আজকের অতিথি লেখক, Adil Abir (https://www.facebook.com/adil.abir.3)। তিনি লিখেছেন অতি বিচিত্র এক বিষয় নিয়ে:
"সারা সপ্তাহ পাথর-ভাঙা পরিশ্রম করে ঘনিষ্ট বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার জন্য বাগানবাড়ী টাইপ ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালাম।
দুইটা রুম আমার নামে, ফ্লোরের অন্য ফ্ল্যাট ও রুমগুলো ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়া দেয়া, বেশীর ভাগই ইয়ার দোস্ত। হৈ-হল্লা আড্ডাবাজির উপযুক্ত স্থান। যদিও খুব বেশী যাওয়া হয় না, বেশীক্ষণ থাকাও হয় না।
মূলগেটের তালায় চাবি ঢোকালাম, নাম্বার ও মেলালাম, অবাক কাণ্ড তালা খুলছে না! গোছার চাবিও ঠিক, নাম্বারগুলোও একটা একটা করে মেলালাম। উঁহু, সামথিং রং! উপরে ফোন দিলাম চরম বিরক্তি নিয়ে, নিশ্চয়ই কেউ তালাচাবির কোনো কেরামতি করেছে, ভাবছি কোনো অঘটন নয় তো! পাক্কা ৩০ সেকেন্ড রিং হয়ে থেমে গেল, ব্যাটা রিসিভ করল না। অন্য একটা নাম্বারে ট্রাই করলাম, বন্ধ। পরপর ছয়টা নাম্বার বন্ধ।
এবার গালাগাল দিতে লাগলাম জোরে জোরে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে খানখান, পাক্কা ১৭ মিনিট দাঁড়িয়ে। আশেপাশের যারাই আমার খিস্তিখেউড় শুনেছে জবাবে বিরক্তি আর ভ্রুকুটি দিয়ে, জবাবের সঙ্গে সশব্দে জানালা-দরোজা বন্ধ করে গালিটাও ফেরত দিল কিন্তু আমার তিন তলার কারো ছায়াটুকু ও নজরে পড়ল না।
দারওয়ানকে খোঁজা অর্থহীন কেবল রাতেই সে থাকে, থাকার কথা। তা ২০ ফুট উচু দেয়াল টপকানোর চিন্তা করতে করতে দেখি ল্যাপটপ হাতে, অভিজাত বেসরকারি সংস্থার কালো পোশাক পরে আমারই নিয়োগ করা দারওয়ান কর্পোরেট ল্যাঙ্গুয়েজে জানতে চাচ্ছে, আমি কাকে চাচ্ছি?
হারামজাদা, কষে গালি দিতে গিয়েও তাঁর স্থির দৃষ্টি দেখে সামলে নিলাম নিজেকে।
আমার মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল, যেন স্বপ্নের ঘোরে আছি।
চোখ কচলে বাস্তবে আসতেই দেখি নৈশপ্রহরী ল্যাপটপের স্ক্রীন ধরে বলছে, 'স্যার, আগে প্রমাণ করুন আপনি এলিয়েন বা রোবট নন, যা লেখা আছে নিচের ফাঁকা জায়গায় টাইপ করুন'।
মাথা কাজ করছে না, সম্মোহিতের মত টাইপ করলাম। তালার ব্র্যান্ডের নাম, সিক্যুরিটি কোড , পাসওয়ার্ড সব দেয়ার পর প্রহরী একগাদা ফটো এ্যালবাম খুলে বেছে বেছে ৫ টা ফটো আলাদা করলো।
অবস্থা এমন দাঁড়াল যে আমিই আমাকে সন্দেহ করা শুরু করলাম! এটা কি আমি?
ভাবনার ডালপালা মেলার আগেই নৈশ প্রহরী মিয়া, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুন্নী সাহা ভাতের হোটেল'-এর সামনে দাঁড়ানো লেডী গাগার মত দেখতে এক বঙ্গললনার ছবি দেখিয়ে বলল, 'এই মেয়েটাকে চেনেন? ছবির নিচে এম.সি.কিউ'র মত ৬ জনের নাম লেখা। আমার বাবুর্চির নামটা ১ নম্বরে, দোতালার সদ্য বিবাহিতা সালমা, ৬ তলার আন্টি আর তিনজন অপরিচিত মেয়ের নাম। লেডী গাগারে সনাক্ত করতে পারলাম না।
আমি ভুলেই গেছি আসলে এখানে কি উদ্দেশ্যে কার কাছে এসেছি। দরদর করে ঘামছি, নৈশমিয়ারে আর বিরক্তিকর লাগছে না।
সে আমাকে ঠাণ্ডা একবোতল মাম দিয়ে বলল, 'আর ৪ টি সুযোগ আছে, সনাক্ত করতে না-পারলে এই বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্যে বন্ধ। অবশ্য আপনি ২টা ছবিকে পালটাতে পারবেন উত্তর না-দিয়ে'।
দারোয়ানের মুখ দিয়ে দারোওয়ান সুলভ ভাষা শুনেও, কেন জানি কিছুটা ভাল লাগল। এই এপার্টম্যান্টে অন্তত ১০০ জন লোক বাস করে। কে কার শালা, কে কার ড্রাইভার, কে কাকে নিয়ে লিভ-টুগেদার করে, নতুন সাবলেট, বুয়া, শ্বশুর এই সব কী এই খন্ডকালিন পরিব্রাজকের পক্ষে জানা সম্ভব? দুই একজনকে যাও চেনা-চেনা লাগতেছিল, সেখানেও কনফিউশান।
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। স্লো-মোশনে বিল্ডিংটাকে আমার মাথা বরাবর নেমে আসতে দেখে...। Adil Abir
"সারা সপ্তাহ পাথর-ভাঙা পরিশ্রম করে ঘনিষ্ট বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার জন্য বাগানবাড়ী টাইপ ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালাম।
দুইটা রুম আমার নামে, ফ্লোরের অন্য ফ্ল্যাট ও রুমগুলো ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়া দেয়া, বেশীর ভাগই ইয়ার দোস্ত। হৈ-হল্লা আড্ডাবাজির উপযুক্ত স্থান। যদিও খুব বেশী যাওয়া হয় না, বেশীক্ষণ থাকাও হয় না।
মূলগেটের তালায় চাবি ঢোকালাম, নাম্বার ও মেলালাম, অবাক কাণ্ড তালা খুলছে না! গোছার চাবিও ঠিক, নাম্বারগুলোও একটা একটা করে মেলালাম। উঁহু, সামথিং রং! উপরে ফোন দিলাম চরম বিরক্তি নিয়ে, নিশ্চয়ই কেউ তালাচাবির কোনো কেরামতি করেছে, ভাবছি কোনো অঘটন নয় তো! পাক্কা ৩০ সেকেন্ড রিং হয়ে থেমে গেল, ব্যাটা রিসিভ করল না। অন্য একটা নাম্বারে ট্রাই করলাম, বন্ধ। পরপর ছয়টা নাম্বার বন্ধ।
এবার গালাগাল দিতে লাগলাম জোরে জোরে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে খানখান, পাক্কা ১৭ মিনিট দাঁড়িয়ে। আশেপাশের যারাই আমার খিস্তিখেউড় শুনেছে জবাবে বিরক্তি আর ভ্রুকুটি দিয়ে, জবাবের সঙ্গে সশব্দে জানালা-দরোজা বন্ধ করে গালিটাও ফেরত দিল কিন্তু আমার তিন তলার কারো ছায়াটুকু ও নজরে পড়ল না।
দারওয়ানকে খোঁজা অর্থহীন কেবল রাতেই সে থাকে, থাকার কথা। তা ২০ ফুট উচু দেয়াল টপকানোর চিন্তা করতে করতে দেখি ল্যাপটপ হাতে, অভিজাত বেসরকারি সংস্থার কালো পোশাক পরে আমারই নিয়োগ করা দারওয়ান কর্পোরেট ল্যাঙ্গুয়েজে জানতে চাচ্ছে, আমি কাকে চাচ্ছি?
হারামজাদা, কষে গালি দিতে গিয়েও তাঁর স্থির দৃষ্টি দেখে সামলে নিলাম নিজেকে।
আমার মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল, যেন স্বপ্নের ঘোরে আছি।
চোখ কচলে বাস্তবে আসতেই দেখি নৈশপ্রহরী ল্যাপটপের স্ক্রীন ধরে বলছে, 'স্যার, আগে প্রমাণ করুন আপনি এলিয়েন বা রোবট নন, যা লেখা আছে নিচের ফাঁকা জায়গায় টাইপ করুন'।
মাথা কাজ করছে না, সম্মোহিতের মত টাইপ করলাম। তালার ব্র্যান্ডের নাম, সিক্যুরিটি কোড , পাসওয়ার্ড সব দেয়ার পর প্রহরী একগাদা ফটো এ্যালবাম খুলে বেছে বেছে ৫ টা ফটো আলাদা করলো।
অবস্থা এমন দাঁড়াল যে আমিই আমাকে সন্দেহ করা শুরু করলাম! এটা কি আমি?
ভাবনার ডালপালা মেলার আগেই নৈশ প্রহরী মিয়া, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুন্নী সাহা ভাতের হোটেল'-এর সামনে দাঁড়ানো লেডী গাগার মত দেখতে এক বঙ্গললনার ছবি দেখিয়ে বলল, 'এই মেয়েটাকে চেনেন? ছবির নিচে এম.সি.কিউ'র মত ৬ জনের নাম লেখা। আমার বাবুর্চির নামটা ১ নম্বরে, দোতালার সদ্য বিবাহিতা সালমা, ৬ তলার আন্টি আর তিনজন অপরিচিত মেয়ের নাম। লেডী গাগারে সনাক্ত করতে পারলাম না।
আমি ভুলেই গেছি আসলে এখানে কি উদ্দেশ্যে কার কাছে এসেছি। দরদর করে ঘামছি, নৈশমিয়ারে আর বিরক্তিকর লাগছে না।
সে আমাকে ঠাণ্ডা একবোতল মাম দিয়ে বলল, 'আর ৪ টি সুযোগ আছে, সনাক্ত করতে না-পারলে এই বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্যে বন্ধ। অবশ্য আপনি ২টা ছবিকে পালটাতে পারবেন উত্তর না-দিয়ে'।
দারোয়ানের মুখ দিয়ে দারোওয়ান সুলভ ভাষা শুনেও, কেন জানি কিছুটা ভাল লাগল। এই এপার্টম্যান্টে অন্তত ১০০ জন লোক বাস করে। কে কার শালা, কে কার ড্রাইভার, কে কাকে নিয়ে লিভ-টুগেদার করে, নতুন সাবলেট, বুয়া, শ্বশুর এই সব কী এই খন্ডকালিন পরিব্রাজকের পক্ষে জানা সম্ভব? দুই একজনকে যাও চেনা-চেনা লাগতেছিল, সেখানেও কনফিউশান।
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। স্লো-মোশনে বিল্ডিংটাকে আমার মাথা বরাবর নেমে আসতে দেখে...। Adil Abir
4 comments:
আমিও একবার ফেবুতে এমন ঝামেলায় পড়েছিলাম। লেখা ভাল লাগল,,,,
একেবারেই আলাদা একটা লেখা,প্রথম ভাগে আমি বুঝতেই পারি নি।
-নিরা, কলকাতা
আদিল ভাই, ফাটাফাটি,,,
আমার লেখা এই সাইটে দেখে আমি অভিভুত ।
আপনাদের মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করেছে ।
আরও লেখা দেবার ইচ্ছা পোষণ করি ।
Post a Comment