হৃদয়কে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম,
ওহ, হৃদয় [১]। ওখানে লিখেছিলাম,
...’হৃদয়ের জন্য একটা হুইল-চেয়ারের প্রয়োজন, বড়ো প্রয়োজন’। লেখাটা দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ওর জন্য একটা হুইল-চেয়ারের
ব্যবস্থা হয়ে যায়। @নাজমুল আলবাব একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন। মানুষটাকে একটা ধন্যবাদ দেয়ারই নিয়ম কিন্তু আমি তাঁকে ধন্যবাদ দেব না। কারণ মানুষটাকে
তাহলে যে খাটো করা হয়...।
ইনবক্সে আলাদা করে আরও অনেকে হুইল-চেয়ার দেয়ার জন্য তীব্র আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, লোকজনসব
পাগল (!) হয়ে গেল নাকি! আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম-
ও, বাহে, এতো মায়া কেন গো তোমাদের মনে?
‘অবশেষে হৃদয় হুইল-চেয়ারে করেই স্কুলে গেল’। কেবল এই একটা বাক্য দিয়ে শেষ করে দিতে পারলে সুবিধে হতো কারণ আমি তো সত্যিকারের
কোনো লেখক নই- লিখে বোঝাব সেই ক্ষমতা আমার কই! আচ্ছা, আপনারা কেউ কী খাঁচায় আটকে থাকা কোনো পাখিকে মুক্ত করার পর সেই পাখিটির আচরণ লক্ষ করে দেখেছেন?
বিশাল আকাশটা ফেরত পেয়ে তার মাথা কী এলোমেলো
হয়ে যায়, তার অনুভূতিটা কেমন হয় আসলে, আমি জানি না-আমি জানি না!
হৃদয়, হৃদয়ের ক্লাশ ফোরে পড়ুয়া একমাত্র ভাইটা, হৃদয়ের মা- তখন এদের যে অন্য ভুবনের আনন্দ সেটাকে ধরে রাখার ক্ষমতা ক্যামেরা নামের ছোট্ট যন্ত্রটার কোথায়? আফসোস, বেচারা, @নাজমুল আলবাব এই দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্ঝিত হলেন! কিন্তু আমাকে যে দৃশ্যটা দেখার সুযোগ করে দিলেন এর সঙ্গে আইফেল টাওয়ার দেখার আনন্দ কোন ছার!
আমার স্বপ্নগুলো
ছোটো-ছোটো। আমি সুতীব্র
ইচ্ছা, কোনো-একদিন @নাজমুল আলবাবের সঙ্গে রাস্তার কোনো এক দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। সেই ধোঁয়াওঠা চা-র স্বাদ আমি চোখ বন্ধ করে কেবল কল্পনাই করতে পারি। কারণ আমি জানি সেই চা-র চা-পাতা সিলেট, দার্জিলিং-এর না। সেই চা-পাতাটা আসে...।
১. ওহ হৃদয়...: https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151805576342335
হৃদয়ের খোঁজ
নেওয়া হয় না অনেক দিন। হুট করেই হাজির হয়ে যাই আজ (৪ ফেব্রয়ারি) হৃদয়ের বাড়িতে। হৃদয়ের মা কঠিন এক
অভিযোগ করলেন। হৃদয় নাকি স্কুলের বাইরেও হুইল-চেয়ারটা নিয়ে বের হতে চায়। তিনি অতি
কষ্টে তাকে নিবৃত করেন। কারণ, এটা ভেঙ্গে গেলে? আহারে-আহারে, কেন আরও আগে আসলাম
না! আমি হৃদয়ের মাকে বললাম, হৃদয়ের যখনই মন খারাপ হবে বা বাইরে বেরুতে ইচ্ছা করবে
হুইল-চেয়ার নিয়ে সে বেরিয়ে পড়বে, বাসার আশেপাশে, মাঠে চক্কর লাগাবে। কোনো সমস্যা
নাই। আপনারা এটার যত্ন নেবেন কিন্তু কোনো কারণে ভেঙ্গে
গেলে আরেকটার ব্যবস্থা হবে।
আমি হৃদয়ের সঙ্গে টুকটাক কথা
বলি, ‘হৃদয়, একটা বিষয় মাথায় গেঁথে রাখো, সবার সব কিছু থাকে না। এই দেখো না,
তুমি কি আমাকে কখনও চশমা ছাড়া দেখেছো? দেখোনি। আমার কিন্ত সেই তোমার বয়স থেকেই চোখ
খারাপ- চশমা ছাড়া আমি তেমন কিছুই দেখি না, প্রায় অন্ধ। আমার চোখ খারাপ, তোমার পা
খারাপ- এই নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। মনখারাপ করবে না, একেবারে না, খবরদার।
আমি হৃদয়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হৃদয়
তুমি তো জানো, তোমার এই হুইল-চেয়ারটা আমার এক বন্ধু তোমাকে দিয়েছে। তুমি কি তার
উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাও’? হৃদয় কোনো শব্দ করল না কিন্তু শারীরিকএকটা ভঙ্গি প্রকাশ করল। আমি এই ভাষা তেমন বুঝি না। ও কবি,
দেখেন তো, আপনি বুঝতে পারেন কি না...।
No comments:
Post a Comment