গতকালের লেখাটার পর [১] ইনবক্সে আলাদা করে অনেকে জানতে চেয়েছেন, ‘ওল্ড হোম’ সম্বন্ধে। কেউ-কেউ সদাশয় কিছু কথাও বলেছেন...।
অন্যত্র এটা নিয়ে বলেছি তবুও একটু বলি এই বিষয়ে। আজ থেকে ৫ বছর আগে ‘ওল্ড হোম’ করার চিন্তাটা এসেছিল মাথায়। ওসময় কিছু টাকাও ছিল আমার হাতে। কিন্তু ছোট্ট একটা ‘ওল্ড হোম’ চালাতে প্রতি মাসে যে টাকা লাগে ওই হিসাবে অন্তত দু-তিন বছরের টাকা হাতে না-নিয়ে এটা আমি শুরু করতে চাইনি।
আমার যুক্তিটা ছিল এমন, তীব্র আবেগ নিয়ে শুরু করলাম কিন্তু কয়েক মাস চলার পর টাকার অভাবে এটা বন্ধ করে দিতে হলো। তখন? কিছু মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে আবারও দুঃস্বপ্নের মাঝে ঠেলে দেয়া। এ তো অন্যায়, মহা অন্যায়!
‘ওল্ড হোম’ করাটা যতটা সহজ মনে হয় আমার কাছে কিন্তু ততোটা না। নিয়মিত টাকার যোগানটা মূখ্য একটা বিষয় তো বটেই তাছাড়া লোকের ব্যাকআপটাও জরুরি। একটা উদাহরণ দেই। ধরা যাক, আমি একটা হোম চালাই। আমি মারা গেলাম- তো, হোম কী বন্ধ হয়ে যাবে? না- বিকল্প একজনকে অবশ্যই থাকতে হবে যে নিমিষেই আমার জায়গায় চলে আসবে।
যাই হোক, পরে সাদিক আলম বললেন, চলেন, আমরা আপাতত একটা স্কুল করি- পরে টাকা হলে নাহয় ‘ওল্ড হোম’ করা যাবে। পরামর্শটা আমার মনে ধরল। তো স্কুল শুরু করা হলো। প্রথম স্কুলটা খোলা হয়েছিল মেথরপট্টিতে, পরেরটা অন্ধপল্লীতে, এর পরেরটা স্টেশনে। যাক, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ...।
কিন্তু সেই টাকার যোগানও আর হলো না আর ওল্ড হোমও হলো না। অদেখা এই স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল। আমি জানি, আমৃত্যু এই স্বপ্নটা তাড়া করবে। ভুলে যাই কিন্তু প্রায়শ এই না-করতে পারার বেদনাটা পাক খেয়ে উঠে। যখন ওই বয়স্ক মহিলাকে দেখেছিলাম, [২] তখন। এমন ঘটনাগুলোর যখন মুখোমুখি হই তখনই পুরনো ক্ষতগুলো দগদগে হয়ে উঠে।
আজ আবারও কষ্টটা ফিরে আসে। একটা মানুষকে প্রায়ই দেখতাম স্টেশনে শুয়ে থাকতে। আমার ধারণা ছিল মানুষটা অলস টাইপের তাই শুয়ে থাকেন। আমি একটা আস্ত নির্বোধ- আমার ধারণাটা ভুল ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এই মানুষটা কয়েক মাস ধরেই এভাবে পড়ে আছেন। জানা গেল, অসুখ। অসুখটা কি এটা কেউ গুছিয়ে বলতে পারলেন না।
মানুষটার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর ডান পাশটা অবশ- প্যরালাইসিস। মানুষটার মধ্যে আলাদা একটা মর্যাদা বোধ আমার চোখ এড়ায়নি! কারো সঙ্গে কথা বলতে তাঁর বিশেষ তেমন আগ্রহ নেই। কেউ দিলে খান, না-দিলে উপোস পড়ে থাকেন। আমি আমার সাধ্যমত এটা-সেটা বলে মানুষটাকে খানিক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। তিনি কথার ফাঁকে এমন কিছু ইংরাজি শব্দ বলছিলেন যাতে মনে হয় মানুষটা বেশ শিক্ষিত। আজ কেবল অল্পই জানা গেল। বাড়ি কোথাও বলতে চান না কিন্তু কথায় সিলেটের ভাষার টান। একবার কেবল বললেন, তাঁর ৩ ছেলে, ছেলেরা সবাই লন্ডনে থাকে- সন্তানের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলেই রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলেন: তাদের আমি ত্যাজ্য করছি।
আমি তাঁকে বলি, আপনার ছেলেদের কাছে ফিরে যেতে চান না? তাঁর উত্তর, না। আমি আবারও বলি, কিন্তু এভাবে... তাহলে আপনি...কীসের অপেক্ষায়...মানে আপনি...? তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মৃত্যুর...।
১. https://www.facebook.com/ali.mahmed1971?ref=tn_tnmn
২. http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_26.html
অন্যত্র এটা নিয়ে বলেছি তবুও একটু বলি এই বিষয়ে। আজ থেকে ৫ বছর আগে ‘ওল্ড হোম’ করার চিন্তাটা এসেছিল মাথায়। ওসময় কিছু টাকাও ছিল আমার হাতে। কিন্তু ছোট্ট একটা ‘ওল্ড হোম’ চালাতে প্রতি মাসে যে টাকা লাগে ওই হিসাবে অন্তত দু-তিন বছরের টাকা হাতে না-নিয়ে এটা আমি শুরু করতে চাইনি।
আমার যুক্তিটা ছিল এমন, তীব্র আবেগ নিয়ে শুরু করলাম কিন্তু কয়েক মাস চলার পর টাকার অভাবে এটা বন্ধ করে দিতে হলো। তখন? কিছু মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে আবারও দুঃস্বপ্নের মাঝে ঠেলে দেয়া। এ তো অন্যায়, মহা অন্যায়!
‘ওল্ড হোম’ করাটা যতটা সহজ মনে হয় আমার কাছে কিন্তু ততোটা না। নিয়মিত টাকার যোগানটা মূখ্য একটা বিষয় তো বটেই তাছাড়া লোকের ব্যাকআপটাও জরুরি। একটা উদাহরণ দেই। ধরা যাক, আমি একটা হোম চালাই। আমি মারা গেলাম- তো, হোম কী বন্ধ হয়ে যাবে? না- বিকল্প একজনকে অবশ্যই থাকতে হবে যে নিমিষেই আমার জায়গায় চলে আসবে।
যাই হোক, পরে সাদিক আলম বললেন, চলেন, আমরা আপাতত একটা স্কুল করি- পরে টাকা হলে নাহয় ‘ওল্ড হোম’ করা যাবে। পরামর্শটা আমার মনে ধরল। তো স্কুল শুরু করা হলো। প্রথম স্কুলটা খোলা হয়েছিল মেথরপট্টিতে, পরেরটা অন্ধপল্লীতে, এর পরেরটা স্টেশনে। যাক, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ...।
কিন্তু সেই টাকার যোগানও আর হলো না আর ওল্ড হোমও হলো না। অদেখা এই স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল। আমি জানি, আমৃত্যু এই স্বপ্নটা তাড়া করবে। ভুলে যাই কিন্তু প্রায়শ এই না-করতে পারার বেদনাটা পাক খেয়ে উঠে। যখন ওই বয়স্ক মহিলাকে দেখেছিলাম, [২] তখন। এমন ঘটনাগুলোর যখন মুখোমুখি হই তখনই পুরনো ক্ষতগুলো দগদগে হয়ে উঠে।
আজ আবারও কষ্টটা ফিরে আসে। একটা মানুষকে প্রায়ই দেখতাম স্টেশনে শুয়ে থাকতে। আমার ধারণা ছিল মানুষটা অলস টাইপের তাই শুয়ে থাকেন। আমি একটা আস্ত নির্বোধ- আমার ধারণাটা ভুল ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এই মানুষটা কয়েক মাস ধরেই এভাবে পড়ে আছেন। জানা গেল, অসুখ। অসুখটা কি এটা কেউ গুছিয়ে বলতে পারলেন না।
মানুষটার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর ডান পাশটা অবশ- প্যরালাইসিস। মানুষটার মধ্যে আলাদা একটা মর্যাদা বোধ আমার চোখ এড়ায়নি! কারো সঙ্গে কথা বলতে তাঁর বিশেষ তেমন আগ্রহ নেই। কেউ দিলে খান, না-দিলে উপোস পড়ে থাকেন। আমি আমার সাধ্যমত এটা-সেটা বলে মানুষটাকে খানিক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। তিনি কথার ফাঁকে এমন কিছু ইংরাজি শব্দ বলছিলেন যাতে মনে হয় মানুষটা বেশ শিক্ষিত। আজ কেবল অল্পই জানা গেল। বাড়ি কোথাও বলতে চান না কিন্তু কথায় সিলেটের ভাষার টান। একবার কেবল বললেন, তাঁর ৩ ছেলে, ছেলেরা সবাই লন্ডনে থাকে- সন্তানের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলেই রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলেন: তাদের আমি ত্যাজ্য করছি।
আমি তাঁকে বলি, আপনার ছেলেদের কাছে ফিরে যেতে চান না? তাঁর উত্তর, না। আমি আবারও বলি, কিন্তু এভাবে... তাহলে আপনি...কীসের অপেক্ষায়...মানে আপনি...? তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মৃত্যুর...।
১. https://www.facebook.com/ali.mahmed1971?ref=tn_tnmn
২. http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_26.html
No comments:
Post a Comment