ক্যারিয়ার! এর পেছনে এই অভিশপ্ত বাড়িটা যে কলকাঠি নাড়েনি এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না! তবুও এই বাড়িটা আমি এই গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর বাড়িটার সঙ্গেও অদলবদল করার গোপন কোনো ইচ্ছা পোষণ করি না!

অনেকের হয়তো মনে আছে মাত্র কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ভারত করে দিয়েছিল বলে, পেছনে তিন চাপড় মেরে, আমরা আমাদের সমস্ত নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছিলাম যেন ভারত তার মালসামান নিয়ে যেতে পারে। লক্ষ-লক্ষ মানুষের বারোটা বাজিয়ে, জীব-বৈচিত্রের তেরোটা বাজিয়ে...! [১]
আমরা খুবই-ই অমায়িক গুখোর! আমরা অল্প কয়টা টাকা পেলে অবলীলায় মাকেও বিক্রি করে দেই- মার কিডনি, ফুসফুস, লিভার, সব-সব...।

হালে এডিবি এবং ভারত মিলে নতুন একটা ঢং শুরু করেছে। ডাবল রেললাইন হবে, এডিবি টাকা দেবে। আবার ভারতও টাকা দেবে আরেকটা রেললাইন বসাবার জন্য, ওটায় কেবল ভারতের গাড়িই চলবে। ভাবখানা এমন, যেই টাকা দেবে রেলবিভাগ একটা করে রেললাইন বসিয়ে দেবে!
শ্লা, আমার অনেক টাকা থাকলে রেলওয়েকে আরেকটা লাইন বসাবার জন্য টাকা দিতাম। একটা রেলগাড়ি নিয়ে সকাল-সকাল বাথরুম সারতে বেরিয়ে পড়তাম। অনেকের কাছে আইডিয়াটা ভাল নাও লাগতে পারে কিন্তু কী করা, শখ বলে কথা! টাকা নাই বলে শখ চেপে আছি আর কী...।

এখন আমাদের ধর্মবাপ এডিবি এবং আমাদের দাদাভাই ভারতের জন্য রেললাইন পাততে হবে এই দোহাই দিয়ে, বাংলাদেশ সরকার মাইলের-পর-মাইল জুড়ে, রেললাইনের দুপাশে শত-শত ফুট জায়গা অধিগ্রহন করার কাজ শুরু করেছে। এতে করে নিচিহ্ন হবে শত-শত বছর পুরনো হাট-বাজার, হাজার বছরের পুরনো মন্দির, শতবর্ষ পুরনো স্থাপনা।
বাট, হুজ কেয়ার...!

কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কী চান না চট্টগ্রাম-ঢাকা রেললাইন হোক, যাত্রার সময়টা কমে আসুক? অবশ্যই চাই, চাইব না কেন? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক জায়গায় রেলের মূল লাইনের পাশেই আরও দুইটা লাইন থাকার পরও এরা শত-শত ফুট জায়গা নিচ্ছে যেটার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। অন্য পাশ দিয়ে আবার আরও একটা লাইন আছে...।
তো, এই তিনটা লাইন সংস্কার করে নিলেই নতুন করে আর লাইনের প্রয়োজনই হয় না অনেক জায়গায়।
কিন্তু এডিবি নামের আব্বা বলেছে, ব্যস। ভারত নামের দাদারা বলেছে, ব্যস, আর যায় কোথায়, পেতে দাও...। টাকার টাকা পাইলাম, রেললাইনের রেললাইনও পাইলাম...মজার বিষয়টা এখানে অহেতুক তাই আর উল্লেখ করলাম না।

তারপরও জনস্বার্থে আমরা আমাদের নিজস্ব জায়গা দিতে রাজি তবে অহেতুক না। রেলের দুপাশেই অন্তত ৩৫ থেকে শত ফুট রেলের নিজস্ব জায়গা আছে। যথার্থ  প্রয়োজন মনে করলে আমরা আমাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে আরও না-হয় পঁচিশ-ত্রিশ ফুট জায়গা ছেড়ে দেব কিন্তু শত ফুট কেন!
এডিবি বলছে ব্রিটিশ আমলে এতো এতো জমি অধিগ্রহন করা হয়েছিল। ওরে ব্যাটা তস্কর, তোদের কাছে কী এই আঁক কষা নাই রে যে বিট্রিশ আমলে বাংলাদেশের এই আয়তনেই লোকসংখ্যা কত ছিল? তর্কের খাতিরে না-হয় ধরেই নিলুম, ধরেবেঁধে এক কোটি। এখন বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত রে? ন্যাকা, ব্যাটা তোমরা জানো না এটা, আমাদের এই দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোকসংখ্যার ঘণত্ব কত? সারা দেশে কেবল রেললাইন পাতলে লোকজন যাবেটা কোথায়, সাগরে? নাকি শ্লা তোমরা তোমাদের দেশে আমাদের দলে দলে যাওয়ার জন্য ভিসা দেবে?

এরা টাকার লোভ দেখায়। আমি এদের একজন উঁচুপদের কর্মকর্তাকে বলছিলাম, আপনারা যে বারবার বলছেন, ক্ষতিপূরণ দেবেন, নতুন করে সব করে দেবেন। আমার শতবর্ষের পুরনো ব্রিটিশদের স্থাপনা নষ্ট করে নতুন করে ঝা-চকচকে কী ছাতাফাতা বানিয়ে দেবেন আমাকে, বা...?
আরে, এরা তো হচ্ছে টবের গাছ, এরা কখনই বুঝবে না যে আমরা হচ্ছি, নারকেল গাছ! আমাদের শেকড় ছড়িয়ে থাকে অনেক দূরে। আমরা তো তোদের মত না রে, তোদের মত ফেলে দিয়ে আসি না...। আমরা বাপ-দাদাকে বুকে জাপটে ধরে আগলে ধরে রাখি বছরের-পর বছর ধরে...।


সহায়ক সূত্র:
১. তিতাস...: http://www.ali-mahmed.com/2011/12/blog-post_23.html
২. কালের কন্ঠ: http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=news&p-ub_no=1275&cat_id=1&menu_id=56&news_type_id=1&index=17#.Ub2ZqNhCLFw

Saturday, June 8, 2013

উঁচু তলার সাতকাহন: ২

আজকের অতিথি-লেখক, আবারও, EmOn SarWar 
এর পূর্বে তিনি লিখেছিলেন, উঁচু তলার সাতকাহন [১]। আজ লিখছেন:
"২০০০ এর প্রথম দশকের কোন এক নভেম্বর মাসের কথা। চাকুরির কারণে সৌদি আরব গেছি। দিন-বারোর এক রাষ্ট্রীয় সফরের প্রতিনিধি দলের লেজের আগার এক গোছা চুলের মত ঝুলে-ঝুলে নানা স্থানে যাচ্ছি। কেমন-কেমন করে যেনো পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা রাজকীয় অতিথিশালায় থাকার সুযোগ হয়ে যাচ্ছিল।

সফরের প্রথম ভাগে মদিনায় থাকতে হয়েছিল বেশ কদিন। মদিনার পবিত্র মাটিতে প্লেন ল্যান্ড করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, মদিনার বাতাস গায়ে লাগার সঙ্গে-সঙ্গে স্বর্গীয় অনুভূতিতে মুহ্যমান হয়ে পড়ব। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে যখন বিমানের দরোজা খুলে সবার আগে বেরুলাম, মুখে একটা গরম হাওয়ার ঝাপ্টা লাগলো শুধু। ভিআইপি টারমাক দিনের আলোর মত জ্বল জ্বল করছে! নিচে 'তাগিয়া-গুতরা' মাথায় বেশ কিছু সৌদি সরকারি লোক দাঁড়িয়ে আছে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। সৌদি রাজকীয় প্রহরী বাহিনির লোকজনও আছে।

প্লেনের দরজায় লাগানো হয়েছে একটা খোলা লিফ্ট, অনেকটা শোরুমে গাড়ি উঠানো নামানোর জন্য যেগুলো ব্যবহার করা হয়, সেরকম। সৌদি আরবে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বেশ স্মার্ট মানুষ, ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য। সারা জীবন কাটিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য আর রাশিয়ান ব্লকে কাজ করে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খুব অল্প সময়ে প্রটোকল পর্ব শেষ করে আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করিয়ে দিলেন। মদিনার ওবেরয় ইন্টারন্যাশেনাল হোটেল। মসজিদে নববীর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। রুমে যেয়ে কার্ডে রুমরেন্টের সুচী দেখে চোখ চড়ক গাছ! এখানে রুমের ভাড়া পজিশন ভেদে কম বেশী আছে।

'হারাম ফেসিং' (মানে মসজিদের দিকে মুখ করা) রুমের ভাড়া অন্য রুমগুলির চেয়ে প্রায় দুগুণ বেশী। থাইল্যান্ডের পাতায়ায় যেমন, সী ফেসিং রুমের ভাড়া বেশী হয়। আমাদের কক্সবাজারেও কি এমন কিনা জানা নেই। তবে এত দামী কামরা বরাদ্ধ হলেও, অবস্থান করার সময় খুবই কম। রাতে ২ ঘন্টার বেশী ঘুমানোর সময় নেই। দিনে রাতে নানা সময়ে সৌদি রয়্যাল গার্ডের সদস্যদের সাথে করিডোরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেই। আমাদের ৪ জন ছাড়া ওরা কাউকেই বিশ্বাস করে না। যেই আসুক, খুব রুক্ষ ভাব-ভংগি করে অনেক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে। প্রতিনিধি দলের সদস্যদেরও অনেক সময় ওদের হাতে হেনস্ত হতে হয়।

ওদের দলনেতা, মেজর আলি। ভাংগা-ভাংগা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। গার্ডরা, কেউ এলেই আগে আমাদের ডেকে আনে। আমরা সম্মতি দিলে, মেজর আলির কাছ থেকে আদেশ নিয়ে তারপরেই হোটেলের এ অংশে কাউকে ঢুকতে দেয়। যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিন বিকেলে হঠাৎ আমাদের কাছে খবর এলো, বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের সৌদি শাখার প্রধান তিন নেতাকে সৌদি পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। আমরা যেনো তাদের একটু ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি। প্রতিনিধি দলের, 'কাঁচা-পাকা চুলের গোঁফধারি সদা-হাস্যময়', রাজনৈতিক সমন্বয়কারি, রাষ্ট্রদুতকে বলে সৌদি বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করলেন।

পরে জানতে পেরেছিলাম, ওই নেতারা আমাদের হোটেলের গেটে এসে নিজেদের দলের নিজেদের কলহের কারণে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছিলেন। তাই সৌদি পুলিশ তাদের ধরে উত্তম-মধ্যম দিয়ে জেলে পুরে দেয়। সৌদি আরব গিয়ে দেখি, ওখানে আমাদের আগেই পৌছে গেছেন অনেক জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রায় সবাই সস্ত্রীক, আল্লাহ আর তাঁর রাসুলের কৃপা লাভের জন্য মহা উদ্যমে প্রতি ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। শুনেছি, থাইল্যান্ডে গেলে, উনারা কেউই স্ত্রীদের সাথে নিয়ে যান না। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে উনাদের যত আগ্রহ তার চেয়ে বেশি আগ্রহ আমাদের মধ্যমনির কাছে এক মুহুর্তের জন্য হলেও দেখা দেওয়া। ঢাকার 'দৌড় উদ্দিন', চট্টগ্রামের 'সোনা মিয়া চৌ' এদের মধ্যে সবচে বেশি সফল ছিলেন।

প্রতিদিন সময় কাটে নামাজ আর শপিং-এ। সারা রাত ক্কিয়াম আল লাইল এর নামাজ পড়ে, পরদিন আসর পর্যন্ত ছুটি। মাঝের দু ওয়াক্ত নামাজ, ফি আমানিল্লাহ । আসরের নামাজের আগে যখন দল বেঁধে মসজিদে ঢুকতাম, দূর থেকে 'হালকা গোলাপি' রঙ্গের ছড়াছড়িতে দেখে মনে হতে পারত, দুধ আর আলতার একটা নহর বয়ে যাচ্ছে। চার পাশে নানান দেশের সকল মানুষ দাড়িয়ে কৌতুহল নিয়ে তামাশা দেখত ।
ইফতারের প্রথম পর্ব হয় মসজিদে মাগরিবের নামাজের সময়, বাকিটা হোটেলে ফিরে। আমাদের ফ্লোরে স্পেশাল ব্যুফে লাগানো হয়েছিল। আমি যাই কিন্তু খুব একটা খেতে পারি না। লাবান আর পানি খেয়েই আমার পেট ভর্তি থাকে। কিন্তু দলের সব হোমরা-চোমরা সদস্যদের দেখে মনে হত, যেন ফাঁসির খানা খাচ্ছেন। এক্কেবারে 'Dog in the Menger' অবস্থা! জেনে, না জেনে সব কিছুই তাদের খেতে হবে। যা আছে তার আইটেম, সবই তাঁদের খাওয়া চাই।

আমরা শপিং-এ যাই। যাই মানে উনি যান- যথারীতি ওঁর সঙ্গে আমাদেরকেও যেতে হয়! উনি, উনার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সোনার গহনা, ঘরের পর্দ্দা, সুইস ঘড়ি, মাদার কেয়ারে বাচ্চাদের জিনিস, সব কিছুই দেখেন, কিন্তু কিছুই কেনেন না। আমার লজ্জা লাগে! চারদিকে এতো নিরাপত্তার লোকজনসহ কোনো দোকানে গেলে দোকানের অন্য ক্রেতারা বেরিয়ে যায়। দোকানের ম্যানেজার এসে খাতির যত্ন করে সব দেখান, দাম বলেন। কিন্তু এরপর কিছু না-কিনেই আমরা বেরিয়ে আসি।

প্রথম দিন খুব অবাক হচ্ছিলাম। পরে হোটেলে এসে দেখি, এক গৌরিসেন আছেন আমাদের দলে। যেসব জিনিস নাড়াচাড়া করা হয়েছিল, সবই উনি পরে গিয়ে কিনে নিয়ে আসেন। বুঝতে পারলাম, অপারেশন দু'পর্বে ভাগ করা। প্রথম পর্বে পর্যবেক্ষণ ও পছন্দ, দ্বিতীয় পর্বে ক্রয় ও ডেলিভারি।

আমি আরব ভুমিতে গিয়েও ভুদাই বনে গেলাম। তা এই গৌরি সেন নিঃসঙ্কোচে লুংগি-পাঞ্জাবি পড়ে পাঁচ তারা হোটেলে ঘুরে বেড়ান, শপিং করেন, খেতে যান। আমার সাথে বেশ খাতির হয়ে গেল উনার। একদিন, সোনালী ফ্রেমে বাধাই করা ক্কাবা শরীফের দরজার একটা মিনিয়েচার কপি এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন, 'আব্বা, এটা রাখেন, আপনার জন্য নিয়া আসছি'।

এই হোটেলের অন্য এক ফ্লোরে থাকতেন পাকিস্তানের নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ। আমার সঙ্গে দু'বার একই লিফ্টে সস্ত্রীক উঠানামা করেছেন। আমি প্রথমে চিনতে পারিনি! বিরলকেশ, মধ্য পঞ্চাশের মন খারাপ করা চেহারা। টাকের পেছন দিকটায় যেকটি চুল ছিল সব কাশবনের মত সাদা। আমি লিফ্টে উঠে নড করতেই বললেন, 'আপ বাংগালি হো'?
আমি বললাম, 'ইয়েস স্যার'।
উনি বললেন, 'ভেরি গুড'।
লবিতে নেমে উনি চলে গেলেন। পেছন থেকে কাবুলি সেলোয়ার-কামিজ পরা এক লোক এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'আপ, মিঞা কি সাথ হো'?
পিঠে হাত দেওয়াতে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি চোখ গরম করে বললাম, 'who is mia and who the hell are you'? লোকটি আর কিছু না-বলে কেটে পড়ল।


পরে জানতে পেরেছিলাম, নেওয়াজ শরীফকে পাকিস্তানের লোকেরা মিঞা বলে ডাকে। আমাকে প্রশ্ন করা লোকটি হয়ত 'আই এস আই'-এর এজেন্ট ছিল। আজকাল টিভিতে দেখি, নেওয়াজ শরীফের মাথায় আর টাক নেই, চুলও সব কালো। ক্ষমতা আর টাকা সবই দিতে পারে! আবুল মনসুর আহমেদ একবার বলেছিলেন, টাকা দিয়ে আর যাই হোক কিন্তু টাক সারানো যায় না; তা না হলে খাজা নাজিমুদ্দিনের মাথায় টাক থাকতো না। আজ বেঁচে থাকলে উনি লজ্জা পেতেন।

এর কিছুদিন পর ঢাকায় পারভেজ মোশারফ সাহেবের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সোনার গাঁ হোটেলের ৮ তলার করিডোরে দাঁড়িয়ে প্রায় দুমিনিট কথা বলেছিলেন তিনি। সেদিন নেওয়াজ শরীফ নির্বাসনে ছিলেন আর মোশারফ মহা দর্পে পাকিস্তান শাসন করেছেন। আজ পাশা পাল্টে গেছে। মোশারফ অপেক্ষায় আছেন, নেওয়াজ শরীফ হয়তো তাকে জেলে না-ঢুকিয়ে নির্বাসনে যাবার সুযোগ দেবেন...।"

সহায়ক সূত্র:
উঁচু তলার সাতকাহন...: http://www.ali-mahmed.com/2013/06/blog-post_7.html

Friday, June 7, 2013

উঁচু তলার সাতকাহন...

আজকের অতিথি লেখক, EmOn SarWar তিনি লিখছেন এমন এক অজানা বিষয় নিয়ে যা সচরাচর আমরা জানতে পাই না। EmOn SarWar-এর হাত ধরে আমরা ঘুরে আসি:
"আমার এই ছোট জীবনে নানান সময় অনেক বড় বড় মানুষের অতি ছোট খেদমতগার হিসাবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল।


২০০৩ সালের গোড়ার দিকের কথা। বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সের এক নম্বর ব্যক্তিকে পাহারা দেওয়ার জন্য সব সময় উনার সঙ্গে থাকতে হতো। প্রতিদিন সকালে উনি উনার ৫৩ একর এলাকা জুড়ে থাকা বিশাল বাসস্থান তথা দপ্তরের ভিতরের রাস্তায় প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে হাঁটতেন। আমাদেরকেও হাঁটতে হত তাঁর সঙ্গে। উনি মহামান্য হলেও উনার আচরণ কিংবা কথাবার্তা মোটেও মহানানুভব সুলভ ছিল না। প্রায়ই উনার কথাবার্তা আর অভিযোগ অনুযোগ আমাদের হাসি আর বিরক্তির খোরাক যোগাত।

একদিন ওনার শখ হল, গ্যারাজে গিয়ে উনার ব্যক্তিগত ডাবল ই হান্ড্রেড গাড়ীটি পরিদর্শন করবেন। বিশাল উঁচু দেওয়ালে ঘেরা কম্পাউন্ড, তার ভিতরের আবার বাউন্ডারি আর লোহার গেট দেওয়া গাড়ী রাখার স্থান। সেই সুরক্ষিত চার দেওয়ালের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে কয়েক ডজন অতি দামি গাড়ীর সাথে একটা কুঠরিতে উনার ব্যক্তিগত গাড়িটি যত্ন সহকারে রাখা, বড় কভারে ঢাকা। কভার খোলা হল, নেকাবের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো রূপসী টয়োটা সেডান, সাদা রঙের। জানতে পারলাম, একজন খেদমতগার প্রতিদিনই গাড়িটিকে দলাই-মলাই করে, ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে কিছুক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ করে।
হঠাৎ শুনি, ওঁর বিজ্ঞ মুখে দ্বিধাপুর্ণ প্রশ্ন, 'এইগুলি তো আমার গাড়ির চাক্কা না! মাত্র দুই বছর আগেই তো নতুন চাক্কা লাগাইলাম। এই গুলা তো পুরানা চাক্কা। আমরা মানুষ গরীব হইতে পারি কিন্তু আমাগো জিনিস থাকে ফিট্ফাট'।
কেউ সাহস করে বলতে পারলো না যে এই নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙ্গে, আট-দশটি ভিন্ন-ভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা কম্প্রমাইজ করে, ওঁর এই টয়োটা গাড়ির চাকা কারো পক্ষে বদল করা কিংবা চুরি করা সম্ভব নয়। যাহোক উনি খুব রাগ করলেন এবং নিজের ও ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে যারপর নাই সন্দেহ প্রকাশ করে ফিরে আসলেন।

অন্য আরেকদিনের কথা। সকাল বেলা বিরাট ঝামেলা, গাছে নাকি উনি গতকালও ৬১ টি আম গুনে রেখেছেন আজ সেটা হয়ে গেছে ৫৭ টা! উনার উক্তি, 'বেড়ায় যদি ক্ষেত খায়, তাইলে ক্যামনে কি'?
আমি মহা লজ্জা আর বিরক্তি নিয়ে আম্রপালি অনুসন্ধানের চেষ্টা করলাম, সবই বৃথা। ভবনের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক অনুসন্ধানের মত কোন প্রযুক্তি তো আর আমার হাতে ছিল না।

একবার উনার নানা ধরনের পাখি পালনের শখ হল। বাসার ঠিক পেছনের উঠানে বিশালকায় পাখির খাঁচা বানানো হল কিন্তু ঠিক উনার মন মতন হচ্ছিল না। উনার প্রশ্ন, 'আমি একজন মহামান্য, আমার আদেশ যদি ঠিকমত পালন না হয় তাইলে ক্যামনে কি'?
যাহোক, যে ধরনের নকশার কথা উনি কি বোঝাতে চাইছিলেন বেচারা ইঞ্জিনিয়ার ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। শেষে মহামান্যের ইচ্ছা মতন খাঁচা হল না তবে ইঞ্জিনিয়ারের কল্পনা থেকে বানানো খাঁচাতেই পক্ষি পালন শুরু হল।


বিশাল দীঘি গুলোতে রাজহাঁস ছাড়া হল। ওরা সাঁতরে বেড়াবে দীঘি জুড়ে। উনার ইচ্ছা, উনি যখন দীঘির পাশ দিয়ে হেঁটে যাবেন হাঁসরা কৃতজ্ঞতা ভরে প্যাঁক-প্যাঁক করে সাঁতরে বেড়াবে। কিন্তু হাঁসগুলোও মহা ত্যাঁদড়। ওই সময়টাতে কোনো মতেও তাদের পানিতে নামানো যেতো না।
কদিন পর হঠাৎ উনার মনে হলো, হাঁসের ডিম কোথায় যায়! পরদিন থেকে আদেশ হল, প্রতিদিন সকালে, উনার প্রাতঃভ্রমন কালে, হাঁসের দায়িত্বপ্রাপ্ত খেদমত্গার হাতে ডিমের টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। উনি ধরে এবং গুণে দেখবেন। যে আদেশ সে কাজ! সকাল বেলা এক বেচারা হাতে ডিমের টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। উনি যাবার সময় মহা আগ্রহে ধরে আর গুণে দেখেন। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই উনার মনে নতুন প্রশ্ন: আচ্ছা, ওই ব্যাটা কি প্রতিদিন আমারে একই ডিম দেখায়?
লে হালুয়া!

কোথা থেকে একবার কিছু ছোট-ছোট কার্পেট ডগ নিয়ে আসা হল। সে গুলোকে নিয়ে উনার, উনার স্ত্রী আর পুত্রবধুর মহা সোহাগ আর আদিখ্যেতা। সকালে হাঁটতে বেরুলে চার পাঁচটা কুকুর পায়ের চার পাশে ঘুর ঘুর করতে থাকে। মাঝে মাঝে ঘেউ-ঘেউ করে জুতা বা প্যান্টের কিনারায় নোখের আঁচড় কাটে। মহা জ্বালা হয়ে দা!ড়াল!


একদিন হাঁটার সময় হঠৎ পেছন থেকে ক্যাঁ-ক্যাঁ-ক্যাঁ শব্দ! তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর লেজ গুটিয়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে। মহামান্য ছুটে গেলেন কুকুরটির কাছে। মুখে অনেক আদর আর সোহাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি হইসে? তোমারে পা দিয়া মাড়ায়া দিসে? কে দিসে'?
আমি প্রমাদ গুনলাম মনে মনে, এই বুঝি কুকুরটা অভিমান ভরা চোখে একটা পা বাড়িয়ে আমাকে দেখিয়ে দেবে! যাক, সে যাত্রায় বেঁচে গিয়ে ছিলাম, কুত্তার হাত থেকে...।"

অটল ইমারত এবং...!

রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার পর একজন রাজমিস্ত্রি আমার বাসায় এসেছেন। এই বয়স্ক মানুষটা অনেকটা সুফি টাইপের! কোনো এক বিচিত্র কারণে আমাকে পছন্দ করেন। তাঁর সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করেন।
ওদিন বলছিলেন, 'এই দেখেন, দেশে যে বিল্ডিং সব পইরা যাইতাছে এর কারণ হইল আমাগো লোভ। সব দুই নাম্বার জিনিস...'।
আমি খুব একটা আগ্রহ দিয়ে শুনি না কারণ এ তো আর নতুন কিছু না! কিন্তু তার পরের কথা আমাকে চমকে দেয়! তিনি বলছিলেন, 'আপনে কি এখনকার রড দেখছেন, প্যাচাইন্যা'?
আমি বললাম, 'জ্বী, এর পেছনে কারণও আছে। যতটুকু জানি, কোনো কিছু প্যাঁচানো থাকলে, এর সহনশক্তি বেড়ে যায়'।

তিনি বাবরি চুল দুলিয়ে বললেন, 'ভালই বলছেন কিন্তুক...। আপনে কি দেখছেন, এই সব রড বাড়ি করার আগে মানুষ দিনের-পর দিন বাইরে ফালায়া রাখে। রডে জং ধরে! আমরা যারা পুরানা মিস্ত্রি আছি হেরা শিরীষ কাগজ দিয়া রডের জং সাফ করি। কিন্তু প্যাচাইনা রডের কারণে রডের জং সাফ করা যায় না, যতই চেষ্টা করেন এইডা কিন্তু সম্ভব হইব না। আপনে যখন ঢালাই দিবেন তখন এই রডের জংয়ের কারণে সিমেন্ট ভাল কইরা আটকাইতে পারব না। বিল্ডিংডা দুর্বল হইয়া যাইব। একটা সময় ভাইঙ্গা পড়ব'।
তাঁর কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে মনে হয়েছে কিন্তু এই বিষয়ে তেমন জ্ঞান নাই আমার। আমার বন্ধুতালিকায় কোনো ইঞ্জিনিয়ার সাহেব থেকে থাকলে এই বিষয়ে জানালে সুখি হই।
...
কালকের (৫ জুন, ২০১৩) দৈনিক সমকালের খবর হচ্ছে, 'অপ্রীতিকর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল অপারেটর গ্রেফতার'। শিরোনাম দিয়ে পাঠক কিছুই বুঝতে পারবে না। তবে সংবাদটা পড়লে জানা যাবে যেটা, "...সেতুর প্রধান প্রকৌশলী জানান, ...'সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এমআর হাসান ...বঙ্গবন্ধু সেতুর পূ্র্বপাড়ে তিনি দুটি গাড়ির টোল না দিয়ে সেতু পার হতে গেলে বিনা টোলে সেতু পারের সিগন্যাল পেয়ে টোল অপারেটর আসাদ আলী গাড়ি দুটির গতিরোধ করেন। বিচারপতির নির্দেশে সেতু পশ্চিম থানার পুলিশ আসাদকে আটক করে'।"
পরে আমরা জানতে পাই, দায়িত্বরত আসাদ আলীকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এটা ছাপা হয়েছে সমকালের ১৯ পৃষ্ঠায়, সিঙ্গেল কলামে। সমকালের সম্পাদকের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এবং বয়স হয়েছে, এখন তাঁকে এটা শেখানোটা এক পন্ডশ্রম যে, কোন খবরের কতটা গুরুত্ব, কোন খবর কোন পাতায় ছাপা উচিত বা শিরোনামই কী হবে! আর পাঠক ৮০০ থেকে ১০০০ পয়সা দিয়ে পত্রিকার প্রথম পাতার ছাতাফাতা নিউজ পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকে না।

যাই হোক, বিচারপতির এই সংবাদটার বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বিচারপতি এমআর হাসানের কী এটা জানা ছিল না যে, টোল না-দিয়ে সেতু পার হওয়া যায় না? একজন বিচারপতির এটা জানা নেই! 

এদিকে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার সমকালকে বলেন, "...টোল আদায়কারীর আচরণগত কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে..."।
ভাল, টোল আদায়কারীর আচরণে সমস্যা ছিল। মানুষটার শাস্তি পাওনা ছিল, বেশ। আমরা পূর্বে এমনটা দেখেছি, কোনো কারণে বিচারপতি ক্ষুব্ধ হলে সংশ্লিষ্ট মানুষটিকে বা সেই সংস্থার কর্ণধারকে কোর্টে ডেকে নেয়া হয়েছে। একটা ন্যূনতম ট্রায়াল হয়েছে, প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থাও হয়েছে। পূর্বে একজন ট্রাফিক পুলিশের আচরণের কারণে এবং একজন আইজির আচরণ-বক্তব্য সন্তোষজনক না-হওয়ার কারণে তাকে ২০০০ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই জরিমানার কারণে সেই আইজিকে চাকুরিও হারাতে হয়েছিল।

এই ক্ষেত্রেও অন্তত এমনটা হলেও আমরা সুখি হতাম। কিন্তু এই প্রশ্নটা থেকেই যায়, বিচারপতির এটা জানা নেই যে টোল দিতে হয়?
আমরা জানি, একজন বিচারপতির এক্সেস ক্ষমতা বিপুল। তিনি অনেক ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু, একটা কিন্তু রয়েই যায়! সুপ্রিমকোর্ট আমাদের শেষ ভরসাস্থল। এই অটল স্থাপনা আমাদের অহংকার। কিন্তু যখন কোনো কারণে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের মনে বিন্দুমাত্র বিশ্বাসের ফাটল ধরে তখন আমরা আতঙ্কিত হই...।