Search

Monday, October 21, 2013

আসল খল-নায়ক!

ক-দিন আগে, গেছি ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে, আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকে। লম্বা লাইন। অবশ্য মহিলাদের লাইনটা ছোটো। দুই লাইনের মাঝখানে একটু ফাঁকা জায়গা। বিল জমা দিয়ে মহিলারা ফাঁকা এই সরু ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
এই ফাঁকা জায়গাটায় ব্যাংকেরই একজন পা লম্বা করে বসে আছেন- মানুষটার খোলতাই চেহারা, পেল্লায় একটা গোঁফও আছে। একে তো এর বসার ভঙ্গিটা অশোভন- বেতমিজ টাইপের, তার উপর মহিলারা যখন যাচ্ছেন তখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই মানুষটাকে আমি বললাম, ‘আপনি এভাবে পা লম্বা করে বসে আছেন কেন? পা-টা টেনে বসুন’।

তিনি গা করলেন না। আমি আবারও আগের কথাটাই বললাম। এবার তিনি দয়া করে মুখ খুললেন। তিনি বললেন, ‘আপনের কী সমস্যা, আপনের কি কোনো সমস্যা হইতাছে’?
আমি বললাম, ‘আমার সমস্যা হচ্ছে কী হচ্ছে না এটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে আপনি অন্যদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছেন। আর আপনার এমন বসার ভঙ্গিটাও দেখতে ভাল লাগছে না’।
মানুষটা ফট করে বলে বসলেন, ‘আপনের ভালা না-লাগলে ব্যাংক থিক্যা চইলা যান’।
আমি দুর্দান্ত রাগ চেপে জানতে চাইলাম, ‘এই ব্যাংকে আপনার পদবি কি’? তিনি সরোষে বললেন, ’আপনের কাছে আমার পদবি বলতে হইব নাকি’।

মহা মুসিবত! আমি লাইন ছেড়ে বেরিয়ে সেকেন্ড অফিসারকে খুঁজে বের করলাম। তার কাছে প্রথমেই জানতে চাইলাম, এই মানুষটার পদবি কি? কারণ এই মানুষটা সাদা-পোশাকে, সাফারি টাইপের একটা জিনিস গায়ে। একে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যন হিসাবে চালিয়ে দিলে কেউ কুতর্ক জুড়ে দেবেন বলে মনে হয় না। কে বলতে পারে, হয়তো ছদ্মবেশে ব্যাংকের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছেন!
তো, জানা গেল এই মানুষটা এই ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড। ওহো, সহজ বাংলা করলে, দারোয়ান। এ তো দেখি, আমার নিজস্ব ভাষায় বললে, ‘এক কাপ চায়ে দু’কাপ চিনি’!
সেকেন্ড অফিসারকে আমি বললাম, ‘আমি এই ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে চাই’। জানা গেল, ম্যানেজার ব্যাংকের বাইরে আছেন। এবার আমি সেকেন্ড অফিসার এবং অন্যান্য অফিসারদের কাছে জানতে চাইলাম, একজন গার্ড একজন গ্রাহককে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বলার এমন দুঃসাহস পান কোত্থেকে- এই ব্যাংকের চেয়ারম্যানেরও কী এই ক্ষমতাটা আছে?
যখন সমস্ত অফিসারদের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল তখন আবারও এই দারোয়ানের দাম্ভিক বক্তব্য, ‘আপনে ব্যাংক থিক্যা বাইর হন’।

এই বার বিষয়টা মাত্রা ছাড়িয়ে গেল- গোটা ব্যাপারটা অন্য এক রূপ ধারণ করল! আমি জানি না এই ব্যাংকে সুইপারের কোনো পোস্ট আছে কি না। না-থেকে থাকলে, এখানকার সবাই এই দারোয়ানের সিনিয়র। এই ব্যাংকের চেইন অভ কমান্ড নামের কোনো জিনিস আছে বলে তো আমার মনে হলো না!
আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, এই ব্যাংকের একজন অফিসারও এই দারোয়ানকে চুপ করার জন্য বললেন না। বরং আমাকে যেন লাইনে না-দাঁড়িয়ে সহজে বিলটা জমা দেয়া যেতে পারে সেই জন্য সবাই অস্থির হয়ে গেলেন। ভাবখানা এমন, লম্বা লাইনে না-দাঁড়িয়ে চট করে বিল দিতে পেরে আমি যেন আনন্দে বিগলিত হয়ে মাখনের মত গলে যাব।

আমি শান্ত মুখে বললাম, ‘সবাই যেভাবে দিচ্ছে, আমিও সেভাবেই লাইনে দাঁড়িয়েই বিল দেব কিন্তু আমি


এই দারোয়ানের এই আচরণের ব্যাখ্যা চাই। আর আপনারা এই দারোয়ানকে এতোই ক্ষমতাবান মনে করলে একে এই ব্যাংকের ম্যানেজার বানিয়ে দিচ্ছেন না কেন’?
লাইনে দাঁড়িয়ে আমি যখন বিল দেয়ার অপেক্ষায় আছি তখন দেখলাম, এবার দারোয়ান বাবাজি একটা বন্দুক বাগিয়ে বসে আছেন। ব্যাটা বন্দুকের ভয় দেখাচ্ছিল কিনা কে জানে!

যাই হোক, সবাই যেমন নায়ক হতে পারে না, তেমনি খলনায়কও! বিষয়টা এখানে দারোয়ান না- ছুঁরি কোন কোম্পানির সেটা বিবেচ্য বিষয় না, ছুঁরিটা কার হাতে সেটাই আলোচ্য বিষয়! এই দারোয়ান ব্যাটাকে আমি খলনায়ক বলতে নারাজ। খলনায়ক হচ্ছেন এই ব্যাংকের সমস্ত সিনিয়র অফিসাররা, যাদের একটা দারোয়ানকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা, ন্যূনতম যোগ্যতাও নাই। অযোগ্য, অথর্ব এরা, একটা দারোয়ানকে সামলাতে পারে না, ব্যাংক সামলাবে কী!
আর যদি শুনি এই দারোয়ান ব্যাটাই কোনো দিন এই ব্যাংকের কোনো অফিসারকে দুম করে গুলি করে বসেছে অন্তত আমি মোটেও অবাক হবো না...।
     

No comments: