জোভান্নী বোক্কাচো চতুর্দশ শতকের ইতালীয় কবি, লেখক। বিশেষ করে নভেলা গল্পরীতির প্রকৃত জনক বলা হয়ে থাকে তাঁকে। বোক্কাচো'র রচিত 'ডিকাম্যারন'-এ একেকজন কথক একেকটা গল্প বলেন। কথক ফিলোমেনা যে গল্পটা বলছেন:
সালাদিন ছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ বীর, সুশাসক। অনেক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে তিনি আর্থিক সংকটে পড়ে যান। তাঁর বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন দেখা দেয় কিন্তু কোত্থেকে যোগাড় করবেন এটা ভেবে পাচ্ছিলেন না।
হঠাৎ তাঁর মনে পড়ল আলেকজান্দ্রিয়ার 'মেলচি জেডেক' নামের একজন ধনী ইহুদির কথা যিনি চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে থাকেন। কিন্তু মেলচির কাছ থেকে টাকা যোগাড় করাটা সহজ কাজ ছিল না কারণ মেলচি ছিলেন অসম্ভব ধুরন্ধর-ধূর্ত একজন মানুষ। এদিকে নীতিগত কারণে সালাদিন আবার মেলচির কাছ থেকে জোর করে টাকা নিতেও চাচ্ছিলেন না। অনেক চিন্তাভাবনা করে সালাদিন একটা বুদ্ধি বের করলেন।
সালাদিন মেলচিকে ডেকে পাঠালেন। যথেষ্ঠ সমাদরও করলেন। এরপর বললেন, 'মেলচি, আপনি একজন সৎ ব্যক্তি। শুনেছি, আপনি অত্যন্ত জ্ঞানী এবং ধর্মীয় বিষয়ে আপনার জ্ঞানের কোনো তুলনা নেই। তাই আমার ধারণা, ইহুদি, খ্রীস্টান এবং ইসলাম এই তিনটি ধর্মের মধ্যে কোনটা সঠিক এটা আপনি বলতে পারবেন'।
মেলচি দেখলেন এ তো ভারী বিপদ কারণ ওই সময়ে খ্রীস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ চলছিল। এ কারণে মেলচি ভাবলেন, সালাদিন যেহেত মুসলমান তাই ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের কথা বললে সালাদিন তাকে আটক করবেন এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
আবার তিনি নিজে যেহেতু একজন ইহুদি- তার নিজের ধর্ম সঠিক না এটাই-বা বলেন কেমন করে! তাই তিনি এই নিয়ে অনেক চিন্তা করে একটা বুদ্ধি বার করলেন।
মেলচি বললেন, 'মহোদয়, আপনার প্রশ্ন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এটা নিয়ে সূক্ষ চিন্তার অবকাশ রয়ে গেছে। আমি এটা ব্যাখ্যা করার জন্য আপনাকে একটা গল্প বলাটা জরুরি মনে করছি'।
সালাদিন বললেন, 'আচ্ছা, বলুন তাহলে'।
মেলচি শুরু করলেন, 'এক ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তার ছিল অতি মূল্যবান, দূর্লভ এক আংটি। তিনি মৃত্যুর পূর্বে লেখাপড়া করে দিয়ে যান, তার যে ছেলেকে এই আংটি দিয়ে যাবেন সেই ছেলেই হবে তার সমস্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী এবং পরিবারের প্রধান।
সেই ব্যক্তির ছিল একটি মাত্র পুত্র অতএব সেই পেল আংটিটি। সেই ছেলেও যখন বৃদ্ধ হলো তখন একই রকম উইল করল যে তারও মৃত্যুর পর...। এভাবে কয়েক বংশ পার হওয়ার পর আসল জটিলতাটা দেখা দিল। এক বংশের ছেলে হয়ে গেল তিনজন! তাদের পিতার কাছে আবার তিনজনই সমান আদরের। এদিকে তার প্রত্যেক সন্তানদেনও বায়না আংটিটি যেন তাকেই দেয়া হয়।
ওই পিতা পড়লেন এক বিকট ঝামেলায়। তিনি গোপনে অবিকল আরও দুইটি আংটি তৈরি করলেন এবং প্রত্যেক পুত্রকে গোপনে একটা করে আংটি দিলেন। সেই পিতার মৃত্যুর পর মহা জটিলতা দেখা দিল। প্রত্যেক পুত্রই দাবী করল, তার আংটিটিই আসল। এখন কোনটা আসল আর কোনটা নকল এই নিয়ে কোনো মিমাংসা হলো না বিধায় তারা আইনের আশ্রয় নিল। তাদের সেই আইনি লড়াই এখনও চলছে...'।
এবার মেলচি বললেন, 'প্রভু আমাদের সকলের পিতা, মহান ঈশ্বর আমরা তিন জাতিকে যে ঐশী আইন মানে ধর্ম দিয়েছেন এই বিষয়টাও অনেকটা এমন। এখন প্রত্যেক জাতিই এটা বিশ্বাস করে তাদের ধর্মটাই আসল। কিন্তু ওই তিন আংটির মত এরও ফয়সালা হয়নি কারণ কেবল ঈশ্বরই জানেন কোনটা আসল আর কোনটা নকল'।
সালাদিন এই চতুর ইহুদির উত্তরে স্পষ্ট বুঝে গেলেন এই মানুষটিকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব না। এরপর তিনি সেই ইহুদিকে এটাও বলে দিলেন বিশেষ কোনো ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করলে তিনি কি ব্যবস্থা নিতেন। ইহুদিও সালাদিনের সরলতায় মুগ্ধ হলেন। তিনি বিনা স্বার্থে প্রয়োজনীয় অর্থ সালাদিনকে দিতে সম্মত হলেন।
সালাদিনও মেলচিকে বন্ধু হিসাবে বরণ করে নেন এবং রাজকীয় মর্যাদা প্রদান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁদের এই বন্ধুত্ব অটুট ছিল।"
*এ তো গেল গল্প। বাস্তবেও অধিকাংশ ধর্মেরই বক্তব্য সেই ধর্মেই মুক্তি...:
https://www.facebook.com/723002334/posts/10151365990812335
সালাদিন ছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ বীর, সুশাসক। অনেক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে তিনি আর্থিক সংকটে পড়ে যান। তাঁর বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন দেখা দেয় কিন্তু কোত্থেকে যোগাড় করবেন এটা ভেবে পাচ্ছিলেন না।
হঠাৎ তাঁর মনে পড়ল আলেকজান্দ্রিয়ার 'মেলচি জেডেক' নামের একজন ধনী ইহুদির কথা যিনি চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে থাকেন। কিন্তু মেলচির কাছ থেকে টাকা যোগাড় করাটা সহজ কাজ ছিল না কারণ মেলচি ছিলেন অসম্ভব ধুরন্ধর-ধূর্ত একজন মানুষ। এদিকে নীতিগত কারণে সালাদিন আবার মেলচির কাছ থেকে জোর করে টাকা নিতেও চাচ্ছিলেন না। অনেক চিন্তাভাবনা করে সালাদিন একটা বুদ্ধি বের করলেন।
সালাদিন মেলচিকে ডেকে পাঠালেন। যথেষ্ঠ সমাদরও করলেন। এরপর বললেন, 'মেলচি, আপনি একজন সৎ ব্যক্তি। শুনেছি, আপনি অত্যন্ত জ্ঞানী এবং ধর্মীয় বিষয়ে আপনার জ্ঞানের কোনো তুলনা নেই। তাই আমার ধারণা, ইহুদি, খ্রীস্টান এবং ইসলাম এই তিনটি ধর্মের মধ্যে কোনটা সঠিক এটা আপনি বলতে পারবেন'।
মেলচি দেখলেন এ তো ভারী বিপদ কারণ ওই সময়ে খ্রীস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ চলছিল। এ কারণে মেলচি ভাবলেন, সালাদিন যেহেত মুসলমান তাই ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের কথা বললে সালাদিন তাকে আটক করবেন এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
আবার তিনি নিজে যেহেতু একজন ইহুদি- তার নিজের ধর্ম সঠিক না এটাই-বা বলেন কেমন করে! তাই তিনি এই নিয়ে অনেক চিন্তা করে একটা বুদ্ধি বার করলেন।
মেলচি বললেন, 'মহোদয়, আপনার প্রশ্ন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এটা নিয়ে সূক্ষ চিন্তার অবকাশ রয়ে গেছে। আমি এটা ব্যাখ্যা করার জন্য আপনাকে একটা গল্প বলাটা জরুরি মনে করছি'।
সালাদিন বললেন, 'আচ্ছা, বলুন তাহলে'।
মেলচি শুরু করলেন, 'এক ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তার ছিল অতি মূল্যবান, দূর্লভ এক আংটি। তিনি মৃত্যুর পূর্বে লেখাপড়া করে দিয়ে যান, তার যে ছেলেকে এই আংটি দিয়ে যাবেন সেই ছেলেই হবে তার সমস্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী এবং পরিবারের প্রধান।
সেই ব্যক্তির ছিল একটি মাত্র পুত্র অতএব সেই পেল আংটিটি। সেই ছেলেও যখন বৃদ্ধ হলো তখন একই রকম উইল করল যে তারও মৃত্যুর পর...। এভাবে কয়েক বংশ পার হওয়ার পর আসল জটিলতাটা দেখা দিল। এক বংশের ছেলে হয়ে গেল তিনজন! তাদের পিতার কাছে আবার তিনজনই সমান আদরের। এদিকে তার প্রত্যেক সন্তানদেনও বায়না আংটিটি যেন তাকেই দেয়া হয়।
ওই পিতা পড়লেন এক বিকট ঝামেলায়। তিনি গোপনে অবিকল আরও দুইটি আংটি তৈরি করলেন এবং প্রত্যেক পুত্রকে গোপনে একটা করে আংটি দিলেন। সেই পিতার মৃত্যুর পর মহা জটিলতা দেখা দিল। প্রত্যেক পুত্রই দাবী করল, তার আংটিটিই আসল। এখন কোনটা আসল আর কোনটা নকল এই নিয়ে কোনো মিমাংসা হলো না বিধায় তারা আইনের আশ্রয় নিল। তাদের সেই আইনি লড়াই এখনও চলছে...'।
এবার মেলচি বললেন, 'প্রভু আমাদের সকলের পিতা, মহান ঈশ্বর আমরা তিন জাতিকে যে ঐশী আইন মানে ধর্ম দিয়েছেন এই বিষয়টাও অনেকটা এমন। এখন প্রত্যেক জাতিই এটা বিশ্বাস করে তাদের ধর্মটাই আসল। কিন্তু ওই তিন আংটির মত এরও ফয়সালা হয়নি কারণ কেবল ঈশ্বরই জানেন কোনটা আসল আর কোনটা নকল'।
সালাদিন এই চতুর ইহুদির উত্তরে স্পষ্ট বুঝে গেলেন এই মানুষটিকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব না। এরপর তিনি সেই ইহুদিকে এটাও বলে দিলেন বিশেষ কোনো ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করলে তিনি কি ব্যবস্থা নিতেন। ইহুদিও সালাদিনের সরলতায় মুগ্ধ হলেন। তিনি বিনা স্বার্থে প্রয়োজনীয় অর্থ সালাদিনকে দিতে সম্মত হলেন।
সালাদিনও মেলচিকে বন্ধু হিসাবে বরণ করে নেন এবং রাজকীয় মর্যাদা প্রদান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁদের এই বন্ধুত্ব অটুট ছিল।"
*এ তো গেল গল্প। বাস্তবেও অধিকাংশ ধর্মেরই বক্তব্য সেই ধর্মেই মুক্তি...:
https://www.facebook.com/723002334/posts/10151365990812335
No comments:
Post a Comment