Tuesday, October 29, 2013

ওহে, কী তোমার পরিচয়...!

খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছি! জীব-বৈচিত্র নিয়ে কাজ-কারবার। বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে টিকটিকি নিয়ে গবেষণা। হৃদয়ঘটিত জটিলতার পর [১] ডাক্তার সাহেব আমাকে এই চাকরিটা গছিয়ে দিয়েছেন। যেটার চালু নাম 'বেড-রেস্ট'।
অবশ্য বেড-রেস্টের একটা মানে বের করেছি আমি- বেড মানে বিছানাকে রেস্ট দেয়া। সোজা কথা, বিছানার উপর না-শুয়ে বিছানাকে যতটুকু সম্ভব কম কষ্ট দেয়া যায় আর কী। ভাগ্যিস, ‘লেঞ্জাওয়ালা’ ওরফে টিএনটি ফোনের বিশেষ চল নাই এখন, নইলে ঝামেলা হয়ে যেত। ডাক্তার সাহেব যখন জানতে চান, বেড-রেস্টে আছেন তো? বাস্তবে তখন আমি বাসার বাইরে। গলা একটুও না-কাঁপিয়ে অবলীলায় বলি, জ্বী, রেস্টে থাকব না মানে, বলেন কী!

যাই হোক, বৃহস্পতিবার, যে-দিন আমার সমস্যাটা হলো সেদিনই একজন খবর দিলেন হারিয়ে যাওয়া ওই মানুষটাকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিলাম (সম্ভাব্য মৃত্যু!), [২] ওই মানুষটার ভাই নাকি আমাকে খুঁজছেন। নিরুপায় আমার উপায় ছিল না- হারিয়ে যাওয়া মানুষটার ওই ভাইটার সন্ধানে বের হয়েছিলাম যদিও মানুষটার ভাইটাকে আমি শেষ পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারিনি!

বুকে ব্যথা, ক্লান্তও লাগছিল খুব- তার উপর ব্লাডারে চাপ। মহা মুশকিল! কোথাও হয়তো বসে বিশ্রাম করা যাবে কিন্তু ব্লাডার হালকার বিষয়টা? আমাদের দেশে সবচেয়ে জরুরি বিষয়টার প্রতি আমাদের আছে সীমাহীন অসভ্য তাচ্ছিল্যতা। লোকজন কোটি টাকা খরচ করে একটা মার্কেট করবে কিন্তু একটা টয়লেট রাখবে না, রাখলেও তালা মেরে রাখবে। আজব এই দেশের লোকজন!

ঠিক তখনই আমার মনে পড়ল, এনসিসি ব্যাংকে ‘টয়লেট জোন’ নামে একটা কিছু দেখেছিলাম। এই ব্যাংকে আমার একটা একাউন্টও আছে। হাজার খানেক টাকা থাকার কথা কারণ এরচেয়ে কম টাকা থাকলে ব্যাংক গ্রাহক হিসাবে ব্যাংকিং-ব্যাংকিং খেলা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
ওয়াল্লা, সেন্ট্রাল এসি এই ব্যাংকের টয়লেট জোনে ঢুকে তো আমার অমায়িক বিভ্রান্তি! একটা টয়লেট ‘ভিআইপি’ একটা টয়লেট, ‘জেনারেল’। মুত্র বিসর্জন দিতে এসে একি বিপদ! কোনটায় যাই? নাহয় চোরের মত ভিআইপিটায় ঢুকলুম, বেশ। কিন্তু কাজ সেরে জিপার লাগাতে লাগাতে বের হয়ে যদি দেখি দারোয়ান বাবাজি বন্দুক তাক করে রেখেছেন, তাহলে উপায়? আবার যদি ওদিকে সব অফিসাররা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন? দেখা গেল, এরা কামানের গোলার মত একের-পর-এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন: ঘটনা কী, আপনি কোন সাহসে নিজেকে ভিআইপি মনে করলেন আর ফট করে ভিআইপি টয়লেটে ঢুকে পড়লেন?
যাক বাবা, রিস্ক নিয়ে লাভ নেই। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হৃদয়ঘটিত জটিলতার কারণে কোনো একটা ভজকট হয়ে গেলে? একবার মরলে তো আর বাঁচব না! তার উপর জিপার খোলা অবস্থায় আমার লাশ আবিষ্কার হওয়াটা ভালো দেখায় না।

তো, কাজ শেষ করে আমি একজন অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনারা আমাদের মত জেনারেল পাবলিকের জিনিস বিসর্জনে না-হয় আস্থা রাখতে পারেন না, বেশ-বেশ! তা, আপনারা ’স্টাফ’ এবং ’ক্লায়েন্ট’ নামে টয়লেট আলাদা করে ফেললেই পারতেন, এতে তো কোনো সমস্যা ছিল না কিন্তু আপনারা যে ’ভিআইপি’, ’জেনারেল’ নামে টয়লেট ভাগ করে রেখেছেন! আচ্ছা, আপনাদের ভিআইপি হওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগে, বলুন তো? মানে, যার ডিপোজিট কোটি টাকার উপরে তিনি ভিআইপি, নাকি যে ৬ ফুটের উপর লম্বা সেই মানুষটা’?

অবশ্য আমি ভিআইপি টয়লেট ব্যবহার করলে যে দোষ হবে না এটাতে তিনি সদয় সম্মতি জানালেন। জীবনে এই প্রথম মূত্রসংক্রান্ত কেরামতিতে নিজেকে ভিআইপি ভাবতে গিয়ে আমার বিপি না-আবার বেড়ে যায় এটা নিয়েও খানিকটা চিন্তিত ছিলাম। তবে বিষাদের সঙ্গে বলি, তিনি এর ভাল কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না, ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শও দিলেন|

কী সর্বনাশ, মূত্র বিসর্জন দিতে এসে এ কোন বিপদে পড়লাম যে জনে-জনে এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে! ফিযুল কারো সঙ্গে বাতচিত না-করে ইয়ের সঙ্গেই খানিক বাতচিত করাটাই সমীচীন মনে করলাম, ওহে ..., কী তোমার পরিচয়...!

সহায়ক সূত্র:
১. হৃদয়ঘটিত...: http://www.ali-mahmed.com/2013/10/blog-post_26.html
২. সম্ভাব্য মৃত্যু!: http://www.ali-mahmed.com/2013/10/blog-post_16.html

Saturday, October 26, 2013

হৃদয়ঘটিত জটিলতা এবং এক ঝাঁক কাক!


গতকাল খানিকটা ঝামেলা হয়ে গেলআমার বুকের বাম পাশে ব্যথা! লোকজনের গ্যাস্ট্রিক-ফ্যাস্ট্রিকের কারণে এমন ব্যথা হরহামেশাই হয়ে থাকে- এটা নিয়ে গা করার তেমন কিছু থাকে কিন্তু আমি জানতাম এটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকারণ নিজের উপর নিজেই আমি ক্ষেপে গেলে নিজেকেই শাস্তি দেইশাস্তিপর্বটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিলএকটু আগেই সেই পর্বটা যখন সমাপ্ত হলো তখন আমি শ্বাস ফেলতে পারছিলাম নাহার্ট বাবাজি বাদ্য বাজিয়ে কূল পাচ্ছিল নাএমনিতে শরীরের উপর মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচার হচ্ছিল তার উপর ওভার-টাইম করার কারণে ব্যাটা সম্ভবত ক্ষেপে গেলএরপর থেকেই ব্যথাটা...
যাই হোক, রামের যেমন সুমতি হয়েছিল আমারও তেমনি সুমতি হলোআমি খানিকটা আঁচ করতে পারছিলাম বলেই একটা ইসিজি করালামএখানকার হাসপাতালে গিয়ে, ভাল ইসিজি বোঝেন এমন একজন ডাক্তারকে খুঁজে বের করলাম

ডাক্তার সুমন নামের এই ডাক্তার যখন মনোযোগ সহকারে আমার ইসিজিটা পর্যবেক্ষণ করছিলেন তখন সামনে বসা একজন মানুষ একের-পর-এক ছাপানো কাগজ ডাক্তারের দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন এবং তোতাপাখির মত কীসব বিড়বিড় করে অনবরত বকে যাচ্ছিলেনআমার বুঝতে সমস্যা হয় না মানুষটা কোনো একটা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি

আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ডাক্তারদেরকে কি দেয় এই বেহুদা প্রশ্ন না-করে, কী দেয় না সেটা জিজ্ঞেস করলে ভাল হয়নগদ টাকার সঙ্গে এমন কোনো জিনিস নেই যা ডাক্তার সাহেবরা পান নাটিভি-ফ্রিজ-এসি এসব তো পুরনোএবারের কোরবানির ঈদে জবাই এবং মাংস কাটাকাটির জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলো ছুঁরিও দিয়েছে! আমি জানি না ডাক্তার সাহেবদের আন্ডারওয়্যারও ওষুধ কোম্পানিগুলো দেয় কি না? দিলে, ওষুধ কোম্পানিগুলো কেমন করে ডাক্তার সাহেবদের সাইজ নির্ধিরণের জটি কাজটা সম্পন্ন করে থাকে?
এরা কী পূর্বেই কোনো ফর্ম পূরণ করে? যেটায় লেখা থাকে, আপনার আন্ডারওয়্যারের সাইজ কতো? আচ্ছা, ওটায় কী ওষুধ কোম্পানির লোগো-টোগো থাকে নাকিআহা, থাকলে লাভ কী! ডাক্তার সাহেবের ওই বিশেষ ভূষণ তো বিশেষ সময়ে, বিশেষ লোকজন ব্যতীত অন্য কেউ দেখত পাচ্ছে না কারণ তিনি তো আর সুপারম্যান না যে প্যান্টের উপর আন্ডারওয়্যার পরবেনআমরা আমরা দেখে পুলকিত হবো!

যাই হোক, আমি আমার বুকের ব্যথা উপেক্ষা করে শীতল গলায় ওই ওষুধ প্রতিনিধিকে বললাম, আমি একটা জরুরি বিষয় নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছি, আমার কথা শেষ হোক এরপর আপনি আপনার এই সব হাবিজাবি কথা বলবেন
আমার অপার সৌভাগ্য যে ওই প্রতিনিধি এবং ডাক্তার সাহেবও এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি! করলে ঝামেলা হয়ে যেত কারণটা আমার অসুস্থতা
তো, ডাক্তার সাহেব ইসিজি দেখে যেটা বললেন, আমার হার্টের নীচের দিকে রক্ত প্রবাহিত হতে সমস্যা চ্ছেএকজন কার্ডিওলজিস্টকে দেখাবার জন্য

হার্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করেন এমন একজন মানুষকে ফোনে বিস্তারিত বলামাত্র তিনি আমাকে বললেন, আপনি অতি দ্রুত একটা ওষুধের দোকানে যাননাইট্রোগ্লিসারিন জিহ্বার নিচে দু-বার স্প্রে করে এরপর আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তখন আমি আপনাকে আরও কিছু ওষুধের নাম বলবআর আমি পৌঁছে আপনাকে দেখে ওষুধ দেব
এরপর যথারীতি চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল- ওষুধ চলার পাশাপাশি আমাকে দু-সপ্তাহ বেড-রেস্টও দেয়া হয়েছে যদিও বেডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ তেমন বিশেষ হচ্ছে নাআরে, আমার যে হাবিজাবি কতো অকাজ! তবে সাবধানে থাকছি কারণ এটা আমার বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না যে হার্ট বাবাজি আমার জন্য একটা সংকেত দিয়েছে, পাগল, তোকে ছুঁয়ে দিলামশ্লা, তিনি ভারী একটা 'সংকেতবাজ' হয়েছেন!
যাগ গে, লেখা প্রসঙ্গে এই সব চলে এলোআমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম, কারো-কারো কাছে আমরা কী কেবল একটা সংখ্যা, একটা গিনিপিগ? ডাক্তার সুমনের কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞ কারণ তাঁর পর্যবেক্ষণ সঠিক ছিল, কিন্তু...এই ইসিজিটা পর্যবেক্ষণের সময় ডাক্তারের যে পূর্ণ মনোযোগ থাকা প্রয়োজন ছিল সেটায় ওষুধ কোম্পানির ওই প্রতিনিধি অনবরত ব্যঘাত ঘটিয়েই যাচ্ছিলেন- এটা এরা হরহামেশাই করে থাকেনেটায় সায় আছে এই ডাক্তারের এবং এই হাসপাতালের প্রধানেরও
অথচ মনোযোগের কারণে ওই ডাক্তারের এই পর্যবেক্ষণ ভুল হলে আজ আমার এই লেখাটা লেখার কথা নাআমি লিখতাম না- কে জানে, তখন হয়তো কেউ-না-কেউ আমাকে নিয়ে শোকগাথা লিখতেনলিখতেনই এটা বলছি না, হয়তো লিখতেন, আলী মাহমেদের জন্য এলিজিতবে আমার সেটা আর পড়া হতো না, বেচারা আমি...!
*পোস্টের সঙ্গে এই ছবিটা বছর দুয়েক আগেরআমার মা তখন যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেই হাসপাতালের নীচের দৃশ্য এটাএখানে যে সমস্ত মোটর সাইকেল দেখা যাচ্ছে (ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় সবগুলোকে একই ফ্রেমে আনা সম্ভব হয়নি!) প্রায় সবগুলোই ওষুধ কোম্পানি।
যেন এক ঝাঁক কাক, আর এদের কাছে হাসপাতাল হচ্ছে একটা ভাগাড়...।