Search

Monday, July 1, 2013

সুনীলের ৭০ বছরের জেল!

প্রিয় সুনীল, তুমি ওপারের রথে বসে,
পুনর্জন্মের স্বপ্ন দেখতে যেও না
এ বড় ভয়ংকর স্বপ্ন...

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি' নামে তাঁর একটা কবিতা আছে:
"প্রিয় ইন্দিরা, তুমি বিমানের জানলায় বসে,
গুজরাটের বন্যা দেখতে যেও না
এ বড় ভয়ঙ্কর খেলা...
তোমার শুকনো ঠোঁট কতদিন সেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি,...
ইন্দিরা, তখন সেই বন্যার দৃশ্য দেখেও একদিন তোমার মুখ ফস্কে
বেরিয়ে যেতে পারে, বাঃ কী সুন্দর...!"

এই কবিতাটি এখানে আবারও দেয়ার কারণ হচ্ছে, তখন ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায়। বিপুল ক্ষমতা ইন্দিরার। কিন্তু এই কবিতার কারণে ইন্দিরা সুনীলের প্রতি একটা শব্দ উচ্চারণ করারও স্পর্ধা দেখিয়েছেন বলে আমার জানা নাই...। সুনীল মরে বেঁচে গেছেন এই কথা বলা চলে না কারণ হিন্দু ধর্মে পুনর্জন্ম বলে একটা বিষয় আছে। কে জানে, সুনীল কোথায় পুনরুদ্ভূত হবেন! তবে সুনীল পরের জন্মে এই দেশে জন্ম না-নিলেই ভাল করবেন কারণ...?

ভাগ্যিস, সুনীল বাংলাদেশে জন্মাননি (****)! তাহলে লেখার কারণে তাঁর ৭০ বছরের জেল হয়ে যেত।

*একবার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, অহেতুক ইংরাজি শব্দ লেখব না কিন্তু আফসোস, প্রতিজ্ঞা রাখতে পারিনি! আজ আরেকটা প্রতিজ্ঞা করি, ভুলেও 'হায়েনা' শব্দটা লেখব না...! হে প্রভু, আমাকে আমার প্রতিজ্ঞা পালনের শক্তি দাও। আমিন!

**আমার সুহৃদ, প্রিয় মানুষেরা আমার লেখালেখি নিয়ে বড়ই উদ্বিগ্ন থাকেন। এদেরকে এটা আমি বোঝাতে পারি না, যে-দেশে প্রধানমন্ত্রীর প্রাণের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে হয় সেই দেশে আমার মত 'তিন টাকা দামের কলমবাজের' জন্য উদ্বিগ্ন হওয়াটা হাস্যকর, অতি হাস্যকর!

সেইসব সুহৃদদের নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই! কিন্তু কিছু পাঠকও যখন তাঁদের উদ্বিগ্নতা আলাদা করে জানান তখন খানিকটা হতবুদ্ধি হয়ে যাই। এই অসহ্য ভালবাসা সহ্য হয় না!
এমনই একজনকে আমি লিখেছিলাম, কোথাও-না কোথাও, কেউ-না-কেউ, কখনও-না-কখনও আমার জন্য, বুকের ভেতর থেকে পাক খেয়ে ওঠা তাঁদের শুভেচ্ছাই আমার রক্ষাকবচ, বর্ম...।

***লেখালেখির উপর যে , অন্যায়, অনায্য ভার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এর সহজ বুদ্ধি হলো, 'হেই বেইবি, ওয়ানা...' এই টাইপের লেখালেখি করা। তারচেয়ে সহজ বুদ্ধি হলো, লেখালেখি ছেড়ে দেওয়া! কিন্তু আমি যে দু-কলম লেখার চেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই পারি না যে, ছাই!
এমনিতে 'লেখালেখির ভূত' নামের রাস্কেলটাকে খুঁজছি। পেলেই হয়, 'এক্কেবারে প্যাটা গেলে ফেলব'। অবশ্য এই কাজটা কেমন করে করা হয় এই সম্বন্ধে আমার ভাল ধারণা নাই। সম্ভবত অমানুষিক শক্তি প্রয়োগে পেটের নাড়িভুঁড়ি ভর্তা করে ফেলা হয়। যাই হোক, আগে ব্যাটাকে তো হাতের নাগালে পাই...।

এ সত্য সুনীলের জন্ম বাংলাদেশেই, অবিভক্ত ভারতে। কিন্তু...কিন্তু এদেশের কোনো কিছুরই তো তাঁকে স্পর্শ করার যো ছিল নেই...।
সুনীল আপাদমস্তক একজন ভারতীয় ছিলেন, মৃত্যুর আগ-পর্যন্ত। এঁরা অবলীলায় বিস্মৃত হন, এঁদের আদি শেকড়ের কথা। এঁদের অধিকাংশেরই শেকড়ের জন্য ন্যূনতম আবেগ, ভালবাসাও আমরা দেখতে পাই না। আমাদের দেশে যখন আসেন তখন কেউ জামাইবাবু, কেউ দাদাবাবু বনে যান কিন্তু যেই মাত্র ভারতে পা রাখেন তখন পা থেকে মাথা পর্যন্ত আগ্রাসী ভারতের একজন যোগ্য প্রতিনিধি। যাই হোক, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ...।

আমার লেখার ফাঁকটা আমি স্বীকার করি, "...ভাগ্যিস, সুনীল বাংলাদেশে জন্মাননি...! তবে এও সবিনয়ে বলি, এই লেখায় আসলে সুনীলের জন্মটা রূপক অর্থে বলা, যেমনটা ৭০ বছরের জেল!

(একবার এক আমলা কবিতাটা ইন্দিরাকে শুনিয়েছিলেন। পুরোটা শুনে হেসে ইন্দিরা একটা শব্দ বলেছিলেন, 'Stupid'. এটা সুনীল তাঁর এক বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন)

No comments: