কারও কারও অন্যায় আছে যা ক্ষমার অযোগ্য- এরা ঠান্ডা মাথায় খুব কাছ থেকে ছুঁরি চালান! মানুষের গভীর বিশ্বাসের অমর্যাদা করেন। এমনই একজন মানুষ মওলানা (!) আব্দুল মান্নান। ১৯৭১ সালে ডাক্তার আলীম চৌধুরী তাকে বিশ্বাস করে আশ্রয় দিয়েছিলেন, বিশ্বাস করেছিলেন কিন্তু এই মানুষটাই তার সঙ্গে ছল করে আশ্রয়দাতার প্রাণনাশে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মানুষটা বিশ্বাসঘাতক [১]!
এই দেশ ডাক্তার আলীম চৌধুরীর প্রতি, তাঁর পরিবারের প্রতি ন্যায় করতে পারেনি, অন্যায় করেছে- ক্ষমাহীন অন্যায়। মওলানা
(!) আব্দুল মান্নান নামের মানুষটাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি দিতে পারেনি! বরং মানুষটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শানশওকতের সঙ্গে দিনযাপন করে গেছেন।
কেবল ইনকিলাবের অফিসটার কথাই বলি। সেটা সম্ভবত ৯২ সালের কথা। আমি তখন ভোরের কাগজে ‘একালের রূপকথা’ নামে ফি হপ্তায় একটা করে লেখা লিখি। সেখানে লেখার সূত্রে আহমাদউল্লা নামের একজন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। তাঁকে একবার কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলাম, ‘ভোরের কাগজ অফিসটা বেশ গোছানো, না’?
তিনি বলেছিলেন, ‘কচু’। এরপরই বললেন, ‘চলেন’।
আমি বললাম, ‘কোথায়’?
মানুষটা একটু পাগলা টাইপের ছিলেন। হুড়মুড় করে উঠে আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে যেতে তিনি কেবল বলেলেন, ‘ধুর মিয়া, কথা কম, চলেন তো’।
তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ইনকিলাব অফিসে। ঝাঁ-চকচকে একটা অফিস বললে কমিয়ে বলা হয়। অন্য পত্রিকা অফিসের সঙ্গে এর তুলনা করাটা হাস্যকর। তখনকার এদের অফিস, ছাপার যন্ত্রপাতি দেখে আমি তো পুরো হাঁ!
মওলানা আব্দুল মান্নান নামের এই মানুষটার তখন কী দবদবা! তিনি যে কেবল রাজার হালে দিনযাপন করেছেন এমন না তিনি এই প্রজন্মের ভিত নাড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছিলেন। কিনে নিয়েছিলেন এ দেশের অসাধারণ মেধাগুলোও! সেসময়ে ফি বছর ঈদসংখ্যায় নিয়ম করে মান্নানের পূর্ণিমায় হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস লিখতেন। এমন না যে হুমায়ূন আহমেদের লেখা ছাপাবার পত্রিকার অভাব ছিল কিন্তু তিনি লিখতেন অতিরিক্ত টাকার লোভে। এমনকি জাহানারা ইমাম হুমায়ূন আহমেদকে কয়েকবার অনুরোধও করেছিলেন মান্নানের পত্রিকায় না-লিখতে।
যাই হোক, ১৬ জানুয়ারি ২০১৪, ইনকিলাব ছাপিয়েছে, “...সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অপারেশনে ভারতীয় বাহিনীর সহায়তা... চলমান রাজনৈতিক সংকটে ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে পাঠানো এই বার্তায় দেখা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩৩তম কোরের ১৭তম, ২০তম ও ২৭তম মাউন্টেন ডিভিশান এবং বিএসএফ”...।
এটা যে একটা অতি হাস্যকর, বানোয়াট একটা তথ্য এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আহা, কী এক যুদ্ধ বটে! আর আমাদের সেনাবাহিনী তখন সম্ভবত ইনকিলাবের ছাদে শীতকালীন মহড়া চালাচ্ছিল।
বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ এই সত্যটা লিখলে সমস্যা ছিল না কিন্তু ভারতীয় বাহিনী, এরা কীসে করে এসেছে রকেট নাকি ঠেলাগাড়িতে সেইসব বিষয় খানিকটা বিশদ করে লিখলে আমাদের নাহয় বুঝতে খানিক সুবিধে হতো।
এদের এ ধরনের তথ্য বিকৃতি নতুন কিছু না।
ইনকিলাব পত্রিকাটি বিভিন্ন সময়ে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করে উস্কানি দিয়ে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। বাবরি মসজিদ নিয়ে দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিয়েছিল দাঙ্গা।
প্রথম আলোয় ছাপা কার্টুন নিয়েও কম কেরামতি করেনি! ২০০৭ সালে সে সময়টা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরিয়েছে-এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে ‘হিজবুত তাহরীর’ হেন বলেছে, ‘হিজবুত তাহরীর’ তেন বলেছে, ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে, ৩ দফা দাবী জানিয়েছে, ওমুককে গ্রেফতার করতে বলেছে।
ভাব দেখে মনে হয়েছিল হিজবুত তাহরীরের মুখপাত্র আর কী! আসলেই তো তাই...।
১. বিশ্বাসঘাতক:
No comments:
Post a Comment