জ্ঞান হওয়ার
পর থেকেই দেখে আসছিলাম রাস্তার পাশে, বিশাল সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে। যে গাছটার
সঙ্গে শৈশব-কৈশোর-যৌবনের অজস্র স্মৃতি জড়াজড়ি করে ছিল। কতশত স্মৃতি! আর যখন ফুলে
ছেয়ে যেত তখন মনে হতো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম।
কী অপার্থিব এক সৌন্দর্য!
কিছু দিন আগে দেখলাম, গাছটা ক্রমশ
শুকিয়ে যাচ্ছে। শেষমেশ গাছটা মরেই গেল। একদিন গোড়াশুদ্ধ উপড়েও পড়ল। পাশ দিয়ে হেঁটে
যাই- মৃত বিশাল গাছটা পড়ে থাকে তার অসংখ্য ডালপালা নিয়ে। একদিন...।
একদিন চোখে পড়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য! বিশাল গাছটার ডালপালার ছোট্ট একটা অংশ, কেমন যেন,
অন্য রকম! মনে হচ্ছিল, দু-হাত দুপাশে ছড়িয়ে...অনুভূতিটা লিখে বোঝানো অসম্ভব, অন্তত
আমার পক্ষে। অবশ্য গাছটার সঙ্গে যে খানিক বাতচিত হয়নি এই মিথ্যাচার করব না। তবে
সঙ্গত কারণেই সেই আলোচনায়
যেতে চাচ্ছি না। কারণ...?
এমনিতেই আমার বিভিন্ন কর্মকান্ডে
কেউ-কেউ পশ্চাতে বলার চেষ্টা করেন আমার ব্রেনে নাকি সমস্যা আছে। এদের উপর আমার
ভারী রাগ হওয়ারই কথা কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ হই। কারণ আমার ধারণা ছিল, আদৌ ব্রেন নামের
জিনিসটাই আমার নাই। এদের কথায় খানিকটা ভরসা পাই। যাক,
এক চা-চামচ সমান হলেও জিনিসটা আছে নইলে গোলমাল হয় কেমন করে!
বিশাল এই গাছের ছোট্ট এই অংশটুকুর জন্য
আমি অস্থির হয়ে গেলাম। এটা পেতে অন্য রকম সমস্যা ছিল- এটার জন্য আমাকে বিস্তর
দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে, লজ্জার মাথা খেয়ে একে-ওকে ধরাধরিও করতে হয়েছিল।
যাক, অবশেষে কেবল এই অংশটুকু পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।
ছোট্ট-ছোট্ট করছি বটে কিন্তু এই অংশটুকু
নিয়ে আসতে কালঘাম বেরিয়ে গেল। সম্ভবত গোটা আষ্টেক লোকজনের সহায়তা নিতে হয়েছিল।
আমার বাসার সামনে যে বেশ খানিকটা ফাঁকা
জায়গা আছে এটার মাঝখানে এটাকে বসিয়ে দেয়া হলো। প্রথম
দিকে দেখতে ভাল দেখাত না, কেমন ন্যাড়া-ন্যাড়া। ছি! অবশ্য
এখন আর ন্যাড়া ভাবটা নেই।
বেচারা অনড়, রা নেই- তাতে কী! একে দেখলে
যে আমি আমার হারানো শৈশব ফিরে পাই...।