আজকের অতিথি লেখক, EmOn SarWar তিনি লিখছেন এমন এক অজানা বিষয় নিয়ে যা সচরাচর আমরা জানতে পাই না। EmOn SarWar-এর হাত ধরে আমরা ঘুরে আসি:
"আমার এই ছোট জীবনে নানান সময় অনেক বড় বড় মানুষের অতি ছোট খেদমতগার হিসাবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
২০০৩ সালের গোড়ার দিকের কথা। বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সের এক নম্বর ব্যক্তিকে পাহারা দেওয়ার জন্য সব সময় উনার সঙ্গে থাকতে হতো। প্রতিদিন সকালে উনি উনার ৫৩ একর এলাকা জুড়ে থাকা বিশাল বাসস্থান তথা দপ্তরের ভিতরের রাস্তায় প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে হাঁটতেন। আমাদেরকেও হাঁটতে হত তাঁর সঙ্গে। উনি মহামান্য হলেও উনার আচরণ কিংবা কথাবার্তা মোটেও মহানানুভব সুলভ ছিল না। প্রায়ই উনার কথাবার্তা আর অভিযোগ অনুযোগ আমাদের হাসি আর বিরক্তির খোরাক যোগাত।
একদিন ওনার শখ হল, গ্যারাজে গিয়ে উনার ব্যক্তিগত ডাবল ই হান্ড্রেড গাড়ীটি পরিদর্শন করবেন। বিশাল উঁচু দেওয়ালে ঘেরা কম্পাউন্ড, তার ভিতরের আবার বাউন্ডারি আর লোহার গেট দেওয়া গাড়ী রাখার স্থান। সেই সুরক্ষিত চার দেওয়ালের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে কয়েক ডজন অতি দামি গাড়ীর সাথে একটা কুঠরিতে উনার ব্যক্তিগত গাড়িটি যত্ন সহকারে রাখা, বড় কভারে ঢাকা। কভার খোলা হল, নেকাবের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো রূপসী টয়োটা সেডান, সাদা রঙের। জানতে পারলাম, একজন খেদমতগার প্রতিদিনই গাড়িটিকে দলাই-মলাই করে, ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে কিছুক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ করে।
হঠাৎ শুনি, ওঁর বিজ্ঞ মুখে দ্বিধাপুর্ণ প্রশ্ন, 'এইগুলি তো আমার গাড়ির চাক্কা না! মাত্র দুই বছর আগেই তো নতুন চাক্কা লাগাইলাম। এই গুলা তো পুরানা চাক্কা। আমরা মানুষ গরীব হইতে পারি কিন্তু আমাগো জিনিস থাকে ফিট্ফাট'।
কেউ সাহস করে বলতে পারলো না যে এই নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙ্গে, আট-দশটি ভিন্ন-ভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা কম্প্রমাইজ করে, ওঁর এই টয়োটা গাড়ির চাকা কারো পক্ষে বদল করা কিংবা চুরি করা সম্ভব নয়। যাহোক উনি খুব রাগ করলেন এবং নিজের ও ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে যারপর নাই সন্দেহ প্রকাশ করে ফিরে আসলেন।
অন্য আরেকদিনের কথা। সকাল বেলা বিরাট ঝামেলা, গাছে নাকি উনি গতকালও ৬১ টি আম গুনে রেখেছেন আজ সেটা হয়ে গেছে ৫৭ টা! উনার উক্তি, 'বেড়ায় যদি ক্ষেত খায়, তাইলে ক্যামনে কি'?
আমি মহা লজ্জা আর বিরক্তি নিয়ে আম্রপালি অনুসন্ধানের চেষ্টা করলাম, সবই বৃথা। ভবনের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক অনুসন্ধানের মত কোন প্রযুক্তি তো আর আমার হাতে ছিল না।
একবার উনার নানা ধরনের পাখি পালনের শখ হল। বাসার ঠিক পেছনের উঠানে বিশালকায় পাখির খাঁচা বানানো হল কিন্তু ঠিক উনার মন মতন হচ্ছিল না। উনার প্রশ্ন, 'আমি একজন মহামান্য, আমার আদেশ যদি ঠিকমত পালন না হয় তাইলে ক্যামনে কি'?
যাহোক, যে ধরনের নকশার কথা উনি কি বোঝাতে চাইছিলেন বেচারা ইঞ্জিনিয়ার ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। শেষে মহামান্যের ইচ্ছা মতন খাঁচা হল না তবে ইঞ্জিনিয়ারের কল্পনা থেকে বানানো খাঁচাতেই পক্ষি পালন শুরু হল।
বিশাল দীঘি গুলোতে রাজহাঁস ছাড়া হল। ওরা সাঁতরে বেড়াবে দীঘি জুড়ে। উনার ইচ্ছা, উনি যখন দীঘির পাশ দিয়ে হেঁটে যাবেন হাঁসরা কৃতজ্ঞতা ভরে প্যাঁক-প্যাঁক করে সাঁতরে বেড়াবে। কিন্তু হাঁসগুলোও মহা ত্যাঁদড়। ওই সময়টাতে কোনো মতেও তাদের পানিতে নামানো যেতো না।
কদিন পর হঠাৎ উনার মনে হলো, হাঁসের ডিম কোথায় যায়! পরদিন থেকে আদেশ হল, প্রতিদিন সকালে, উনার প্রাতঃভ্রমন কালে, হাঁসের দায়িত্বপ্রাপ্ত খেদমত্গার হাতে ডিমের টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। উনি ধরে এবং গুণে দেখবেন। যে আদেশ সে কাজ! সকাল বেলা এক বেচারা হাতে ডিমের টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। উনি যাবার সময় মহা আগ্রহে ধরে আর গুণে দেখেন। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই উনার মনে নতুন প্রশ্ন: আচ্ছা, ওই ব্যাটা কি প্রতিদিন আমারে একই ডিম দেখায়?
লে হালুয়া!
কোথা থেকে একবার কিছু ছোট-ছোট কার্পেট ডগ নিয়ে আসা হল। সে গুলোকে নিয়ে উনার, উনার স্ত্রী আর পুত্রবধুর মহা সোহাগ আর আদিখ্যেতা। সকালে হাঁটতে বেরুলে চার পাঁচটা কুকুর পায়ের চার পাশে ঘুর ঘুর করতে থাকে। মাঝে মাঝে ঘেউ-ঘেউ করে জুতা বা প্যান্টের কিনারায় নোখের আঁচড় কাটে। মহা জ্বালা হয়ে দা!ড়াল!
একদিন হাঁটার সময় হঠৎ পেছন থেকে ক্যাঁ-ক্যাঁ-ক্যাঁ শব্দ! তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর লেজ গুটিয়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে। মহামান্য ছুটে গেলেন কুকুরটির কাছে। মুখে অনেক আদর আর সোহাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি হইসে? তোমারে পা দিয়া মাড়ায়া দিসে? কে দিসে'?
আমি প্রমাদ গুনলাম মনে মনে, এই বুঝি কুকুরটা অভিমান ভরা চোখে একটা পা বাড়িয়ে আমাকে দেখিয়ে দেবে! যাক, সে যাত্রায় বেঁচে গিয়ে ছিলাম, কুত্তার হাত থেকে...।"
"আমার এই ছোট জীবনে নানান সময় অনেক বড় বড় মানুষের অতি ছোট খেদমতগার হিসাবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
২০০৩ সালের গোড়ার দিকের কথা। বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সের এক নম্বর ব্যক্তিকে পাহারা দেওয়ার জন্য সব সময় উনার সঙ্গে থাকতে হতো। প্রতিদিন সকালে উনি উনার ৫৩ একর এলাকা জুড়ে থাকা বিশাল বাসস্থান তথা দপ্তরের ভিতরের রাস্তায় প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে হাঁটতেন। আমাদেরকেও হাঁটতে হত তাঁর সঙ্গে। উনি মহামান্য হলেও উনার আচরণ কিংবা কথাবার্তা মোটেও মহানানুভব সুলভ ছিল না। প্রায়ই উনার কথাবার্তা আর অভিযোগ অনুযোগ আমাদের হাসি আর বিরক্তির খোরাক যোগাত।
একদিন ওনার শখ হল, গ্যারাজে গিয়ে উনার ব্যক্তিগত ডাবল ই হান্ড্রেড গাড়ীটি পরিদর্শন করবেন। বিশাল উঁচু দেওয়ালে ঘেরা কম্পাউন্ড, তার ভিতরের আবার বাউন্ডারি আর লোহার গেট দেওয়া গাড়ী রাখার স্থান। সেই সুরক্ষিত চার দেওয়ালের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে কয়েক ডজন অতি দামি গাড়ীর সাথে একটা কুঠরিতে উনার ব্যক্তিগত গাড়িটি যত্ন সহকারে রাখা, বড় কভারে ঢাকা। কভার খোলা হল, নেকাবের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো রূপসী টয়োটা সেডান, সাদা রঙের। জানতে পারলাম, একজন খেদমতগার প্রতিদিনই গাড়িটিকে দলাই-মলাই করে, ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে কিছুক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ করে।
হঠাৎ শুনি, ওঁর বিজ্ঞ মুখে দ্বিধাপুর্ণ প্রশ্ন, 'এইগুলি তো আমার গাড়ির চাক্কা না! মাত্র দুই বছর আগেই তো নতুন চাক্কা লাগাইলাম। এই গুলা তো পুরানা চাক্কা। আমরা মানুষ গরীব হইতে পারি কিন্তু আমাগো জিনিস থাকে ফিট্ফাট'।
কেউ সাহস করে বলতে পারলো না যে এই নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙ্গে, আট-দশটি ভিন্ন-ভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা কম্প্রমাইজ করে, ওঁর এই টয়োটা গাড়ির চাকা কারো পক্ষে বদল করা কিংবা চুরি করা সম্ভব নয়। যাহোক উনি খুব রাগ করলেন এবং নিজের ও ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে যারপর নাই সন্দেহ প্রকাশ করে ফিরে আসলেন।
অন্য আরেকদিনের কথা। সকাল বেলা বিরাট ঝামেলা, গাছে নাকি উনি গতকালও ৬১ টি আম গুনে রেখেছেন আজ সেটা হয়ে গেছে ৫৭ টা! উনার উক্তি, 'বেড়ায় যদি ক্ষেত খায়, তাইলে ক্যামনে কি'?
আমি মহা লজ্জা আর বিরক্তি নিয়ে আম্রপালি অনুসন্ধানের চেষ্টা করলাম, সবই বৃথা। ভবনের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক অনুসন্ধানের মত কোন প্রযুক্তি তো আর আমার হাতে ছিল না।
একবার উনার নানা ধরনের পাখি পালনের শখ হল। বাসার ঠিক পেছনের উঠানে বিশালকায় পাখির খাঁচা বানানো হল কিন্তু ঠিক উনার মন মতন হচ্ছিল না। উনার প্রশ্ন, 'আমি একজন মহামান্য, আমার আদেশ যদি ঠিকমত পালন না হয় তাইলে ক্যামনে কি'?
যাহোক, যে ধরনের নকশার কথা উনি কি বোঝাতে চাইছিলেন বেচারা ইঞ্জিনিয়ার ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। শেষে মহামান্যের ইচ্ছা মতন খাঁচা হল না তবে ইঞ্জিনিয়ারের কল্পনা থেকে বানানো খাঁচাতেই পক্ষি পালন শুরু হল।
বিশাল দীঘি গুলোতে রাজহাঁস ছাড়া হল। ওরা সাঁতরে বেড়াবে দীঘি জুড়ে। উনার ইচ্ছা, উনি যখন দীঘির পাশ দিয়ে হেঁটে যাবেন হাঁসরা কৃতজ্ঞতা ভরে প্যাঁক-প্যাঁক করে সাঁতরে বেড়াবে। কিন্তু হাঁসগুলোও মহা ত্যাঁদড়। ওই সময়টাতে কোনো মতেও তাদের পানিতে নামানো যেতো না।
কদিন পর হঠাৎ উনার মনে হলো, হাঁসের ডিম কোথায় যায়! পরদিন থেকে আদেশ হল, প্রতিদিন সকালে, উনার প্রাতঃভ্রমন কালে, হাঁসের দায়িত্বপ্রাপ্ত খেদমত্গার হাতে ডিমের টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। উনি ধরে এবং গুণে দেখবেন। যে আদেশ সে কাজ! সকাল বেলা এক বেচারা হাতে ডিমের টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। উনি যাবার সময় মহা আগ্রহে ধরে আর গুণে দেখেন। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই উনার মনে নতুন প্রশ্ন: আচ্ছা, ওই ব্যাটা কি প্রতিদিন আমারে একই ডিম দেখায়?
লে হালুয়া!
কোথা থেকে একবার কিছু ছোট-ছোট কার্পেট ডগ নিয়ে আসা হল। সে গুলোকে নিয়ে উনার, উনার স্ত্রী আর পুত্রবধুর মহা সোহাগ আর আদিখ্যেতা। সকালে হাঁটতে বেরুলে চার পাঁচটা কুকুর পায়ের চার পাশে ঘুর ঘুর করতে থাকে। মাঝে মাঝে ঘেউ-ঘেউ করে জুতা বা প্যান্টের কিনারায় নোখের আঁচড় কাটে। মহা জ্বালা হয়ে দা!ড়াল!
একদিন হাঁটার সময় হঠৎ পেছন থেকে ক্যাঁ-ক্যাঁ-ক্যাঁ শব্দ! তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর লেজ গুটিয়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে। মহামান্য ছুটে গেলেন কুকুরটির কাছে। মুখে অনেক আদর আর সোহাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি হইসে? তোমারে পা দিয়া মাড়ায়া দিসে? কে দিসে'?
আমি প্রমাদ গুনলাম মনে মনে, এই বুঝি কুকুরটা অভিমান ভরা চোখে একটা পা বাড়িয়ে আমাকে দেখিয়ে দেবে! যাক, সে যাত্রায় বেঁচে গিয়ে ছিলাম, কুত্তার হাত থেকে...।"
3 comments:
শুভ ভাই, জোস হইছে,,,ইমন ভাইরে আমার শুভেচ্চা।
mohamannor nam bolen?
এটা আমি জানব কেমন করে! আমি তো এই লেখার পাঠক মাত্র, মুগ্ধপাঠক!@Raha
Post a Comment