এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Sunday, December 29, 2013
কুয়াশা-ধোঁয়াশা-মাকড়শা।
বিভাগ
ভাললাগা
সূর্যকে আটকাবার চেষ্টা...!
বিভাগ
ভাললাগা
Saturday, December 28, 2013
আমরা এই প্রজন্ম আছি এঁদের হাত ধরে।
ওই লেখায় এটাও উল্লেখ করেছিলাম, তিনি জানাতে চাননি কিন্তু কথাপ্রসঙ্গে আমরা জেনে গিয়েছিলাম, এই অসমসাহসী মানুষটার অনুমান তাঁর পেটে টিউমার!
আমরা অপেক্ষা করছিলাম একজন ডাক্তার, @Gulzar Hossain Ujjal জন্য যিনি শুক্রবারে ঢাকা থেকে এখানে আসেন। যে মানুষটার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আছে সীমাহীন মমতা- তিনি যে কেবল কখনই কোনো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ফি নেন না এমনই না, ওষুধ বা প্রয়োজনীয় যথাসম্ভব সহায়তার ব্যবস্থাও করে দেন। অবরোধ-হরতালের কারণে দু-সপ্তাহ ধরে আসতে পারছিলেন না। আজ আমি এবং @Dulal Ghose সকাল থেকে অপেক্ষায়, উৎকন্ঠায়।
রেলের এখন যা তা অবস্থা- সকালের ট্রেন রাতে আসে, রাতের ট্রেন সকালে। অবশেষে বাসে, অটোতে করে ডা. গুলজার যখন পৌঁছান তখন বেলা অনেকটাই গড়িয়ে গেছে। lদুলাল ঘোষ ঠিকই সায়েরা বেগমকে নিয়ে এসেছিলেন, সঙ্গে তাঁর স্বামী। ডাক্তারের দেরি দেখে আমি ছল করে মানুষগুলোকে বাসায় নিয়ে আসি- কারো বাসায় হুট করে যেতে মানুষগুলোর কী সংকোচ! আহারে, এই মানুষগুলো কেমন করে বুঝবেন, আমরা এই প্রজন্ম তাঁদের জন্য কতটা আবেগ লালন করি! তাঁদের একটু স্পর্শের জন্য কতটা কাতর হয়ে থাকি।
সায়েরা বেগম এবং তার স্বামী ঘুরে ঘুরে বাসার সামনের খোলা জায়গায় আমার লাগানো গাছগুলো খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখেন। বেচারা গাছদের বড়ো করুণ অবস্থা! আমি তাঁদের পরামর্শগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনি কারণ গাছের বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান অপরিসীম! কিন্তু আমি জানি এই সব পরামর্শ বাস্তবে বিফলে যাবে- আজকাল গাছগুলোর তেমন পরিচর্যা করা হয় না। সময় কোথায়, দিনভর যে আমার কেবল অকাজ আর অকাজ!
আমি যখন বললাম, দাঁড়ান আপনাদের দু-জনের একটা ছবি তুলে দেই। ওয়াল্লা, মানুষগুলোর কী লজ্জা। অবশ্য সায়েরা বেগম স্বামীকে কপট ধমকও দেন, ‘হইছে শরম করতে হইব না এ তো আমাগো পুলার মতনই’। আমার চোখ অহেতুক ভরে আসে। অবশ্য আমি এটাও জানি যে এঁদের ছেলে দূরের কথা, এঁদের কোনো সন্তানই নেই।
যাই হোক, ডা. গুলজার সায়েরা বেগমকে দেখে অনেকটাই আঁচ করেছেন এই ভদ্রমহিলার টিউমার থাকার আশংকা প্রবল। কিছু আলট্রাসনোগ্রাম এবং আরও পরীক্ষা দিয়েছেন যেগুলো করে নিশ্চিত হতে চান অপারেশন সম্বন্ধে। যেগুলো করে আগামী সপ্তাহে তিনি নিশ্চিত করবেন।
একজন সহৃদয় সার্জন ডা. মামুনের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন, অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
এখনও একেবারেই নিশ্চিত না যে অপারেশন লাগবেই। অপরেশন লাগুক আর নাই লাগুক, সরকার এদের স্বীকার করুক আর নাই করুক আমরা আছি- আমরা এই প্রজন্ম আছি এঁদের হাত ধরে। কার সাধ্য এ হাত ছাড়ায়...।
১. এক অসামান্য মুক্তিযোদ্ধা: https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151826798192335
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Wednesday, December 25, 2013
লড়াই এবং বিনোদন!
বিভাগ
আয়না
Monday, December 23, 2013
আমাদের ইশকুল এবং...
আমি যে স্কুলগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলাম যেখানে বাচ্চারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনে পয়সায় পড়া-খেলার সুযোগ পেত। সবগুলোর নামই ছিল ‘আমাদের ইশকুল’, এখন যেটা চালু আছে সেটার নামও। তো, এই স্কুলগুলোর স্বপ্নদ্রষ্টাদের একজন, তার নাম এই লেখায় অন্তত উল্লেখ করতে চাচ্ছি না- কেন, সেটার ব্যাখ্য পরে দিচ্ছি। আপাতত নাম তার নাম দিলাম মি, এক্স।
প্রায় ৫ বছর পূর্বে যখন স্কুলগুলো চালু হয় তখন আর্থিক যোগানের ব্যবস্থা করতেন মি. এক্স। দেখভাল, অন্য সমস্ত কাজগুলো করতাম আমি। আমি চেষ্টা করতাম আমার যে অল্প মেধা আছে তার সবটুকু এখানে ঢেলে দিতে।
স্কুল ব্যতীত ‘ন্যানো ক্রেডিট’ এবং আরও অনেক হাবিজাবি কাজও হতো- আমরা ‘পড়শি ফাউন্ডেশন’ নামে একটা প্রতিষ্ঠানও দাঁড় করিয়েছিলাম। যার সদস্য সংখ্যা আমরা দুজনই! মি. এক্স আমাকে বলেছিলেন এটার রেজিস্ট্রেশন করানো প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশন করালে কী লাভ হবে আমি বুঝিনি তবুও আমি বলেছিলাম, আচ্ছা।
বছর দেড়েক হবে হঠাৎ করে স্কুলের আর্থিক যোগান বন্ধ হয়ে গেল! কেন বন্ধ হলো, সীমাবদ্ধতা কোথায় এই সব আমাকে কিছুই জানালেন না মি. এক্স- জানালে কোনো সমস্যা ছিল না। আক্ষরিক অর্থেই আমি পানিতে পড়লাম। কারণ তখন আমার নিজেরই হাজারোটা সমস্যা- অনেক কটা বছর ধরে একটা বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আমার আইনি লড়াই চলছিল। কারণটা অতি সহজ। আমি এদেরকে বোঝাবার চেষ্টা করছিলাম, শ্লা, তোমরাও ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি না আর আমি ব্লাডি নেটিভ না।
এ এক বিচিত্র- বছর খানেক কেমন করে এই স্কুল চলল আমি জানি না! কোনো মাসে টিচারের বেতন বাকী থাকত তো কোনো মাসে ঘরভাড়া! বই-খাতা-খেলার সামগ্রী কিনতে বড়ো বেগ পেতে হতো। আসলে আমি আর পারছিলাম না। এক সময় সিদ্ধান্ত নিলাম স্কুল বন্ধ করে দেব। ডা. গুলজার নামের মানুষটা বললেন, ‘আলী ভাই, বন্ধ করবেন না, দেখি না, চলুক যতদিন চলে...’। তিনি কেমন-কেমন করে কিছু টাকারও ব্যবস্থা করতেন। এভাবে আরও কয়েক মাস স্কুল চলল। কিন্তু দিন-দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল। মাস শেষে আমার নিজের সমস্যাগুলোর সঙ্গে যোগ হতো স্কুলের আর্থিক সমস্যা। আমার উপর খুব চাপ পড়ছিল, আমি এই চাপ নিতে পারছিলাম না।
যেখানে গল্প শেষ হয়ে যায় সেখান থেকেই আবারও একটা গল্পের সূত্রপাত হয়। নিকষ অন্ধকার টানেলের শেষ মাথায় আলোর একটা বিন্দু থাকে, থাকতেই হয়। বেশ ক-মাস আগের কথা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী @Pradip Saha নামের মানুষটা এগিয়ে এলেন। স্কুল চালাবার জন্য তিনি এককালীন এক বছরের টাকা পাঠিয়ে দিলেন। আমি হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম! যাক, এক বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
অনেক দিন পর- একদিন, মি. এক্স আমাকে ফোন করলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের কাজ প্রায় শেষ এখন এর সঙ্গে জড়িত লোকজনের নাম প্রয়োজন। আপনার নাম দিতে চাচ্ছি’। পদটা প্রেসিডেন্ট বা চেয়ারম্যান এই টাইপের কিছু হবে, আমার মনে নেই। তার এই কথায় আমি হতভম্ব হয়েছিলাম! এই ফাউন্ডেশন...এই স্কুলটা যাদের জন্য তাদের বিষয়ে বা এই স্কুলটা এতো বছর ধরে কেমন করে চলল এই বিষয়ে তিনি আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন না, জানতে চাইলেন না! অথচ...। অদম্য রাগ চেপে আমি বলেছিলাম, ‘আমি চাচ্ছি না আমার নাম এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হোক’। তিনি বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, ‘কেন’? আমি শীতল গলায় বলেছিলাম, ‘এর ব্যাখ্যা দিতে আমি আগ্রহ বোধ করি না’। মি, এক্সের সঙ্গে আলাপচারিতার এখানেই সমাপ্তি...।
লেখার বিষয়ে আমার সাফ কথা, অসঙ্গতি মনে করলে আমি আমার আপন বাপকেও নিয়েও লিখব। তাহলে এখানে মি. এক্সের নামটা কেন দিলাম না? মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার মার শরীরে মি. এক্সের রক্ত মিশে ছিল। কী কষ্ট! আমার মার অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন অথচ আমরা ভাই-বোন কেউ রক্ত দিতে পারলাম না কারণ রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করছিল না। মি. এক্স রক্ত দিয়েছিলেন। রক্তের ঋণ শোধ করা যায় না কিন্তু অন্তত খানিক চেষ্টা তো করা যায়...।
যাই হোক, ক-দিন পূর্বে ইংল্যান্ড প্রবাসী @Fakruddin Shahariar আমাকে কিছু টাকা পাঠালেন। তাঁর সহৃদয় ইচ্ছা স্কুলের বাচ্চারা একদিন ভাল-মন্দ খাবে। আসলে যারা প্রবাসে থাকেন তাদের ধারণা নেই যে দেশে আমাদের খেতে কতো অল্প টাকা লাগে। খাওয়াপর্ব শেষ হওয়ার পরও তাঁর পাঠানো টাকা থেকে আমার হাতে বেশ কিছু টাকা বেঁচে গেল। আমি পড়লাম মুশকিলে। কী করি এই টাকা দিয়ে?
পূর্বের স্কুলগুলোর বাচ্চাদের জন্য স্কুল-ড্রেস ছিল কিন্তু এখানকার বাচ্চাদের জন্য আর্থিক কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। অথচ বাচ্চাগুলো প্রায়ই বায়না করত, ‘আমাদের স্কুল ড্রেস দেবেন না’? আমি কষ্ট চেপে বলতাম, ‘দেখি’। আমার এই দেখাদেখির পর্ব আর শেষ হয় না! এবার ঠিক করলাম অনেক হয়েছে- এই দেখাদেখির পর্ব আর না কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া টাকার সঙ্গে আরও যে টাকার প্রয়োজন।
মানুষের ইচ্ছা আবার অপূর্ণ থাকে নাকি! সুযোগ একটা এসেই গেল। একজন... জেন্ডার-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে তার নামটা এখানে উহ্যই থাক। তিনি বললেন, ‘শুভ, দেশে আসছি’।
আমি বললাম, ‘বেশ তো, অতি আনন্দের বিষয়’।
এরপর তিনি বললেন, ‘শুভ, তোমার বুকের মাপ কত’?
আমি বললাম, ‘তোমার প্লেন ল্যান্ড করার রানওয়ের মত তো না অবশ্যই। কিন্তু ঘটনা কী’!
মানুষটা রেগে গিয়ে বললেন, ‘আমার সঙ্গে শস্তা রসিকতা করবা না। আমি তোমার জন্য একটা ব্লেজার কিনব ঠিক করেছি’।
আমি এবার হাসি চেপে বললাম, ‘দেশে লোকজনেরা শীতবস্ত্র বিতরণ করে ছবি-টবি তোলেন। আমাকেও কী এটা পরে ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে হবে’? মানুষটা এবার সত্যি সত্যি ক্ষেপে গেলেন!
শোনো কথা, কে এই মানুষটাকে এই খবরটা দিয়েছে যে, ব্লেজার গায়ে না-দিলে আমার ঘুম আসে না! পূর্বে বিভিন্ন সময়ে যারা এই জিনিসগুলো আমাকে দিয়েছেন ফি বছর নিয়ম করে এগুলো বের করা হয়, শীত গেলে আবার বাক্সে ঢোকানো হয় কিন্তু পরা আর হয় না কারণ এই সব জিনিস পরলে আমার গা কুটকুট করে! ইয়ের পেটে ঘি হজম হয় না টাইপের আর কী!
তো, আমি বললাম, ‘শোনো, এই জিনিস আমার সহ্য হবে না- জিনিসটা আমার কাছে ভারী অকাজের। এক কাজ করো, যে টাকা দিয়ে এই জিনিসটা কিনবে সেই টাকাটা আমাকে পাঠিয়ে দাও। আমার কাজ আছে’।
সূর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশি যার নমুনা তিনি দেশে ফেরার পর দেখেছিলাম- সে গল্প থাক। তিনি টাকাটা পাঠাবার পর সব মিলিয়ে বাচ্চাদের স্কুল-ড্রেস হয়ে গেল। অবশ্য 'সেলাই মাস্টার' সাহেব আবার মুখ লম্বা করে রাখতেন কারণ সবগুলো বাচ্চাকে একদিনে কখনই পাওয়া যেত না। বেচারাকে বাচ্চাদের মাপ নেয়ার জন্য কয়েক দিন আসতে হলো। কারণ তিন ভাগের এক ভাগ বাচ্চারাও প্রতিদিন উপস্থিত থাকে না, এদের অনেকেই সারাটা দিন কাগজ-টাগজ টোকায়। যেদিন স্কুলে আসে সেদিন তাদের কাজের সমস্যা হয়।
অনুমতি না-নিয়ে @Pradip Saha এবং @Fakruddin Shahariar নাম এখানে উল্লেখ করেছি বলে মানুষগুলো ভারী রাগ করবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আমার কিছুই করতে পারবেন না। হা হা হা, কারণ সুদূর প্রবাসে থেকে আমার কেশও স্পর্শ করার ক্ষমতা এঁদের নাই...।
এদের পতাকা বানাবার চেষ্টা:
প্রায় ৫ বছর পূর্বে যখন স্কুলগুলো চালু হয় তখন আর্থিক যোগানের ব্যবস্থা করতেন মি. এক্স। দেখভাল, অন্য সমস্ত কাজগুলো করতাম আমি। আমি চেষ্টা করতাম আমার যে অল্প মেধা আছে তার সবটুকু এখানে ঢেলে দিতে।
স্কুল ব্যতীত ‘ন্যানো ক্রেডিট’ এবং আরও অনেক হাবিজাবি কাজও হতো- আমরা ‘পড়শি ফাউন্ডেশন’ নামে একটা প্রতিষ্ঠানও দাঁড় করিয়েছিলাম। যার সদস্য সংখ্যা আমরা দুজনই! মি. এক্স আমাকে বলেছিলেন এটার রেজিস্ট্রেশন করানো প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশন করালে কী লাভ হবে আমি বুঝিনি তবুও আমি বলেছিলাম, আচ্ছা।
বছর দেড়েক হবে হঠাৎ করে স্কুলের আর্থিক যোগান বন্ধ হয়ে গেল! কেন বন্ধ হলো, সীমাবদ্ধতা কোথায় এই সব আমাকে কিছুই জানালেন না মি. এক্স- জানালে কোনো সমস্যা ছিল না। আক্ষরিক অর্থেই আমি পানিতে পড়লাম। কারণ তখন আমার নিজেরই হাজারোটা সমস্যা- অনেক কটা বছর ধরে একটা বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আমার আইনি লড়াই চলছিল। কারণটা অতি সহজ। আমি এদেরকে বোঝাবার চেষ্টা করছিলাম, শ্লা, তোমরাও ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি না আর আমি ব্লাডি নেটিভ না।
এ এক বিচিত্র- বছর খানেক কেমন করে এই স্কুল চলল আমি জানি না! কোনো মাসে টিচারের বেতন বাকী থাকত তো কোনো মাসে ঘরভাড়া! বই-খাতা-খেলার সামগ্রী কিনতে বড়ো বেগ পেতে হতো। আসলে আমি আর পারছিলাম না। এক সময় সিদ্ধান্ত নিলাম স্কুল বন্ধ করে দেব। ডা. গুলজার নামের মানুষটা বললেন, ‘আলী ভাই, বন্ধ করবেন না, দেখি না, চলুক যতদিন চলে...’। তিনি কেমন-কেমন করে কিছু টাকারও ব্যবস্থা করতেন। এভাবে আরও কয়েক মাস স্কুল চলল। কিন্তু দিন-দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল। মাস শেষে আমার নিজের সমস্যাগুলোর সঙ্গে যোগ হতো স্কুলের আর্থিক সমস্যা। আমার উপর খুব চাপ পড়ছিল, আমি এই চাপ নিতে পারছিলাম না।
যেখানে গল্প শেষ হয়ে যায় সেখান থেকেই আবারও একটা গল্পের সূত্রপাত হয়। নিকষ অন্ধকার টানেলের শেষ মাথায় আলোর একটা বিন্দু থাকে, থাকতেই হয়। বেশ ক-মাস আগের কথা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী @Pradip Saha নামের মানুষটা এগিয়ে এলেন। স্কুল চালাবার জন্য তিনি এককালীন এক বছরের টাকা পাঠিয়ে দিলেন। আমি হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম! যাক, এক বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
অনেক দিন পর- একদিন, মি. এক্স আমাকে ফোন করলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের কাজ প্রায় শেষ এখন এর সঙ্গে জড়িত লোকজনের নাম প্রয়োজন। আপনার নাম দিতে চাচ্ছি’। পদটা প্রেসিডেন্ট বা চেয়ারম্যান এই টাইপের কিছু হবে, আমার মনে নেই। তার এই কথায় আমি হতভম্ব হয়েছিলাম! এই ফাউন্ডেশন...এই স্কুলটা যাদের জন্য তাদের বিষয়ে বা এই স্কুলটা এতো বছর ধরে কেমন করে চলল এই বিষয়ে তিনি আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন না, জানতে চাইলেন না! অথচ...। অদম্য রাগ চেপে আমি বলেছিলাম, ‘আমি চাচ্ছি না আমার নাম এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হোক’। তিনি বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, ‘কেন’? আমি শীতল গলায় বলেছিলাম, ‘এর ব্যাখ্যা দিতে আমি আগ্রহ বোধ করি না’। মি, এক্সের সঙ্গে আলাপচারিতার এখানেই সমাপ্তি...।
লেখার বিষয়ে আমার সাফ কথা, অসঙ্গতি মনে করলে আমি আমার আপন বাপকেও নিয়েও লিখব। তাহলে এখানে মি. এক্সের নামটা কেন দিলাম না? মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার মার শরীরে মি. এক্সের রক্ত মিশে ছিল। কী কষ্ট! আমার মার অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন অথচ আমরা ভাই-বোন কেউ রক্ত দিতে পারলাম না কারণ রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করছিল না। মি. এক্স রক্ত দিয়েছিলেন। রক্তের ঋণ শোধ করা যায় না কিন্তু অন্তত খানিক চেষ্টা তো করা যায়...।
যাই হোক, ক-দিন পূর্বে ইংল্যান্ড প্রবাসী @Fakruddin Shahariar আমাকে কিছু টাকা পাঠালেন। তাঁর সহৃদয় ইচ্ছা স্কুলের বাচ্চারা একদিন ভাল-মন্দ খাবে। আসলে যারা প্রবাসে থাকেন তাদের ধারণা নেই যে দেশে আমাদের খেতে কতো অল্প টাকা লাগে। খাওয়াপর্ব শেষ হওয়ার পরও তাঁর পাঠানো টাকা থেকে আমার হাতে বেশ কিছু টাকা বেঁচে গেল। আমি পড়লাম মুশকিলে। কী করি এই টাকা দিয়ে?
পূর্বের স্কুলগুলোর বাচ্চাদের জন্য স্কুল-ড্রেস ছিল কিন্তু এখানকার বাচ্চাদের জন্য আর্থিক কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। অথচ বাচ্চাগুলো প্রায়ই বায়না করত, ‘আমাদের স্কুল ড্রেস দেবেন না’? আমি কষ্ট চেপে বলতাম, ‘দেখি’। আমার এই দেখাদেখির পর্ব আর শেষ হয় না! এবার ঠিক করলাম অনেক হয়েছে- এই দেখাদেখির পর্ব আর না কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া টাকার সঙ্গে আরও যে টাকার প্রয়োজন।
মানুষের ইচ্ছা আবার অপূর্ণ থাকে নাকি! সুযোগ একটা এসেই গেল। একজন... জেন্ডার-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে তার নামটা এখানে উহ্যই থাক। তিনি বললেন, ‘শুভ, দেশে আসছি’।
আমি বললাম, ‘বেশ তো, অতি আনন্দের বিষয়’।
এরপর তিনি বললেন, ‘শুভ, তোমার বুকের মাপ কত’?
আমি বললাম, ‘তোমার প্লেন ল্যান্ড করার রানওয়ের মত তো না অবশ্যই। কিন্তু ঘটনা কী’!
মানুষটা রেগে গিয়ে বললেন, ‘আমার সঙ্গে শস্তা রসিকতা করবা না। আমি তোমার জন্য একটা ব্লেজার কিনব ঠিক করেছি’।
আমি এবার হাসি চেপে বললাম, ‘দেশে লোকজনেরা শীতবস্ত্র বিতরণ করে ছবি-টবি তোলেন। আমাকেও কী এটা পরে ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে হবে’? মানুষটা এবার সত্যি সত্যি ক্ষেপে গেলেন!
শোনো কথা, কে এই মানুষটাকে এই খবরটা দিয়েছে যে, ব্লেজার গায়ে না-দিলে আমার ঘুম আসে না! পূর্বে বিভিন্ন সময়ে যারা এই জিনিসগুলো আমাকে দিয়েছেন ফি বছর নিয়ম করে এগুলো বের করা হয়, শীত গেলে আবার বাক্সে ঢোকানো হয় কিন্তু পরা আর হয় না কারণ এই সব জিনিস পরলে আমার গা কুটকুট করে! ইয়ের পেটে ঘি হজম হয় না টাইপের আর কী!
তো, আমি বললাম, ‘শোনো, এই জিনিস আমার সহ্য হবে না- জিনিসটা আমার কাছে ভারী অকাজের। এক কাজ করো, যে টাকা দিয়ে এই জিনিসটা কিনবে সেই টাকাটা আমাকে পাঠিয়ে দাও। আমার কাজ আছে’।
সূর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশি যার নমুনা তিনি দেশে ফেরার পর দেখেছিলাম- সে গল্প থাক। তিনি টাকাটা পাঠাবার পর সব মিলিয়ে বাচ্চাদের স্কুল-ড্রেস হয়ে গেল। অবশ্য 'সেলাই মাস্টার' সাহেব আবার মুখ লম্বা করে রাখতেন কারণ সবগুলো বাচ্চাকে একদিনে কখনই পাওয়া যেত না। বেচারাকে বাচ্চাদের মাপ নেয়ার জন্য কয়েক দিন আসতে হলো। কারণ তিন ভাগের এক ভাগ বাচ্চারাও প্রতিদিন উপস্থিত থাকে না, এদের অনেকেই সারাটা দিন কাগজ-টাগজ টোকায়। যেদিন স্কুলে আসে সেদিন তাদের কাজের সমস্যা হয়।
অনুমতি না-নিয়ে @Pradip Saha এবং @Fakruddin Shahariar নাম এখানে উল্লেখ করেছি বলে মানুষগুলো ভারী রাগ করবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আমার কিছুই করতে পারবেন না। হা হা হা, কারণ সুদূর প্রবাসে থেকে আমার কেশও স্পর্শ করার ক্ষমতা এঁদের নাই...।
এদের পতাকা বানাবার চেষ্টা:
বিভাগ
আমাদের ইশকুল
সতর্কবার্তা!
আমি আমার সাইটে (http://www.ali-mahmed.com/)
স্পষ্ট করে লিখে রেখেছি, ‘আমার লিখিত অনুমতি ব্যতীত কোনো লেখা কোথাও
প্রকাশ করা যাবে না’। তারপরও কেউ-কেউ এখান থেকে অনুমতি না-নিয়েই লেখা
ছাপিয়ে দেন। বিরক্তির একশেষ! এদের ভাবখানা এমন, এই সমস্ত
লেখা গণিমতের মাল। কোথাও যুদ্ধ হয়েছিল- এরা লুটের মাল ভাগাভাগি করে
নিচ্ছেন। এই সমস্ত অপদার্থের জন্য এদেশে সাইবার আইন ডিমের খোসা। আমাদের
দেশে সাইবার আইন কেবল লেখালেখি করার অপরাধে বিনা ওয়ারেন্ট হিড়হিড় করে টেনে
নিয়ে যাওয়া।
একজন আমার ইনবক্সে জানালেন, ‘আপনার এই সাইটটি খুব ভাল লাগে, তাই আমাদের পেজে আপনার কিছু পোস্ট শেয়ার করেছি এবং পরবর্তীতে আরো শেয়ার করার কথা ভাবছি’।
আমি চরম বিরক্তি গোপন করে উত্তরে লিখলাম, ‘এরপর থেকে আমার অনুমতি ব্যতীত শেয়ার করবেন না। ধন্যবাদ’।
আমার ধারণা ছিল মানুষটা তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবেন। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে তিনি লিখলেন, ‘হুম!!!’
আমি লিখতে চেয়েছিলাম, আপনার উত্তর আমার পছন্দ হলো না। ওয়াল্লা, এরপর দেখি এই মানুষটা আমাকে ব্লক করেছেন [১]।
এই চুতিয়া যে কালে কালে বড়ো একটা চোর হবে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নাই।
স্ক্রিণশট ১:
ফেসবুকে প্রায়ই এটা লক্ষ করি, অনুমতি না-নিয়েই লেখা ছাপিয়ে দেয়া হয়। অজস্র উদাহরণ থেকে একটা উদাহরণ দেই [২]। এই সাইটটা যারা চালান তাদের কাছে আমি একটা সদুত্তরের জন্য দিনের-পর-দিন অপেক্ষা করেছি। এরা আজও আমাকে একটা সরি বলা দূরের কথা কোনো উত্তর দেননি। অতএব এও আরেক চুতিয়া।
স্ক্রিণশট ২:
ফেসবুকে সমস্যা হচ্ছে, অনুমতি ব্যতীত লেখা ছাপানো যাবে না এমন সতর্কবার্তা কোথাও দেয়ার সুবিধা নেই। এমনিতে ফেসবুকের শেয়ার বাটন চেপে যেভাবে শেয়ার করার নিয়ম সেটার জন্য কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই এ তো আমরা বিলক্ষণ জানি, এটা বরং কোনো লেখকের জন্য আনন্দের। কিন্তু কারো একটা লেখা তাকে না-জানিয়ে ছাপিয়ে দেয়ার মানে কী! এরপর থেকে আমার ওয়েব-সাইট, ফেসবুকের কোনো লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কেউ যে-কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে সানন্দে তার নামের সঙ্গে চোর বা চুতিয়া শব্দটা জুড়ে দেব।
বাধ্য হয়ে আমার এই সতর্কবার্তা ফেসবুকের ‘কাভার ফটোতে’ ঝুলিয়ে দিচ্ছি।
একজন আমার ইনবক্সে জানালেন, ‘আপনার এই সাইটটি খুব ভাল লাগে, তাই আমাদের পেজে আপনার কিছু পোস্ট শেয়ার করেছি এবং পরবর্তীতে আরো শেয়ার করার কথা ভাবছি’।
আমি চরম বিরক্তি গোপন করে উত্তরে লিখলাম, ‘এরপর থেকে আমার অনুমতি ব্যতীত শেয়ার করবেন না। ধন্যবাদ’।
আমার ধারণা ছিল মানুষটা তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবেন। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে তিনি লিখলেন, ‘হুম!!!’
আমি লিখতে চেয়েছিলাম, আপনার উত্তর আমার পছন্দ হলো না। ওয়াল্লা, এরপর দেখি এই মানুষটা আমাকে ব্লক করেছেন [১]।
এই চুতিয়া যে কালে কালে বড়ো একটা চোর হবে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নাই।
স্ক্রিণশট ১:
ফেসবুকে প্রায়ই এটা লক্ষ করি, অনুমতি না-নিয়েই লেখা ছাপিয়ে দেয়া হয়। অজস্র উদাহরণ থেকে একটা উদাহরণ দেই [২]। এই সাইটটা যারা চালান তাদের কাছে আমি একটা সদুত্তরের জন্য দিনের-পর-দিন অপেক্ষা করেছি। এরা আজও আমাকে একটা সরি বলা দূরের কথা কোনো উত্তর দেননি। অতএব এও আরেক চুতিয়া।
স্ক্রিণশট ২:
ফেসবুকে সমস্যা হচ্ছে, অনুমতি ব্যতীত লেখা ছাপানো যাবে না এমন সতর্কবার্তা কোথাও দেয়ার সুবিধা নেই। এমনিতে ফেসবুকের শেয়ার বাটন চেপে যেভাবে শেয়ার করার নিয়ম সেটার জন্য কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই এ তো আমরা বিলক্ষণ জানি, এটা বরং কোনো লেখকের জন্য আনন্দের। কিন্তু কারো একটা লেখা তাকে না-জানিয়ে ছাপিয়ে দেয়ার মানে কী! এরপর থেকে আমার ওয়েব-সাইট, ফেসবুকের কোনো লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কেউ যে-কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে সানন্দে তার নামের সঙ্গে চোর বা চুতিয়া শব্দটা জুড়ে দেব।
বাধ্য হয়ে আমার এই সতর্কবার্তা ফেসবুকের ‘কাভার ফটোতে’ ঝুলিয়ে দিচ্ছি।
বিভাগ
চুতিয়া
Sunday, December 22, 2013
এক 'মহিলা ছাগল' এবং দুই ছাগল!
ছবি ঋণ: theguardian
সহায়ক সূত্র:
বিভাগ
চাবকানো প্রয়োজন
Monday, December 16, 2013
এক অসামান্য মুক্তিযোদ্ধা!
বাবা রাজাকার,
মেয়ে মুক্তিযোদ্ধা! যেমন-তেমন না, দুর্ধর্ষ এক মুক্তিযোদ্ধা! যার কল্যণে মুক্ত
হয়েছিল মুকুন্দপুর নামের বিশাল এক এলাকা। নিহত হয়েছিল অসংখ্য পাকিস্তানী সৈন্য। তাঁর
নাম সায়েরা বেগম। তাঁর সম্বন্ধে প্রকাশ্যে বলেছেন তৎকালীন ৩ নং সাব-সেক্টরের
কমান্ডার, মেজর জেনারেল সায়ীদ আহমেদ (অব.)। লিখিত আকারেও তিনি সায়েরা বেগম
সম্বন্ধে বলেন:
“...সায়েরা
বেগমের বিস্তারিত এবং নির্ভুল তথ্যের উপর ভিক্তি করে মুকুন্দপুরে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর ‘৭১-এ
পাকিস্তানি বাহিনীর উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে অনেক পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা এবং ২৯
জনকে বন্দী করে মুকুন্দপুর শক্রমুক্ত করি। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজের জীবন
বাজী রেখে সায়েরা বেগম মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন।...।“
এই অসামান্য মানুষটার
খোঁজ পেলাম কেমন করে? দুলাল ঘোষ সেদিন আমাকে বললেন, ‘এই
ভদ্রমহিলার খোঁজ পেয়েছি, যাবেন’? আরে, এ বলে কী- পাগল নাকি, যাবো না
মানে! আমি একমুহূর্ত না-ভেবে বলি, ‘চলেন, এখনই
যাই’।
দুলাল ঘোষ নামের এই মানুষটার আছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সুতীব্র আবেগ কিন্তু এই
মানুষটাকে ছাই দিয়ে না-ধরলে ফসকে যাবে। চেপে বসি
তাঁর ‘পঙ্খিরাজ’
যার চালু নাম মটর-সাইকেলের পেছনে।
তখন পড়ন্ত বিকেল। ২০ কিলোমিটার রাস্তা।
উত্তেজনায় আমার খেয়াল ছিল না গায়ে আমার পাতলা শার্ট। সময় গড়ায়। মটর-সাইকেলের তীব্র
গতির সঙ্গে শীতল বাতাস আমাকে অনেকখানি কাবু করে ফেলে।
দুলাল ঘোষ বিজবিজ করে কীসব বলছিলেন আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম না কারণ আমার মাথায়
তখন ঘুরপাক খাচ্ছে ফেরার সময় তো প্রায় রাত হয়ে যাবে। তখন ঠান্ডা আরও
বাড়বে। আমার আবার ঠান্ডায় বিরাট সমস্যা- শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।
পৌঁছার পর এই সমস্ত জাগতিক সমস্যা আর
মাথায় থাকে না। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনি এই অসমসাহসী
সায়েরা বেগম নামের মানুষটার কথা। ১৯৭১ সালে
সায়েরা বেগমের বয়স ১৬ বছর। তাঁর রাজাকার বাবার কাছে যখন পাকিস্তানী সৈন্যরা আসত
তখন তিনি আড়ালে থেকে সমস্ত কথা শুনতেন। গল্পচ্ছলে বাবার কাছ থেকে জেনে নিতেন,
পাকিস্তানী সৈন্যরা সংখ্যায় কতজন, তাদের কাছে কি কি অস্ত্র আছে,
তাদের গতিবিধি...। পরে তাঁর এই সমস্ত তথ্যগুলোর উপর ভিক্তি করে
তৎকালীন ৩ নং সাব-সেক্টরের কমান্ডার, মেজর জেনারেল সায়ীদ আহমেদ
(অব.) ১৯ নভেম্বর মুক্ত করেন মুকুন্দপুর। তাঁর তথ্যের উপর ভিক্তি করে এই অঞ্চল
মুক্ত করতে খরচ হয়েছিল মাত্র ২৯টা বুলেট!
তাঁকে রাষ্ট্র আর্থিক কোনো আর্থিক
সুবিধা দেয়া দূরের কথা স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয়নি! অথচ তার পক্ষে তৎকালীন ৩ নং
সাব-সেক্টরের কমান্ডার, অনেক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য মানুষ লিখিত আকারে সনদ
দিয়েছেন। সায়েরা বেগম পাঁচ বছর ধরে সেই সমস্ত কাগজ নিয়ে এদিক-ওদিক
লাটিমের মত পাক খেয়েছেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এই কারণেই ঢাকায়
গিয়েছেন অনেকবার। একা-একা তো যেতে পারেন না সঙ্গে তাঁর স্বামীকেও যেতে হয়। তাঁর
স্বামী আবার ডায়াবেটিসের রোগি এবং অনেকগুলো অপারেশন হওয়ার কারণে প্রায় পঙ্গু। তাই
সঙ্গে অন্যদেরকেও নিতে হতো। হোটেলে থাকা-খাওয়া এবং
বিভিন্ন কারণে খরচ হয়েছে হাজার-হাজার টাকা। কিন্তু ফলাফল শূন্য!
লাভের লাভ যা হয়েছে তা হলো কপালে জুটেছে
তাচ্ছিল্য! ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের লোকজন মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথাগুলো পর্যন্ত
শোনেনি! শ্লেষভরা কন্ঠে বলেছে, আপনার মত এমন অনেক মহিলাই তো তথ্য
দিয়েছে, তাতে কী হয়েছে!
এই সমস্ত কারণে সায়েরা বেগমের স্বামী
ক্ষুব্ধ, তিতিবিরক্ত। আমি এই ভদ্রলোকের ক্ষোভের বিষয়টা খানিকটা বুঝতে পারি। তিনি
যদি বাড়ির গেটে এই নোটিশ ঝুলিয়ে দিতেন, ‘... এবং
সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ’, তাহলে আমি অন্তত বিন্দুমাত্র অবাক
হতাম না।
আমি দুলাল ঘোষকে আড়াল করে মানুষটার
সামনে দাঁড়াই- তাঁকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর বুকটা হালকা হতে দেই।
ফাঁকে-ফাঁকে আমার আস্তিনে লুকিয়ে থাকা অস্ত্রগুলো একের-পর-এক ছুড়ে দেই। বলি, ‘চাচা,
আপনি কী জানেন, আমরা এই প্রজন্ম কোনো মুক্তিযোদ্ধার সামনে বসি না। আপনি কী
বললে বিশ্বাস করবেন যে একজন ডাক্তার ট্রেনে যাওয়ার সময় সিট
ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান কারণ তখন ট্রেনটা যে জায়গা অতিক্রম করে সেটা একজন বীরশ্রেষ্ঠ
মোস্তফা কামালের’?
মানুষটার মুখের রেখাগুলো ক্রমশ নরোম হয়ে
আসে। চলে আসার সময় সায়েরা বেগম ঠিকই লক্ষ করেন আমার গায়ের পাতলা শার্ট।
তিনি যখন বলেন, ‘বাবা,
ঠান্ডা লাগব তো, একটা শাল নিয়া যান; পরে ফেরত পাঠায়া দিয়েন’।
তখন আমার চোখ ভরে আসে। তখনও আমি জানতাম না আবারও আসতে পারব কিনা? কারণ আমার দু-পা
ব্যতীত অন্য কোনো বাহন নাই তার উপর আমার কুখ্যাত স্মৃতিশক্তি। পরে দুলাল ঘোষকে
পাওয়া না-গেলে তখন উপায়? জায়গাটাও
তো চিনতে পারব না! আমি মিথ্যা বলি, ‘না, গরম কাপড়
আছে। মটর-সাইকেলে রেখে এসেছি’।
ফেরার পথে কেমন করে এই দীর্ঘ পথ পার হয়ে
এসেছিলাম সেটার আলোচনা জরুরি না।
...
আজ দুলাল ঘোষকে বললাম, দুলাল, চলেন,
আজকের এই ১৬ ডিসেম্বরটা অন্য রকম করে পালন করি। সায়েরা
বেগমকে দেখে আসি। আমরা দুজনেই অনেকটা ‘দিন
আনি দিন খাই’
টাইপের মানুষ তবুও পছন্দ করে সায়েরা বেগম এবং তাঁর স্বামীর জন্য সামান্য উপহার
নিয়ে যাই। বিশেষ কিছু না, একটা শাড়ি, একটা পাঞ্জাবি। এমন না এঁরা খুবই অস্বচ্ছল,
এমন না এঁরা এই কাপড় কিনতে পারবেন না তবুও আমি খানিকটা
অনুমান করেছিলাম এই মানুষগুলো খুশি হবেন, তাঁদের তীব্র বেদনা যৎসামান্য হলেও লাঘব
হবে। কারণ এই সামান্য উপহারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই প্রজন্মের আবেগ।
কিন্তু...কিন্তু...। না, আমি তাঁদের অভিব্যক্তির বর্ণনা দেব না। কারণ সেটা
বড়ো নাটকীয় মনে হবে...।
আমরা আগের বার
এটাও জানতে পারিনি তাঁদের কোনো সন্তান নেই, হয়নি।
যাই হোক, সায়েরা বেগম আমাদের কাছে সবই
বলেছিলেন, অকপটে। কিন্তু অতি জরুরি একটা বিষয় তিনি সযতনে গোপন করেছিলেন। ভাগ্যিস,
আজ তিনি অসতর্ক এক মুহূর্তে ধরা পড়ে গেছেন। সায়েরা বেগমের পেটে টিউমার- টাকার জন্য
তিনি অপারেশন করাতে পারছেন না!
আমি জানি না তাঁর পেটে কোন প্রকৃতির
টিউমার, এটা অপারেশন করতে কেমন টাকাই-বা লাগবে? কেবল জানি- জানিই না কেবল, আমি
বিশ্বাস করি, সায়েরা বেগমের টিউমারের অপারেশন হবে, হবেই, হতেই হবে...।
*সায়েরা
বেগম আমাকে এটাও জানিয়ে ছিলেন, তাঁর দেয়া তথ্যের কারণে এই এলাকায় একজন
মানুষকেও ধরা পড়তে হয়নি বা কোনো নারীকেও সম্ভ্রম হারাতে হয়নি কারণ তিনি এই
সংক্রান্ত তথ্য জানামাত্র মুক্তিবাহিনীর লোকজনকে আগাম জানিয়ে দিতেন।
সায়েরা বেগমের পক্ষে এতো দালিলিক প্রমাণ যার সবগুলো আমি এখানে দিতে পারিনি। আমরা যে সমস্ত কর্মচারি পুষি, যাদের অধিকাংশই পাজারো হাঁকিয়ে বেড়ান তাদের কাঁচা রাস্তার ধুলো উড়িয়ে, সায়েরা বেগমের বাড়িতে গিয়ে এই সমস্যার সমাধান করাটাই সমীচীন ছিল। কিন্তু দেশটা যে বাংলাদেশ...! সায়েরা বেগমের অসংখ্য দালিলিক প্রমাণের কিছু অংশ এখানে দেয়া হলো।
সায়েরা বেগমের পক্ষে এতো দালিলিক প্রমাণ যার সবগুলো আমি এখানে দিতে পারিনি। আমরা যে সমস্ত কর্মচারি পুষি, যাদের অধিকাংশই পাজারো হাঁকিয়ে বেড়ান তাদের কাঁচা রাস্তার ধুলো উড়িয়ে, সায়েরা বেগমের বাড়িতে গিয়ে এই সমস্যার সমাধান করাটাই সমীচীন ছিল। কিন্তু দেশটা যে বাংলাদেশ...! সায়েরা বেগমের অসংখ্য দালিলিক প্রমাণের কিছু অংশ এখানে দেয়া হলো।
**দুলাল ঘোষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Sunday, December 15, 2013
স্যারের কুত্তা!
আমি
দেখলাম, একজন সিপাহি সাহেব একটা কুত্তাকে (এদেরকে সম্ভবত কুত্তা বলার নিয়ম নাই,
কুকুর বলারই নিয়ম। বলেই ফেলেছি যখন তখন কুত্তাই থাকুক। এই কারণে কুত্তার কাছে আগাম
ক্ষমাও চেয়ে রাখছি) হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
র্যাবের
ডগ-স্কোয়াড আছে জানি কিন্তু রেলপুলিশের ডগ-স্কোয়াডের কথা শুনিনি বলে একজনকে
জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঘটনা কী’! তিনি জানালেন, এটা স্যারের কুত্তা। এই দেশে তো ‘কুটি-কুটি’স্যার!
ইনি আবার কোন স্যার এটা জানার আগ্রহ হতেই পারে। এই স্যার মানে জিআরপি ওসি স্যার।
একবার
আমার ওয়ালেট খোয়া গেল। আমি যখন এটা জিআরপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে জানালাম, তিনি
তখন পেপার পড়ায় ব্যস্ত ছিলেন। এই অসম্ভব ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে জানিয়ে ছিলেন, ‘বোঝেনই
তো, আমাদের লোকবলের অভাব। আচ্ছা, দেখি, আপনার বিষয়টা কি করা যায়’।
আমি
কথা না-বাড়িয়ে চলে এসেছিলাম কারণ আমার আর বোঝার বাকী ছিল না ওনার এই দেখাদেখির
পর্ব আর কখনই শেষ হবে না।
বটে!
লোকবলের অভাব না-হয়ে উপায় আছে? সিপাহি সাহেবরা যদি প্রতিদিন স্যারের কুত্তা নিয়ে
লেফট-রাইট করেন তাহলে লোকবলের অভাব না হয়ে উপায় কী!
বিভাগ
ক্ষমতার অপব্যবহার
Friday, December 13, 2013
হৃদয়...এক মুক্ত বিহঙ্গ!
হৃদয়কে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম,
ওহ, হৃদয় [১]। ওখানে লিখেছিলাম,
...’হৃদয়ের জন্য একটা হুইল-চেয়ারের প্রয়োজন, বড়ো প্রয়োজন’। লেখাটা দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ওর জন্য একটা হুইল-চেয়ারের
ব্যবস্থা হয়ে যায়। @নাজমুল আলবাব একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন। মানুষটাকে একটা ধন্যবাদ দেয়ারই নিয়ম কিন্তু আমি তাঁকে ধন্যবাদ দেব না। কারণ মানুষটাকে
তাহলে যে খাটো করা হয়...।
ইনবক্সে আলাদা করে আরও অনেকে হুইল-চেয়ার দেয়ার জন্য তীব্র আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, লোকজনসব
পাগল (!) হয়ে গেল নাকি! আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম-
ও, বাহে, এতো মায়া কেন গো তোমাদের মনে?
‘অবশেষে হৃদয় হুইল-চেয়ারে করেই স্কুলে গেল’। কেবল এই একটা বাক্য দিয়ে শেষ করে দিতে পারলে সুবিধে হতো কারণ আমি তো সত্যিকারের
কোনো লেখক নই- লিখে বোঝাব সেই ক্ষমতা আমার কই! আচ্ছা, আপনারা কেউ কী খাঁচায় আটকে থাকা কোনো পাখিকে মুক্ত করার পর সেই পাখিটির আচরণ লক্ষ করে দেখেছেন?
বিশাল আকাশটা ফেরত পেয়ে তার মাথা কী এলোমেলো
হয়ে যায়, তার অনুভূতিটা কেমন হয় আসলে, আমি জানি না-আমি জানি না!
হৃদয়, হৃদয়ের ক্লাশ ফোরে পড়ুয়া একমাত্র ভাইটা, হৃদয়ের মা- তখন এদের যে অন্য ভুবনের আনন্দ সেটাকে ধরে রাখার ক্ষমতা ক্যামেরা নামের ছোট্ট যন্ত্রটার কোথায়? আফসোস, বেচারা, @নাজমুল আলবাব এই দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্ঝিত হলেন! কিন্তু আমাকে যে দৃশ্যটা দেখার সুযোগ করে দিলেন এর সঙ্গে আইফেল টাওয়ার দেখার আনন্দ কোন ছার!
আমার স্বপ্নগুলো
ছোটো-ছোটো। আমি সুতীব্র
ইচ্ছা, কোনো-একদিন @নাজমুল আলবাবের সঙ্গে রাস্তার কোনো এক দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। সেই ধোঁয়াওঠা চা-র স্বাদ আমি চোখ বন্ধ করে কেবল কল্পনাই করতে পারি। কারণ আমি জানি সেই চা-র চা-পাতা সিলেট, দার্জিলিং-এর না। সেই চা-পাতাটা আসে...।
১. ওহ হৃদয়...: https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151805576342335
হৃদয়ের খোঁজ
নেওয়া হয় না অনেক দিন। হুট করেই হাজির হয়ে যাই আজ (৪ ফেব্রয়ারি) হৃদয়ের বাড়িতে। হৃদয়ের মা কঠিন এক
অভিযোগ করলেন। হৃদয় নাকি স্কুলের বাইরেও হুইল-চেয়ারটা নিয়ে বের হতে চায়। তিনি অতি
কষ্টে তাকে নিবৃত করেন। কারণ, এটা ভেঙ্গে গেলে? আহারে-আহারে, কেন আরও আগে আসলাম
না! আমি হৃদয়ের মাকে বললাম, হৃদয়ের যখনই মন খারাপ হবে বা বাইরে বেরুতে ইচ্ছা করবে
হুইল-চেয়ার নিয়ে সে বেরিয়ে পড়বে, বাসার আশেপাশে, মাঠে চক্কর লাগাবে। কোনো সমস্যা
নাই। আপনারা এটার যত্ন নেবেন কিন্তু কোনো কারণে ভেঙ্গে
গেলে আরেকটার ব্যবস্থা হবে।
আমি হৃদয়ের সঙ্গে টুকটাক কথা
বলি, ‘হৃদয়, একটা বিষয় মাথায় গেঁথে রাখো, সবার সব কিছু থাকে না। এই দেখো না,
তুমি কি আমাকে কখনও চশমা ছাড়া দেখেছো? দেখোনি। আমার কিন্ত সেই তোমার বয়স থেকেই চোখ
খারাপ- চশমা ছাড়া আমি তেমন কিছুই দেখি না, প্রায় অন্ধ। আমার চোখ খারাপ, তোমার পা
খারাপ- এই নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। মনখারাপ করবে না, একেবারে না, খবরদার।
আমি হৃদয়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হৃদয়
তুমি তো জানো, তোমার এই হুইল-চেয়ারটা আমার এক বন্ধু তোমাকে দিয়েছে। তুমি কি তার
উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাও’? হৃদয় কোনো শব্দ করল না কিন্তু শারীরিকএকটা ভঙ্গি প্রকাশ করল। আমি এই ভাষা তেমন বুঝি না। ও কবি,
দেখেন তো, আপনি বুঝতে পারেন কি না...।
বিভাগ
ভাললাগা
Subscribe to:
Posts (Atom)