তৎকালীন ঢাকার স্টেশন কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ হামিদ তাঁর 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা' বইয়ে লিখেছেন:
"বগুড়া বিদ্রোহের একদিন পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আবারও জ্বলে উঠে ভয়াবহ বিদ্রোহের আগুন। হঠাৎ করেই এই বিদ্রোহ শুরু হলেও জিয়া ছিলেন (পুরোপুরি) প্রস্তুত। বিদ্রেহের আগাম সংবাদ পেয়েই তিনি আগেভাগেই উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
...ঢাকা এয়ারপোর্টে সব সিনিয়ার অফিসার উপস্থিত। চলছে প্লেন হাইজ্যাক ড্রামা। সবাই জাগ্রত। ক্যান্টেনমেন্টের সবগুলো ইউনিট সতর্ক অবস্থায়। জাগ্রত ৪৬ ব্রিগেড। ...আর্মি হেডকোয়ার্টারে সবাই উপস্থিত। সব অফিসে জ্বলছে বাতি।...
...এরকম সতর্কতামূলক অবস্থার মধ্য দিয়েই শুরু করা হলো ক্যান্টনমেন্টের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এয়ারফোর্স কলোনি থেকে বিদ্রোহ। কে বা কারা এয়ারফোর্স কলোনিতে এয়ারম্যান কোয়ার্টারে গিয়ে ডাকাডাকি, শ্লোগান দেয়। তারপর এয়ারম্যানদের জড়ো করে গাড়িতে তুলে মিছিল। ধর্মঘটি শ্রমিকদের মতো। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্লোগানমুখর বিদ্রোহীরা ৮ম বেঙ্গল এবং টু-ফিল্ডের পাতা মৃত্যুফাঁদে আটকা পড়ে। এরপর নিধনযজ্ঞ।
এই তো অক্টোবর বিদ্রোহ!
২রা অক্টোবর সৈনিক বিদ্রোহ ছিল স্বল্পস্থায়ী কিন্তু এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ ও মর্মান্তিক! ...কিভাবে হঠাৎ করেই বিপ্লবটি শুরু হয়, এ নিয়ে যথেষ্ঠ বিভ্রান্তি ও গভীর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
বিদ্রোহীরা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে শ্লোগান দিতে দিতে কল্পিত টার্গেটের দিকে অগ্রসর হয়। কোনো প্ল্যান নেই, প্রোগ্রাম নেই, নেতা নেই, লক্ষ্য নেই- তারা এগিয়ে চললেন এয়ারপোর্ট রোড ধরে। শ্লোগান মুখর সৈনিক, 'সিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই'।
...পথে বনানীতে অস্ত্রাগার (COD) ভেঙ্গে তারা অস্ত্রশস্ত্র লুটপাট করল। তখন মধ্যরাত তিনটা। তারা ফায়ার করতে করতে এয়ারপোর্ট রোড ধরে ২নং এমপি চেকপোস্টের কাছে গিয়ে হাজির হল। প্রথম তিনটি ট্রাক চেকপোস্টে ডিউটিরত এমপিরা (মিলিটারি পুলিশ) থামিয়ে দেয়। তখন বিদ্রোহী সৈনিক মিলিটারি পুলিশদের মধ্যে প্রবল বাদানুবাদ চলতে থাকে। শ্লোগানমুখর বিদ্রোহীরা মিলিটারি পুলিশদের বাঁথা অতিক্রম করে ৮ম বেঙ্গল লাইনের দিকে এগিয়ে গেল।
...এরপর যেন নরকের দরোজা খুলে গেল। তাদের উপর শুরু হলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দ্বারা অবিশ্রান্ত ধারায় গুলিবর্ষণ। ...প্রথম তিনটি শ্লোগানমুখর ট্রাকের সৈনিকরা একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ততক্ষণ পর্যন্ত গুলি চলল যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেকটা সেনা মারা গেলেন!
...২য় গ্রুপটি ছিল প্রধানত এয়ারফোর্স সেনাদের। পথে স্টেশন হেডকোয়ার্টারের কাছে টু-ফিল্ডের আর্টিলারি সৈন্যরা তাদের জন্য ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করতে থাকে। বিদ্রোহীদের গাড়িগুলো মেশিনগানের আওতায় আসা মাত্র তাদের উপরও শুরু হয় গুলিবর্ষণ। এখানেও অনেক সৈনিকের মৃত্যু হয়।
...এরপর একে একে সবাইকে ধরা হয়। ...এদের ধরে নিয়ে ৮ম বেঙ্গল লাইনে বন্দী শিবিরে আটকে রাখা হয়। এই সব ভাগ্যহত বন্দীদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা বলা মুশকিল!
ব্যর্থ হয় অক্টোবর অভ্যুত্থান। স্পষ্ট বোঝা গেল, তাদের কোনো নির্দিষ্ট প্ল্যান-প্রোগ্রাম ছিল না, কোনো নেতা ছিল না। তাহলে কার প্ররোচনায় হঠাৎ করে তারা এই হুজুগে অভ্যুত্থানে বেরিয়েছিল?
তা আজও এক রহস্য!"
"বগুড়া বিদ্রোহের একদিন পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আবারও জ্বলে উঠে ভয়াবহ বিদ্রোহের আগুন। হঠাৎ করেই এই বিদ্রোহ শুরু হলেও জিয়া ছিলেন (পুরোপুরি) প্রস্তুত। বিদ্রেহের আগাম সংবাদ পেয়েই তিনি আগেভাগেই উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
...ঢাকা এয়ারপোর্টে সব সিনিয়ার অফিসার উপস্থিত। চলছে প্লেন হাইজ্যাক ড্রামা। সবাই জাগ্রত। ক্যান্টেনমেন্টের সবগুলো ইউনিট সতর্ক অবস্থায়। জাগ্রত ৪৬ ব্রিগেড। ...আর্মি হেডকোয়ার্টারে সবাই উপস্থিত। সব অফিসে জ্বলছে বাতি।...
...এরকম সতর্কতামূলক অবস্থার মধ্য দিয়েই শুরু করা হলো ক্যান্টনমেন্টের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এয়ারফোর্স কলোনি থেকে বিদ্রোহ। কে বা কারা এয়ারফোর্স কলোনিতে এয়ারম্যান কোয়ার্টারে গিয়ে ডাকাডাকি, শ্লোগান দেয়। তারপর এয়ারম্যানদের জড়ো করে গাড়িতে তুলে মিছিল। ধর্মঘটি শ্রমিকদের মতো। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্লোগানমুখর বিদ্রোহীরা ৮ম বেঙ্গল এবং টু-ফিল্ডের পাতা মৃত্যুফাঁদে আটকা পড়ে। এরপর নিধনযজ্ঞ।
এই তো অক্টোবর বিদ্রোহ!
২রা অক্টোবর সৈনিক বিদ্রোহ ছিল স্বল্পস্থায়ী কিন্তু এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ ও মর্মান্তিক! ...কিভাবে হঠাৎ করেই বিপ্লবটি শুরু হয়, এ নিয়ে যথেষ্ঠ বিভ্রান্তি ও গভীর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
বিদ্রোহীরা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে শ্লোগান দিতে দিতে কল্পিত টার্গেটের দিকে অগ্রসর হয়। কোনো প্ল্যান নেই, প্রোগ্রাম নেই, নেতা নেই, লক্ষ্য নেই- তারা এগিয়ে চললেন এয়ারপোর্ট রোড ধরে। শ্লোগান মুখর সৈনিক, 'সিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই'।
...পথে বনানীতে অস্ত্রাগার (COD) ভেঙ্গে তারা অস্ত্রশস্ত্র লুটপাট করল। তখন মধ্যরাত তিনটা। তারা ফায়ার করতে করতে এয়ারপোর্ট রোড ধরে ২নং এমপি চেকপোস্টের কাছে গিয়ে হাজির হল। প্রথম তিনটি ট্রাক চেকপোস্টে ডিউটিরত এমপিরা (মিলিটারি পুলিশ) থামিয়ে দেয়। তখন বিদ্রোহী সৈনিক মিলিটারি পুলিশদের মধ্যে প্রবল বাদানুবাদ চলতে থাকে। শ্লোগানমুখর বিদ্রোহীরা মিলিটারি পুলিশদের বাঁথা অতিক্রম করে ৮ম বেঙ্গল লাইনের দিকে এগিয়ে গেল।
...এরপর যেন নরকের দরোজা খুলে গেল। তাদের উপর শুরু হলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দ্বারা অবিশ্রান্ত ধারায় গুলিবর্ষণ। ...প্রথম তিনটি শ্লোগানমুখর ট্রাকের সৈনিকরা একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ততক্ষণ পর্যন্ত গুলি চলল যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেকটা সেনা মারা গেলেন!
...২য় গ্রুপটি ছিল প্রধানত এয়ারফোর্স সেনাদের। পথে স্টেশন হেডকোয়ার্টারের কাছে টু-ফিল্ডের আর্টিলারি সৈন্যরা তাদের জন্য ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করতে থাকে। বিদ্রোহীদের গাড়িগুলো মেশিনগানের আওতায় আসা মাত্র তাদের উপরও শুরু হয় গুলিবর্ষণ। এখানেও অনেক সৈনিকের মৃত্যু হয়।
...এরপর একে একে সবাইকে ধরা হয়। ...এদের ধরে নিয়ে ৮ম বেঙ্গল লাইনে বন্দী শিবিরে আটকে রাখা হয়। এই সব ভাগ্যহত বন্দীদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা বলা মুশকিল!
ব্যর্থ হয় অক্টোবর অভ্যুত্থান। স্পষ্ট বোঝা গেল, তাদের কোনো নির্দিষ্ট প্ল্যান-প্রোগ্রাম ছিল না, কোনো নেতা ছিল না। তাহলে কার প্ররোচনায় হঠাৎ করে তারা এই হুজুগে অভ্যুত্থানে বেরিয়েছিল?
তা আজও এক রহস্য!"
No comments:
Post a Comment